শাহ আবদুল করিম : জন্মের শতক পেরিয়ে আরও একটা আস্ত দশক || ইলিয়াস কমল

শাহ আবদুল করিম : জন্মের শতক পেরিয়ে আরও একটা আস্ত দশক || ইলিয়াস কমল

 

জীবদ্দশায় যে ব্যক্তিগণের মুখোমুখি হবার আমার দারুণ আগ্রহ বা লোভ ছিল তার মধ্যে শাহ আবদুল করিম একজন। হ্যাঁ, বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিমের কথাই বলছি।

ইন্টেলেকচুয়াল সিস্টেমের মধ্যে একটা বিষয় খুব সিম্পলি লক্ষণীয় যে, মানুষ তার যথোপযুক্ত মূল্যায়ন বা গুরুত্ব পায় দুইটা ওয়েতে। অধিকাংশই গুরুত্ব বা মূল্যায়ন পায় মৃত্যুর পর। আর যারা বেঁচে থাকতে মূল্যায়ন বা গুরুত্ব পায় সেইসব সৌভাগ্যবান সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সমাজে থাকে হাতেগোনা। করিম সেইসব সৌভাগ্যবানদের মতো না। এমনকি মরার পরেও তুলনামূলকভাবে তিনি ঠিক যতটা গুরুত্ব পাওয়ার কথা ততটা পাননি।

মধ্যবিত্ত পুরস্কার-ও-সম্মাননা-পাওয়া সমাজে তিনি আসলেই যতটা পাওয়ার কথা ততটা পাননি। কারণ? সোজা হিসাব। মধ্যবিত্ত তো জন্মগতভাবে বুর্জোয়া, এই বুর্জোয়া মানসিকতার জন্য তার কাছে করিম পৌঁছাইছে তখনই যখন তারে পণ্যায়ন করা হইছে। এর আগে ব্যাপারটা সামনে আসেই নাই ততটা।

ইন্টেলেকচুয়াল শ্রেণির কাছে করিম বা তার মতো প্রান্তিক শিল্পীরা সবসময়ই ছিল। কিন্তু তারা তো আসলে মুখে মুখে বা বড়জোর অন্তর্গত বলয়ের মধ্যেই তারে নিয়ে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে থাকতেন। কিন্তু করিম আসলে সেইসবের চেয়ে বহু বড় ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্যারালাল বিবেচনা করলে তিনি মার্কিন কান্ট্রিসিঙ্গার পিট সিগারের মতো মেগা ব্যক্তিত্ব।

এই যে দেখেন, মধ্যবিত্তের দোষ কিন্তু আমার মধ্যেও তীব্র। আমরাও বিদেশি ব্যক্তিত্বের প্যারালালে তারে বিবেচনা করি। অথচ আমি তুলনায় আনতে পারতাম লালনের সাথে। লালন যেমন মাসপিপলের মধ্যে ছড়াইছে এমনিতেই। আর শিক্ষিত মধ্যবিত্তের মধ্যে ছড়াইছে শিক্ষিতদের মাধ্যমেই। এই জায়গায় পিছিয়ে পড়েছিলেন শাহ আবদুল করিম।

করিমের যে-কর্ম এইটা মূলত শিক্ষিত মধ্যবিত্তের যে-ভিত্তি ও গণমানুষের ভেতরের যে-প্রাণ, সেই সুর নিয়া। এই একটা দিক বিবেচনা করলেই শাহ আবদুল করিম হইতে পারত বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শিল্পী। কিন্তু জাতীয় পর্যায়ে একুশে পদক পাইলেও সামগ্রিক গুরুত্বের জায়গায় করিম ঠিক ততটা নাই। অবশ্য আমাদের যে-অ্যাক্টিভিটির বা কর্মচাঞ্চল্যের ধরন, তাতে করে তিনি পুরোপুরি পণ্যায়ন হওয়া থেকে এই-জন্যেই কিছুটা বেঁচেও গেছেন। তাই শাহ আবদুল করিমরে এখনও আপন এখনও নিজের ভেতরকার সুরের শিল্পীই মানি।

এই মহান শিল্পীর জন্মের শতক পেরিয়ে আরও একটা আস্ত দশক পূর্ণ হয়ে এল। তার প্রতি প্রাণঢালা ভালোবাসা।

১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২


 ইলিয়াস কমল রচনারাশি
সিনেমার চিরকুট সমস্ত
গানপারে শাহ আবদুল করিম

Support us with a click. Your click helps our cause. Thank you!

আগের পোষ্ট

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you