পারস্যের সুফি শিরিন মাগরেবির কবিতা || মঈনুস সুলতান

পারস্যের সুফি শিরিন মাগরেবির কবিতা || মঈনুস সুলতান

সুফি কাব্যধারার অত্যন্ত উল্লখযোগ্য ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন পারস্যের মোল্লা মোহাম্মদ শিরিন মাগরেবি (১৩৪৯- ১৪০৪ খ্রিস্টাব্দ)। অধ্যাত্ম মার্গের বোদ্ধাদের বিশ্লেষণে তিনি বিবেচিত হন পরবর্তী প্রজন্মের সাধক-কবিদের ওপর প্রভাব বিস্তারকারী কবি হিসাবে। বিশ্বপরিব্রাজক এ-সুফিসন্ত ছিলেন প্রখ্যাত সুফি-দার্শনিক ইবনে আরাবির ভাবশিষ্য।

তাঁর জন্ম যদিও পারস্যের তাব্রিজে, কোনো কোনো সূত্রমতে উর্মিয়া সরোবরের নিকটবর্তী আম্মান গ্রামে, তারপরও তিনি মিশর, মরক্কো প্রভৃতি উত্তর-আফ্রিকান দেশসমূহে ভ্রমণ ও বসবাসের সুবাদে বোদ্ধামহলে পরিচিতি পান মাগরেবি নামে।

সাধক ও পাঠকরা তাঁর পদাবলিতে খুঁজে পান, ‘ওয়াহদাত আল ওজুদ’ বা ‘অস্তিত্বের ঐক্য’ বিষয়ক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ।  মাগরেবির কিছু কিছু পঙক্তি ও বাকপ্রতিমা আজঅব্দি প্রবাদবাক্যের মতো লোকমুখে উচ্চারিত হয়।

এখানে উপস্থাপিত কবিতাগুলোর সূত্র হচ্ছে, ‘লাভস আলকেমি’ ও ‘ইসলামিক মিস্টিক্যাল পোয়েট্রি : সুফি ভার্সেস ফ্রম দ্য আর্লি মিস্টিকস টু রুমি’ শিরোনামে দুটি গ্রন্থ। কবি মাগরেবির জীবন সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে ইন্টান্যাটের দুটি ওয়েবসাইট থেকে।

মূল ফার্সি থেকে ইংরেজিতে যারা অনুবাদ করেছেন, তাদের নাম কবিতাগুলোর নিচে উল্লেখ করা হলো। — মঈনুস সুলতান 

অদৃশ্য কাফেলা
ডাকছে সংগীতের ভালোবাসাময় মাইফেল
দেখতে পাই না যে — বাঁশরী কিংবা অন্য বাদ্যযন্ত্র,
মন্দিরের বেদিতে নেই কোনো পুরোহিত
কিন্তু মন্দ্র স্বরে উচ্চারিত হয় পবিত্র মন্ত্র।

মাতালেরা মত্ত হয়ে বাঁধিয়েছে কোলাহল
কোথাও পাই না খুঁজে সোরাহি কিংবা শরাব,
নেই পানশালা — তবুও নেশা হয় যে প্রবল
জেগে আছি — খোলা চোখে ভাসে খোয়াব।

মরুসাহারা অতিক্রম করে গেছে শতেক কাফেলা
পথিকেরা পথের সাথে মিলিমিশে হয়েছে অভিন্ন,
অবাক হয়ো না হে প্রিয় এবেলা —
অঙ্কিত হয়নি দ্যাখো — বালুকায় উটের পদচিহ্ণ।

ফার্সি থেকে ইংরেজিতে তর্জমা : ডেভিড ও সাবরিনে ফিডলার

 

তাকাই যেদিকে আমি
যখনই ফেরাই গ্রীবা
ঘুরেফিরে যেদিকে তাকাই,
আছো যেন তুমি দিগন্ত-জুড়ে
পথে নামি — পা বাড়াই —
বিভায় উদ্ভাসিত তুষার পাহাড়চূড়ে,
যখনই নিমজ্জিত হই পড়ি বিপুল সংকটে,
অতিক্রম করি স্তেপের তৃণময় প্রান্তর
পৌঁছি অতঃপর — তোমার সন্নিকটে।

মসজিদ-খানকায় যখনই প্রবেশ করি
তুলি দু-হাত — বসি মোনাজাতে —
প্রত্যক্ষ করি তোমার ভ্রূপল্লব,
উদ্ভাসিত আলোকের সম্পাতে —
প্রতিটি খিলানে লেখা তোমার স্তব।

প্রত্যক্ষ করেছি আমি বস্তুতান্ত্রিক বিশ্বের অবয়ব
শুধু তোমার আননে দেখি গাঁথা দিব্যদর্পণ —
জগতে জাহেরি যা এবং যা অন্তরালে সংগোপন,
তোমার সান্নিধ্যে খোঁজে সকলে সমাধান —
আদর্শ আর বাস্তবে থাকে না তেমন ব্যবধান।

মাগরেবিকে কোরো না কোনো সওয়াল
তোমার আঁখিপল্লবের বিপুল রূপে
হয়েছে সে মাতোয়ারা —
হয়ে আছে সতত নাজেহাল।

ফার্সি থেকে ইংরেজিতে তর্জমা : মাহমুদ জামাল

 

প্রতিটি পথের সূত্রপাতের সর্বশেষ মঞ্জিল হে
প্রতিটি পথের সূত্রপাতের সর্বশেষ মঞ্জিল হে
প্রতিটি আরম্ভের সমাপ্তি,
প্রতিটি সঙ্গোপন প্রসঙ্গের হে প্রকাশরেখা,
প্রতিটি জাহেরির প্রগাঢ় গোপন!

তোমার রূপের বিভায় উদ্ভাসিত হয়
জগতসংসারে বেশুমার বিশ্বাসীর দু-নয়ন,
খুঁজে পাই তোমার ক্রোধের আলামত
প্রতি অবিশ্বাসীর অন্তরে।

তাঁকে ধন্যবাদ জানাও তুমি এবং তৃমিই তো আদতে তিনি,
দাতা হয়ে বিলাও হে — অন্য হাতে গ্রহণও করো।
তুমি নিজেই তো উপহার এবং
একইসঙ্গে প্রাপ্তিজনিত কৃতজ্ঞতা।

না, তুমি ছাড়া নয় অন্য কেউ উপাসনাযোগ্য;
না, তুমি ভিন্ন কেউ নয় অনন্য উপাসক;
না, তুমি ছাড়া অন্য কেউ নয় সাক্ষী;
না, তুমি ভিন্ন আর কেউ নয় বক্তাও।

সাকি যখন মাগরেবির হাতে তুলে দেয়
চিরায়ত জীবনের সুরা,
বিলুপ্ত হয় সে
সে-ই তো অস্তিত্বে মিশে থাকা অনস্তিত্ব।

ফার্সি থেকে ইংরেজিতে তর্জমা : মাহমুদ জামাল

 

প্রেমময় মুগ্ধচন্দ্রিমা
জগতসংসারে পাবে না খুঁজে একটি আত্মাও
যে অজ্ঞাত তোমার গন্তব্যের পথরেখা,
নেই এমন কোনো পাথর অথবা ফুল
কিংবা যৎসামান্য শুকনো শস্য-দূর্বা-তন্দুল …
যদিও পায় না কেউ দু-নয়নে দেখা,
তোমার অস্তিত্বের অশনি বিভায় নয় সচেতন.
পাবে না খুঁজে হাজার তালাশে —
এমন কোনো মরুভূমি কিংবা বৃষ্টিবন।

ভুবনবিশ্বের প্রতিটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণিকা,
উদ্ভাসিত হয় — প্রতিটি অণুপরমাণুর হৃদয়,
তোমার অনন্ত প্রেমের ভরপুর জ্যোৎস্নায় —
প্রসন্ন হয় জলতলে সংগোপন যে-জন
মৃত্তিকার অতলে পড়ে আছে আলোরিক্ত পরিখায়।

ফার্সি থেকে ইংরেজিতে তর্জমা : ডেভিড ও সাবরিনে ফিডলার


মর্মমুরাকাবামালা
মঈনুস সুলতান রচনারাশি

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you