এক বহোৎ ধড়িবাজ ও ব্যবসাসফল বুড়োর গল্প শোনাই। তিনি চিরসবুজ। নববসন্ত। নক্ষত্রনির্মাতা। তাঁর বানানো নক্ষত্ররাই দৃষ্টিসীমানায় ঝিলমিল করে দেখতে পাই। দিন নাই রাইত নাই, কিন্তু নক্ষত্ররা আছে। উদান নাই মাদান নাই, কিন্তু নক্ষত্ররা আছে। একার নাই আকার নাই, কিন্তু নক্ষত্ররা আছে। সেই ব্যবসাসফল বুড়োর হাতে বানানো নক্ষত্রপসরা নিয়া সারাদেশ উদ্বেলিত। উন্মথিত। উল্লসিত। ধড়িবাজ বুড়োকে বেশ ভালোবাসে সবাই, বিনম্র, তোয়াজ করে বেড়ায়। সামনাসামনি তোয়াজ করলেও পরোক্ষে বেচারারে নিয়া হাসিঠাট্টা করে দেখতে পাই। কিন্তু ভদ্রলোকের, অস্বীকারের নাই উপায়, ব্যবসাবাণিজ্যের রাশি। বৃহস্পতি দীর্ঘ, তুঙ্গ ও অফুরান। খতিবের পায়ে পুনঃপুনঃ পড়ে ব্যবসা বাঁচাইতে সেয়ানা। আমরা উনারই তো মোল্ড-করা মাল। দুইপয়সার ‘সিক্ষিৎ’ মধ্যবিত্ত মাকাল। অপিনিয়নে বেসামাল। রিলে-ট্রোলে খেলেধুলে কেটে যায় শিল্পছলে বেলা। গানচোরা আর গিরিশৃঙ্গচোরা আর গলদা-কাঁচকি ঋণদানোদিগেরে লইয়া যাদিগের কারবার, উহারাই আমরা। হারামির জন্রা। আমাগেরে রুখিবে? হেহ্! জন্মায়নি হেন লক্ষণ, রাবণ অথবা রামচন্দ্রপরাক্রমী একজনও মগের এই মৃদঙ্গমুল্লুকে। ক্যাচ মি ইফ য়্যু ক্যান! সবার আগে কুসুমবাগে জাগি আমি, চুপকে চুপকে করি চুরি, বিকালবেলা সরোবরতীরে সঙ্গীসাথি চোরদিগেরে নিয়া চালাই ঝিলিমিলি বিজ্ঞাপনী বিশুদ্ধি ক্যাম্পেইন, ইয়াবাস্বামীস্ত্রীদিগেরে লইয়া করি কম্ব্যাট অ্যাগেইন্সট কোকেইন-ক্যানাবিস-মারিহুয়ানা। আমি প্রভাতবেলার মুর্গা, আমি বিকেলের ঝিঙাফুল, আমি জানি ঠিকঠাক সময় এলে কেমন করে অ্যাপ্লাইতে হয় তেল ও কদমবুসিকৌশল। মোদের সুখের সীমা নাই, মোরা সাত হাজার ফুট নিচে খাড়ায়া সাত নম্বর আরশ পরিভ্রমণের গপ্পো ফাঁদিয়া যাই, কিসসা আমরা সাক্সেসফ্যুলি জাতিরে গিলায়া যাইতে ট্রেনিংপ্রাপ্ত ও সুদক্ষ। মোগেরে ধরিবার কোনো আইনাদালত বঙ্গেতে পয়দা হয় নাই। আইসো, সোনা, মুই তোমার নানাভাই, অলথ্রু ফোর-কালার, শরীরের ঘামটুকু শুধু কটু, অলটুগেদার ঝকঝকা ছাপা আমরার, মেকাপ-গেটাপ মনোহর, তবু লোকে মোরে মিছামণ্ডল কয়, ক্যান জানিনে, একতাডাকাইত কয়, ইয়া গাফুরুর রহিম! ন্যায়-অন্যায় জানিনে জানিনে, জেনেমান, শেষ পর্যন্ত তুমিই দি ওয়ান অ্যান্ড ওনলি জ্ঞাতব্য। সোনাজাদু, মনাভাই, লিলুয়া নাতনি, মুই তোমরার রঙ্গিলা নানুভাই, আইসো, তোমরারে ‘এশ্টার’ বানাই! … কিন্তু, রচনার প্রয়োজনে, রচনায়, নামোচ্চারণ অযৌক্তিক না-হলেও অত প্রয়োজনীয় নয়। এবং, দুনিয়াবি নিয়মানুগত রইবার নিষ্ঠা যাদের নাই তাদের নাগাল যদি জীবনে একটাবার পাই, বাঞ্ছা করি বিদ্রোহ শিখায়া যাই। বিপ্লব, বিদ্রোহ প্রভৃতি ত্রিকালপ্রাচীন প্রোডাক্টগুলা ব্র্যান্ডভ্যালু খোয়াইলেও ধড়িবাজ ও ধনসম্পন্ন সম্পাদক প্রবরটি বিদ্রোহ-বিপ্লবের প্রতিচিন্তা সাপ্লাই করেন পাব্লিক স্ফিয়ারে রেগ্যুলার, সাহিত্যফাহিত্য মূলস্ট্রিম বিনোদনের একটা বাইপ্রোডাক্ট মাত্র। বয়ঃসন্ধি-উত্তীর্ণ তরুণ বয়ঃক্রমের নরনারীরা ছাড়াও প্রৌঢ় অথচ প্রথমদিনের তারুণ্য ধরিয়া রাখতে চাওয়া মানুষগোষ্ঠী নিজেদেরে জাহির করবার সবচেয়ে শস্তা রাস্তা মাপে লেখালেখি তথা সাহিত্যের সিটে বসে। খেল তাতে যেমন হোক হয় একটা, খাইখর্চা তাতে বেশি-একটা নাই। নিজের ঘরেই তিশ-পাইতিশটা আনিস-মখলিস পালা যায় আণ্ডাপাড়া হাওরিয়া হাঁসের মতো। ওই কয়টারেই কামে লেলায়া রাখো অবিরত। দশ চড়েও মুখে রা কাড়বে না টাইপের কোমরধসা গান্ডু। ফলে, এরা সাহিত্য বলতেই বোঝে বুজুর্গ বুড়ো ধড়িবাজদের নামকীর্তন। বুড়ো ধড়িবাজের ঘাড়ে চেপে এরা পাড়ি দিতে চায় অমরলোকে। ব্যবসাসফল বুড়ো ধড়িবাজের ফলোয়ারবর্গ ছড়ায়া আছে ন্যাশন্যাল থেকে গ্রাসরুটসের গলিঘুপচি সর্বত্র। ওরা ক্ল্যাসিক করে, ক্ল্যাসিক পড়ে, ক্ল্যাসিকের কলকলানি দিয়া নামাজাহ্নিক সারে প্রত্যহ। ননক্ল্যাসিক কারেন্ট লিটেরারি ওয়েভ ওদের শাউয়ায় রেখাপাতটুকুও করে না। তারা জনপরিমণ্ডল ও জনপরিসর ইত্যাদি বিটকেলে শব্দ বানায়া বানায়া বাজারে ছাড়ে আর বুদ্ধিজীবিতা করে বেড়ায়। ব্যবসাসফল বুড়ো ধড়িবাজের জন্মদিনে এহেন পরিস্থিতির আয়ু সহস্রবর্ষ প্রলম্বিত হোক বলে স্ট্যাটাস লিখে ফেইসবুকের মুখ, বুক ও ভোঁদা লাল করে ফালায়। রেভোল্যুশনের রঙ লাল, নিজের পাছায় বিপ্লব দেখতে দেখতে হরষে নিদ্রা যায়।
- কাব্য ও বিজ্ঞান || শ্রীঅশোকবিজয় রাহা বি.এ - January 14, 2025
- মুরারিচাঁদ কলেজ, অশোকবিজয় রাহা এবং একটি অগ্রন্থিত রচনা || মোহাম্মদ বিলাল - January 14, 2025
- জনতার কাব্যরুচির প্রতীক || ইলিয়াস কমল - December 14, 2024
COMMENTS