ফেঁসে-যাওয়া ফিতায় ফিলিংস ও নগরবাউল দিনগুলি || ইলিয়াস কমল

ফেঁসে-যাওয়া ফিতায় ফিলিংস ও নগরবাউল দিনগুলি || ইলিয়াস কমল

জেমসের গানের সাথে আমার পরিচয় হয় ১৯৯৬ সালে।

বাসায় গান শোনার ব্যবস্থা তেমন একটা ছিল না। এমন সময় সেজোভাই একটা ওয়াকম্যান কিনল। আর সাথে দুইটা না তিনটা অ্যালবাম। এর মধ্যে একটা ফিলিংসের ‘নগরবাউল’ আর একটা ফিডব্যাকের ‘বঙ্গাব্দ ১৪০০’। তো, ওয়াকম্যানটা তার একান্তই ব্যক্তিগত সম্পদ বলে সে যখন বাজাইতো তখনই আমি বা আমরা কিছুটা শোনার সুযোগ পাইতাম। কিন্তু আমারও তো তখন গান শুনতে ইচ্ছে করে। উপায় না-থাকলেও ইচ্ছা তো করেই।

এমন একদিন, সেজোভাই বাসায় নাই। আমি সুযোগ পেয়ে ফিলিংস  ব্যান্ডের গান শোনা শুরু করলাম। ‘এ’ পিঠের পুরোটাই শুনলাম ঠিকঠাক। ‘বি’ পিঠের প্রথম গানটা শোনার পরই ক্যাসেটের ফিতা গেল পুলিতে আটকায়ে। কোনও রকমে রক্ষা করে ভাবলাম আজকে আর না শুনি। কিন্তু ক্যাসেট যে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হইল এইটা রিকোভার করি কি করে? ভাবলাম একটু রোদে দিয়ে রাখি তাহলে ড্যাম লাগবে না। যেই ভাবা সেই কাজ, ক্যাসেট রোদে দিয়ে রাখলাম। দিয়ে ভুলে গেলাম। এর মধ্যে বৃষ্টিমামা এসে দুনিয়া আরও ভুলিয়ে দিলো। সন্ধ্যায় যখন সেজোভাই বাসায় ফিরল, তখন তো ক্যাসেট খুঁজে পায় না। আমার তো জিভে কামড়! হায় হায় আজকে খবর আছে, একদম রাত দশটার ইংরেজি সংবাদের মতো! ঘটনা তা-ই হইল, আমি বললাম ক্যাসেট তো রোদে দিছিলাম কিন্তু আনতে ভুলে গেছি। আর যায় কই। মাইর একটাও মাটিতে পড়েনি। সেই থেকে জেমসের গানের প্রেমে।

অডিও শিল্পের তখন তুমুল জনপ্রিয়তা। ওই সময়টাতেই ব্যান্ডের শিল্পীরা একক শিল্পী হিসেবে আবির্ভূত হতে শুরু করল। দীর্ঘ বিরতির পর আবারো জেমসের একক অ্যালবাম বের হলো ১৯৯৯ সালে ‘ঠিক আছে বন্ধু’। ক্যাসেটের সাথে পোস্টার ফ্রি দিবে এই ঘোষণা পেয়ে ক্যাসেটের দোকানে আগাম টাকা দিয়ে রাখছিলাম। সে-বছরই জেমসের একটা কনসার্ট দেখলাম ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট মাঠে। সম্ভবত ছাত্রলীগের প্যানেল-পরিচিতি অনুষ্ঠান ছিল। ওই সময়ের তরতাজা গান ছিল ‘স্বপ্নচারিনী’, যেইটা কবিতা  নামে পরিচিত। সব মিলে পূর্ণাঙ্গ আর প্রথম অন্তরা সহ ২৭টা গান গাইছিল ওই কনসার্টে। এর কিছুদিন পরই ফিলিংস  ভেঙে নগরবাউল  হয়। অডিও শিল্পে তখন (মধ্যবিত্ত শিক্ষিত তরুণ সমাজে) সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল জেমস্, আইয়ুব বাচ্চু ও হাসান। যদিও বিক্রির হিসেবে তখনই তুমুল জনপ্রিয় ছিল মমতাজ। কিন্তু শিক্ষিত সমাজে কেউই মমজাতের গান শুনত না।

জেমসের সেই সময়ের যে-গান, যা মূলত ব্যান্ডের গান হিসেবেই আইডেন্টিফায়েড, সেগুলোকে অতিক্রম করে আর যাইতে পারেনি জেমস নিজেই। গেল বছর বসুন্ধরা ডিজিটালে জেমসের গান শুনে মনে হইছিল এই গানটা না-গাইলেই পারত।

আজকে ফারুক মাহফুজ আনাম জেমসের ৫৮তম জন্মদিন। ভদ্রলোকের কাছে এই দিনে একটাই দাবি, আপনি গান প্রয়োজনে আর কইরেন না, তবুও এত দুর্বল গান আপনার কণ্ঠে আমরা সহ্য করতে পারি না।


ইলিয়াস কমল রচনারাশি
গানপারে জেমস্

COMMENTS

error: