কখনো সকালগুলো পর্যটনমুখী হয়ে ওঠে। পিঠে রোদের তাপ বা ফিনফিনে শৈত্য।
—এই রিকশা যাবেন?
—কাগজিটোলা, না না জগন্নাথ … আচ্ছা কাঠপট্টি চলেন।
—ওখানে কি?
সর্পিল গলি, ফেরিওয়ালা, ‘এই চা গরম’, মদিনা টিম্বার্স, বেওয়ারিশ কুকুর, বিড়াল আর প্রাগৈতিহাসিক আত্মীয়, বান্দর। ভেবে অবাক হই আমরা একই লুচি আর সব্জি খাচ্ছি অনন্তকাল। কখনও ক্যাফে কর্নারে ভিড়ভাট্টা ঠেলে কখনও চৌরঙ্গীর ‘দ’-এর মতো বেঞ্চে। সকালে বইয়ের বোঝা টানা ঠ্যালা আর ঝাঁকা মাথায় ‘স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্য’। এই হট হট… এই বুঝি দিলো লাগিয়ে। কিন্তু না ততক্ষণে রূপলাল হাউজের পেঁয়াজ-রসুনের ঝাঁজ নাকে এসে ধাক্কা দেয়। একটা অন্ধকার ঘর থেকে বেরিয়ে আসে কেউ। বলে, ছাদ বন্ধ। করোনা করোনা। একটা বিড়ালের ছবি তুলতে গেলে সে টুক করে অন্ধকারে মিলিয়ে যায়। তখন ভরসা উল্টিনগঞ্জের বেড়িবাঁধে বসে মন্থর লঞ্চের ভেঁপু শোনা। কাঠপট্টির কাঠগন্ধের ভেতর আমরা নিজ নিজ শৈশবের গল্প জুড়ে দেই। খেলাঘরের ব্যাচেলর ছেলেটা দাঁতব্রাশ করতে করতে বান্দর দেখে। বান্দর-মার গায়ে লেপ্টে থাকা শিশুবান্দর। এগুলো বেশ ফটোগ্রাফিক। ঝটপট তুলে নেয়া মোবাইলে। কোন ছবির কি ক্যাপশন তাও মনে মনে ঠিক করে নেয়া। এমন একেকটি সকাল নিরুপদ্রব নির্ভেজাল পর্যটন পাখিরা ভালোবাসে। দূরের কোনো ছাদের বামে গিরিবাজের ওড়াউড়ি দেখে আমরা দেওয়ালে আঁচড় কাটি। কারণ আগামীকাল একই রাস্তায় আবার রোদ এসে পড়বে। একই শক্ত লুচিতে দাঁত বসাবো আমরা। আর একই অন্ধকার প্রেক্ষাগৃহে আমরা দেখব কারা যেন আমাদের মতোই সকাল সকাল নদীমুখী। তারাও অনন্তকাল পোগোজ স্কুলের মস্ত পিলার জড়িয়ে শৈশবের চাষবাস করছে।
(এই লেখাটা ২০২০-এর ২৪ নভেম্বর লেখা। সেইসব হরিণের মতো সময়ে।)
লেখায় ব্যবহৃত ফটোগ্র্যাফের শিল্পী শিবু কুমার শীল। — গানপার
- ভোটবুথ, ভূতভোট, বজরঙবলি ও বেবুন - November 26, 2024
- ক্বারী আমীর উদ্দিন সান্নিধ্যে সেদিন || তারেক আমিন - November 20, 2024
- পোয়েট ও তার পার্টনার - October 19, 2024
COMMENTS