নামটা খুব মজার। রবিনহুড আর্মি। ভারতের তরুণরা এই দল বানিয়েছে। তাদের কাজ হলো বড়লোকের উচ্ছিষ্ট খাবার নিরন্ন মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া। ১৮০ মিলিয়ন মানুষ পর্যাপ্ত খাবার পায় না শাইনিং ইন্ডিয়ায়। প্রতিটা ‘শাইনিং’ সভ্যতার অপর পিঠে এই নীরব দুর্ভিক্ষ থাকে। তরতর করে বাড়তে থাকা জিডিপির গল্পের ভেতর হাবাহাবলার মতো আধপেটা হয়ে থাকতে হয় এক বিশাল জনগোষ্ঠীকে।
শাইনিং দেশের গল্প, জিডিপির গল্প, রেমিট্যান্সের গল্প শুনতে শুনতে কান পচে যায়। কিন্তু ফুটপাথে নিরন্ন মানুষের ভিড় খালি বাড়ে। মুখে লবণ দিয়ে নবজাতককে মেরে ফেলে মা, — খাবার দিতে পারে না বলে। সত্তর কিংবা আশির দশকের গরিব বাংলাদেশে এটা বিরাট খবর হতো। হেডলাইন হতো। আজ যে সেটা হলো না, তার পেছনেও কাজ করছে শাইনিং ন্যারেটিভ। উন্নয়নকে চটিও না ভাইসব! উন্নয়নের গাল চেটে খাও। সেই পদ্যের শেয়ালের মতো, যে কিনা খিদা লাগলে দেয়ালে মুরগি এঁকে আপনমনে চাটত।
রবিনহুড আর্মি দ্রুত পপুলার হয়ে উঠেছে ভারতে। গত ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে তাদের টার্গেট ছিল অন্তত এক মিলিয়ন মানুষের কাছে খাবার পোঁছে দেয়া। এই রবিনহুডরা বড়লোকের খাবার কেড়ে নেয় না, চেয়ে নেয়। কিন্তু রবিনহুড নামটিই তারা নিয়েছে। তাতে বড়লোকেরাও নিশ্চয়ই হুমকি বোধ করছে না! সমাজতন্ত্র মরে গেলে এনজিও হয়। তাতে খুব নিরাপদভাবে গরিবিসেবাও হয়।
এই অসম্ভব সুন্দর উদ্যোগ রবিনহুড আর্মিও নিশ্চয়ই একদিন বড় কোনো এনজিও হয়ে উঠবে। তারাও উন্নয়নের গল্প শোনাবে। আজ যেমন গ্রামীণ ব্যাংক বা ব্র্যাক শোনায়। শুনতে যতই ম্যাড়ম্যাড়ে লাগুক, শুরুটা সবারই সুন্দর ছিল। কিন্তু দিনশেষে সবই তো পুঁজিবাদের অজগর গিলে খাবে!
তবু, রবিনহুড আর্মির জন্য ভালোবাসা। স্বপ্ন দেখুক তরুণরা।
২০১৮
… …
- গালিবের কবিতা ও তৌহিদি জনতা || সুমন রহমান - February 17, 2025
- অভ্রবিপ্লব || সুমন রহমান - February 13, 2025
- কথাসাহিত্যিকের প্রস্থান : ফেয়ারোয়েল টু ফয়জুল ইসলাম || সুমন রহমান - January 26, 2025
COMMENTS