স্মৃতির আলোছায়ার চালচিত্র || আফসানা কিশোয়ার

স্মৃতির আলোছায়ার চালচিত্র || আফসানা কিশোয়ার

এইচএসসি পরীক্ষা দেয়ার পর আমাদের একধরনের বিরাট কিছু করে ফেলেছি ভাব হয়। তো এই ভাবের পাঙখায় চড়ে আমরা বন্ধুবান্ধবরা সোনারগাঁ যাই মিরপুর থেকে ঘুরতে। ভাঙাচোরা দালান, তীব্র রোদ, ছায়া ছায়া একটা এলাকা কেমন যেন উদাস করে তোলে। আমরা প্রায়ান্ধকার অনেক বাড়িতে ঢুকেও যাই।

সেই পানাম সিটির স্মৃতি আজকে সাতাশ আঠাশ বছর পর আমার মগজে সুখের মতো হাঁটতে থাকে শেফালি সাহুর Three of Us ম্যুভিটা দেখতে গিয়ে। শেফালির মুখ টিপে হাসি, চোখের ভঙ্গিমা, শাড়িপরা অ্যাপিয়ারেন্স দেখি আর মনে হয় কতকালের চেনা এক নারী! আমার মা কী তার তারুণ্যে এমন দেখতে ছিলেন!

শৈলজা ওরফে শেফালির ডিমনেশিয়া হয়েছে। তার অনুরোধে তার স্বামী দীপঙ্কর তাকে তার ফেলে-আসা শৈশবকৈশোরের স্মৃতিবিজড়িত শহরে নিয়ে আসে। শৈল যায় তার বন্ধু ব্যাংকার প্রদীপের কাছে। শৈল একে একে ধীরে ধীরে তার মুড়ে-রাখা বইয়ের পাতা খোলে—সেখানে বেদনা আছে, আছে ছেলেমানুষি মেয়েবেলার হারিয়ে-যাওয়া গল্প। আছে প্রদীপের কবিতা ও প্রকাশের-অপেক্ষায়-থাকা উপন্যাসের আলাপ।

মানুষের জীবন কিছু মনে রাখা, কিছু ভুলে যাওয়া নিয়েই চলে। চলে অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যতের গাল ছুঁয়ে। শৈল কী পূর্ণ ডিমনেশিয়ায় আক্রান্ত হবে? তার কী মনে থাকবে নিজের ছেলে ভারতের কথা! প্রদীপ কি আর কবিতা লিখবে? নকশা আঁকবে বউয়ের শাড়িতে? দীপঙ্কর কী মনের ভেতর প্রদীপের জন্য একটু উষ্মা রেখেই দেবে গোপনে!

আমি মারমার কাটকাট অ্যাকশন থ্রিলার দেখা মানুষ—সেই আমি কীভাবে কীভাবে যেন এই ধীর গতির প্রাচীন নগরীর পথে পথে হাঁটা চালচিত্র আলোছায়ার খেলায় ডুবে থাকলাম—হয়তো প্রিয় কোনো মানুষ প্রতিদিন স্মৃতি হারানোর, ভুলে যাওয়ার আশঙ্কায় তুমুল বিদ্ধ থাকলে কেমন লাগে সেটা বুঝবার চেষ্টায়…


আফসানা কিশোয়ার রচনারাশি
গানপার ম্যুভিরিভিয়্যু

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you