পোস্ট-ক্যাটাস্ট্রোফিক/প্রলয়োত্তর গল্পধারায় যেইসব ম্যুভিসিনেমা বানানো হয় সেইগুলার মধ্যে ‘আই অ্যাম লেজেন্ড’ ইত্যাদি কিসিমের সিনেমায় কিছু-একটা বাঁচানো বা কাউকে সেইভ করার ব্যাপারটা আবর্তিত করে ন্যারেটিভ গড়ানো হয়। একটাকিছু সমূহ পতন হইতে ফেরাবার মরিয়া ট্রাই।
সিনেমায় আমরা দেখতে পাই মনুষ্য প্রতিবেশের ধ্বংসাবশেষ, আধাখেঁচড়া কারখানাগৃহ আর অতিকায় ইমারতের জনশূন্য খা খা শূন্যস্থান, কলকব্জার স্তূপ আর ভাঙ্গারি মেশিনপত্তর, বিরান দোকানপাট আর গুদামঘরের সারি।
জিনিশটা মাথায় আসে এই সিনেমা দেখতে দেখতে যে এইটেকে একটা সাইকোঅ্যানালিটিক টার্ম দিয়া সাব্যস্ত করা যায় এবং সেই টার্মটা হচ্ছে ‘ইনার্শিয়া অফ দি রিয়্যাল’; বাংলায় কি বলা যায় টার্মটাকে? নিষ্ক্রিয়তার বাস্তবতা? না বাস্তবের নিষ্ক্রিয়তা? যা-হোক, পরিস্থিতি চিত্রণে এই ইনার্শিয়া, বাস্তবের বিকলন বা বিকলনের বাস্তবতা, আস্ত ম্যুভিজুড়ে যারে বলে রাজ করেছে। একটা আদিগন্ত নৈরব্য, মূক বাস্তবতার প্রেজেন্স গোটা ছায়াছবিটিতে বিরাজমান দেখতে পাই।
সিনেমায় একটা কনফ্রন্টেশনের দৃশ্য, মোজেইভ মরুভূমিতে প্লেনের সংঘর্ষ, বোধহয় এই কারণেই এইটা আমাদেরে একটা অথেন্টিক অক্রিয় অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করিয়ে দেয় যেন। করার নাই কিছুই, বাস্তবেরে মেনে নেয়া ছাড়া, আমরা অক্রিয় দর্শক শুধু ঘটমান এই বাস্তবতার। আর এইরকম একটা আর্টিস্টিক মোমেন্ট অফ প্যাসিভিটির দৃশ্যাগম ব্যতিরেকে নতুনের কেতন ওড়ানো সম্ভব নয়, এই রিয়্যালাইজেশনটাও বোধহয় দিবার প্রয়াস পেয়েছে এই সিনেমার ন্যারেটিভ। অ্যাক্টিভ হয়া ফায়দা নাই, প্যাসিভ থাকো, নয়া বাস্তবের আগমন সময়ের অপেক্ষা মাত্র, বোধহয় এই মেসেজটাও ছবিতে দেয়ার চেষ্টাটা করা হয়েছে ডেলিবারেইটলি।
সিনেমায় আরও বলা হয়েছে যেন, অন্তত দর্শকাসনে বসে এইটা আমাদের মনে হতে পারে যে, ব্যর্থতার ভিতর দিয়াই সত্যিকারের নয়া আমদানি হতে পারে, অন্যথা নয়। আমাদের জিন্দেগিতে এক্সিস্টিং নেটোয়ার্কটার প্রোপার ফাংশনিঙের যে সাস্পেনশন তাতেই ধরা পড়ে কেমন আছি আমরা, আছি কীভাবে এবং কোথায়। আগের যে-কোনো সভ্যতা বা সময়ের তুলনায় আজকের সময়ে এই জিনিশটাই বোধহয় বেশি দরকার আমাদের, দ্য সাস্পেনশন অফ প্রোপার ফাংশনিঙ অফ দি এক্সিস্টিং নেটোয়ার্ক অফ আওয়ার লাইফ।
স্লাভো জিজেকের ‘আই অ্যাম লেজেন্ড’ ম্যুভি দেখনোত্তর ইন্টার্প্রিটেশন এসেছে যেই চিলতে গদ্যটায়, অ্যাভেইল করা যায় গ্যুগলসার্চ দিয়া, সেইটার ইংরিজি ট্র্যান্সলেশন অবলম্বনে বাংলায় নিবন্ধটি প্রণীত। বঙ্গানুবাদ ও সম্পাদনায় মিল্টন মৃধা।
… …
- অন্তরঙ্গ কবিচিত্র - January 28, 2021
- সঞ্জীব চৌধুরী : জীবনতথ্য - November 19, 2019
- বাঁশি ও বিচ্ছেদী - November 16, 2019
COMMENTS