প্রতীচী নৃত্যবিচিত্রা

প্রতীচী নৃত্যবিচিত্রা

আজ থেকে বছর কুড়ি আগে একটা আস্ত শতক ফুরিয়ে যেয়ে একটা আস্ত নয়া জামানা স্টার্ট হবার পয়গাম পাওয়া যাচ্ছিল দিকে-দিগন্তরে। কেবল শতক তো নয়, একটা আস্ত সহস্রাব্দ খতম হবার সেই সময়ে চারিদিকে রব উঠেছিল নস্ট্র্যাডামাসের বুজরুকিপূর্ণ ভবিষ্যদ্বাণী, মিলেনিয়াম বাগের বাজারগরম বোলচালবাজি ইত্যাদি নিয়া। ফাইন্যালি মিডিয়া মাদারির খেইল জম্পেশ হলেও লোকচিত্তে যে দুরুদুরু আশঙ্কা স্প্রেড হয়েছিল তার কিছুই ঘটে নাই। বিভিন্ন প্রকারেণ সংবাদবণিক পাটাতনগুলোর মুনাফা ভালোই হয়েছিল ভোক্তাদের পকেট কেটে। অ্যানিওয়ে। এইসব জোচ্চুরি-বদমায়েশির বাইরে বেশকিছু চমৎকার ইনিশিয়েটিভ নিয়েছিল কতিপয় নিউজ অ্যাজেন্সি; সেইসব ইনিশিয়েটিভের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল বিচিত্র ধরনের জরিপ। শতবর্ষের শ্রেষ্ঠ দশ বিজ্ঞানী, দার্শনিক, সাহিত্যিক, সাহিত্যকর্ম, চলচ্চিত্র, উদ্ভাবন প্রভৃতি নিয়া নানাবিধ জরিপের ফলে সাধারণ লোকের গোচরে বেশকিছু কৌতূহলের খোরাক হাজির হয়েছিল। মনোরঞ্জনের বাইরেও লোকে জ্ঞানচর্চার একটা চান্স পেয়েছিল অল্প হলেও।

শতক ও সহস্রাব্দ সন্ধিক্ষণের ডামাডোলে জগদ্বিখ্যাত টাইম  ম্যাগাজিন একটা সার্ভে কন্ডাক্ট করেছিল পশ্চিম গোলার্ধে ড্যান্সশিল্প শতবছরে কেমন চেহারা লাভ করেছে, এগিয়েছে কতটা, কেমন নতুনতা হাজির করতে পেরেছে তারা নাচের ক্ষেত্রে ইত্যাদি বিষয়ে সেই সমীক্ষা চালিত হয়েছিল। শুধুই নৃত্যকেন্দ্রী জরিপে দেখা যায় টাইম  ম্যাগাজিন তিনটা নাচের নাম আলাদাভাবে প্রেজেন্ট করেছে যেই তিনটা নাচ পাল্টে দিয়েছে ড্যান্সডোমেইনের ছিরিছাঁদ। যুগান্তকারী তিন নাচের নাম ও গ্যুগল করে জেনে নেবার মতো তথ্য যুগিয়েই নিবন্ধটির ইতি টানব আমরা।

টাইম  ম্যাগাজিনের জরিপে সেই তিন নাচের মধ্যে একটির নাম ‘নাইট অ্যান্ড ডে’, আরেকটি হচ্ছে ‘অ্যাপোলো’ এবং সবশেষে বললেও প্রভাবের বিচারে যে-নাচটা মারাত্মক এবং দুনিয়ার জোয়ানবুড়া তাবতের কাছেই যে-নাচটা গ্রাহ্য হয়েছে গেল অর্ধশতকের পরিসরে, সেই নাচটা নামেই চিনবে সবাই, ‘দ্য ম্যুনওয়াক’ নাম তার, এবং জানে সবাই সেই নাচের স্রষ্টা ম্যাজিশিয়্যানটিকেও।

নাইট অ্যান্ড ডে। ফ্রেড এস্টায়ার এবং জিঞ্জার রজার্স যৌথপ্রয়াসে তাদের ছন্দময় স্টেপিং দিয়া আনন্দনৃত্যের একটি বিশেষ ফর্ম অবলম্বন করে সেইটাকে করে তুলেছিলেন প্যপ গীতিকাব্য। সম্পূর্ণ পোশাকে আচ্ছাদিত হয়েও তারা নাচটায় ক্যাপ্চার করেছিলেন তীব্র যৌনাবেদন। সেক্সঅ্যাপিলের ড্যান্স হিশেবে এই নৃত্যকাজটা নাচসমুজদারদেরে আজও হতবাক করে রাখে।

অ্যাপোলো। জর্জ ব্যাল্যানশাইন ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের দিকে একাধারে ৯টা নাচকাজের কোরিয়োগ্র্যাফ করেছিলেন কিংবদন্তি নৃত্যদল ব্যালে রুশের জন্যে। এই মাস্টারপিস দিয়াই তিনি নৃত্যে ক্ল্যাসিক্যালের পুনরাগম ঘটায়েছিলেন আরও স্মার্ট আরও মডার্ন কায়দায়।

এবং দ্য ম্যুনওয়াক। ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দ। ম্যোটাউন মিউজিকের পঁচিশ বছর পূর্তির সেই বছর। দুনিয়া হাতে পেয়েছিল এক অকল্পনীয় উপহার। নাম তার মাইকেল জ্যাকসন। তিরাশিতেই পৃথিবীর জরাজীর্ণ যুদ্ধদীর্ণ মঞ্চের মানুষদেরে দেখালেন তিনি তার অ্যালিয়েন মুদ্রামালার প্রথম স্তবক। সেই বছরেই শুরু। এরপরে এমজের মুদ্রায় রাস্তার কানাগলির আত্রাফ নাচানাচিগুলো, স্ট্রিটড্যান্স স্টেপিংগুলো, মমতা আর মর্যাদায় হাজির হয়ে তাক লাগিয়ে দিতে থাকে ড্যান্সদুনিয়ার পণ্ডিত-মূর্খ সক্কলেরে। এই যাত্রার তুলনা তারপরে মেলে নাই আজও।

প্রতিবেদনকারী : বিদিতা গোমেজ

… …

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you