সুষমা দাস ও লোকসংগীতের অরক্ষিত ভুবন : ঘরোয়া আলাপচারিতা || আজিমুল রাজা চৌধুরী

সুষমা দাস ও লোকসংগীতের অরক্ষিত ভুবন : ঘরোয়া আলাপচারিতা || আজিমুল রাজা চৌধুরী

বাংলা লোকগানের জীবন্ত কিংবদন্তি, বাংলাদেশের সবচাইতে প্রবীণ শিল্পীদের একজন শ্রীমতী সুষমা দাস (Shushama Das), যিনি ৭ দশক ধরে লোকসংগীতের সাথে জড়িত। তার সংগ্রহে আছে অসংখ্য প্রাচীন লোককবির গান; অবাক ব্যাপার যে সেই গানগুলো কোনো ডায়রিপাতায় লিপিবদ্ধ নয়, আস্তটাই তার স্মরণশক্তির আওতায় পুঞ্জিভূত। বয়সের ভারে বেশ নুইয়ে গেলেও গাইবার সময় কণ্ঠ কিন্তু আগের মতোই প্রাণবন্ত। এই বয়সেও সুরেলা কণ্ঠে গান করে অবাক করতেছেন দর্শক, শ্রোতা ও গানপ্রেমীদের। সবার একই প্রশ্ন : ৯০ বছর বয়সে এত সুর, তাল, লয় ঠিক রেখে কি করে সম্ভব সুরেলা কণ্ঠে একের পর এক গান করা? নিশ্চয় গানের প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও ভক্তির গুণেই তিনি অসম্ভবকে সম্ভবে রূপান্তরিত করেছেন।

আমি তাঁর একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম যেখানে তিনি অনেক না-জানা কথা, লোকগানের ইতিহাস ইত্যাদি ব্যাপারে খোলামেলা আলোচনা করেন। নিচে পুরো সাক্ষাৎকার তুলে ধরতেছি।

_________________________

ঘরোয়া আলাপচারিতায় শিল্পী সুষমা দাস
একুশে পদক ২০১৭ সম্মাননা লাভের অব্যবহিত পরেই গৃহীত এই আলাপচারিতা
সাক্ষাৎকারগ্রহিতা : আজিমুল রাজা চৌধুরী
সাক্ষাৎকার ধারণ করা হয়েছে শিল্পীর বাসভবন সিলেটে

_________________________

Sushoma das

 

কেমন আছেন পিসিমা?

এই তো তোমাদের আশীর্বাদে ভালো আছি। মাঝে কয়েকদিন পায়ের সমস্যায় আক্রান্ত ছিলাম, প্রোগ্রামে যাইতে পারি নাই। এখন অনেকটা কমেছে। আজ সকালে বেতারে গিয়ে গান গেয়ে আসলাম।

এই বয়সেও আপনি প্রোগ্রামে গান গাইতে যান?

শরীর ভালো থাকলে কোনো প্রোগ্রামই মিস্ করি না। গানের জন্যই হয়তো এত লম্বা জীবন ভগবান আমায় দান করেছেন। বয়স তো ১০০ ছুঁই ছুঁই। আমার সমবয়সী শিল্পীদের মধ্যে কেউ আর জীবিত নেই। কত মানুষকে দেখতাম, আজ তারা কেউ নেই। একা যখন থাকি তখন এইগুলোই চিন্তা করি। কত কথা কত স্মৃতি! কোনো-একদিন আমিও থাকব না। সবচাইতে বড় কথা হলো, মানুষ আমাকে ভালোবেসে, সম্মান করে, আর এগুলোর জন্যই কাউকে ‘না’ বলতে পারি না। এখন তো বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের দাওয়াতেও অংশগ্রহণ করা লাগে।

কত বছর বয়স থেকে গান গাইতেছেন?

বলতে গেলে যখন থেকে বুঝ হয়েছে তখন থেকেই গান গাই। কারণ আমাদের পরিবার ছিল গানের বাগানের মতো। আমার পিতা রসিকলাল দাস মাতা দিব্যময়ী দাস দুইজনই গান রচনা করতেন এবং গাইতেন। তাদের দেখে দেখে সেই ছোটবেলা থেকেই গান করা। তবে মঞ্চে উঠে বাবার সাথে গান গাইতাম ৭ বছর বয়স থেকে। সেই-যে শুরু হয়েছে তা আজ অবধি চলতেছে। এখন তো ৯০-ঊর্ধ্ব বয়স। আগের মতো কণ্ঠে জোর পাই না, শরীরও অনেক  দুর্বল হয়ে গেছে।

আপনার গানের গুরু কে?

আমার বাবা লোককবি ও শিল্পী রসিকলাল দাসই আমার গানের গুরু। বাবার কাছ থেকেই গান শেখা। বাবা কোনোদিন গানবাজনায় বাধা দিতেন না বরং উৎসাহ দিতেন। আমি বাবামায়ের প্রথম সন্তান। বাবা আমাকে তার ছেলে ভাবতেন। বাবার সাথে কবিগানে যেতাম; তখন মেয়েরা মঞ্চে গান গাইত না, সেইসময় আমি গান গাইতাম।

আপনার মা কি আপনাকে উৎসাহ দিতেন?

সেই সময়ের পরিস্থিতি ছিল অন্য রকম। মেয়েরা পুরুষের সামনে গান গাইত না। কিন্তু আমি যখন মঞ্চে গাইতাম তখন মা এটা ভালা পাইত না। তাছাড়া আমার দাদি বলতেন মেয়েদের আবার গান কি স্কুলে যাওয়া কি! মা তেমন উৎসাহ না-দিলেও বাবা সবসময় আমার গানে খুশি। বলতেন আমার মেয়ে গান গাইবে, কেউ তাতে বাধা দিবা না।

আপনার মা গান রচনা করতেন এবং গাইতেন তাহলে আপনাকে গানের জগতে আনতে আপত্তি কেন ছিল?

মা যে-গান গাইতেন তা ছিল মেয়েলি গান, যেখানে পুরুষদের প্রবেশাধিকার ছিল না, শুধু মেয়েরা মেয়েরা মিলে গান। যেমন ধামাইল গানের মতো। তাছাড়া সে-সময় সমাজ ভালো চোখে দেখত না মেয়েদের গান। তাই মা চাইতেন না আমি গানের জগতে আসি। কিন্তু, ওই যে, রক্তে গান মিশে আছে। তাই তো সেই কঠিন সময়ে গানকে বেছে নেই। আমাদের এলাকার আমিই প্রথম নারী শিল্পী যে মঞ্চে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গাইতাম।

আপনার গানের জীবন শুরু করেন কার গান গেয়ে?

রাধারমণের গান দিয়ে আমার এই জগতে আসা। মূলত ওই গানগুলো ছিল ধামাইল প্রকৃতির।

আর কোন কোন লোককবির গান গাইতেন?

পুরাতন সকল লোককবির গান কম-বেশি গেয়েছি। তাদের মধ্যে হাসন রাজা, আরকুম শাহ, কালা শাহ, কামাল পাশা, দুর্বিন শাহ, শাহ আব্দুল করিম, অধরচান, রামজয় সরকার, শ্যামসুন্দর, দুর্গাপ্রসাদ, আমার বাবা রসিকলাল দাস, গিয়াসউদ্দিন সহ অনেকের গান করেছি। এখন সবার নামও মনে আসতেছে না। যখন বেতারে গান করি তখন নতুন কিছু গীতিকারের গান করতাম যেমন আলমাছ মিয়া, সোবহান সহ অনেকের। তবে রাধারমণের গানেই বেশি ঝুঁকে ছিলাম। রাধারমণের গানের মধ্যে অন্যরকম টান অনুভব করি।

কি ধরনের গান বেশি গাইতেন?

সব ধরনের গানই করেছি। যেমন পল্লীগান, কবিগান, লোকগান, হোরিগান, ঘাটুগান, ধামাইল, সূর্যব্রত, পালাগান, কীর্তন, গোষ্ঠ, সুবলমিলন, বাউলা, ভাটিয়ালী, পীরমুর্শিদি সহ আরো কতো কী! এখন তো অনেক কিছুই নাই কবিগান আমরা যেই-রকম গাইতাম এখন গাওয়া হয় ভিন্নভাবে। ঘাটুগান, হোরিগান নাই বললেই চলে।

আপনাদের সময় কবিগান কি রকম ছিল?

আমি তো ছোটবেলা থেকে বাবার সাথে কবিগানে যাইতাম। তখন দুই দল থাকত এবং প্রতি দলের দলনেতা একজন, যাকে গাজী বলা হতো। তিনি গানগাওয়া প্রশ্ন-করা উত্তর-দেয়া সহ সমস্ত কাজ করতেন। বাকিরা ওনাকে তথ্য ও বাজনা দিয়ে সাহায্য করত। কবিগানের মধ্যে বিভিন্ন পর্যায় ছিল, যেমন : মান, বাঁশি, মাতুর, নন্দবিধান, লক্ষণ, শক্তিশেল। এখন তো আগের মতো কবিগান গাওয়া হয় না। কবিগান পাল্টাতে পাল্টাতে মালজোড়ায় রূপ নেয়। আমাদের অঞ্জন দাশ মালজোড়ায় প্রথম পানকুড়ি আবিষ্কার করেন।

ঘাটুগান ও হোরিগান কি রকম ছিল?

এই যে বললাম সেইসময় মেয়েরা মঞ্চে গান গাইত না। সমাজ এটাকে খারাপ চোখে দেখত। তখন ঘাটুগানে কম-বয়সী ছেলেদেরকে মেয়েদের পোশাক ও সাজে সাজিয়ে মঞ্চে গান করানো হতো। অর্থ্যাৎ মেয়ের পাঠ ছেলেকে মেয়ে সাজিয়ে করানো হতো। এগুলো ছোটবেলায় দেখেছি। আর এটাকেই ঘাটুগান বলা হতো। আরেকটি হচ্ছে হোরিগান। আমি এখনো বিভিন্ন প্রোগ্রামে হোরিগান করি। এই গানটা ছিল শিল্পী প্রথম তালে গান শুরু করবেন, তার সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত সকল শ্রোতারা গান ধরবেন। তালটা কোনো গানে ২ বার কোনো গানে ৩ বার ভেঙে ভিন্ন তালে অন্তরা গাওয়া হয়। সবাই একসঙ্গে মিলে গানটি গাওয়াতে খুব আওয়াজ হয়। তাল যখন ভেঙে নতুন সুর নতুন তালে গাওয়া হয় তখন দৃশ্যটা দেখতে চমৎকার লাগে।

একটি হোরিগান কি শুনাবেন?

বসন্তসময়ে কৃষ্ণ কোথায় গো প্রাণ ললিতে
যৌবন রাখিব রাধার কি মতে
বসন্তসময়ে হরি ভুইলা রইলায় মধুপুরী
এগো ধৈর্য না মানে রাধার চিত্তে গো প্রাণ ললিতে।।

এটা বহুল প্রচারিত হোরিগান।

এত লোককবির বিভিন্ন ধরনের গানের কি ডায়রি আছে আপনার কাছে?

আমার কোনো ডায়রি নেই। যেই গান পছন্দ হতো সেই গানই শোনার পর মুখস্ত হয়ে যেত। এটা আমাকে ভগবান বিশেষ ক্ষমতা দিয়েছেন বলে মনে করি। প্রায় ২ হাজার গান আমার মুখস্ত, কিন্তু কোনোদিন ডায়রিতে লিপিবদ্ধ করি নাই। বেঙ্গলের লুভা নাহিদ চৌধুরী আমাকে এক অনুষ্ঠানে পেয়ে জড়িয়ে ধরে বলল, পিসি আমাকে চিনছেন? আমি বললাম, পরিচয়টা দাও মা। তখন বলল, আপনি যে ঢাকায় বেঙ্গলের অনুষ্ঠানে কাকুর (পণ্ডিত রামকানাই দাশ) সাথে গান গাইছিলেন সেই অনুষ্ঠান আমি করেছিলাম। আপনিও ৭টা গান গেয়েছিলেন। আমি বললাম, এখন তোমায় চিনছি মা। লুভা নাহিদ চৌধুরী আমাকে বলল, পিসি আপনার গানের সিডি আছে কি? আমি বললাম, না। তাহলে এত লোকগান আপনার সংগ্রহে, এগুলোর কি ডায়রি আছে? আমি বলি, না মা, আমার কোনো ডায়রি নেই। আমার সব গানই মনের ডায়রিতে তোলা।

এই যে ডায়রি না-দেখেই প্রাচীন গানগুলো করেন, কখনো ভুল পড়ে না?

বাবা শাহজালালের দোয়ায় কখনো কোনো অনুষ্ঠানে গান ভুলে গিয়ে গাইতে পারিনি ওই অবস্থা হয়নি। আমি যখন গান গাইতে শুরু করি তখন চোখের সামনেই এক-লাইনের পর অন্য-লাইন দেখতে পাই। কিছুদিন আগে মাননীয় সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বাসায় এসেছিলেন। তিনি বলেছেন, মাসিমা আপনার সব গান সংকলন করার ব্যবস্থা করুন, আমরা সহযোগিতা করব। নইলে আমরা অনেক গান যে হারিয়ে ফেলব ইতিহাস থেকে।

আপনার সাথে তো সিলেটের আরেক প্রবীণ শিল্পী চন্দ্রাবতী রায়বর্মণের বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল। তার সম্পর্কে কি কিছু বলবেন?

Soshoma Das and Chandrabati roy barmanচন্দ্রাবতী এবং আমাকে রেডিওর লোকেরা আপন বোন হিশেবেই জানত। ওর সাথে পরিচয় রেডিওতে গান করতে এসে। ও আমাকে দিদি বলে ডাকত। আমাদের সম্পর্ক একদিনের জন্যও নষ্ট হয়নি। একসাথে কত গান গেয়েছি! আমাদের হিন্দুসমাজে জাতপ্রথা আছে। চন্দ্রাবতী এবং আমি দুইজন দুইজাতের, কিন্তু আমাদের দেহ যেন একই মাটি দিয়ে তৈরি। যেই বছর আমার ভাইও (পণ্ডিত রামকানাই দাশ) মারা গেল সেই বছর চন্দ্রাবতীও মারা গেল। এই বছরটা ছিল আমার জীবনের সবচাইতে কষ্টের বছর। একবার হলো কি, আমরা দুইজনই (চন্দ্রাবতী ও আমি) বেতারে গান করেছি। গান শেষে চেক দিত ক্ষিতিশবাবু। ক্ষিতিশবাবু সুমনকে ডাক দিয়ে বললেন মাসিমার চেকটা দিয়ে দিয়ো। সুমন করেছে কি, চন্দ্রাবতীর চেক দিয়েছে আমাকে আর আমার চেক দিয়েছে চন্দ্রাবতীকে। ওইখানে খাম খুলে দেখিনি। পরেরদিন চন্দ্রাবতী যখন টাকা তুলতে ব্যাংকে গেছে তখন ব্যাংকের লোক বলল, আপনার নাম কি? ও বললো, চন্দ্রাবতী। লোকটি বলল, চেকটা তো সুষমা দাশ নামের। তখন চন্দ্রাবতী আমাকে ফোন দিয়ে বলতেছে, ও দিদি, দেখোচাইন আমার চেকটা তোমারে দিছেনি। তোমারটা তো আমারে দিয়া দিছে। আমি বললাম, এখনো আমি খাম খুলিনি। পরে খুইলা দেখি সত্যিই ওর চেক আমার কাছে। খুব ভালো সম্পর্ক ছিল চন্দ্রাবতীর সাথে। কলকাতার শিল্পী ও গবেষক মৌসুমী ভৌমিক আমরা দুইজনরে নিয়া কি ডকুমেন্টারি নাকি বানাইছে।

মৌসুমী ভৌমিককে কি করে চিনলেন?

Soshoma Das and Moushumi Bhoumiকলকাতার মৌসুমী ভৌমিক তো লোকসংগীত সংগ্রহ করে এবং খুব বড় মাপের শিল্পী। ও কার কাছ থেকে আমার সংবাদ নিয়া আমার বাসায় আসছিল। এরপর অনেকবার এসেছে। আমাকে কলকাতায় নিয়ে একটি অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করায়। অসম্ভব ভালো মানুষ। যখন আমায় মাসিমা বলে ডাকে তখন বুক জুড়িয়ে যায়। একদম সাদাসিধে। লোকসংগীতের ব্যাপারে অনেক জ্ঞান ওর। আমি ওর জন্য সবসময় দোয়া করি। এখনো মৌসুমী মাঝে মাঝে আমাকে ফোন দেয় তখন কথা হয়। ও চাইতেছে কলকাতায় আমার গানের একটি প্রোগ্রাম করাতে। দেখা যাক কি হয়।

পণ্ডিত রামকানাই দাশ সম্পর্কে কিছু বলুন।

রামকানাই আমার ছোটভাই। ২০১৪ সালে ও একুশে পদক পায়। ও বয়সে আমার ছোট হলেও আমি ওরে নাম ধরে ডাকতাম না। ওরে ভাইয়ো কইয়া ডাকতাম। আমরা এই দুই ভাইবোনের সম্পর্ক ছিল সব সম্পর্কের ঊর্ধ্বে। আমার জীবনে আমার ভাইয়ের অনেক অবদান আছে। ও আমাকে শুধু বড়বোন না গুরুর মতো মানত। ওর ‘পাগলা মাঝি’ গানের অ্যালবামের ভূমিকায় আমাকে গুরু হিসাবে স্বীকার করেছে। আমার ভাইয়ের কাছে আমিও ঋণী যেদিন আমি জানতে পারলাম আমি একুশে পদক পাবো সেইদিন খুব কান্না করেছি আমার ভাইয়ের লাগি। ও বেঁচে থাকলে কত খুশি হতো! আমার জীবনের সবচাইতে বড় দুঃখ আমার ভাইকে হারানো। যখন শুনলাম আমার ভাই আর জীবিত নেই তখন আমার মনে হইছিল আমিও মরে যাই। কারণ ভাইয়ের বিচ্ছেদ ভুলতে পারব না। আজও ভুলিনি। কত স্মৃতি কত ইতিহাস সব যেন চোখে ভাসে। আমার ভাই ছিল পৃথিবীর সেরা ভাই।
[এই কথাগুলো বলার সময় চোখ দিয়ে পানি পড়তেছিল সুষমা দাশের। সত্যিই, ভাইয়ের প্রতি বোনের এত মায়া আমি (লেখক) আগে কখনো দেখিনি।]

Sushoma Das

আপনি তো অনেক গান পণ্ডিত রামকানাই দাশকে দিয়েছিলেন?

ওইটারও একটি ইতিহাস আছে। একদিন ভাইয়ো আমার জন্য ৫০ টাকা দিয়ে একটি খাতা কিনে দিয়ে বলল, দিদি তোমার যখন যেই গান মনে পড়বে তখনই সেই গান খাতায় তুলে নেবে। আমি প্রাচীন গান নিয়ে একটি পাণ্ডুলিপি তৈরি করব। সেই থেকে আমার যখন যেই গান মনে পড়ত তা লিখে রাখতাম। ২ বছরে ৩৬৪টি গান ওকে দেই। ও আরো গান সংগ্রহ করে একটি পাণ্ডুলিপি তৈরি করেছিল। আমার ভাইয়ো নিজেও গান লিখত। শেষজীবনে ও নিজের গানে সুর দিত, গান গাইত। ও যদি আরো কয়েকটি বছর বেঁচে থাকত তাহলে বাংলা সংস্কৃতিকে, বাংলা লোকগানকে নতুন এক উচ্চতায় নিয়ে যেত। রেডিওর লোকেরা আমাকে বলে আপনি খুব দুঃখী বোন। একই বছর ভাইয়ো (রামকানাই দাশ) হারাইলা বইনও (চন্দ্রাবতী রায়বর্মণ) হারাইলা। আমি সবসময় শয়নে-স্বপনে ওদের দেখতে পাই।

আপনার বাবার কিছু গান কি শুনাবেন?

বাবা তো (রসিক লাল দাশ) বহু গান গান রচনা করেছেন, অসংখ্য প্রাচীন গান গেয়েছেন। তার মধ্যে ভাইয়ো (রামকানাই) কয়েকটি গান নিয়ে ক্যাসেট বের করেছিল। ওইগুলো আমি ওকে দিয়েছিলাম, যেমন :

মনমাঝি তোর জীর্ণ তরী
কিনারা ভিড়াইয়া ধর
একে জীর্ণ তরী তুফান ভারী
ঢেউ দেখিয়া লাগে ডর।।

নায়ের মাঝি ষোলোজন
তারা কেউ তো নয় আপন
ছয়জনা মারিছে বৈঠা
গুন টানে নয়জন

জ্ঞানব্যাপারী ডাইকা বলে রে
মাঝি হাইলকাটা ঘুরাইয়া ধর।।

নায়ের গালা ছুটিলো
ও নায়ের জাকন মারিলো
ভয় পাইয়া মনমাঝি ভাই
চাপাইয়া রইলো

রসিক বলে নামের কলে রে
পাল তুলিয়া যাত্রা কর।।

আরেকটি গান হইল :

বন্ধু তোমার পাই না ঠিকানা প্রাণবন্ধু রে
আমি তোমার হইলাম অচেনা
আমি কেমন কইরা পত্র লিখি রে বন্ধু
আমার গ্রাম পোস্টাপিশ নাই জানা।।

ও বন্ধু রে হইতাম যদি দেশের দেশী
শ্রীচরণে হইতাম দাসী রে
আমি দাসী হইয়া সঙ্গে যাইতাম রে বন্ধু
শুনতাম না কারো মানা।।

ও বন্ধু রে শুইলে না-আসে নিদ্রা
ক্ষণে ক্ষণে আসে তন্দ্রা রে
আমি স্বপ্ন দেইখা জাইগা উঠি রে বন্ধু
কাইন্দা ভিজাই বিছানা।।

ও বন্ধু রে মেঘের সাথে মীনের খেলা
চান্দে করে তারার মেলা রে
ওরে রসিক তোমার প্রেমের কাঙ্গাল রে বন্ধু
আর আমায় কান্দাইয়ো না।।

… এমন আরো কত কত গান!

বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিম সাহেবের সাথে কি একসাথে গান করেছেন?

করিমভাইয়ের সাথে অনেক প্রোগ্রাম করেছি। একসাথে। করিমভাই আমারে খুব মায়া করতেন, আপন ছোটবোনের মতো দেখতেন, আমিও তাকে বড়ভাইয়ের মতো সম্মান ও শ্রদ্ধা করতাম। উদীচির অনেক প্রোগ্রাম আমরা একসাথে করেছি।

বাউল শাহ আবদুল করিমের সাথে আপনার কোনো স্মৃতির কথা কি মনে হয়?

Soshoma Das and Chandrabati roy barmanঅনেক স্মৃতি আছে। করিমভাই শুধু যে গান লিখতেন আর গাইতেন তা নয়, তিনি কিন্তু একজন আদর্শবাদী নির্লোভ প্রকৃতির সাহসী মানুষ ছিলেন। একবার আমরা একটি প্রোগ্রামে গিয়েছিলাম। পথে করিমভাই একটি দোকানে যাত্রাবিরতি করে সবাইকে নিয়ে চা খাওয়ার জন্য হোটেলে ঢুকলেন। করিমভাই মানুষটা ছিল লম্বা। তিনি পায়ের উপর পা রেখে চেয়ারে বসা। যে-ছেলেটা আমাদের চা দিতেছিল, ওই ছেলেটা আমাদের সামনে দিয়ে যাবার সময় বারবার করিমভাইয়ের পায়ের সাথে পা লাগিয়ে দিচ্ছিল। কিন্তু ছেলেটা কোনো ‘দুঃখিত’ কিংবা ‘দেখি নাই চাচা’ কোনোকিছুই বললো না। করিমভাইয়ের মেজাজ কিছুটা গরম হলো। আমাকে বললেন, ‘চা খাওয়া শেষ দিদি?’ আমি বললাম, ‘জি ওয় ভাই।’ তখন করিমভাই ছেলেটারে ডাক দিলেন। ‘ও বেটা ভাতিজা। তোর পা খানতা দে। তোর পায়ের সাথে আমার পা লেগে গেছে। এখন তোর পায়ে ধরিয়া সালাম করি।’ ছেলেটা ওর ভুল বুঝে গেল। ছেলেটা বললো, চাচা আমার ভুল হইছে। করিমভাইয়ে আর রাগ দেখালেন না। ক্ষমা করে দিলেন। আরেকবার আরেকটি ঘটনা মনে পড়ে। তখন ১ টাকায় চারটা পান পাওয়া যায়। আমরা একটি পানের দোকান থেকে পান কিনতেছি। এমন সময় পানের দোকানদার করিমভাইকে বলল, ‘চাচা দোয়া করবা যেন সাদ্দাম যুদ্ধে জিততো পারে।’ তখন ইরাক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে ইরানের সাথে। আমেরিকা সাদ্দামের পক্ষে। করিমভাই বললেন, ‘দিদি পান খাইছো?’ আমি বললাম, ‘একটা মুখে আর তিনটা হাতে।’ করিমভাই বললেন, ‘মুখেরটা ফেলে দাও আর যে-তিনটা আছে ওরে ফিরত দিয়ে দাও।’ দোকানদার বলে, ‘চাচা আমি কিতা ভুল করলাম?’ তখন তিনি বললেন, ‘তুমি যে-যুদ্ধে জিতার জন্য দোয়া চাইলায়, তুমি জানো আমেরিকা জাপানে পারমানবিক বোমা মেরেছিল, এখনো সেখানে দূর্বাঘাসটা পর্যন্ত ওঠে না। আর তুমি যুদ্ধের জন্য দোয়া করতে বলো। এই নাও তোমার পানের টাকা, কিন্তু এই পান আমরা খাইতাম না।’ করিমভাই ছিলেন খুব প্রতিবাদী মানুষ। তিনি তো গণসংগীতও লিখতেন, গাইতেন। করিমভাইয়ের মতো মানুষ হয় না।

আপনাকে সংস্কৃতিমন্ত্রী কেমন করে চিনলেন?

Sushoma_Das_Dhaka_2017করিমভাইয়ের (বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিম) জন্মবার্ষিকীর প্রোগ্রামের নিমন্ত্রণ নিয়া কিছু লোক আমার বাসায় এসেছিল। তারা আমারে কার্ড দিলো এবং বলল, পিসিমা একটা গান গাইতে হবে। আমি বললাম, এখন বয়স হয়েছে। আগের মতো গান গাইতাম পারি না। তারা খুব জোরাজুরি করল। অবশেষে আমি বললাম, শরীর ভালা থাকলে আমি যাইমু তবে গান গাইতে পারব কি না সেটা ভগবান জানে। … অনুষ্ঠানের দিন ঘনিয়ে আসতেছে। কিন্তু আমাকে নিয়ে যাওয়ার মতো লোক নেই। নাতনীর পরীক্ষা তাই বৌমা যেতে পারবে না। ছেলেরা ব্যস্ত। চিন্তায় পড়ে গেলাম কি করে যাই। একা যাওয়ার সাহস নেই, কারণ যদি রাস্তায় শরীর খারাপ করে তখন মানুষ বলবে এই বয়সে একা-একা এই মহিলাকে ছেড়ে দিলো কে? ওর কি পরিবারের কেউ নেই? চিন্তা করতে করতে হঠাৎ মনে পড়ল নিচতলার এক মহিলার কথা, যে আমার গান শোনে এবং আমাকে ভালোবাসে। ওই মহিলাকে বললাম, ‘তুমি কি যাবে আমার সাথে স্টেডিয়ামে? একটি প্রোগ্রাম আছে।’ মহিলা বলল, আমার কাজ আছে তাই যেতে পারব না মাসিমা। … প্রোগ্রামে যাওয়ার আশা প্রায় বাদ দিয়েই দিলাম, কিন্তু মন তো মানে না। ওরা আমাকে সম্মান করে দাওয়াত দিলো, এখন কার্ডের সম্মানটা তো দিতে হবে। আমাদের বাসার পাশে কলোনি আছে, ওইখানের আরেক মহিলাকে বললাম চলো আমার সাথে। কিন্তু সবার মতো ওই মহিলাও ব্যস্ত। সময় নেই আমার সাথে যাবার। মনে তো বোঝে না। শাহজালালবাবার দোয়ায় সিদ্ধান্ত নিলাম একাই চলে যাব। আমার বাটায় পানসুপারি নিয়ে একাই রওয়ানা দিলাম রিকশায় করে। মদিনা মার্কেট এসে দেখি, কী জ্যাম রাস্তায়! ভাবলাম হয়তো আর ঠিক টাইমে উপস্থিত হওয়া অসম্ভব। তখন গাড়ির হরনে বিরক্তি লাগতেছিল, ভাবতেছি যদি উড়াল দিয়ে চলে যেতে পারতাম! রিকশায় বসেই গান গাইতেছি, ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না-আসে তবে একলা চলো রে।’ গান শুনে রিকশার ড্রাইভার বলল, চাচি আপনার মাথা মনেহয় কিছু খারাপ। তার উত্তরে আমি বললাম, ‘কিছু নয় পুরা খারাপ।’ কখন প্রোগ্রামে গিয়ে পৌঁছব সেই চিন্তায় বেদিশা হইয়া বলি, তুমি তাড়াতাড়ি যাও ড্রাইভার। অবশেষে অনুষ্ঠানে পৌঁছে দর্শকসারির পিছনের সিটে বসলাম। অর্থমন্ত্রী বক্তৃতা দিতেছিলেন। আরও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বক্তব্য দিলেন। সেইসময় প্রথম দেখলাম সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরকে। তিনিও বক্তৃতা দিলেন। আমি বাটা থেকে পানসুপারি বের করে সবে মুখে দিয়েছি এমন-সময় শিল্পী জামাল উদ্দিন হাসান বান্না আমার পাশে এসে বলল, মাসিমা আপনি পিছনের সারিতে কেন! আপনি বাংলাদেশের সবচাইতে প্রবীণ শিল্পী। অনুষ্ঠানের আয়োজকরা চাইতেছে আপনাকে দিয়ে গানের পর্ব শুরু করতে। আমি বললাম, আমি অনুষ্ঠানের শেষে গান করি, কারণ আমার বয়স হয়েছে তাই আগের মতো গাইতে পারি না, আমাকে শুরুতে দিলে দর্শক বিরক্ত হবে। বলবে শুরুতেই কোন বুড়িকে দিলো এরা! তাছাড়া এইমাত্র আমি পানটা মুখে দিয়েছি। … হাসান বান্না বলল, পানের ব্যবস্থা আমি করে দিব। কোথা হতে পানির বোতল নিয়ে আসলো, আমি কুলি করে শাহজালালের আশীর্বাদে মঞ্চে উঠলাম। একটি গান গাইব, তার বেশি নয় সেটা আগেই ফুড়াইয়া নিছি। মন্ত্রীরা প্রথম সারিতে বসা। আমার গান দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হচ্ছে তাই ভয়ও লাগতেছিল। সাহস করে করিমভাইয়ের “এখন আমি কি করিব রে / ও প্রাণনাথ তুমি বিনে” গানটি শুরু করলাম। গান শেষ করতেই মন্ত্রী দাঁড়িয়ে বললেন, মাসিমা আমার জন্য আরেকটি গান করুন। মন্ত্রীর অনুরোধে আরেকটি গান ধরলাম, “এখন ভাবিলে কি হইবে গো / যা হবার তা হইয়া গেছে” … গান শেষ করে মঞ্চ থেকে নামতেছি, এমন সময় সংস্কৃতিমন্ত্রী আমাকে পায়ে ধরে সালাম করে জড়িয়ে ধরলেন। তিনি তার পাশে প্রথম সারিতে আমাকে বসালেন। Soshoma Das01মন্ত্রী আমাকে বললেন, মাসিমা আপনার কোনো চাওয়া আছেনি আমার কাছে? আমি বললাম, কজন মন্ত্রী আমাকে জড়িয়ে ধরেছেন এটাই আমার সবচাইতে বড় পাওয়া, আর চাওয়ার কিছু নাই। কিছুক্ষণ পর মন্ত্রীকে বললাম, আমার একটি চাওয়া আছে তখন মনে ছিল না, এখন মনে হয়েছে। মন্ত্রী বললেন, বলুন মাসিমা। তখন বললাম, যদি আপনি আমার বাসায় এসে এককাপ চা খেতেন! মন্ত্রী এমন চাহিদার কথা শুনে অবাক। তিনি বললেন, আমি কাল সকালের ফ্লাইটে ঢাকা চলে যাব। তবে যদি আপনার কোনো অসুবিধা না হয় এবং আপনি খুব ভোরে উঠতে পারেন তাহলে একবার যেতে পারি। আমি বললাম, বাবা, আমি প্রতিদিন ফজরের ওয়াক্তেই উঠে যাই। কোনো অসুবিধা হবে না। এমন সময় আমার বৌমা আমার ফোনে কল দিলো, মনে হয় ওরা চিন্তা করতেছিল। আমি ফোন রিসিভ করে বললাম, ভালো আছি। তখন মন্ত্রী বৌমার সাথে কথা বলতে চাইলেন। তিনি আমার বৌমাকে বললেন, আপনারা চিন্তা করবেন না। মাসিমাকে আমি নিজ দায়িত্বে বাসায় পৌঁছিয়ে দিব এবং কাল সকালে আপনাদের বাসায় চা খাব। ওইদিন রাতে ঘুমাইনি খুশিতে। সকালে মন্ত্রী বাসায় এলেন। কথাপ্রসঙ্গে জানতে চাইলেন, আপনার কোনো অ্যালবাম আছে মাসিমা? আমি বললাম, না। ডায়রি আছে? আমি আবার বললাম, না। তাহলে এত গান মনে রাখেন কি করে? সবই আমার মনের ডায়রিতে লিপিবদ্ধ। তখন মন্ত্রী বললেন, আপনার সংগ্রহে অসংখ্য লোকগান যা আমাদের দেশের সম্পদ। আপনার এইগুলো সংগ্রহ করা খুব প্রয়োজন। এর কিছুদিন পর মন্ত্রী আমাকে ঢাকায় নিয়ে দেশ টিভিতে সাক্ষাৎকার নিলেন। দেশ টিভিতে গানের প্রোগ্রামের ব্যবস্থা করে দিলেন। তারপর একুশে টিভিতেও একটি অনুষ্ঠানে গান করলাম। মন্ত্রী আমাকে যে-পরিমাণ সম্মান দিয়েছেন তার হয়তো যোগ্য না আমি। এই সম্মান এই ভালোবাসা আমি ভুলতে পারব না। আমার জীবনের সবচাইতে বড় পুরস্কার মানুষের ভালোবাসা পাওয়া।

প্রধানমন্ত্রীর সাথে কি আপনার দেখা হয়েছিল?

Sushoma das and Asaduzzaman Noorযখন ‘একুশে পদক’ আনতে ঢাকায় যাই তখন প্রথম দেখা হয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে। সংস্কৃতিমন্ত্রী আমার সাথে তার পরিচয় করিয়ে দিতেই প্রধানমন্ত্রী আমার হাতে ধরে বললেন, মাসিমা কেমন আছেন? আমি বললাম, ভালো। প্রধানমন্ত্রী খুব ব্যস্ত তাই বেশি কথা হয়নি। সংস্কৃতিমন্ত্রী নূর সাহেবকে প্রধানমন্ত্রী বললেন, একদিন মাসিমার গান শুনব। ওইদিনের আরেকটি ঘটনা আছে। আমরা যারা একুশে পদক পেলাম তাদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নাস্তা করলেন। সবাইকে প্লেটের মধ্যে এক-একটি খাবারের প্যাকেট দেয়া হলো। সাথে চাকু। প্রধানমন্ত্রী আমায় বললেন, মাসিমা প্যাকেট খুলুন। তখন বললেন, চাকু দিয়ে কাটতে পারবেন তো? আমি বললাম, পারব। যখন কাটা শুরু করলাম তখন প্রধানমন্ত্রী সংস্কৃতিমন্ত্রীকে বললেন, তাড়াতাড়ি মাসিমার হাত থেকে চাকু সরিয়ে ফেলো, উনি হাত কেটে ফেলবেন। আমি মনে মনে ভাবতেছি প্রধানমন্ত্রী আমাকে যতটা বয়সের দিক দিয়ে দুর্বল দেখতেছেন মনের দিক দিয়া আমি ততটা দুর্বল না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি কৃতজ্ঞ, আমার মতো অবহেলিত শিল্পীকে মূল্যায়ন করার জন্য। আমি প্রাণখুলে তার জন্য আশীর্বাদ করি।

আপনি প্রথম কার কাছ থেকে জানলেন যে ২০১৭ একুশে পদকে আপনি ভূষিত হয়েছেন?

টিভিতে শিরোনাম দিচ্ছিল, সেখানে শুনলাম সুষমা দাস নামের লোকসংগীতশিল্পী পদক পাবেন। আমি ভাবলাম দেশে তো আরো সুষমা দাস আছেন তাদের কেউ হয়তো পাবে। কিন্তু যখন সংস্কৃতিমন্ত্রী ফোন দিলেন তখন পুরোপুরি নিশ্চিত হলাম এই সুষমা দাসই আমি।

আপনার জীবনের আর কি চাওয়া আছে?

আমার জীবনে চাওয়ার মতো কিছু নাই। দীর্ঘ হায়াৎ পেয়েছি, বয়স নব্বই ছাড়িয়েছে, এখনো গান করতে পারি, মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি এগুলোই তো অনেক বড় প্রাপ্তি। তবে ভগবানের কাছে একটিই চাওয়া : মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যেন গান গাইয়া যাইতে পারি।

… …

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you