হ্যাঁ আমি হাঁস
না মানে তার মাংশ নয় — পালক — শাদা পাখনাপালক
আসলে সে বসে আছে যে-জলে সেই শুদ্ধ সরোবর
আবার ঠিক তা-ও নয়, মানে, যা আমি বলতে চাইছি —
হাঁসের ওপর বসে আছেন যিনি সেই হংসারোহিণী
ওই জ্যোৎস্নাধাঁধানো পবিত্রতা ওই শীতস্নিগ্ধা শারদীয়া
আসলে তালে আছি তার হাতের বীণা ছলে হাতিয়ে নেবার
যদিচ তার পাণিগ্রহণের তরে আমি একবস্ত্রে খাড়া
তা, এসব তারে তো দূর, মুখ ফুটে কাউরেই কিছু বলতে পারি না
জানাজানি হলে পরে বীণাপাণি চটে যান কি না!
.
*
সরস্বতীপূজায়
আওয়াজ থাকবে একটা হাঁসের চলার পানির সরসর
দুইতিনটা শামুকের ঝিনুকের পাখির পাখনার অক্ষর
শাপলা ফুলের মোমের নম্র প্রভায়
বীণা হাতে একটা তান করবেন দেবী, বীণাপাণি, শিবশম্ভু সহায়
আপত্তি নাই মৃদু ভক্তিরিদমে একাধটু হৈহুল্লোড়ও করায়।
.
*
স্বর হ্রস্ব অতি
কিন্তু সম্প্রতি
বিকল্প উপায় নাই দেখে
এঁকেবেঁকে
একটু গলা উঁচাই
নিরুপায়
রিপাব্লিকের আইনকানুন পর্যুদস্ত অবস্থায়
উঁচাইতেই হয়, তাই
নিদেন স্বরগ্রামে একটা আওয়াজ
জন্তু হলে ব্যাঘ্র-সিংহ পক্ষী হলে বাজ
গরু অথবা গাঙশালিক হলেও চলে
ভেড়া বা ছাগশিশু পোষায় না তাই বলে
এইবার, কী করবা আর
উত্তুঙ্গু উতরোল ভবসংসার
করো তোমার প্রতিশ্রুত কাজ
স্বর হ্রস্ব অতি, নিরাবয়ব নিমুরতি
দীর্ঘ ও মূর্ত করে দাও, সরস্বতী!
.
*
স্বর দাও সরস্বতী মিনমিনে গলায় স্বর দাও
বর দাও সুসন্তানবতী চিনচিনে ব্যথায় ব্যান্ডেজ দাও
ঘর দাও ঘরহারাদেরে জন্মান্ধেরে জোছনা দেখাও
বোধি দাও অবোধের বক্ষ কল্কিফুলের সুবাসে ভাসাও।।
অপার হয়া ঘাটে যে একা তারে পার করাও
সকল কাঁটা ধন্য করে তার গাছে ফুল ফোটাও
অন্ধকারে গন্ধরাজের ঘ্রাণ নসিবে যোগাও
অবহেলায় পিছে যে-জনায় তার বিঘ্ন ঘোচাও
বসন্তবাতাসে বহাও ময়ূরপঙ্খী নাও।।
দলদলি টিগার্ডেনের রাস্তায় আমায় নিয়া যাও
সুরমা গাঙের চিলের পাখায় বাসনা ওড়াও
স্তব্ধ দুপুরবেলায় আমার প্রাণ সশব্দ বহাও
বুদ্ধিবিদ্যা দাও বা না-দাও তোমার বীণার বাজনা দাও
প্রণয়হাঁসের পালক দিয়া আমারে বাঁচাও।।
স্বর দাও সরস্বতী মিনমিনে গলায় স্বর দাও
বর দাও সুসন্তানবতী চিনচিনে ব্যথায় ব্যান্ডেজ দাও…
.
*
পড়ো দইয়ল পাখির নামে
পড়ো সবুজ পাতার খামে
পড়ো অশথবটের ছায়া
আকুল আপনজনের মায়া।।
পড়ো সুজন বাদিয়ার ঘাট
পড়ো শহরের শত ঝঞ্ঝাট
পড়ো ঘুমপাড়ানি শিশিরস্নান
প্রণয়সঞ্চিতা গীতবিতান।।
পড়ো প্রতিবেশীর বুকে ক্ষত
পড়ো বন্ধুতা অবিরত
পড়ো অহিংস অবিচল
শুধুই শিকলভাঙার ছল।।
পড়ো ষড়ঋতু সুজলা মাস
পড়ো পুকুরের ছাইরঙা হাঁস
পড়ো মুর্গির কুট্টির আকার
গোটা দুনিয়াটা তোমারআমার।।
পড়ো সক্কলে প্রত্যেকে আজ
পড়ো পুনরায় নিখিল সমাজ
পড়ো লুকি দিয়া যারা চলে গেল
অসহায় বেদনায় এলোমেলো।।
পড়ো দইয়ল পাখির নামে
পড়ো সবুজ পাতার খামে…
—জাহেদ আহমদ
হেমন্তিকা হাজারতেইশ
শ্রীহট্টেশ্বরী শিল্পপ্রবন্ধাবলি
- ভারতীয়া শারদীয় সংখ্যায় একটা বাজারবান্ধব নভেলা পাঠের স্মৃতি - November 9, 2025
- সন্দীপন স্বল্পায়তন - November 5, 2025
- ম্যাক দ্য রকার || জাহেদ আহমদ - November 3, 2025

COMMENTS