বইমেলা এসে গেলে প্রকৃত পাঠক উড়ে যায়। বসে কেনাবেচার হাট। এরপর আসে সেল্ফি সভ্যতা। তবু প্রকৃত ঘুমের মতো প্রকৃত পাঠকেরা থাকে সাইবার সেল্ফ এক্সিবিশনিজমের আড়ালে। একজন গৌণ লেখক হয়েও আমি সেই কষ্টি পাথর খুঁজি, যাকে দিয়ে নিজেকে ঝালাই করা যায়। কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যায়।
অবশেষে ‘প্রকৃত ঘুমের দুপুর ও চে’ প্রকাশিত হলো। এর পেছনে প্রধান অনুপ্রেরণা ছিল সময়। তবে এই সময়টা কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের যথোপযুক্ত সময় কি না তা আমি নিশ্চিত নই। তবে সময়টা প্রকৃত অর্থেই বন্ধ্যা। সারা দুনিয়ার দিকে তাকালেই বুঝতে পারি এত এত শিশুর সমুদ্রে ভেসে যাওয়া আর এত এত ঝলসে-যাওয়া শিশুর মৃতদেহকে সরিয়ে রেখে আমরা কেমন নির্বিকার দুর্বিনীত দুঃশাসকের হাসি দেখি। কত হারিয়ে-যাওয়া মড়ার খুলির ভেতর এখন সাপেরা বাসা বেঁধেছে।
তা আন্দাজ করি, সমকালীন শিল্পকলা বরং দিন দিন কেনাবেচার হাটেই পরিণত হচ্ছে। যাকে বলা যায় সেলিব্রেশন অব ডেথ। এই মরবিড সময়চক্রের ভেতরে বসেই ২০১৩ থেকে ’১৭ পর্যন্ত রচিত কবিতাগুলো সংকলিত করেছি। বস্তুত এই গ্রন্থে সচেতনভাবেই বিষাদ আর হাহাকারেরই চর্চা করেছি। পতনের ডকুমেন্টেশন করেছি। আপোসের পদাবলি লিখেছি। এই বিষাদ কতটা ব্যক্তিগত আর কতটা আমদানিকৃত তা বিচার করার ভার পাঠককে দিলাম।
এই বইয়ের শিরোনামে মহামান্য চের নাম করেছি যা স্বতঃস্ফূর্তভাবেই এসেছে। তবে আমার অমনোযোগে হয়তো কোনো র্যাডিকালিজম ছিল। পরে এটা নিয়ে ভেবেছি। তখন দেখলাম একজন চে-র মুখচ্ছবিতে কেমন একে একে ভেসে উঠছে শহিদ নূর হোসেন, শ্যামল হেমব্রম, কল্পনা চাকমা, আর আমার মারমা বোনেদের নাই-হয়ে-যাওয়া স্মৃতি।
আর, আমার বই-ই শুধু নয় অন্য বইও কিনুন, পড়ুন, নিন্দা করুন, পাঠ উদযাপন করুন।
যাদের কাছে অশেষ ঋণ : কামরুল হাসান মেনন, একেএম আতিকুজ্জামান রাসেল, অতীশ সাহা, তামান্না পর্ণা, কাজলরেখা শীল, রশিদ শরিফ শোয়াইব, মেজবাউর রহমান সুমন, নাসিফ আমিন, সোহেল মোহাম্মদ রানা, শফিউল জয় প্রমুখ।
যাদের ভালোবাসায় বইটি অবশেষে প্রকাশিত হলো তাদের সেলাম।
—শিবু কুমার শীল ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
- টুকটাক সদালাপ ১৯ - June 24, 2025
- টুকটাক সদালাপ ১৮ - June 14, 2025
- দুইটি দেহের একটি সফর || শিবু কুমার শীল - May 19, 2025
COMMENTS