কবি আল মাহমুদ আশির দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘ডাকাতদের গ্রাম’ বলেছিলেন। সেটা নিয়ে কী তোলপাড়! তাকে জামাতি মৌলবাদী ইত্যাদি অভিধা দিয়ে চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করা হলো। আল মাহমুদের সেই উক্তি তখন আমারও পছন্দ হয়নি। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের কাছে যত না পড়ার জায়গা, তারচে বেশি মতাদর্শ! বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ভাবমূর্তি’ রক্ষা করতে হবে! কারণ, তার সাথে আমাদের আত্মপরিচয় জড়িত। আমরা যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি! আমাদের হলে হলে অস্ত্রভাণ্ডার, রুমে রুমে ক্যাডার, সন্ধ্যা হলে আনাচেকানাচে ককটেল ফাটে। অস্ত্রের মহড়া হয়, সশস্ত্র লড়াই হয় হল দখল করার জন্য, টেন্ডারবাজি হয়, মাদক ব্যবসা হয়, খুন হয়, এমনকি বাইরের লোককে হলে এনে জিম্মি করে র্যানসম আদায় করা হয়।
তারপরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের মহিমায় আমরা বুঁদ হয়ে থাকতাম। কিন্তু আল মাহমুদের সেই সমস্যা ছিল না। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েননি। তাই শাদা চোখে দেখতে পেরেছিলেন জিনিসটা। শাদাকে শাদা আর কালোকে কালো বলবার সাহসও তার ছিল।
তখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় কেবল ছাত্ররাজনীতি দিয়েই কলুষিত হতো। শিক্ষকরা এই ক্যারাভানে জয়েন করেছেন আরো পরে। তখন পর্যন্ত দলীয় ক্যাডাররা ঠিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে চাইতেন না। গত দুই দশক ধরে তারা এই পদের মজাটা বুঝে গেছেন। এখানে যে ক্ষমতা, মজা এবং ইমিউনিটি আছে — সেটা এনজয় করা শুরু করেন। এখনকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু গুরুগম্ভীর মাস্টারের গোড়া খুঁজলে জানা যাবে তারা ছাত্রজীবনে পাতিক্যাডার ছিলেন।
আগে অস্ত্রবাজি ছিল, কিন্তু শিক্ষকদের তরফে এমন ধরনের যৌন হয়রানির মহামারির কথা শোনা যায়নি। শিক্ষকদের একাংশ তখনো নির্বোধ ছিলেন, ক্ষমতালেহী ছিলেন, ইগোসর্বস্ব ছিলেন, কিন্তু এমন ভয়ঙ্কর প্রিডেটর হয়ে ওঠেন নাই। তাদের হাতে মোক্ষম অনেক অস্ত্র : প্রথম শ্রেণী পাইয়ে দেয়া, বিভাগে যোগদানের সুযোগ, এমনকি বিয়ে করার প্রলোভন! এসব বিষয়ে এমন সব কাহিনি শুনেছি যে এগুলো জনসমক্ষে বলার মতো নয়।
প্রতিবাদ করবেন, অভিযোগ করবেন, কিছুই হবে না। বরং পরীক্ষায় ফেল করবেন। ক্যারিয়ার শেষ করে দেবেন এই প্রিডেটররা!
অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কত গুণী মানুষ পড়াচ্ছেন! বেশিরভাগই এমন। শুধু অল্প কিছু প্রিডেটরের জন্য পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকাঠামোটা কলুষিত হয়ে পড়েছে।
- গল্পের বর্ণ, গন্ধ, ছন্দ ও গীতি || জিহাদ মুনতাছির সাইম - August 17, 2025
- শুকিয়ে যাওয়া ফুলেরা || মাহমুদুর রহমান - July 30, 2025
- জীবনের ঋতুসমুদয় || শিলামনি - July 20, 2025
COMMENTS