ছোটবেলায় এই সিনেমা দেখার জন্য কত আকুতি মিনতি করেছি বাবা-মাকে! তাদের একটাই কথা — এই ছবি দেখলে ডরাইবি। অন্য ছবি দ্যাখ।
তখন পুরান ঢাকার মানুষের সিনেমা দেখা ডাল-ভাতের মতো ব্যাপার ছিল। সপ্তাহে এক ছবিই বহুবার গিয়ে দেখছে। আমিও কত ছবি একাধিকবার দেখেছি তার ইয়ত্তা নেই। তবে এই সিনেমা আজও আমি দেখি নাই।
ইত্তেফাকে ফিল্ম এড এর পাতায় বিজ্ঞাপন দেখতাম খুব। খুব ইচ্ছা হতো এই সিনেমা দেখার, কিন্তু উপায় ছিল না কোনো। আমার শৈশবের গোর মুভি এটাই। তাও অদেখা।
এই সিনেমা না দেখলেও এর কাহিনি ছিল মুখে মুখে। একজন শিশুর বাথরুমে আটকে পড়ার গল্প। এবং ১০ দিন অবর্ণনীয় কষ্টের ভিতর দিয়ে অবশেষে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে গল্পের প্রধান চরিত্র শিশুটি।
এই সিনেমার একটা সোশ্যাল ইম্প্যাক্ট ছোটবেলাতেই দেখেছি। স্কুলের বাথরুমকে একটা ভৌতিক এবং মৃত্যুফাঁদ বলেই মনে করত শিশুরা। অনেকেই এই সিনেমার উদাহরণ দিয়ে কথা বলত তখন।
আশির দশকে এমন একটা গল্প বাছাই এবং তা চিত্রায়ণ রীতিমতো রেভোল্যুশন্যারি। ঢাকাই সিনেমা সেদিনও কত মডার্ন কত কন্টেম্পোরারি ছিল! সোশ্যাল ইশ্যুগুলো অবলীলায় উঠে আসছে পর্দায়। কত জন্রা কত বৈচিত্র্য!
আমার মনে পড়ে অভিযান নামে একটা সিনেমা দেখেছিলাম ছোটবেলায়; গল্পটি এমন, — একটা লঞ্চে করে কিছু পুরুষ কোথাও যাচ্ছে; পথিমধ্যে এক নারী, যে আত্মহত্যা করতে নদীতে ঝাঁপ দেয় — ঘটনাচক্রে সেই নারীকে উদ্ধার করে সেই লঞ্চের পুরুষরা। এরপর একটা লঞ্চে একজন নারী আর কিছু পুরুষের নানা রকম মনস্তাত্ত্বিক ও মজার ঘটনার মধ্য দিয়ে সিনেমার কাহিনি আবর্তিত হয়। সেই আশির দশকে এমন একটা গল্প। বলাই বাহুল্য তা কতটা সমকালীন।
ছুটির ঘন্টা-র ‘একদিন ছুটি হবে’ গানটি শিশুদের মুখে মুখে ফিরত ছোটবেলায়। এই গান একইসাথে আমাদের শিশুতোষ গানের একটা স্ট্যান্ডার্ড। এরপর এই পরম্পরা আর বেশিদূর এগোয়নি। না গানে, না সিনেমায়। কোনোরকমে দিপু নাম্বার টু-তে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছে। যারা বাংলাদেশের সিনেমার অতীত দূরবীন দিয়া দেখেন তাদের প্রতি এগুলো খুব মন দিয়ে দেখার এবং পড়ার অনুরোধ রইল।
… …
- এ-দেশে সাম্প্রদায়িকতা নাই : এ এক আশ্চর্য প্যারাডাইজ || শিবু কুমার শীল - October 16, 2021
- বুদ্ধদিনের গান || শিবু কুমার শীল - June 11, 2021
- শেষ প্রণাম || শিবু কুমার শীল - April 13, 2021
COMMENTS