পেইন্টপিস দেখে যদি প্রথম দর্শনে ফটোগ্রাফি মনে হয় তবে তা আর আর্ট কেমনে? আমি বলব না ফটোগ্রাফি আর্ট হতে পারে না। ফটোগ্রাফি ফটোগ্রাফির জায়গায় আর্ট। পেইন্টিঙের নিজের নিজের জায়গা আছে। গদ্যে পদ্যের ভাব আর পদ্যে গদ্যের ভাগ আর্টকে সবল করার সাথে সাথে দুর্বলও করে।
কোনো দৃশ্য নিখুঁত আঁকতে পারা একটা দক্ষতা। যেমন কাঁটাকম্পাস ছাড়া পার্ফেক্ট বৃত্ত যে আঁকতে পারে তিনি ভালো অঙ্কনকারিগর। খুঁতহীন বৃত্ত আঁকতে পারা বড় শিল্পীর নিদর্শন না।
কথা হলো, বেলাল শাহ-র ছবি মানুষ খুব পছন্দ করতেছে ক্যান? এক, এটা অ্যাওয়ার্ড-পাওয়া ছবি। বিজনেস সাইকোলোজি বলে, পুরস্কার যে-কোনোকিছুকে সাধারণের কাছে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। ওভারভ্যালু আরোপ করে পুরস্কৃতের উপর। অ্যাওয়ার্ড ব্যক্তির জাজমেন্টকে প্রভাবিত করে। ডিল্যুশন তৈরি করে। খেয়াল করে দেখবেন চারটা অস্কার-পাওয়া ফিল্ম অনেক-সময় দেখতে ভালো না লাগার পরও আপনি দেখে শেষ করে ফেলেন। কারণ অ্যাওয়ার্ডের চাপ।
বিশেষকিছু দেখা ও তা বলা বা প্রকাশ করার ভেতর মানুষ একটা সেটিসফেকশন পায়। আইফেল টাওয়ার দেখে যত-না আনন্দ, তার থেকে আপনি আইফেল টাওয়ার দেখছেন বলায় মজা বেশি। টাওয়ারটা ডিজায়ার নিয়ে দেখি আমরা। ডিজায়ারের দমনও মানুষের প্রণোদনা। ফ্রয়েডের হিসাবে যৌনতা যেমন জীবনের ফোর্স, কনজুমারিস্ট স্যোসাইটির আধুনিক মানুষের প্রাণের অন্যতম ফোর্স ডিজায়ার। আত্মপ্রকাশের ডিজায়ারও মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে।
প্রোডাক্ট-এরা থেকে আমরা পোস্ট-প্রোডাক্ট-এরায় চলে এসেছি। ফলে পণ্যদব্যের প্রকৃত ইউটিলিটি থেকে তা ব্যক্তির ডিজায়ারকে কতটুকু নারিশ করতে পারে তার উপরই পণ্যসভ্যতা দাঁড়ানো। বলা যাবে না উত্তরপণ্যযুগ খারাপ। বলা যাবে এ যুগে আমি-আপনি কোনো বস্তু ও অবস্তু দ্বারা কতটুকু শান্ত হব তা নির্ধারিত হবে পণ্যটির প্রকৃত গুণ দিয়ে নয়, তা হবে তার উপর আরোপিত অর্থ দিয়ে। পুরস্কার-স্বীকৃতি প্রদানকারী অল্পসংখ্যক প্রতিষ্ঠান জনগণের রুচি তৈরি করে দিবে। ফলে, বেলাল শাহের ফটোগ্রাফ-হয়ে-ওঠা তেলচিত্র দারুণ এক আর্টওয়ার্ক ও বিস্ময় সমাজে।
তো, এই ছবি ঘিরে আমাদের যে মুগ্ধতা তা যত-না ছবিটির জন্য তার থেকে এই হালকা জিনিস পুরস্কার পাওয়ার জন্য। দুই, আর্টের ইম্প্রেশনিস্ট যুগ পার করে আসা সস্তা ক্যামেরাসভ্যতায় ছবিকে ফটোগ্রাফি বা ফটোগ্রাফিকে ছবি করে তোলা কোনো বড় শিল্পের বিষয় না। তিন, আমরা যে সমাজ তৈরি করেছি সেখানে আর্টিস্ট থেকে কারিগরের মূল্য বেশি। শিল্প মানে নিখুঁত পুনঃউৎপাদনের ধারণা। কাগজে পোশাকের স্কেচ দেখে লক্ষ লক্ষ কপি তৈরি করা দক্ষতা বটে। এগুলো ক্রিয়েটিভিটি না।
কোনোকিছু মাধ্যম পরিবর্তন করে রিক্রিয়েট করা হস্তদক্ষতা মাত্র। হার্ডস্কিল, সুপার পার্ফর্মার, কম্পিটেন্ট ওয়ার্কারের কাজ এগুলো। আর্ট আরো সফট, স্লো, মেন্টাল ওয়ার্কপিস।
… …
- কায়মাসুদ : মাসুদ খানের জড়সাধনা || মৃদুল মাহবুব - February 15, 2020
- মুখোমুখি গুন্টার গ্রাস || মৃদুল মাহবুব - January 6, 2020
- হেমিংওয়ে, তোমার চিঠি এসেছে || মৃদুল মাহবুব - December 15, 2019
COMMENTS