নিম্নবর্গের ইতিহাস পাঠের মূল চিন্তক রণজিৎ গুহ মারা গেলেন ৯৯ বছর ৩৪০ দিন বছর বয়সে।
আর মাত্র ২৫ দিন হলে তিনি শতবর্ষ উদযাপন করতেন। একজন ইতহাসলেখক ও তাত্ত্বিকের এত বছর বেঁচে থাকাটা একটা বিরলতম সৌভাগ্যের ব্যাপার। উনি উনার জীবদ্দশায় আধুনিক ভারতবর্ষের সকল উল্লেখযোগ্য ঘটনাই দেখে গেলেন। আমি উনার এই দীর্ঘ বেঁচে থাকাটারে বিশেষ গুরুতপূর্ণ মনে করি একটি বিশেষ কারণে।
উনি যে সময়ের যুবক, ধরেন সেটা ১৯৪০ সালের আগে। সেই সময়ের একজন মানুষের কাছে ১৮৫০ সালের সামাজিক ও রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহগুলোও অনেক জীবন্ত ব্যাপার। ফলে উনাকে আসলে আমার আরো বেশি আগের সময় থেকেই জীবিত লাগে!
ব্যাপারটা এই রকম, ধরেন, আজকে আমাদের হাতে যে তথ্য আসছে সেটা খুব দ্রুতগতির বিষয়। মাত্র গ্যুগলে একটা সার্চ দিলেই খ্রিস্টপূর্ব সময়ের তথ্য জানা যাচ্ছে বা ক্রসচেক করা যাচ্ছে। এই বিষয়টা যতই পূর্বের দিকে যাবেন ততই ডিফিকাল্ট হয়ে আসতে থাকবে শুধুমাত্র জানার সোর্সের অভাবে।
এজন্য রণজিৎ গুহ যে-সময়ে বসে ভারতবর্ষের ইতিহাস পাঠ করেছেন, সেই সময়ে তার কাছে অতীতের ইতিহাস বর্তমান ইতিহাসের মতোই জীবন্ত ছিল। কারণ ইতিহাসের বিভিন্ন ঘটনাগুলোর প্রবাহিত হবার গতি এত মন্থর ছিল যে অনায়াসে ১০০ বা ১৫০ বছর আগের ঘটনাগুলো ধীরেধীরে এগিয়েছে। সেজন্য রিটেন হিস্ট্রির বাইরে ওরাল হিস্ট্রিও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তিনি সেটা ধরতে পেরেছেন ভালোভাবেই।
উদাহরণস্বরুপ, ধরেন উনি যদি সেই সেই সময়ে একজন ৮০ বছরের বৃদ্ধের কছে পলাশীর যুদ্ধ, সিপাহী বিদ্রোহ বা ফকির আন্দোলনের কথা শুনে থাকেন তাহলে চিন্তা করেন উনার ইতিহাসপাঠক হিসেবে বয়স কত গিয়ে দাঁড়ায়! জীবিত ব্যক্তি তার চাক্ষুষ অভিজ্ঞতা বলে যাচ্ছেন। উনি সেটা বহণ করে করে এগিয়ে এসেছেন গতকাল পর্যন্ত। টানা তিন শতাব্দীর ভেতর দিয়ে বয়ে গেছেন তিনি। কী বিরল সৌভাগ্য পেয়েছেন আর তাকে কাজে লাগিয়েছেন দারুণভাবে!
তিনি বিশ্বের জ্ঞানজগতে সংযোজন করেছেন নতুন জ্ঞানকাণ্ড, ভারতবর্ষের পক্ষে নতুন চিন্তাজগৎ, যার নাম নিম্নবর্গের ইতিহাস।
- ডাক ও অন্যান্য কবিতা || নাজমুল হক নাজু - June 1, 2025
- তুমি বাংলাদেশ ও অন্যান্য কবিতা || ফজলুররহমান বাবুল - May 27, 2025
- মেঠোসুর কলরব : আবহমানের উৎসব || রূপকার - May 17, 2025
COMMENTS