অজন্ম নক্ষত্র

অজন্ম নক্ষত্র

তার একটা নির্ঘুম রাত
তুলে দিতে চেয়েছিল কোনো-একটা হাতে

একটা গানে, একটা অ্যালবামে
কেবল কষ্ট কাকে বলে ডেফিনিশনটা জানাতে

উদ্দিষ্টার নাম জানা না-থাকলেও অচেনা নয় একেবারে
সে, এসেছে এরপরেও অনেকখানে, অনেক গানে
একের পরে এক আকারে, প্রকারে, অনাকারে-অপ্রকারে

প্রেম অন্ধ ও উদ্বাহু ছোটে যেন শুধু অন্ধকারের সংহারে
বেগ ও বল্গাহারা আগুনের গিরিধারার উৎসারে


জেগে জেগে কাটায়ে গেছে সে
একটা আস্ত জীবন
এক জন্মহীন নক্ষত্রের মতন

সুরে আর কথায় এবং শরীরের ঘামে উদ্গীরণ
ঘটেছে তার রগরগে লেলিহান জীবনাভিপ্সা
দানবিক দর্দ, দমবন্ধ পরিস্থিতি, দমকলদিশা

কালের মন্দিরার মতো উন্নিদ্র বাজায়েছে গিটার
দহনে, দেবনিন্দনে, দুইহাতে
দিনে এবং রাতে
রেখে গেছে নয়া বাংলার বেদ, উন্মথিত, অনিবার

বুঝি কিছুটা পাওয়া যায় তারে তার গিটারব্যঞ্জনায়

তার ছিল জন্মহীন নক্ষত্রের বিমূর্ততা আঁকবার দায়


হাসতে দেখা গিয়েছিল তারে, গাইতে

দেখা গিয়েছিল অনেক কথায় মুখর
অর্ধশতকেরও বেশি বছর

বসন্তে, বর্ষায়, হেমন্তে, স্পেশ্যালি শীতে
স্টেজে এবং স্টুডিয়োতে, ক্যাসেটফিতায় কি সিডিতে
দেখায়েছিল তুজুর্বা তার
আবহমানের পাথরপ্রায় পিঠে রেখেছিল দুর্দমনীয় সমকালিকতা বাংলার

চেনার মতো কেউ চিনল না তারে
এ-ই ছিল আক্ষেপ তার এই নাচাগানাবাহিত রঙ্গসংসারে

এখন তো সমস্ত হয়েছে নিরাই
বিরাজ করছে নীরবতা হাসিশেষের, গানান্তের
অতিগাগনিক আওয়াজটা আর নাই

নিঃসীম রাত্রির ঋতু শুধু অনন্ত নক্ষত্রবীথির পথধারে


শহর ঘুমন্ত
পথবাতিগুলা জাগনা রয়েছে শুধু

অথবা তারাও ঘুমাতেসে হয়তো-বা
রাস্তার কুকুর আর কারেন্টতারে একসার বাদুড়
বোঝা যাচ্ছে না তারা আচ্ছন্ন তন্দ্রায়
নাকি নিছক ভান করতেসে নিদ্রিতের

রূপালি নিশ্চয়, কিন্তু দোকানপাটের আলো
বুঝতে দেয় না রাত্রির রঙটা ভালো
গিটারশরীর এমন আলোয় পাণ্ডুরবর্ণ বলে মনে হয়

এত রাতে কে গেল? নগরবিবিক্তা মাধবী?

কিছু তো আরাম হয়েছে এখন
অন্তত উবার ডাকা যায় রাতবিরেতে
ওয়ার্কস্টেশন থেকে রেসিডেন্সে যেতে
ডেকে নেয়া যায় যে-কাউরে সেলফোনে;
দেহ, মন—

মনও?
কমপ্লিকেইটেড।

অনেক ব্যবসা আজ আর আগেকার অবস্থায় নাই
মিউজিকে যেমন পোশাক, ক্যামেরা আর লাইটের বড়াই


রাতের বেলায় কারা ঘুমায় না
ভাবতে ভাবতে একটা রাত নোঙর করল
ভোরের হার্বারে, — ল্যাডার নামানো হলো সূর্যসৈকতে

তস্কর, তপস্বী ও তান্ত্রিকদের কথা জানে সকলেই;
কিন্তু ওরা নিশ্চয় নিদ্রা যায় দিনের বেলায়?

দিবালোকে জেগে থাকবার প্রাণান্ত প্রচেষ্টায়
মানুষের নিদ্রালিপ্সা প্রকাশ পায়

কেবল জন্মহীন নক্ষত্র ঘুমনিদ্রাজাগতিক হিসাবের বাইরে
হেঁটে বেড়ায়, অ্যানিম্যাল কিংডমে, এই ভিড়ে
নিশ্চেষ্ট অনিদ্রায়, নিদ্রানিরপেক্ষ, অন্ধকারতীরে

কেননা তার জন্ম নাই, মৃত্যু নাই, নিরালম্ব সুরতৃষ্ণা ছাড়া


ক্যাওস জরুরি
নৃত্যপর নক্ষত্রজন্মের জন্যে —
ফ্রেইডরিখ নিটশে বলেছিলেন এই কথাটা
জারাথুস্ত্রের জবানিতে

এবি চিরক্যাওটিক এক নক্ষত্রের নাম

ভোর নাই, দুপুর নাই, কিংবা নাই মধ্যযাম
অজন্ম অথচ অথির নৃত্যপর অস্তিত্ব তার

অন্তর্গত উন্মাদনগুলা বাজনায় এবং গীতে বেঁধে রাখবার
তাড়ন ও তৃষ্ণায় এবি চিরদণ্ডিত


অজন্ম নক্ষত্র
জন্ম নাই মৃত্যু নাই পৃথুল জৈবনিকতা নাই
আছে তবু অস্তিত্ব

সুরে মেলে দেখা তার
সংগীতে স্বেচ্ছাচয়িত উন্মাদনায় ক্যাওটিক সেই নৃত্যসম্ভার

দ্যাখো শুনে একবার
কারে বলে অলৌকিক আনন্দের ভার
কতটা সাক্সেস এসেছে সেই গ্রন্থনার
কতটা-বা ফেইলার

আর কতটা ভালোবেসে সে তার বক্ষে সয়েছিল সেই বেদনা অপার


তাকায়া আছে সে
তাকায়া থাকবে

এবি এক অনিমেষ অভিজ্ঞতা — তাকায়া থাকার


ব্যানারে ব্যবহৃত পোর্ট্রেটশিল্পী আরিফ ইকবাল
লেখা জাহেদ আহমদ

… …

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you