হাওয়া মে উড়তা যায়ে … || কল্লোল তালুকদার

হাওয়া মে উড়তা যায়ে … || কল্লোল তালুকদার

তখনও শহরে আসিনি। গ্রামের বাড়িতে রাখাল বন্ধুদের সঙ্গে দুরন্ত শৈশব। প্রায় প্রতিদিনই নূতন নূতন রোমাঞ্চ। তবে যা-কিছু ঘটত তা নিজস্ব গ্রামিক সংস্কৃতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বাইরের জগতের সঙ্গে খুব-একটা যোগাযোগ ছিল না। তবে বৈশাখে চাঁদপুর অঞ্চলের ভাগালু, বর্ষায় গাজিরগান, আম-কাঁঠালের নৌকা, যাযাবর বেদেনি বা পসারিদের আগমনে বিশেষ করে শিশুকিশোরদের মধ্যে দেখা দিত চাঞ্চল্য।

এক বিকেলে হঠাৎ যেন সবার মধ্যে হুলুস্থুল বেঁধে গেল। সবাই দৌড়ে আমাদের বাংলো ঘরের (আমরা বলতাম লাকাড়ি ঘর) দিকে যাচ্ছে। খেলা ফেলে আমিও গেলাম। গিয়ে দেখি এক এলাহি কাণ্ড!

ঘরভর্তি মানুষ। মধ্যমণি হয়ে বসে আছেন যিনি, অদ্ভুত তার বেশভূষা। বাহারি লুঙ্গি, রঙবেরঙের শার্ট, বুকে ঝুলানো সানগ্লাস, পায়ে কেডস্, হাতে ঝকঝক করছে ঘড়ি (পরে জেনেছি ঘড়ির নাম ‘সিকো-ফাইভ’)।

আগে কখনও তাকে দেখিনি। তিনি কুয়েত নাকি কোথায় যেন থাকেন। দীর্ঘদিন পর সেখান থেকে নেমে এসেছেন। আজব আজব সব জিনিসপত্রও নাকি তিনি সঙ্গে করে এনেছেন। তার মধ্যে অন্যতম হলো এই গানশোনার যন্ত্র। টেপরেকর্ডার।

এজন্যই বুঝি সবার এই ঔৎসুক্য, ব্যগ্রতা!

অনেকক্ষণ গানবাজনা, গল্পগুজব চলল। একসময় মজলিস ভঙ্গ হলো। তাকে যে আরও অনেক জায়গায় এই যন্ত্রটি দেখানোর জন্য যেতে হবে!

একজন হাতে নিলেন ব্যাটারি, একজন নিলেন ক্যাসেটের বাকশো আর প্রবাসী নিজে নিলেন যন্ত্রটি — নাম National Panasonic 543. উল্লেখ্য, ব্যাটারিটি তখন প্রায় ৪৫ কিমি দূরবর্তী জেলা সদরে রিচার্জ করাতে হতো।

গর্বিত প্রবাসী দৃপ্ত পায়ে হেঁটে চললেন, আর তাকে অনুসরণ করে চলল একদল বিস্ময়াবিষ্ট মানুষ। ধীরে ধীরে ক্ষীণ হতে থাকে গানের আওয়াজ। তবু যেন এর রেশ রয়ে যায় আকাশেবাতাসে —

হাওয়া মে উড়তা যায়ে
মোরা লাল দুপাট্টি মলমল …

  • লেখায় ব্যবহৃত ছবিটি লেখকের সৌজন্যে পাওয়া

কল্লোল তালুকদার রচনারাশি

কল্লোল তালুকদার

COMMENTS

error: