প্রসঙ্গ কবিতাভাবনা

প্রসঙ্গ কবিতাভাবনা

ব্যাপারটা ব্যাপকভাবে বাজার দখল করে রেখেছিল গোটা একটা দশক অথবা তারও অধিক কালব্যাপী। রিসেন্টলি স্তিমিত হয়ে এসেছে এর রবরবা। তা, প্রারম্ভে একটু উপভোগ্য মনে হইলেও অচিরে এই জিনিশ বদহজমের মুখ্য কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এখনও পুরো বিপদমুক্ত ঘোষণা দেয়া যাবে না অবশ্য। ফর্মালিনের যুগ, হজমের গভীর সমস্যা নিয়াই দিনযাপন-দখিনহাওয়া আমাদিগের, অনেকটাই এই ইশ্যুতে আমরা অভিযোজিত ও অভ্যস্ত। ঘোষণা প্রকাশিবামাত্তর ফের যন্তর্না পূর্ণোদ্যমে শুরু হইবার আশঙ্কা সাতানব্বই দশমিক সাতপাঁচতিন ভাগ। কাজেই বিষয়টা স্পাইরাল, উইয়ার্ড, প্যাঁচালো, রয়েসয়ে এতদবিষয়ে বলাটা সংগত।

২.
কবিতাভাবনা। পাঠকের নয়, লেখা বাহুল্য, কবিদের। গত শতকের অন্তিম দশকের, তথা বিগত সহস্রাব্দের অন্তিম শতকের অন্তিম দশকের, কবিদের ও কবিতার কাণ্ড এইটি। স্মৃতি চারাইতে বসেছি। স্মৃতি, অনুল্লেখ্য হলেও উল্লেখ করা যাক এখানে একটুকু, সতত সুখের না-হলেও অসুখেরও নয়। এমন নয় যে কেবল বর্ণিত অন্তিম দশকেই বিপদ পুরো উবে গেছে, গেলে তো উত্তম হইতই, বিপদের উপরাউপরি আপদ নবসহস্রাব্দের নবদশকেও বহাল ছিল। অবশ্য মিইয়ে এসেছে তদ্দিনে। এর পেছনে কারণও রয়েছে। এই মিইয়ে-আসা আরও অন্য গুটিকয় ইন্ট্রেস্টিং জিনিশের ব্যুম ঘটিয়েছে। সেসব অবশ্য এক্ষণে এখানে উত্থাপন আবশ্যক নয়। এইখানে কেবলই কবিতাভাবনা।

৩.
যারা এথাকার এই নিবন্ধনোটকের ন্যায় আর্লি দিনগুলোতে এন্তার লিটলম্যাগ করাকরি-পড়াপড়ি-দেখাদেখির সনে অ্যাটাচড ছিলেন, কবিতা ও তদবিষয়ক কোনোকিছু নয়নে হেরিবামাত্রই গিলিতেন যারা, তারা ডেফিনিটলি স্মৃতি লোকেইট করে উঠতে পারবেন। নব্বইয়ের দশক, বাংলাদেশে, পুরাটাই ছিল সাক্ষাৎকারকীর্তনমত্ত দশক। কথাটা বলেছিলেন এক বন্ধু, বক্ষ্যমাণ নোটকের, অস্ট্রেইলিয়ায় যিনি সেটল করেছেন ওভার ডিকেইডস বিয়িং অ্যা স্টকব্রোকার প্রোফেশন্যাল, হি ইজ ডুয়িং গ্যুড ওভারদেয়ার, এইখানেও ওয়াজ অ্যা প্রেটি গ্যুড স্ট্যুডেন্ট, শখের বশে লেইজারে বই-ম্যাগাজিন পড়তেন বহুবিচিত্রা, প্যাস্টাইম হিশেবে প্রেফার করতেন কবিতা ইত্যাদি। ইন্টার্ভিয়্যুগ্রিডি ডিকেইড ছিল সেইটা, ক্যাওটিক একটা ব্যাপার দাঁড়িয়েছিল যে এমনকি তিনটে পদ্য লিখেই পোয়েট আমতাআমতা ইন্টার্ভিয়্যু মারিতেন, পাগলের ন্যায় পৃষ্ঠার-পর-পৃষ্ঠা ছাপা হইত ছোটকাগজ-বড়কাগজ-মেজোকাগজ জুড়ে কেবল কবিতাভাবনার-পর-কবিতাভাবনা।

৪.
সে বড় সুখের সময় ছিল, বটে, সে বড় আনন্দঘন সময়। ইন্টার্ভিয়্যুফ্রিক একটা ডেড পোয়েটস্ সোসাইটি। রিডিকিউলাস্ প্রশ্ন ও ততোধিক রিডিকিউলাস্ উত্তরমালার সিরিজ প্রোজেকশন। তখন কবিতা নাই, ছিল না, কিংবা ছিল, ডিসগাস্টিং ইন্ডিয়ান বাংলা ন্যাকামি। লিটলম্যাগাজিনগুলো, ইভেন বিগম্যাগ বলিয়া বিবেচিত ব্রডশিট ডেইলিগুলোর উইকেন্ড সাপ্লিমেন্টগুলো ভরে, ছোটেমিয়া-বড়েমিয়া-মেজোমিয়া-সেজোমিয়াদিগের ইন্টার্ভিয়্যু। অহরহ যত্রতত্র কবিতাভাবনা। লিটলম্যাগাজিনে ব্যামোটা ছিল বল্গাহারা মাত্রাছাড়া। মাথার দেখা নাই, দিনরাত খালি মাথাব্যথার গালগপ্পো। দুই-তিন মহাজন বুজুর্গ স্টলোয়ার্ট ফিগেরা ছাড়া কারো কোনো প্রশ্নোত্তর হারাম মনে পড়ে না।

৫.
তো, ওই নিদারুণ সাক্ষাৎকারদশক ও তৎপরবর্তী মিনি-ইন্টার্ভিয়্যুদশকের ভেতর দিয়া গাঙ পার হইয়া আসবার সময় কিছু লেসন তো লার্ন হয়েছেই। বিলক্ষণ! দুইপৃষ্ঠায় সাকুল্যে পাঁচটা কবিতা ঠাসানির আগে দেড়পাতাব্যাপ্ত কবিতাভাবনা! আর সেখানকার প্রশ্নছিরি, ফর ইনস্ট্যান্স, এমন : কবিতা বলতে আপনি কি বোঝেন, পশ্চিমবঙ্গ বড় না বাংলাদেশ বড়, অমুক দশকের পাঁচজন তমুক দশকের সাতজন সমুক দশকের সতেরোজন মুখ্য কবির নাম বলুন, কবি কি ছন্দাস্তিক না ছন্দোনাস্তিক ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি। কবিও মহা মিস্টেরিয়াস স্বরে অ্যান্সার করছেন, ফর ইনস্ট্যান্স, ছন্দের অস্তিত্ব মুই স্বীকার করি না এবং ছন্দ কবিতার জন্য গৌণ অতীব ব্লা ব্লা। আরেকটা ইন্ট্রেস্টিং ব্যাপার, গোরুখেকো ঘরের সন্তানেরা ক্লাস টু-থ্রি রিচ করার কয়েকমাস আগেই রামায়ণ-মহাভারত দুইটাই গোগ্রাসে খেয়েছেন, তবে দুঃখের বিষয় একটাই, ইলিয়াড-অডিসি বেশ দেরি হয়ে যায় পড়তে পড়তে, ক্লাস ফোর লেগে যায় কার্ল মার্ক্সের ক্যাপিট্যালটা সাবাড় করে উঠতে উঠতে, সেজন্য কবি মশাইয়ের পরিতাপ সীমাপরিসীমাহারা। মাবুদ-এ-এলাহি! মিইয়ে এসেছে, একসময়, কিন্তু তার আগে যা হয়েছে তা ওই দশকের পুরনো ছোটকাগজগুলোর প্রতি তিনটের মধ্যে দুইটেয় দৃষ্ট। কৌতূহলীবৃন্দ খুঁজিয়া বাইর করুন।

৬.
কবিতাভাবনা প্রকাশিতে যেয়ে একজন তৎকালীন ও অদ্যাবধি চিরতরুণ কবি ইন-জেনারেল যা যা করিয়া থাকিতেন তা তা স্ক্রুটিনি নোটিস করিয়া দেখিলে প্রেটি ইন্ট্রেস্টিং কিছু শিক্ষা লাভ করা যায়। এখানে একটি বিবরণ, অতীব সংক্ষেপে, পেশ করা যাচ্ছে। কেউ বেশ কবিতার একটা নতুন সংজ্ঞা দানের শক্তিখাটানো কোশিশ করেন, কবিতা কেমন করে একজন কবির করকমলে ধরা দ্যায় সেই বয়ানে কেউ বিভোর রহেন, কেউ বলেন ভবিষ্যতের কবিতা কেমন হবে এতদবিষয়ে নিজের ‘সুচিন্তিত’ অভিমত, কেউ-বা তার নিজের কবিতা জাঁক করে বিশ্লেষণে বসে পড়েন এবং একহাতে দেখায়ে ছাড়েন যে তিনি তার স্বীয় প্রতিভাবলে কী কী জিনিশ নতুন তথা ব্র্যান্ডনিউ আমদানি করেছেন বাংলা কবিতায়, কেউ কেউ সরেস দুই-তিনটা কাঠি হাতে নিয়া নানান ধান্দার বন্ধুবান্ধবের কচিকাঁচা কবিতা বাইফোকালতলায় ঠেসে চেপে ধরে মহার্ঘ্যমহার্ঘ্য জপমালা টেপেন  … ভগবানের লীলা, যা-ই হোক, টাইম-টু-টাইম পাল্টায়। এইসবেরেই অ্যাইনশিয়েন্ট দিনগুলোতে কবিতাভাবনা পরিচয়ে চিহ্নিত হইতে ব্যাপকভাবে দেখা গিয়েছে সেকেলে লিটলম্যাগাজিনে।

৭.
শেরশাহদিগের সাক্ষাৎকারে দেশকাল সয়লাব, কিন্তু শায়েরি কই? কাজ কোথা, হো কম্মবীর! খালি স্যুইপিং কমেন্ট আর হাওয়ায় তরবারি ঘুরানি। এই নিবন্ধনোটেরও তো দশা তথৈবচ। স্যুইপিং কমেন্টারি বৈ কিছু তো নয়! দুগ্গা দুগ্গা!

৮.
জীবনানন্দ দাশ, হায়, একটাও সাক্ষাৎকার দিয়া যান নাই! দিয়া যাইলে এত এত অপ্রকাশিত উপন্যাস-গল্প-কবিতা-ডায়েরি ট্রাঙ্কবাকশো ফুঁড়ে বেরোত না বাবুর মৃত্যুপরবর্তী তিন-চার-পাঁচ-ছয় দশক ধরে। বুদ্ধদেব বসু, ভাগ্যিস, আলাদা ব্যানারে কবিতাভাবনা লিখিতে বসেন নাই। বাংলা আধুনিক কবিতার পুরোতগিরির বারোটা বাজিত তবে নির্ঘাৎ। র.ঠা. জাঁকজমকের সঙ্গে এমন কোনো প্রকল্প হস্তে নেন নাই বলেই পঁচিশ-ছাব্বিশ খণ্ড হয়েছে, নইলে দেড়খণ্ডেই ফুরাইত রবীন্দ্ররচনারাজি।

জাহেদ আহমদ

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you