এমন একটা সময় ছিল যখন কিনা আমার ঘনঘন অভিমান হতো আর আমি মর্মস্পর্শা আওয়াজ দিয়া উঠতাম দিনে চোদ্দবার এইভাবে যে, ‘এমন কথা আমায় তুমি বলতে পারলা! আমি নিজের কানকেই বিশ্বাস করাইতে পারতাসি না!’, বা, আরও বলতাম, ‘তুমি এমনটা করবা আমি ভাবতেই পারিনি!’ … আর এই কায়দায় আমি চিৎকার করতাম, ভীষণ কষ্টও পেতাম তখন সত্যিই, এখনও কষ্ট পাই, চিরদিনই কষ্ট বোধহয় আমি পেয়েই যাব, আর আমি জীবনে এমন একজনকেও পাইনি এখনো যে কিনা আমার ভালোমন্দে খেয়াল দেয় বা আমার প্রতি অনুভূতিদীপ্ত, না কোনো বয়ফ্রেন্ড বা মা-চাচি-ফুপি-খালা, বা আব্বা।
ভুলে যাচ্ছ কেন যে এই জীবনটা আপন মনের মতো তুমি নিজে বেছে নিয়েছ আর তোমার এই বেছে-নেয়া আনন্দবেদনার জীবনটার লাইগা আরও কত লোকে হেল্প করেছে তোমারে এবং এদের সকলের ও প্রত্যেকের প্রতি কৃতজ্ঞতাটা অ্যাট-লিস্ট তুমি তো রাখবা, নাকি? আমার মনে হয় কি যে এই সমাজ আজকে সেই জায়গায় পৌঁছে গেছে যেখানে আমরা সবাই হুড়মুড় করে কেবল সামনের দিকে যেতে চাইছি এবং যেতে চাইছি পড়িমরি উৎকর্ষের দিকে এবং আমরা হারিয়ে বসে আছি শুধু সুদূরের সেই দৃষ্টিটা যা থাকলে বেবাকেই বুঝতে পারতাম সত্যি সত্যি কি এমন আছে সামনের দিকটায়।
বয়ঃসন্ধিকালের প্রত্যেকটা মানুষকেই জীবনের একটা পর্যায়ে নিজের ভিতরে ফেরার জন্যে বাইরের প্রযুক্ত বলের মুকাবিলা করতে হয়। ভিতরেই ঢোকে তারা ক্রমে, সেঁধিয়ে যেতে থাকে, এক-সময় যে যত বেশি নিজের ভিতরে দানা বাঁধতে পারে, যে যত বেশি নিজের নাভির ভিতরে বিড়া পাকাইতে পারে, সে তত বেশি বৈষয়িক সাক্সেস পায়। যারা বাইরে বাইরে নিজেরে ছড়ায়ে রাখে তাদের কৈশোর প্রলম্বিত হয় কেবল। খুব কম লোকই এমন প্রলম্বিত কৈশোর পায়।
পরিচিত প্রত্যেকেই আমারে সামনে পেলে বলে, ‘আরে, শৈলিন দেখি, কী খবর, তোমারে নিয়া তো দেখতাসি ইদানীং হৈ চৈ পড়ে গেসে, কেমন লাগে এসব তোমার?’ আজব জিগানি। এইটা যেন অনেকটা ওই ইশকুলের খেলাদলের কাপ্তানরে জিগানির মতো যে কাপ্তান হয়া তোমার তো মিয়া হেব্বি ভালো হইসে ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি। ইশকুলের অ্যাডাল্টদেরে কেমনে সামলাবা তুমি? সোজা। খালি রিপ্লাই দিবা, ‘আল্লার কিরা, আমি জানি না কেমনে কি হইল।’ ব্ব্যাস, আর লাগবে না।
আর আমারে তো ওই রিয়্যালিটিতেই ফিরতে হয় রোজ শোবিজ থেকে বাসায় এসে। এইখানে এসে শেষমেশ আমি একটা মেয়ে যে কিনা আজও মোটা মোটা পাঁচআঙুলের-মাপমতো ঘরতোলা স্যান্ডেল পরে ঘুরাফিরা করে এই রুম থেকে ওই রুমে।
ইন্ডাস্ট্রিতে একটাই নীতি মাইনা আমি চলি, সেই নীতিটা হচ্ছে যে আমি আমার বাটারফ্লাইগুলার কথা শুনি। স্ক্রিপ্ট পড়ে ভেবেচিন্তে বের করি যে এইটা খাতায় লিখলে ম্যাম আমারে কয়টা বাটারফ্লাই দিব; যদি দেখি যে বাটারফ্লাইয়ের সংখ্যা ভালোই তাইলে নেক্সট লেভেলে আগাই স্ক্রিপ্ট নিয়া। আমি আমার বাটারফ্লাইগুলার ইশারা পালন করি শুধু।
চয়ন, সংকলন ও অনুবাদন : বিদিতা গোমেজ
… …
- শৈলিন উডলির কথাগুলি (৭) - August 11, 2019
- কেইটের কথাবাত্রা (১০) - July 25, 2019
- টিল্ডা টোল্ড (২) - May 12, 2019
COMMENTS