‘নাইট ট্রেন টু লিসবন’ ম্যুভিটা দেখছেন? আমেদ্যিও প্রাদো তার বইয়ে বলতেছে — আমাদের এই বাঁইচা থাকার ভিতর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হইল একটা অ্যাক্সিডেন্ট। দ্য ডিরেক্টর অব লাইফ ইজ অ্যাক্সিডেন্ট। অ্যা ডিরেক্টর ফ্যুল অব ক্রুয়েল্টি, ফ্যুল অব কম্প্যাশন, ফ্যুল অব উইচিং চার্ম। আপনে এইবার এইটারে একটা স্যাটায়ার হিসাবে ধইরা নিতে পারেন। আর তারপর নিজের মতো একটা অর্থ কইরা নিতে পারেন। যেমন ‘নাইট ট্রেন টু লিসবন’-এ ডাক্তার মারিয়ানা এরে একটা ফেইট হিসাবে দেখতে চাইছে আর তার সাথে তর্ক করতে গিয়া প্রফেসর রেইমুন্ড এই অ্যাক্সিডেন্টরে দেখতেছে একটা সুযোগ হিসাবে; আচমকা একেবারে অপ্রস্তুত অবস্থায় অপ্রত্যাশিতভাবে হাতে আইসা পড়া সুযোগ হিসাবে। অতএব আপনে এরে কীভাবে নিবেন? কী রেস্পন্স করবেন আপনে? এইভাবে প্রাদো হয়তো এমন এক মুহূর্তরে সিগ্নিফাই করতেছে যেইদিকে আপনার একটু নজর দেওয়া দরকার যেন আপনে নিজেরে আরো কাছ থেইকা জাইনা লইতে পারেন। নিজের ভিতরে গিয়া বুইঝা আসতে পারেন — কতটা গভীর এই ভিতর আপনার।
অ্যানিওয়ে, আমি ইনফ্যাক্ট এক জাদুকর নিয়া কথা বলব; — এ-ই ছিল মনে। এই জাদুকররে আপনে কি চিনেন? অপছায়ার মতো যে আপনারে ঘিইরা রাখতেছে সারাক্ষণ; লতানো শৃঙ্খলের মতো আপনার শরীর বাইতেছে সারাক্ষণ; তার কুফরি-কালাম রক্তাক্ত করতেছে আপনারে; অবসাদে আপনার মনে হইতেছে — তবুও; এই কর্পোরেট-ফ্লাডলাইটের তলেও আপনার শরীর কেউ দেখতেছে না আর; ফলে ক্ষুধার্ত উল্লাস বাতাসে-উড়তে-থাকা অপবাদের তাঁবু গাড়তেছে আপনার ছায়ার উপর; অতএব! আপনে কোথায় যাইবেন?
আর তখন শিরোনামহীন আসে এই জাদুকরের লগে এক বাহাস নিয়া। যেন অবহারে লাশের বিধ্বস্ত বিক্ষত বিব্রত শরীরে জ্বলতেছে সন্ধ্যার আলো-অন্ধকার। মুখ চিনতে পারতেছে কি? দূরে তাঁবুর পাশে দাঁড়াইয়া-থাকা সেনাপতির চোখের ভিতর উড়তেছে বিধবাদের অজস্র না-পড়া চিঠি। অসাধারণ কম্পোজিশন, লিরিক, টিউনিং, ম্যাগ্নেটিক কন্টেন্ট, ইয়াং এক ভয়েসের ন্যাচারাল এফোর্ট — সবকিছু মিলাইয়া আপনে ওই পুরাতন প্রশ্নের মুখোমুখি হইবেন, যেইখানে আপনে জানবেন — একজন আর্টিস্টের রিলেটিভ ট্রুথ বইলা যদি কিছু থাকে তবে সেইটা সে কেবল আর্টের ভিতরেই দেখাইতে পারে। গলাবাজি, দলবাজি, সিন্ডিকেট, এই বাংলার ফ্যাসিস্ট রেজিমের নুন-মরিচ — এইসব কেবল কানার হাটবাজারেই ক্যানভাস কইরা যাইতে পারে। দরবারে-আর্ট-শরিফে না।
কোনো-এক ভোরে মুখোশের জাদুকর
কোন অবসরে চুপিচুপি বিষদাঁত; তারপর
বিপন্ন, বিষণ্ণ তবু হার মেনে নিতে নয়
যুদ্ধ বা সন্ধি পরিচয়।।
হারাইনি; খুন হয়েছি জাদুকর
ভেঙেছি; তবু নতজানু বসে নেই; জাদুকর
শূন্য করিডোরে পদচিহ্ন রেখে যাই
আগামীর বার্তা জানাই …
হাত বাড়ালেই শুধু উল্লাসধ্বনি
যেন ক্লান্ত জনতা ভুলের মিছিলে
বিভ্রান্ত জাদুকর হারিয়ে যায়
রহস্য আমায় ভাবায়।।
ভাবছো তুমি চুপচাপ শহরে
গ্রাফিতি-আঁকা দেয়াল জুড়ে
রক্তের দাগ ছড়িয়ে দিবে
নিয়তির শরীরে; বুকের পাঁজরে …।
প্রাদোরে আবার মনে করতেছি। তার মতো কইরা দেখলে — অ্যাক্সিডেন্টের পরে এত স্ট্রংলি ফিইরা আসাটা শিরোনামহীনের ইন্টেন্স সৃজনশীলতার সাথে আমাদের আরো গভীরভাবে মিলাইয়া দিতেছে। শুধু আর্ট না, বাংলাদেশের ব্যান্ডজগতই না শুধু; এই শক্তিশালীভাবে ফিইরা আসাটা আজকে অবধারিতভাবে লাল-সবুজেরও দরকার। বাংলাদেশের দরকার। অতএব প্রেমিকা, ঘরের দরজায় খিল দিয়া ঘুমাইয়া যাইও না তুমি। ভোরের আগে, আমি ফিরতেছি বাড়ি …
… …
- ন্যাটালি হ্যান্ডালের কবিতা ও ফিলিস্তিন || হাসান শাহরিয়ার - February 17, 2025
- ভাষার ব্রেকিং পয়েন্ট || হাসান শাহরিয়ার - February 4, 2025
- স্বরচিত কবিতা আর তার গানপ্রতিবেশ : প্রচ্ছন্ন অনুপ্রেরণার গল্প || হাসান শাহরিয়ার - January 21, 2025
COMMENTS