গানপার ফিচারিং প্রেমকুমার

গানপার ফিচারিং প্রেমকুমার

গোটা নামটা তার নিকেশ কান্ত দাশ, ডাকনাম প্রেমকুমার, লোকের মুখে প্রেমদা বা প্রেমভাই হিশেবে বেশ মশহুর। সমবয়সীরা ডাকেন অবশ্য সপ্রেম ডাকনাম ধরেই, আদ্যনামের সঙ্গে বাবু জুতে দিয়ে কেউ কেউ, কেউ-বা ভাবান্দোলিত হয়ে প্রেমের নামটা সমূলে ডেকে ওঠেন কখনোসখনো। মূল নামেই হোক কিংবা ডাকনামে, প্রেমের সাড়া পাওয়া যায় প্রায় তৎক্ষণাৎ। যদি জিগাইতে যান প্রেমেরে তার আসল নামটা কি, তিনি রিপ্লাই দেন — লেখায়পড়ায় নিকেশ কান্ত দাশ, এমনিতে সবাই ডাকে প্রেম নামেই। নিকেশ এবং প্রেম দুইটাই মাতৃপিতৃদত্ত নাম, কোনো ভেজাল নাই নামকরণে, বাংলাদেশী হিপহপ মিউজিশিয়্যানদের মধ্যে চাল্লু ট্রেন্ড প্রেমকুমারজির নামকরণকালে তার প্যারেন্টসরা ফলো করেন নাই। নিশ্চয়। আশ্চর্যাধুনিক বাংলার কবি হইলে প্রেম স্বীয় জনক-জননীগৃহীত নামখানা পাল্টাইয়া হালফ্যাশনের নাম লইতেন কি না তা ঠাহর করা যাচ্ছে না। যাক। আমরা প্রেমকুমারের গান শুনতে এসেছি, নামগানকীর্তন শুনতে বসি নাই।

কিন্তু কোথায় পাবো তারে? প্রেমকুমারের দেখা আমরা পাবো কোথায় যেয়ে? প্রেমের গান শুনতে চাইলে যেতে হবে জননী চায়ের দোকানে। সেই দোকানের অধিকারী ও একমাত্র পরিচালনাকার স্বয়ং প্রেমকুমার। বছর-তিরিশের যুবক। সদা হাস্যরসালাপী। কৃষ্ণসুন্দর গাত্রবরন। মুখটা তাম্বুলরঞ্জিত। ভুঁড়িটা বাড়তির দিকে হলেও গতর শক্তপোক্ত মজবুত। সুবিন্যাস্ত পরিপাটি কেশওয়ালা মাথায় ঝাঁকে ঝাঁকে গানের পোনা। কাঠের ডেস্কবেঞ্চে বসা কাস্টোমার একলার হাতে প্রেম সামলে চলেছেন। মুখে কিন্তু কথার বিরাম নাই। সেই কথার ভিতর রসের ভিয়েন। প্রেমের ন্যায় প্রাণস্ফূর্ত যুবকের দেখা পাওয়া আজকের শহরবাংলায় বিরলপ্রায়।

জননী চায়ের দোকানের এক্স্যাক্ট লোকেশন জানতে চান? আপনি যদি গানপার কার্যালয়ে যান, আম্বরখানায়, দেখা পাবেন প্রেমের। মোদ্দা কথা, গানপারে যাবেন আর প্রেমের দেখা পাবেন না তা হতেই পারে না। আপনি কি লিকার ছাড়া, চা হোক বা স্বাস্থ্যপ্রদ অন্য কোনো তেজসঞ্চারী পানীয়, থাকতে পারেন একমুহূর্তও? যদি না, তাইলে প্রেমের দ্বারস্থ হতেই হবে কাজের ফাঁকে একাধঘণ্টা বিরতিতে। প্রেমেরই ফাঁদপাতা গানপারের সুরডুবন্ত ভুবন।

প্রণয়ভাঙা কাঁচা বয়সে গানই বাঁচিয়ে দিয়েছে, সেদিন কথাচক্রে প্রেম বলছিলেন। প্রণয়িনী ছিলেন যিনি, কিশোর বয়সের সেই বীণাবাদিনী, তিনি নিকেশ কান্ত দাশ ওর্ফে প্রেমকুমারকে ত্যাগ করেছেন সংগত অথচ নির্মম নিয়মে। প্রেমের তখনও, যেমন আজও, পকেটে সংসারনির্বাহের ন্যায় এনাফ পয়সা হয় নাই। বীণার তারে ঝঙ্কার তোলা আজও হয় নাই প্রেমের। হবে বলিয়া আশা আছে? হ্যাঁ, পেসিমিস্ট নন প্রেম। প্রথম প্রণয় ভেঙে যাবার কিছু কন্সিক্যুয়েন্সেস্ তো থাকবেই, আছেও প্রেমের জীবনে, কিন্তু প্রণয়চূর্ণ দুঃখের কারণে ইহজীবনে অসংগতি ঘটাবার মতো হঠকারী নিকেশ কান্ত দাশ ওর্ফে প্রেমকুমার নন। ফলে এই গান। নিজেই গীত লেখেন, সুর করেন, যদিও ভগবানের ইচ্ছায় গাওয়াটা তার এখতিয়ারে নাই। কিন্তু গাইতে পারেন এমন লোকদেরকে প্রেম স্বরচিত সংগীতের আইডিয়া বাৎলে দেন ভালোভাবেই এবং যথাসম্ভব গানটা গীতিকার-কাম-সুরকারের অভিপ্রেত উপায়ে গীতবাদ্য সহযোগে গাওয়ার কাজটা সম্পন্ন হয়েও যায় বটে।

একটা নয়, একাধিক গানখাতা আছে প্রেমের। এই রিপোর্টার অবশ্য খাতাগুলো স্বচক্ষে দেখতে পায় নাই, কিন্তু অচিরে দেশের বাড়ি থেকে প্রেম তার গানখাতাগুলো শহরে নিজের অগোছালো ঘুমের ডেরায় আনাবেন কথা দিয়েছেন এবং তখন আমরা প্রেমের গানের বিস্তার ও বেদ সম্পর্কে একটা আন্দাজ করে নিতে সক্ষম হব আরো ভালোভাবে। এই কিস্তি আমরা তার স্মৃতিনিঃসৃত ছয়টা গানের একটা অ্যান্থোলোজি নিয়া হাজির হয়েছি গানপারের সুধীজনসমাবেশে। আশা করি নিরাশ হতে হবে না কাউকেই।

জীবনে প্রেমে ব্যর্থ হয়েছেন যারা, লাঞ্চিত হয়েছেন যারা প্রণয়নিয়তির নির্দিষ্ট পঙ্কচক্রফেরে, তারাই জানেন আমর্ম প্রণয়ের গতিবিধি। জীবনে একবার প্রেমে যে পড়েছে এবং নাস্তানাবুদ হয়েছে প্রেমসুধাবিষে, সে কোনোদিন প্রেমের প্রতি বিরূপ হতে পারে না। কথাটা আমাদের নয়, নিকেশ ওর্ফে প্রেমকুমার প্রোক্ত কথাগুলো কায়মনোবাক্যে বিশ্বাস করেন এবং বলিয়া থাকেন জননী চায়ের দোকানে ঘের-দেয়া কাঠখোট্টা বেঞ্চিগুলোতে নিত্য সন্ধ্যায় লিকারচায়ের পেয়ালা হাতে চুরট-ফোঁকা রেগ্যুলার খদ্দের কিছু মনের মানুষের কাছে। এবং সিলেটের বিখ্যাত বদনামী বৃষ্টিতে শেকলবন্দি ঢিলাঢালা কাস্টোমারদের দুয়েকজনকে ব্যাটে-বলে পেয়ে গেলে নিজের হাত-ফস্কানো প্রণয়ের গল্প করেন চা বানানো ও অলটাইম কোম্প্যানির রুটিপ্যাকেট আগায়ে দেবার ফোকরে।

IMG_1116

সেইমতো কোনোদিন সুযোগ পেয়ে এক-দুইটা গান এবং সেই গানসৃজনের পটভূমিটাও বলে ফেলতে পারেন। স্বরচিত লিরিক্স ব্যক্ত করবার কালে প্রেমকুমারের মুখাবয়বে একটা আলোর দেখা হামেশা পাওয়া যায়। সেই আলোর ব্যাখ্যা আমাদের হাতে আপাতত নাই। কিন্তু যারা গান বা প্রাণের আকুতি সৃজনলীলায় লিপ্ত, যারা ক্রিয়েটিভ ডোমেইনের লোক কি ক্রিটিক ইত্যাদি, তারা নিশ্চয় নিজেদের অ্যান্যালিটিক্যাল অ্যাবিলিটি দিয়া ব্যাপারটা হাঁসের ডিমের ন্যায় হাটেমার্কেটে ভেঙে দিতে পারেন। তবে প্রেমের গান শুনতে যেয়ে এই জিনিশ আমরা জরুর বুঝি যে, একদা আমরাও প্রণয়বিঘ্নিত রোদনের দিন পারায়ে এসেছি, ফেলে-আসা আমাদের সেই হৃদয়ঋতুগুলো অতিবাহিত করার কালে কেউ কেউ আমরাও জড়িয়েছিলাম প্রণয়িনী বীণাপাণির আরতিসৃজনে তথা গান আর কবিতার করুণ উজ্জ্বল ব্যবসায়। ইস্তফা দিয়েছি। নিকেশ কান্ত দাশ ওর্ফে প্রেমকুমারের গান আমাদের ভিতরে সেই তিতপুরানা আবেগের পুনঃসঞ্চার ঘটায়। ফিরে এসে ডেরায় বসে ধুন ধরি, ইহজীবনে অসংগতি দিয়া আখেরে কে পেরেছে একটাও খড়কুটো সুর সৃজিবারে?

প্রেমকুমার আমাদেরে গান শুনায়ে যেতে থাকেন। নিজের লেখা গান। নিজের মতো সুর করা। বাদ্যযোজনার স্বীয় পরিকল্পনাও করে রাখেন প্রেম গীতলিখনের কালে। যেভাবে ইম্যাজিন করেন, টায়ে-টায়ে সেভাবেই ইমপ্লিমেন্ট করতে পারেন বাদ্যযন্ত্রযোজনার প্ল্যান, তা তো নয়। সাধ এবং সাধ্যির চিরাচরিত টানাহ্যাঁচড়া। তারপরেও নসিব তার অত মন্দ নয়, প্রেম মনে করেন, এক/দুইজন বন্ধুর দৌত্যে গানটা বাঁধবার অব্যবহিত পরেই না-হলেও অচিরে সুরেলা গায়কের তালিম-করা গলায় শুনে ফেলতে পারেন নিজের সদ্যরচিত গানখানা। ভারি ভালো লাগে তার, নিজের গান অন্যের গলায় শুনে বেজায় প্রীত হয়ে থাকেন আমাদের প্রেমকুমার। আল্লা তারে গলায় সুর দান করেন নাই বিধায় প্রেমের আক্ষেপ থাকে না আর।

প্রেমের পিতা স্বর্গীয় ধনঞ্জয় দাশ, মাতা স্বর্গীয় পুতুল রানী দাশ। বছর-পনেরো/ষোলো আগে প্রেমের মাতৃবিয়োগ প্রেমকে ছন্নছাড়া করে ছাড়ে। লেখাপড়ায় বিশেষ মনোযোগী ছিলেন না কদাপি, কিন্তু নিয়মিত অধ্যয়নরত ছিলেন। ২০০১-এ পিতৃমৃত্যুর পরে প্রেম পুরাপুরি বিবাগী হয়ে পড়েন। তদ্দিনে মেট্রিক পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়েছেন, মাঝখানে বছর-দুয়েকের গ্যাপ একটা আছে যদিও, পরীক্ষায় আর আসন গ্রহণ করা হয় নাই নিকেশ কান্ত ওর্ফে প্রেমকুমারের। মোটমাট আট ভাই তিন বোনের সুবৃহৎ পরিবারে প্রেম সর্বকনিষ্ঠ। সকলেই বিবাহিত, শুধু প্রেমই ছিলেন ঝোলাঝালা, বাপের ইন্তেকাল হলে পরে প্রেম পরিবারের টুংটাং ঝগড়াফ্যাসাদে বীতশ্রদ্ধ হয়ে গোস্বা করে কাউকে কিচ্ছুটি না বলেকয়ে গেহত্যাগ করেন। চলে আসেন সিলেটে। এই দোকানে ওই দোকানে কাজকম্ম করেন বেশ কিছুদিন, মেসবাড়িতে গুচ্ছের অল্প-ইনকামি লোকের সঙ্গে ক্লেশে-খুশিতে থাকেন, নিজের একটা ব্যবসার খোয়াব দেখেন আর খাতা ভরে রাত্তিরে গান লেখেন। অনেক গান জমেছে এইভাবে বালিশ-উপুত লিখতে লিখতে। একদম কাছের দুইয়েকজনা ছাড়া গানগুলো জনসমক্ষে যায় নাই আজও। প্রেম নিজের দুঃখ ভুলবার জন্য, নিজের আনন্দ অম্লান রাখবার জন্য, অবিরত লিখিয়া যাইতে চান গান। আজীবন। মৃত্যুপূর্ব পর্যন্ত।

হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলাধীন গোগরপুর গ্রামে প্রেমকুমারের জন্ম ও বছর-বিশ অব্দি সেখানেই দিনরাত টইটই। সিলেটে আসার আগে কিছুদিন কৃষিকাজের ফিকির করে দেখেছেন, যুৎ করে উঠতে পারেন নাই। গৃহস্থ ঘরের বউদি আর ভাইদের গঞ্জনা মাথাখারাপ করে দিলে একসময় ‘ধুর বাল, আর ভাল্লাগে না’ বলে প্রেম রেগেমেগে ছেড়ে এসেছেন বাড়িঘর। এখন অবশ্য রাগ নেমেছে, কিন্তু বাড়ির গোপাটের বাতাসে সেই টান আজ আর টের পান না। বাড়িতে যান ছ-মাসে ন-মাসে। ঈদে-পূজায়। বাড়িভিটা আর টানে না। যার ফলে রেস্তোরাঁয় ম্যাসিয়ারের কাজ করার ফাঁকে একবার সুরমা মার্কেটের সামনে পানবিড়ির বাকশো নিয়া ব্যবসা পাতাইলেন প্রেম, লস্ খাইলেন। পরে এটা-ওটা নানাকিছু, লোকসান পিছু ছাড়ছিল না। তারপরে এইখানে এসে মনে হচ্ছে একটু খুশির ঝিলিক লাগবার সম্ভাবনা। এই গানপারের ধারে। এই মাতৃমূর্তিস্মারক জননী চায়ের দোকানে।

প্রেমের গানপ্রীতি ঠিক আজকালকের ঘটনা নয়। ছেলেবেলা থেকে প্রেমেদের গাঁয়ে পূজাআচ্চায় গানের মোচ্ছব বসে। প্রেমের বিশেষভাবেই পছন্দ ধামাইল তালের গান। নিজে গেয়েও থাকেন। প্রেমের গতরে সারাক্ষণই নৃত্যদুলকি খেলা করে দেখতে পাই। ধামাইলেরই করতালিফুর্তি। বিশেষত ফাল্গুনচৈতে, বাসন্তী বা শারদীয় পূজায়, এবং সরস্বতী পূজায় তো বলাই বাহুল্য, প্রেম ধামাইলদলে চান্স পেলেই নিজেরে উজাড় করিয়া গাইতে নেমে পড়েন। নিজের গানে ধামাইলের তাল যেমন আছে, তেমনি কীর্তনতাল আছে, বাউল আব্দুল করিমের গানের ধুয়া ধরে প্রেম অধিকাংশ গানে সুর বসায়েছেন, লালন সাঁইজির সুরেও অনেক গানের সুর তৈয়ার করেছেন।

প্রত্যেকটা গানেরই একটা ইতিহাস আছে। প্রেম বলছিলেন। একটাও বানানো নয়, বানোয়াট নয়, নিজের গানগুলোকে প্রেম একেবারে ‘বাস্তব সত্য’ মনে করেন। গানগুলোকে বেজায় ভালোবাসেন এবং গানগুলোতেই বিশ্বাস প্রেমকুমারের। যেমন, উদাহরণ দিতে যেয়ে প্রেম বলছিলেন, নিজের প্রেমিকার বিবাহরজনীতে প্রেম যে-গানটা লিখেছিলেন, সেইটা এ-ই : “বীণা আমার যায় যে চলে / মন যে আমার রয় না ঘরে / ও সে তো মায়ার বাঁধন ছিন্ন করে / যায় যে সে তো অন্যের ঘরে” … এইটাই নয়, প্রেমের সবগুলা গানই নিজের জীবনের ‘সত্য সত্য’ গান। কথা চালাতে যেয়ে প্রেম উদাহরণ দিতেছিলেন একের-পরে-এক বিভিন্ন গানের চরণ বা আস্ত স্তবক কখনো। ১৯৯৯ সনে একটা পারিবারিক সফরের সঙ্গী হয়ে প্রেম পয়লাবার সিলেট এসেছিলেন। ওই পয়লা তার স্বনয়নে দুনিয়ার কোনো শহরদর্শন। ফিরে যেয়ে সে-যাত্রা গান বেঁধেছিলেন : “ভাবী পরোটার দাম একটাকা / বন্দর আমি খাইয়াছিলাম পরোটা / লগে আরও দিছে কিতা লাল গোটা গোটা / খাইলে গো বইন জবর মিঠা / আতাইলে লাগে আঠা আঠা / … সিলেট গেছলাম ফোটো তুলবার দায় / কত রঙের বাত্তি আমায় দেখাইছে আল্লায় / আখতা গো বইন ঝিল্কি মারছে / কালাটায় দিছে টিপ” … এইসব কথাবার্তা আছে সেই গানে। প্রেমের স্মৃতিনির্গলিত এইসব গান। উল্লেখ্য, ফোটো তুলতে যেয়ে যে-গানটা বানছিলেন প্রেম, সেইটাই জীবনের পয়লা গান লেখার কোশেশ তার। দুইকলি নিজকণ্ঠে গেয়েও শোনালেন আগ্রহী আমাদেরে।

প্রেমকুমারের গানের গুণবিচার আপনি যদি করতেই চান, তো করেন। প্রেমের গানেরে আপনি/আপনারা তারিফ করেন বা খারিজ করেন, কিচ্ছু যায় আসে না; আমাদের প্রস্তাব হচ্ছে প্রেমের গানরচনার ইউফোরিয়াটাকে একবার সমীহ করেন। গানপারে বসে একবার আসেন প্রেমের লিকার গিলি আর তার গানে প্রবাহিত হই।

IMG_1121

___________________________

নিকেশ কান্ত দাশ ওর্ফে প্রেমকুমারের ছয়টা গান

শান্তি নাই ।। এমন মানুষ পেলাম না ।। প্রাণসখি ।। অন্তরে ঘুণ ।।
দ্বাপরেতে বাঁশরি আর কলির যুগে মোবাইলফোন ।। তোমার নিমাই
___________________________


১.

আমার শান্তি নাই রে শান্তি নাই
আমার চাকরিজীবনে শান্তি নাই
চাকরি করছে যেজন মরছে সেজন
ভালো থাকে কয়জনা।

আমার স্বভাবে অভাব
ভাতেরই কারণে আমার উঠে মনে তাপ
কত বাসী খাবার খেয়ে বুঝি চরণ আমার চলে না।

মালিকের বউ শাশুড়ির ঘর
ছেলে তো জানে না কিছু মায়েরই খবর
মায়েরই কারণে কত কর্মচারী থাকে না।

ভাবিয়া প্রেমকুমার বলে
সাধের জনম যায় বিফলে
মাসিক বেতন না ফুড়াইয়া
চাকরিতে কেউ থাইকো না।


২.

আমি এমন মানুষ পেলাম না রে
যে আমায় ব্যথা দিলো না
নয়নজলে বুক ভাসাইলাম
কেউ মুছে দিলো না।

মুখ দেখিয়া মনের ভাষা
কেউ তো বুঝে না রে
মাগো তুমি আছো কোথায়
আর কী পাবো ফিরে!

গানের সুরে বনের পাখি
উড়ে না আকাশে
কী যেন কি বলে বাতাস
আমারও আকাশে।

প্রেমকুমার বোঝে যাহা
হায় রে মানুষ বোঝে না্।


৩.

প্রাণসখি গো
আমি কার মুখ দেখে পোড়া প্রাণ জুড়াই।
আমার মনের আগুন জ্বলছে দ্বিগুণ
প্রাণের মানুষ দেশে নাই।

প্রাণের মানুষ কোথায় গেল
তারে পাবার সন্ধান বলো
প্রাণের মানুষ বিনে মন উড়িল সখি
কি দিয়া তারে বুঝাই।

গোল হইল দুটি আঁখি
আমার মরণের আর কয়দিন বাকি
আমার নব্বই গেল দশ রইল
প্রাণবন্ধুয়ার সাড়া নাই।

প্রেমকুমারে কয় প্রাণসখি
এভাবে আর কয়দিন থাকি
আমি ভক্তিশূন্য শক্তিশূন্য
কেশের সোনা কিসে পাই।


৪.

আমার অন্তরে ঘুণে ধইরাছে
ঘুমের মায় তালাক দিছে
যাইতাম যদি ঘুমের বাড়ি
শুইয়া থাকতাম স্বর্গপুরী
করতাম আমি বেটাগিরি
ধইরা তুলার বালিশে।

ঘুমের মায় ছাইড়া গেল
চিন্তামণি লাগাল পাইল
আমারে পাগল বানাইল
না-জানি কার সঙ্গ ধরছে।

চিন্তামণিয়ে লাগাল পাইল
ঘুমের মারে যুক্তি দিলো
সুতার মশাইর টাঙ্গাইলো
আঁটকুড়া এক কলাগাছে।

প্রেমকুমার কয় শোন সজনী
লাগাল পাইয়া চিন্তামণি
দিনের মতো কাটাই রজনী
নিদ্রাদেবী আসার আশে।


৫.

দ্বাপরেতে রাধাকৃষ্ণের প্রেমের সাক্ষী বাঁশরি
কলির যুগে মোবাইলফোনে মন করলো চুরি

রিং আসিলে মোবাইল ফোনে
কাইপ্পা উঠে নারীর মনে
গোপনে গোপনে রিসিভ করি।
কোন জাগাতে হবে দেখা
কোথায় গিয়ে ফোন করি।

যে হয় প্রেমে দুর্বল
তারে দেয় বেশি মিসকল
মিসকল পাশ হইবে নারী
অভিজ্ঞতা দশ বছরের
কইছে প্রেমকুমার সহচরী।


৬.

ও তুমি মনরে বুঝাইয়া রাইখো
ও মাগো তোমার নিমাই নাই
আমি এই-যে ভিক্ষা চাই
বিদায় দেও গো শচিরানী
আমি চরণে জানাই

আমি হব ভেক-সন্ন্যাসী
র’ব না আর গৃহবাসী
উদাসী কইরাছেন গোঁসাই

ঘরের বধু বিষ্ণুপ্রিয়া
তাহারে রাইখো বুঝাইয়া
মাগো তোমার প্রাণের নিমাই নাই

আমি জন্মের বিদায় হইয়া যাব গো
ও মাগো তোমার নিমাই নাই
প্রেমকুমার কয় মনের দুঃখ কাহারে শোনাই
উদাসী কইরাছেন গোঁসাই।

… …

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you