কাকন বিবি : থিয়েটারে এক অশ্রুত বীরগাথা || শামস শামীম

কাকন বিবি : থিয়েটারে এক অশ্রুত বীরগাথা || শামস শামীম

শুক্রবার (৬ অগাস্ট ২০২৩)  রাতে সুনামগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমিতে ‘কাকন বিবি’ নাটক মঞ্চস্থ হয়।

চিত্রনাট্যের দুর্বলতাকে অধিকারী উতরে গেছেন। কাহিনিকে জোর করে টেনে লম্বা করার অপচেষ্টা না থাকায় ভালো লেগেছে। অহেতুক গানের ব্যবহার করে কনসার্টের রূপ দেওয়ার চেষ্টাও ছিল না — যা নাটকের চরিত্রকে অক্ষুণ্ণ রেখেছে। নাটক ফিল্ম নয়, দর্শন — সেই আবহটা ছিল। অন্য থিয়েটারগুলোর জোড়ালাগানো কাহিনি ও আবহের উপস্থিতিও ছিল না, যা নাটকটির আরেকটি ভালো দিক।

মঞ্চের আলোকসজ্জা, সাউন্ডে কিছু ত্রুটি ছিল। প্রধান চরিত্র কাকন বয়ান শুরু করেন ময়মনসিংহ অঞ্চলের ভাষায়, শেষ করেন প্রমিত বাংলায়। কাকন আদিবাসী খাসিয়া সম্প্রদায়ের। ভাগ্যক্রমে তিনি বাঙালিদের সঙ্গে জড়ালেও তার ভাষায় আমৃত্যু খাসিয়া টান ছিল। খাসিয়া টানে ভাঙা ভাঙা বাংলা বলতেন তিনি। কাকনের দ্বিতীয় স্বামী দিরাইয়ের শাহিদ আলীকেও ময়মনসিংহের ভাষায় কথা বলানো হয়েছে। অথচ শাহিদ আলী খাস সুনামগঞ্জী। তার মুখে এই অঞ্চলের ভাষাটাই মানানসই। কম্পানি কমাণ্ডার শহিদ চৌধুরীর সঙ্গে তার দেখা হয়েছিল যুদ্ধের শেষ দিকে। তাই তাকে ভিক্ষাবৃত্তি বা স্বামী খোঁজার ছলে হানাদার ক্যাম্পের তথ্য সরবরাহের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।

তুমুল যুদ্ধকালে রেডিওতে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বাজানোটা যৌক্তিক ছিল না। বরং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের খবর বাজানো যেত। পাকিস্তানি খানসেনারা তাকে বাঙালি বলে গালি দেওয়ার বিষয়টিও দৃষ্টিকটু। কারণ তিনি খাসিয়া, বাঙালি নন। তার চেহারায় যা স্পষ্ট।

পরবর্তী/আগামী পরিবেশনায় এই দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে ‘কাকন বিবি’ আরো প্রাঞ্জল হবে বলে আশাবাদী। সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের আরো অজানা, অশ্রুত আখ্যানের খোঁজ করবেন তারা এই প্রত্যাশা করি। একুশে থিয়েটারের সবার প্রতি ভালোবাসা।


শামস শামীম রচনারাশি
থিয়েটার গানপারে

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you