সৌন্দর্য আর নারীত্ব, এই দুই জিনিশের কোনো বয়সের সীমা নাই, এই দুই জিনিশ বয়সজয়ী। এবং আরেকটা জিনিশ হচ্ছে গ্ল্যামার, যদিও গ্ল্যামারের ম্যানুফ্যাকচারাররা খাপ্পা হবে শুনে তা-ও বলি যে, এই জিনিশটাও দোকানবাজারে তৈয়ার করবার নয়। রিয়্যাল গ্ল্যামার তো কোনোভাবেই নির্মিত ঘটনা না, এইটা নারীর সহজাত, নারীত্বের অন্তর্গত অংশ হচ্ছে এই রিয়্যাল গ্ল্যামার।
আমার জীবনে শ্রেষ্ঠ প্রশংসনীয় যা-কিছু ঘটেছে সেসবের একটা হচ্ছে এ-ই যে আমি নারী হয়ে জন্মেছি। পৃথিবীর সমস্ত নারী নিজের ভিতর থেকে এই জিনিশটা ফিল্ করবে, এ না-হলে নারীর দুর্গতি কিছুতেই কাটবে না।
হাসিতামশা করতে আমার মন্দ লাগে না, কিন্তু আমি হাসিতামশা হতে চাই না।
ক্রিয়েটিভিটি জিনিশটার উৎপত্তি হয় হিউম্যানিটি থেকে। এবং যখন কি-না আপনি হিউম্যান বিয়িং, তখনই আপনি ভাবেন, গল্পে-গানে মাতেন অথবা গোস্বা হন, আপনি ফিল্ করেন, সাফার করেন। আপনি যা-কিছুই করেন না কেন, উল্লসিত হন, রোগে ভোগেন, নার্ভাস বোধ করেন, সবকিছুর আগে আপনাকে মানুষ তো হতে হবে। মানুষ না হলে এসবের কোনোকিছুই হবার নয়। এইগুলোই সৃজনশীলতার উৎস ও ক্রমবিকাশের চাবি। ক্রিয়েটিভিটিই হিউম্যানিটি, হিউম্যানিটিই ক্রিয়েটিভিটি।
গৃহবধূ হবার ব্যাপারে আমার বিস্তর ফ্যান্টাসি রয়েছে। একদম অল্প বয়স থেকে হাউজোয়াইফ হিশেবে নিজের রূপ কল্পনা করে এত খোয়াব দেখেছি যা বলে শেষ করার মতো নয়। মাঝেমাঝে ভাবি আমি বোধহয় আস্ত একটা ফ্যান্টাসিই।
একজন সমর্থ পুরুষ কখনোই একজন নারীর উপর ডমিন্যান্ট হতে পারে না। আদৌ কি দরকার আছে এমন একজন নারী যে কি-না তার নির্বাচিত পুরুষটিকে ভালোবেসে শারীরিক-মানসিকভাবে এমনিতেই দুর্বল, সেই দুর্বলের উপর বেহুদা আধিপত্যশীল মনোভঙ্গি নিয়া চড়াও হবার? সমর্থ পুরুষ বরং তার বেবাক শক্তিসামর্থ্য দুনিয়ার অন্যান্য অনেককিছুতে ফলাইতে সচেষ্ট হবে এইটাই তো স্বাভাবিক।
ডিজাইনাররা চায় আমারে যেন বসন্তঝলমলা লাগে, পোশাকপরিচ্ছদে, বিশেষত শরীরের নিচের অঞ্চলের নকশাকারুকাজে। এরা আমারে জামা-পাজামায় সারাক্ষণ বসন্ত বানাইতে ব্যতিব্যস্ত। কিন্তু আমি তো ভাই নিজেরে বসন্ত হিশেবে একদমই ভাবি না। আমার নিজেরে সবসময় একটা লালবর্ণ গরম অটম মনে হয়।
অ্যাপোয়েন্টমেন্ট রক্ষায় দেরি হয়ে যাওয়া আমি কিছুতেই কন্ট্রোল করতে পারি না, না-চাইলেও দেরি কিন্তু হয়েই যায় আমার, মাঝেমাঝে দুইঘণ্টার চেয়েও বেশি দেরি, কিচ্ছু করার থাকে না আমার পক্ষে। চেষ্টা করেছি নিজেরে শুধরাইতে, কিন্তু যেইসব কারণে আমার অ্যাপোয়েন্টমেন্ট রাখতে দেরি হয় সেই কারণগুলো অত্যন্ত শৌর্যবীর্যসম্পন্ন এবং আমার জন্যে সেগুলো চরম সুখকর, তুরীয় পুলকের সবসময়।
সৃষ্টিশীল অন্য সমস্ত মানুষের মতো আমিও চাই নিজের উপর কন্ট্রোল থাকবে আমার, যেন পরিচলক চোখের পানি ফেলবার নির্দেশ দিতে না দিতেই ফিক করে একফোঁটা পানি বার করে আনতে পারি চোখ বেয়ে।
স্টার বানাতে পারে কেবল পাব্লিকেরাই। শিল্পী আসলে তারাই, নক্ষত্রনির্মাণের শিল্পী, আমপাব্লিকেরাই সিনেমাস্টারদেরে বানায় এবং আয়ু দেয়। ফিল্মইন্ডাস্ট্রির স্টুডিয়োগুলো শুধু দুইপয়সা কামাইয়ের একটা স্থায়ী ব্যবস্থা বানাতে পারে এবং সেই কাজেই তারা তৎপর থাকে সবসময়।
সন্দেহাতীতভাবে আমি একজন নারী এবং আমার এই নারীত্ব আমি ভীষণ উপভোগ করি।
ছিলাম যখন এত্তটুকুনি লিটল গার্ল, কেউ আমারে একটাবারের জন্যও সুন্দর বলে নাই। “কী সুন্দর তুমি!” — নিদেনপক্ষে এই কথাটাও যদি মিছেমিছি খুশি করার জন্যও বলত কেউ! যদি মিছেও হয় তবু দুনিয়ার সমস্ত বাচ্চামেয়েদেরে বলা উচিত যে সে খুবই সুন্দর।
ভাবতে ভালো লাগে যে ভেতরে-বাইরে আপাদমস্তক আমি সোনালি।
আমি জানি যে আমি কোনোদিনই সুখী হব না, কিন্তু ফুর্তিমাস্তি করতে তো বাধা নাই।
শরীর হচ্ছে দেখাবার জিনিশ, ঢেকেঢুকে রাখবার নয়।
আসলে সত্যি কথা বলতে কি বেশিরভাগ লোকেই আমাকে জানে না।
যতক্ষণ তুমি বেঁচে থাকছ, বাঁচতে চাইছ, কোনোকিছুই এখানে সহজ নয়।
অহঙ্কার আমি অস্বীকার করি।
ছবিতে আমি নিজের ন্যাচারাল ল্যুকটাকেই পছন্দ করি।
চয়ন, সংকলন ও অনুবাদন : বিদিতা গোমেজ
… …
- শৈলিন উডলির কথাগুলি (৭) - August 11, 2019
- কেইটের কথাবাত্রা (১০) - July 25, 2019
- টিল্ডা টোল্ড (২) - May 12, 2019
COMMENTS