আগামীকাল চৈত্রের পূর্ণিমা। মাটি পর্যন্ত নামবে পূর্ণিমার রঙ। রঙের ফকফকা আদরে ভেসে যাবে মাটি, জীব ও জীবন। কালগণনায় না-থেকে আমরা মানুষ ও প্রকৃতির কোলাহলে মিশে থাকি। কালাকালের অমাবস্যায়, পূর্ণিমায় ভেসে যেতে থাকি। বহমান সময়ের ছোট ছোট সামষ্টিক ভাঁটফুলগুলোর নাম জীবন। রাস্তার দু-পাশে ধুলোমাখা, বৃষ্টিভেজা ভাঁটফুলোর নাম স্মৃতি। স্মৃতিই জীবন। স্বপ্ন ও স্মৃতির বাগানই সচলতার আদরে উন্মোচিত হয়েছে ‘রূপকথার রাস্তাঘাট’ কাব্যগ্রন্থে।
পৃথিবীতে আমরা দাঁড়িয়ে থাকি না। আমাদের বয়স বাড়ে। কিন্তু আমাদের চোখ আটকে থাকে স্মৃতিতে, শৈশবে। আমাদের চোখ ঘোরাফেরা করে স্মৃতির শহরে। স্মৃতিকে উদযাপন করতে পারলেই জীবন পূর্ণাঙ্গ হয়। ক্ষমতাটমতা নয় — বিচরণকালকে, স্মৃতিগুলোকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখলেই বোঝা যায় জীবন ছোট নয়। নিজের জন্য বাঁচা, নিজের আনন্দে বাঁচার অপূর্ব আনন্দ ও অভিজ্ঞতাই কবি পিয়াস মজিদ কাব্যপঙক্তির রহস্য ও সারল্যে উন্মোচিত করেছেন ‘রূপকথার রাস্তঘাট’ কবিতাবইয়ের পাতায় পাতায়। স্মৃতির পর্যাপ্ত সিন্দুক খুলে পাঠকদের নিয়ে কবি যেন জীবন দেখছেন। স্বপ্ন দেখছেন। দার্শনিক প্রাচুর্যের কাব্যপঙক্তি নিয়ে হাজির হচ্ছেন কবি। যার মর্মার্থ হচ্ছে বর্তমানে বাঁচা। বর্তমানকে উদযাপন করা। একটা সারলিক-রাহসিক কাব্যভাষায় সময়কেই চিহ্নিত করেছেন পিয়াস মজিদ।
কাব্যগ্রন্থ মূলত মায়াবৃক্ষ; যেখানে শান্তি খোঁজা যায়, যেখানে শান্তি পাওয়া যায়। কবি পিয়াস মজিদের কী সৌভাগ্য! ইতোমধ্যে রূপকথার রাস্তঘাট-এর দ্বিতীয় মুদ্রণ প্রকাশিত হয়েছে। কবিতাবই দ্বিতীয় মুদ্রণ হওয়া মানে বইটাকে পাঠক অন্তরে নিয়েছে। যা অন্তরকে স্পর্শ করে তাকেই আমরা অন্তরে রাখি। কবির যাপিত অভিজ্ঞতাগুলো অবশ্যই পাঠকের যাপিত জীবনকে স্পর্শ করেছে। জীবনের চাওয়া-পাওয়া, অভিজ্ঞতাগুলোকে মানুষ যখন কোনো গ্রন্থে খুঁজে পায় তখনই সেই গ্রন্থটিকে ভালোবাসে।
আগামীকাল চৈত্রের পূর্ণিমা। মগরার তীরে শাহ সুলতান কমরুদ্দিন রুমির মাজারে জোসনা মাখবে মানুষ। মানুষের ভিড়ে, প্রার্থনায় আত্মাকে শুদ্ধ করবে। লালফিতার একটা মালা পেঁচিয়ে শান্ত-স্নিগ্ধ মানুষ বাড়ি ফিরবে। রূপকথার রাস্তাঘাট-এ কোনো রূপকথা কিংবা ইংরেজিতে যাকে বলে fairy tale নেই। এই গ্রন্থে আছে স্মৃতির নিষ্পাপ আলাপন, আছে প্রসন্ন রোদন, আছে শান্ত-স্নিগ্ধ মানুষের বাড়ি ফেরা।
আর, কী ছাপাছাপি!, কী বাঁধাই!, কী অলংকরণ!, কী প্রচ্ছদ! — সব মিলিয়ে অনন্য এক কাব্যগ্রন্থ রূপকথার রাস্তঘাট। এমন একটি গ্রন্থ থাকলে আর কী চাই! কবিকে অভিনন্দন। আসুন, কবির কাব্যগ্রন্থ থেকে একটি কবিতা পড়ি :
তোমার কাছে যেতে
পার হতে হতো
ছাতিম ফুলের সেতু।
সেতু ভেঙে গেছে
ফুরিয়েছে সব রহস্যের মৌ।
ছাতিমের গন্ধের অন্ধকারে
কী যেন অক্ষরের আলো,
তোমার-আমার
সেতুভাঙার স্মারকগ্রন্থ
(মেমোরিয়াল, রূপকথার রাস্তাঘাট)
১২ মার্চ ২০২৫
সরোজ মোস্তফা রচনারাশি
গানপারে বইরিভিয়্যু
- প্রসন্ন রোদনের ছায়ারৌদ্র || সরোজ মোস্তফা - March 19, 2025
- ডাক্তারের চেম্বারে কবিদর্শন ও বরুণমঞ্জুরি || সরোজ মোস্তফা - March 9, 2025
- আলাপচারিতায় ছত্তার পাগলার অনুসন্ধান ৩ : ছত্তার পাগলার গীতাখ্যকবিতার অনুলিখনকার || সরোজ মোস্তফা - February 26, 2025
COMMENTS