বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় ছাত্ররাজনীতি একটা ষাট দশকী হ্যাঙঅভার। স্বৈরাচার আইয়ুব খান কিংবা স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করার কাজটুকু এই ছাত্ররাজনীতি করেছিল। ফলে দেশ স্বৈরাচারমুক্ত হয়েছিল সত্য, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় খাড়ায় নাই। কারণ, সে তার মূল কাজের কাজ করতে পারে নাই।
স্বৈরাচার আমলের বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় একটা মতাদর্শে পরিণত হয়েছে, মতপ্রকাশের ‘স্বাধীনতা’ এনজয় করার জায়গা হয়েছে, কিন্তু জ্ঞান উৎপাদনের জায়গা হইতে পারে নাই।
কালেক্রমে স্বৈরাচার সরকার বিদায় নিয়েছে। ‘গণতান্ত্রিক’ সরকারব্যবস্থার পত্তন হয়েছে। কিন্তু আমরা দেখলাম স্বৈরাচার আমলে বিশ্ববিদ্যালয় যে স্বাধীনতাটুকু এনজয় করত, গণতান্ত্রিক আমলে সেইটা আর করতে পারে না! স্বৈরাচার সরকার হামলা করত মূলত বাইরে থেকে, পুলিশ কিংবা পেটোয়া বাহিনি দিয়ে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় তার আর দরকার পড়ে না।
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র/শিক্ষক রাজনীতি মেশিন পলিটিকসে পরিণত হয়েছে। প্যাট্রন-ক্লায়েন্ট রীতি অনুযায়ী এই রাজনীতি চলে। এর মূল অভিসন্ধি হলো, স্ট্যাটাস ক্যু বহাল রাখা। সরকারের জন্য ঝামেলার বিষয়গুলো ঐতিহাসিকভাবে যে এখান থেকেই শুরু হয়!
অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়কে একটা রাজনৈতিক স্পেস ছাড়া আর কিছুই ভাবছে না কেউ। এমন একটা স্পেস, যেটা দখলে রাখতে হবে।
আমাদের সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা খুব বেশি পড়াশোনাকেন্দ্রিক থাকতেন, রাজনৈতিক সাড়াশব্দ দিতেন না, তাদের আদর করে আমরা পাতিবুর্জোয়া, সুবিধাবাদী, লুম্পেন ইত্যাদি নামে ডাকতাম। যারা গবেষণা করতে চাইতেন, তাদের গবেট মনে করতাম।
লেখাপড়ায় ঠনঠন হলেও মাথাটা সিধা রাখার একটা শিক্ষা আশির দশক পর্যন্ত ছিল। সো-কলড গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এইটার চিরমৃত্যু ঘটে গেছে। এখন এই মেশিন পলিটিকসের ক্লায়েন্ট হিসেবে আপনি বিসিএস ক্যাডার হবেন না বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবেন, মাথাটা সে-অনুযায়ী বিকাবেন।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচে স্বাধীন অংশ সম্ভবত এর কর্মচারিরা। যেহেতু ছাত্র-শিক্ষকদের মতো নাকে-খত দেয়ার রাজনীতি তাদের এখনো সেভাবে করতে হয় না।
- ভোটবুথ, ভূতভোট, বজরঙবলি ও বেবুন - November 26, 2024
- ক্বারী আমীর উদ্দিন সান্নিধ্যে সেদিন || তারেক আমিন - November 20, 2024
- পোয়েট ও তার পার্টনার - October 19, 2024
COMMENTS