প্রেক্ষাগৃহে পেয়ারার সুবাস : দেখার পরের প্রতিক্রিয়া

প্রেক্ষাগৃহে পেয়ারার সুবাস : দেখার পরের প্রতিক্রিয়া

স্বাগত বক্তব্য : পেয়ারার সুবাস  দেখলাম। সিনেমার টাইটেল ফেলে দিয়ে দেখালেও বুঝতে পারতাম এইটা আতিকভাইয়ের সিনেমা। এইটা নিঃসন্দেহে নির্মাতার জন্য বড় অর্জন যে, তার সিনেমাভাষা অনুভব করা যায়। যদিও কিছু কিছু প্রশ্ন বা অতৃপ্তি থেকেই যায়, তবুও মন্দ নয়।

রাজীব দত্ত : আমার কাছে সিনেমার চেয়ে ‘আর্ট’ বেশি হয়ে গেছে মনে হইল।
ইলিয়াস কমল : আতিকভাইয়ের কাজ তো এমনই। অন্যদের এমন সিনেমার চেয়ে বেশি আর্টটা দেখতে অভ্যস্ত আপনি। অথচ এইটা না!
রাজীব দত্ত : এ-রকম না। এখানে গল্পের বাইরের যেসব দৃশ্য তা আরোপিত হয়ে গেছে।

সাথী রহমান : সিনেমাটা একাধারে বিরতিহীনভাবে দেখার পরও বুঝতে অসুবিধা হয়েছে এর ঘটনা সম্পর্কে অবগত হতে। কারণ ২ ঘন্টার সিনেমা যখন ১ ঘন্টা ২০ মিনিটে শেষ হয় তখন বুঝতে হবে কাহিনির কোনো ধারাবাহিকতা ছিল না। অভিনেতা রুবেলভাইয়াকে স্মরণ করে দেখেছিলাম; তবে, পরিবারের সবাই মিলে উপভোগ করার জন্য এই সিনেমাটা পারফেক্ট না।
ইলিয়াস কমল : ছবির পোস্টারেই লিখা ছিল ‘প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য’। সেক্ষেত্রে পরিবারের প্রাপ্তবয়স্করা একত্রিত হয়ে দেখতে চাওয়ার ক্ষেত্রেও তো তাদের সাথে বোঝাপড়ার ব্যাপার থাকেই।
সাথী রহমান : সিনেমার ডায়লগে অনেক অসঙ্গতি ছিল যেটা ঠিক হয়নি।

শান্তা এফ আরা : সিনেমা না-দেইখাই বলতেছি, বাংলা সিনেমায় নির্মাতারা সিনেমায় গল্প বলতে চাওয়া বা সিনেমা দেখানোর চাইতে আর্ট দেখানোর প্রবণতা থেকে বাইর হইতে পারতেছেন না, যার কারণে আমাদের মতো সাধারণ দর্শকেরা বাংলা সিনেমা দেখার জন্য হা-পিত্যেশ করলেও দেখতে পারতেছেন না আসলে।
ইলিয়াস কমল : আর্ট দেখানোটা কি খারাপ?
শান্তা এফ আরা : আর্ট দেখানো খারাপ হবে কেন! অতিমাত্রায় দেখাতে গিয়ে সেইটা আর্ট গেলানো হয়ে ওঠে যখন, তখন সেইটা সিনেমার জন্য খারাপ ব্যাপার।
ইলিয়াস কমল : সবাই স্টোরিটেলার হবে কেন? কেউ শুধু আর্ট করবে, কেউ আর্টের সাথে গল্পও বলবে… কেউ শুধু গল্প বলবে। আবার কেউ মাসালা মুভিই বানাবে। এইটাই স্বাভাবিক না?
শান্তা এফ আরা : হ্যাঁ। সেটা অবশ্যই স্বাভাবিক। কিন্তু বাংলাদেশের সিনেমার ক্ষেত্রে এই শ্রেণিবিভক্তিকরণে ঠিকঠাক কাজ হইতেছে বলে মনে হয় না।

রাজীব দত্ত : আমি একদম উদারভাবে এবং হলে দেখে মনে হয়েছে, উনার ‘আর্ট’ যা যা ছিল এ-সিনেমায়, তা একসাথে মার্জ করে নাই। আলাদা হয়ে গেছে। এক্সপেরিমেন্টাল সিনেমা তো দেখেছি ম্যালা। কিন্তু মনে হয়েছে এটাতে কোথাও কোথাও সিনেমার দৈর্ঘ্য বাড়ানোর জন্যই এসব দৃশ্য রাখা। এও মনে হইল তিনি অভিনেতাদের অভিনয়ে ঠিকঠাক গল্পটা বলা হচ্ছে, এটুকুতে সন্তুষ্ট থাকতে পারেন নাই বলেও এসব দৃশ্য ঢুকেছে। যেন এনাফ মেটাফর না হইলে দর্শক বুঝবেন না। এমনিতে উনার কাজ তো পছন্দ করি। এ-কারণেই হলে গিয়ে দেখা। সাইকেলের ডানা  তো এমনটা মনে হয় নাই। বা অন্য কাজগুলা (লাল মোরগের ঝুঁটি  দেখা হয় নাই)। এটাতেই কেন আর্টকে এত আরোপিত লাগল?
শামান সাত্ত্বিক : অসহ্য এক কর্ম। যারা এটাকে আর্ট করা বলে, তাদের আর্টসেন্স নিয়ে সত্যিই আমি চিন্তিত। মোদ্দা কথা, বাংলাদেশে গৎবাঁধা ফর্মুলা চলচ্চিত্র নব্বই দশকে পঙ্কিলতায় ডুবেছে। আর আতিকের আর্ট পেয়ারার সুবাসে এসে আর্ট করার পঙ্কিলতায় ডুবেছে। বিকৃতিকে শিল্প বলে চালিয়ে দেয়ার মানসিকতায় আমি নেই। বাস্তবতাকে তুলে আনার একটা ক্লেদাক্ত প্রকাশ এই সিনেমায় — অভিনয়ে, উপস্থাপনে, গল্প বলার চেষ্টায়। সবচেয়ে দুর্বল দিক হলো ক্যামেরার চাইতেও এডিটিং, যা ফিল্মটাকে স্টাবলিশই হতে দেয়নি। আফসোস!!! তারকোভস্কিও কাব্য-শিল্প করছে, কিন্তু তা উন্নত প্রজাতির। সত্যজিৎ, ঋত্বিককেও বাদ দিই কেন!?

প্রতিক্রিয়াবৈঠকের স্বাগতিক ও সঞ্চালক : ইলিয়াস কমলমাধ্যম : সামাজিক সংযোগের সময়রেখা পাতা। প্রতিক্রিয়াকাল : ২৫ মার্চ ২০২৪


ইলিয়াস কমল রচনারাশি
গানপারে নূরুল আলম আতিক
গানপার ম্যুভিরিভিয়্যু

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you