পূজাভাবনা || মলয় বৈদ্য

পূজাভাবনা || মলয় বৈদ্য

দুর্গা দেবীর কাঠামো লক্ষ করলে, যে-বার্তাটি প্রতীয়মান হয় তা অসুরশক্তির দমন। শুভ ও নারী শক্তির উপস্থাপন। আমাদের সমাজের নারীরা দশভূজা সর্বংসহা। আমাদের কৃষিভিত্তিক সমাজ বা এর বাইরেও বিষয়টা অনুধাবন করা যায়। সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে তাদের অবদান অসামান্য। নারীর সম্মান নারীর ক্ষমতায়ন আজকের দুনিয়ায় ব্যাপক উচ্চারিত ও আলোচিত। কিন্তু কোন সুদূর অতীত থেকেই বাঙালি সমাজে নারীর অবদানকে উদযাপনের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধা সম্মান জানানোর প্রয়াস বা রীতি চলে আসছে। যদিও আজও তারা তাদের প্রাপ্য সম্মানটুকু পাননি। আমার মনে হয় নারীসমাজের অবদানের স্বীকৃতি সম্মান জানানোর একটি মাধ্যম এই পূজার আয়োজন প্রচলন।

আমাদের পূজার উপকরণাদি — মাটি ধান দূর্বা বেলপাতা কলাপাতা ফুল ফল সবই প্রকৃতি থেকে আহরিত, প্রাকৃতিক। এর মধ্য দিয়ে সৃষ্টিকে প্রকৃতিকে সম্মান শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার প্রয়াস বা বার্তা লক্ষ করি। আজকের দুনিয়ায় জলবায়ুর পরিবর্তন একটি জ্বলন্ত ইশ্যু। এর বিরূপ প্রভাবে জীবজগৎ হুমকির মুখে। যথেচ্ছ বৃক্ষনিধন, বনবাদাড় উজাড় — এর অন্যতম কারণ। বনবাদাড় রক্ষা করা ভালোবাসার এই বার্তাটিও পূজার মধ্যে পরিস্ফুট। হাতি ময়ূর ইঁদুর গরু হাঁস — এগুলো দেবদেবীর বাহন। এগুলোও প্রকৃতির মূল্যবান উপাদান, অমূল্য সম্পদ। দিনে দিনে এগুলোও বিলুপ্তির পথে। আজ খুব বেশি জীববৈচিত্র্য, অভয়ারণ্য ইত্যাদির কথা গুরুত্ব সহকারে উচ্চারিত হয়। আমাদের টিকে থাকার স্বার্থে, বেঁচে থাকার প্রয়োজনে। সেদিন হয়তো মাটির মূর্তি দিয়ে বিষয়গুলো মূর্ত করার চেষ্টা করা হয়েছিল, মানুষের কাছে বার্তাগুলো পৌঁছে দেয়ার জন্যে।

আজকের দিনে আমরা জ্ঞানবিজ্ঞানে চিন্তাচেতনায় বহুদূর এগিয়েছি। তাই বিষয়গুলো আমরা আরও উন্নত মাধ্যমে/প্রক্রিয়ায় প্রকাশ করছি মানুষকে জানাচ্ছি। তাই আমার কাছে মূর্তিপূজা নিছক মূর্তিপূজাই নয়, তারচেয়েও অনেক বেশি। মাটি, মানুষ,  প্রকৃতিকে ভালোবাসা, শ্রদ্ধা করা।

আসুন আমরা সবাই মিলে প্রকৃতিকে ভালোবাসি, নিসর্গ রক্ষা করি, জীববৈচিত্র্য রক্ষা করি, নারীর প্রতি সহনশীল হই, যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করি। সবাইকে শারদীয় শুভেচ্ছা।

… …

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you