লাইফে প্রাক্তন থাকা বা প্রাক্তন হয়ে যাওয়াটা একটা জঞ্জালের ব্যাপার। খুবই অ্যাবস্ট্রাক এই অনুভূতির তর্জমা লেখায় প্রকাশ করা খুবই টাফ আমার পক্ষে। তবুও বিষয়টা ফিল আর ভাবার চেষ্টা করি মাঝে মাঝে।
জীবনের কত পরতে পরতে যে সেই মানুষের মুখ ভেসে আসে মনে তার কোনো ইয়ত্তা নাই। আমাদের বিপন্ন জীবনের যতগুলো বিস্ময় আছে তার মাঝে এইটা হলো অন্যতম একটা অনুভূতি। এই অনুভূতি শিস দিয়ে উড়ে উড়ে যাওয়া পাখিটার মতো। যে-হাওয়ায় আপনার নিঃশ্বাস, পাখিটা সেই হাওয়াতেই দোল খায়। এটা সেই বংশীবাদকের মতো যে আপনার বুকের ভেতরের প্রতিটি মোচড়ে মোচড়ে দীর্ঘ, পুরনো আর কঠিন পীড়ার মতো বেজে উঠে প্রতি পূর্ণিমা আর অমাবস্যায়।
আপনি হয়তো নতুন কোনো মুখের সামনে বসে আছেন, কিন্তু পুরনো আদল ভেবে ভেবে গভীরভাবে অচল আর নিস্তব্ধ হয়ে যাচ্ছেন। ভেতরে ভেতরে শীতল হয়ে যাচ্ছেন। আপনার উদ্যম উন্মত্ততা উত্তুঙ্গ প্রেমের লোমহর্ষক অনুভূতি উপরে প্রলেপ ছড়িয়েছিটিয়ে যাচ্ছে বিদায়ী বসন্তের আবেশ। আপনি তারে আর এড়াইতে পারেন না। আপনার মাথার ভেতরে যে প্রেমের বোধ কাজ করে, আপনি দেখবেন তার ভেতরে প্রাক্তন ঠায় হেলান দিয়ে সারাক্ষণ দাঁড়িয়ে আছে।
আপনি যে জীবনে কতবার কতকিছু ভাবতে গিয়ে হোঁচট খাবেন! কত ঢোঁক গিলবেন নিজের অজান্তে তা ভেবেও কূল পাবেন না। শরীর থেকে শরীরে যাবেন ঠিকই কিন্ত আপনার ভেতরে বসে থাকবে এক বিষাদের শর্বরী। আপনি ঠিকই পুরনো সেই দৃশ্য আর ঘ্রাণের পথে পায়চারী করবেন।
প্রাক্তন হয়ে যাওয়াটা সেই মৃত্যুর সেই বোধের মতো। আপনি জানেন কেউ আপনাকে কোনোদিন মারতে পারবে না কিন্ত মরতে হবে। জীবনের যত গন্তব্য অতিক্রম করবেন সকল পথেই মৃত্যু ছায়ার মতো আপনার সঙ্গী। প্রাক্তন হবার বোধটা এ-রকমই।
প্রাক্তন প্রেম যারে একবার খায় তার আর কিছুই বাকি না। কোনো নতুন প্রেমই আর আগের কিছুর রিপ্লেসমেন্ট ঘটায় না। যা হয়, যা কিছু আসে এসবই ভিন্ন কিছু।
এটা ভেঙে যাওয়া কাচের চায়না জারের মতো। হাত থেকে পড়ে গেলে যা আর জোড়া লাগে না। এটা সেই দ্বিবিধ পথ যার সমান্তরাল রেখা আর পরস্পরচ্ছেদী হয় না।
প্রাক্তন প্রেমের বোধ কোনোদিনই মরে না। সেজন্যই আমার প্রিয় কবি জীবনানন্দ দাশ তার দুজন কবিতায় বলেছিলেন :
আমরা দুজনে আছি, পৃথিবীর পুরনো পথের রেখা হয়ে যায় ক্ষয়
প্রেম ধীরে মুছে যায়, নক্ষত্রেরও একদিন মরে যেতে হয়,
হয় নাকি?
জীবনানন্দ এখানে আর বিস্মিত নন, একদম সরাসরিই প্রশ্নবোধক আক্ষেপ রেখে গেছেন।
প্রাক্তনের বোধ আরও তীব্রভাবে ফুটে উঠেছে আরেক প্রিয় কবি বিনয় মজুমদারের কবিতায়। দুজনে একসাথে না-থেকেও কীভাবে একত্রে বইয়ের পাতায় থেকে যাওয়া যায় আজীবন এটাই জীবনে প্রাক্তন হবার বিবিধ জঞ্জাল।
আপনার কোথাও সে নেই। তার কোথাও আপনি আর নেই। কিন্তু আপনার না-থাকাটা তার সবকিছু জুড়েই আছে। জীবনে একবার প্রাক্তন হলে এটাই আপনার নিয়তি। পৃথিবীর কোনোকিছুর বিনিময়ে আপনি আর সেই অসুখ সারাতে পারবেন না।
প্রাক্তন হবার পর আপনার বাকি জীবন মূলত মর্মেই অসুখী। আপনি কেবল তারে দাওয়াই দিয়েই যাবেন। কিন্তু সারাতে আর পারবেন না।
- যেভাবে হয়ে ওঠে ‘এসো আমার শহরে’ || শিবু কুমার শীল - March 6, 2025
- Basudeb Dasgupta’s ‘Randhanshala’ The Cooking Place translated by Sourav Roy - March 4, 2025
- ভিক্টোরিয়া অ্যামেলিনা ও যুদ্ধদিনের ইউক্রেনীয় কবিতা || জয়দেব কর - February 17, 2025
COMMENTS