এন্ড্রু এন্ড্রু ফ্লেভারের সেই দিনগুলো  || সুমন রহমান

এন্ড্রু এন্ড্রু ফ্লেভারের সেই দিনগুলো  || সুমন রহমান

জায়গাটা এন্ড্রু কিশোরের জন্যই নির্ধারিত ছিল। তিনি যখন প্লেব্যাকে আসেন, তখন বাংলা সিনেমা মাহমুদুন্নবীর গানের আর্বান রোমান্টিক সফিস্টিক্যাসি থেকে মুক্ত হয়ে ভিন্ন পথে হাঁটছে। সেই পথে আবদুল জব্বারের গভীর, সরল আর বেদনার্ত গলা সিনেমাকে আরো বহুদূর সঙ্গ দিতে পারত। কিন্তু জব্বারের অসুস্থতা আর খামখেয়ালিপনা তাঁকে লাগাতারভাবে প্লেব্যাক করতে দেয় নি। সৈয়দ আবদুল হাদী ছিলেন — উদাত্ত, গ্রামীণ, নস্টালজিক। তাঁর জায়গায় অনন্য, কিন্তু জায়গাটা ছোট। ফলে, এন্ড্রু কিশোরের মতো কারো দরকার ছিল। ভার্সেটাইল। একইসঙ্গে আনন্দ ও বেদনার গান যিনি গাইতে সক্ষম। ফোক আর পপে সমান দড়। সিগ্নেচার সহ।

ফলে আশ্চর্যের বিষয় নয় যে, সত্তর-আশি দশকের বাংলা সিনেমায় সবচে কমন চরিত্র সম্ভবত এই প্লেব্যাকসিঙ্গার। এন্ড্রু কিশোর। শাবানা নয়। প্লেব্যাকশিল্পীদের লিস্ট যখন দেখাত, সেখানে এন্ড্রু কিশোরের নাম না থাকলে বহু দর্শক হলের মধ্যেই গালিগালাজ করতেন। নিজকানেই শুনেছি। ক্যাসেট-আমলে এন্ড্রু কিশোর ক্যাসেট-বিক্রির তালিকাতেও শীর্ষে থাকতেন।

আশ্চর্যের বিষয় এটা যে, এই তুমুল জনপ্রিয় এবং দেশের ইতিহাসে সবচে দীর্ঘসময় ব্যস্ত পার করা এই প্লেব্যাকগায়ককে চিকিৎসাখরচের জন্য হাত পাততে হয়েছিল। আমাদের সিনেমাশিল্পের সবচে জনপ্রিয় গায়কের দশা যদি এইই হয়, তবে বনশ্রী আর রাণী সরকারের মতো নায়িকাদের জীবন বস্তিতে কাটবে, এবং বিনা চিকিৎসায় মারা যাবেন কবিতার মতো নায়িকা, প্রবাসী হয়ে ট্যাক্সি চালাবেন তুমুল জনপ্রিয় নায়ক ওয়াসিম — এসবই তো হওয়ার কথা।

এন্ড্রু কিশোরের প্রয়াণের দিনে মনে পড়ল, আমরা তাঁর গলা নকল করে তাঁর গান গাইতাম ছোটবেলায় — জিহ্বা যথাসম্ভব নিচের দিকে রেখে মুখ সরু করে গাইলেই একটা এন্ড্রু এন্ড্রু ফ্লেভার চলে আসত।

আহা, সেইসব দিন!

… …

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you