দূরযাত্রায় টেলিসামাদ || শিবু কুমার শীল

দূরযাত্রায় টেলিসামাদ || শিবু কুমার শীল

টেলিসামাদ চলে গেলেন চুপচাপ। তার কমেডি ছোটবেলা থেকেই দেখেছি। কখনও কখনও উপভোগ করেছি। তার সঙ্গে সর্বশেষ দেখা হয়েছিল মহাখালী বক্ষব্যাধি হাসপাতালে। তাও বহুকাল আগে। তখনই তিনি বিস্মৃতপ্রায় ঢাকাই সিনেমার বাজার থেকে।

তার সমসাময়িক কমেডিয়ানদের মধ্যে (হাসমত, আনিস, এটিএম ইত্যাদি) তার কমেডিই সর্বাপেক্ষা ম্যাচিউর ছিল। তবে আমাদের ফিল্মমেকাররা তাকে হয়তো আরো ডায়নামিকভাবে ব্যবহার করতে পারতেন সিনেমায়। তা না করে ভাল্গার আর শিশুতোষভাবে কমেডিকে উপস্থিত করতেন পর্দায়। মজার ব্যাপার হলো চ্যাপলিন কমেডিকে কোথায় নিয়ে গিয়েছিলেন আমাদের নির্মাতারা তা বোধ হয় টের পাননি। যা-ই হোক।

দিলদার-পরবর্তী যুগে ঢাকাই সিনেমায় কোনো কমেডিয়ানের জন্ম হয়নি। বা বলা যায় দিলদারই ঢাকাই সিনেমার কমেডির শেষ প্রতিনিধি। বর্তমান অল্টারনেটিভ বা অন্যধারার ফিল্মে কমেডিয়ান কন্সেপ্টটাই নাই। ফলে বাজারি বা আর্টি কোনো ফিল্মেই এই ধারার অভিনেতার দরকার পড়বে না।

বাংলাদেশে আমার সবচেয়ে প্রিয় কমেডিয়ান ছিলেন হুমায়ুন ফরিদী। তিনিও গত হয়েছেন। তার ধারাটা ছিল অনেকটা কাদের খান বা শক্তি কাপুর স্টাইল। যারা কেবল নিরবচ্ছিন্ন কমেডি করবে না তবে কমেডি তাদের স্ট্রেন্থ।

যা-ই হোক, টেলিসামাদ ঢাকা চারুকলার ছাত্র ছিলেন শুনেছি। তবে কোন ডিপার্টমেন্ট জানা নেই। বাংলা ফিল্মে কমেডিযুগ যখন বিলুপ্ত তখন তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন এটা একটা বেদনার কথা।

স্ক্রিনে যারা হাসাতে পারেন, বা এই কাজটিই ধ্যানজ্ঞান দিয়ে করে থাকেন তারা একটা বড় কাজ করতেন। আমাদের গোমড়ামুখো জীবন নিয়ে কিছুক্ষণ একচোট তামাশা করতে পারতেন তারা। হলের ছেলে-বুড়ো সকলেই বেকুবের মতো হলেও হো হো করে হেসে উঠত। এটা সিনেমা দেখার বাড়তি পাওনা ছিল।

আমাদের কমেডির আরেকটা বৈশিষ্ট্য হলো সারল্য। এর মধ্যে যৌনতা আসলো অনেক পরে। এবং তা আর কমেডি থাকল না। টেলিসামাদ আমাদের সাদা-কালো যুগের রসিক। তার রসবোধ এই চারকালারের যুগের মানুষেরা খুব মিস করব এটাই সবচেয়ে বড় কথা। তার আত্মার শান্তি কামনা করি।

… …

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you