সংগীতচিন্তা :: স্টিভ জবস || অনুবাদ :: ইমরুল হাসান

সংগীতচিন্তা :: স্টিভ জবস || অনুবাদ :: ইমরুল হাসান

কেন এই অনুবাদ?

স্টিভ জবস-এর এই প্রেসনোটটা প্রথম অনুবাদ করতে শুরু করছিলাম ওয়ার্ল্ড মিউজিক ডে-তে। এখন স্টিভ জবস-এর মৃত্যুর পর মনে হইল, উনার প্রতি সম্মান দেখাইয়া হইলেও শেষ করাটা দরকার!

‘কালচার’ ত আসলে কর্পোরেটরাই তৈরি করতেছে। বানাইতেছে, কন্ট্রোল করতেছে, সমাজের ভিতর ছড়াইয়া দিতেছে এবং ডিফাইন করতেছে কীভাবে সেইটা ‘কালচার’। এর বাইরে কর্পোরেট কালচারের সাথে খাপ খাওয়ানোর মতো কালচার তৈরি করে শহরের মধ্যবিত্তরা, পুরানোরে বা অন্যান্য পক্ষরে মিলাইতে চায় এর সাথে, কুস্তাকুস্তি করে, যাচাই-বাছাই করে এবং শেষে না-পাইরা কর্পোরেট কালচারের অংশ হয়া যায়। যেমন রবীন্দ্রনাথের নাটক নতুনভাবে করা, লালনরে নতুনভাবে আবিষ্কার করা, সমাজের খাড়াইয়া-থাকা আইকনদের জন্মবার্ষিকী-মৃত্যুবার্ষিকী করা, … ইত্যাদি (মধ্যবিত্তের ত আসলে নিজস্ব কিছু নাই, সবই ধার-করা)। মফস্বল করে শহরের অনুকরণ যদ্দূর পর্যন্ত পারে; আর গ্রামগঞ্জে (যেহেতু যোগাযোগটা খুব বেশি নাই শহরের সাথে) যা হয়, সেইটা ত ‘লোকসংস্কৃতি’ বা ‘ফোকলোর’; একশ বছর আগে হোক বা এখনই হোক। সবসময় দূরবর্তী একটা ব্যাপার, ‘কালচার’-এ!

এই ‘কালচার’ তৈরি হয়, স্বীকৃতি লাভ করে বা অনুমোদন পায় দুইটা জায়গা থিকা – ব্যবসায়িক এবং বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠান – এই দুইটা আসলে আলাদা জিনিশ না, একই; বেশিরভাগ সময়ই পরিপূরক টাইপের। আর এই কালচার প্রচার এবং প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা চালায় বিভিন্ন মিডিয়া, এনজিও এবং সোশ্যাল নেটওর্য়াকগুলা। এদের বিভিন্নরকমের অ্যাক্টিভিটির ভিতর দিয়াই সমাজে ‘কালচার’ প্রতিষ্ঠা হয়। এখন যারা কালচার করেন, তাদের ভিন্ন মতামত থাকে; তারা যে এই ব্যবস্থারে স্বীকার বা অস্বীকার করেন, সেইখানে তাদের একটা গুরুত্ব আছে। কিন্তু এই স্বীকার বা অস্বীকারটা এই ব্যবস্থাটারে ঘিরাই। মানে, কেন্দ্রীয় একটা ‘ব্যবস্থা’ আছে; জনগণরে কালচারাল কইরা তোলার, কালচার শিক্ষা দেয়ার, এর ভিতরে নিয়া আসার এবং অপারেট করার। – মোটা দাগে, সমাজের ভিতরে একটা কালচারাল ভ্যালু সিস্টেম চালু করার।কিন্তু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলা আসলে তাদের নিয়ন্ত্রণের প্রক্রিয়াগুলা নিয়া তেমন কিছু বলেন না; কারণ গোপনীয়তাই তাদের প্রধান অস্ত্র। আর বিদ্যালয়গুলা তাদের কোডিং-এর ভিতর দিয়া প্রক্রিয়াগুলারে ব্যাখ্যা করেন; এই কোডিং-পদ্ধতিটা উনাদের প্রধান অস্ত্র। এইভাবে উনারা নিজেদেরকে ‘সাধারণ’ থিকা পৃথক করেন এবং কালচারকে অনুমোদন দেয়ার একটা ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করেন। এইভাবে কালচাররে দেখতে পারলে আমার ধারণা সুবিধা হয়, বুঝতে।

ত, সংগীত একটা কালচারাল উপাদান। এর ‘ব্যবস্থা’ সম্পর্কে কিছুটা টের পাওয়া যাইতে পারে অ্যাপল-এর সাবেক প্রধান স্টিভ জবস-এর প্রেসনোট থিকা। বিশ্ব সংগীত দিবসে (গত ১৯ জুন ২০১১) উনার এই প্রেসনোটের কথা আবার মনে হইছিল। তখন এই অনুবাদ করতে বসা। আসলে অনুবাদ করার তেমন কিছু নাই, ইংরেজিটা এতটাই সহজ-সরল যে বাংলাটা বরং অনেক বেশি অপরিচিত লাগতে পারে! কিন্তু যেহেতু এইটা নিয়া আলাপ শুরু করতে চাই, তাই বাংলাটা রাখলে সুবিধা। সংবাদপত্রের নিউজ-ভিউজ এবং অ্যাকাডেমিক প্রবন্ধ ছাড়াও এই-রকম ব্যবসায়িক প্রেসনোট, সরকারি আদেশ কিংবা আদালতের রায়ের কপি ইত্যাদি জিনিশ অ্যানালাইসিস করলে আমার ধারণা, সমাজচিন্তাতে অনেক নতুন কিছু পাওয়া যাইতে পারে। এইগুলাই হইতেছে প্রাথমিক পর্যায়ের ডকুমেন্ট, যা দৃশ্যমান। যে-গোপনীয়তা আবার প্রকাশ্য না হয়াও পারে না!

এইটা নিয়া আলাপ করতে চাওয়ার কারণ অনেক। প্রথমত এই উপলব্ধি যে, এত সংগীত উৎপাদনের মূল লক্ষ্য আসলে যন্ত্ররে বাঁচাইয়া রাখা। দ্বিতীয়ত, এই কারণে সংগীত উৎপাদন এবং প্রচার করে যেইসব প্রতিষ্ঠান, পাইরেসি বন্ধ না হইলেও যে উনাদের তেমন কোনো ব্যবসায়িক ক্ষতি নাই, সেই প্রসঙ্গ। মানে, মাধ্যমই গুরুত্বপূর্ণ! অথবা গুরুত্ব বা অ-গুরুত্ব ত একটা ‘অবস্থান’-এর ব্যাপার; আর আমার ‘অবস্থান’ বিষয়টা, মনে হয়, উপরে কিছুটা ক্লিয়ার করতে পারছি।

যা-ই হোক, এইটা সংগীত নিয়া ব্যবসায়িক একটা চিন্তা। অ্যাপল-এর সংগীতের ব্যবসা কীভাবে চলতেছে এবং বিশ্ববাজারে এর ভূমিকা নিয়া অ্যাপলপ্রধানের একটা বক্তব্য।

সংগীত না-বইলা মিউজিক বললে হয়তো ভালো হইত, কারণ ‘মিউজিক’ বললে বাংলাতে যা বোঝায়, ‘সংগীত’ বললে তার চাইতে ভিন্ন কিছু বোঝায়; কিন্তু টুইস্টটাও সম্ভবত ভালোই। সংগীত বিষয়ে আগ্রহীরা এইটা পইড়া ক্ষুব্ধ হইলে, আগে থিকাই মাফ চাই।

ইমরুল হাসান ।। জুন ২০১১

Steve jobs.jpg

সংগীতচিন্তা || স্টিভ জবস 
অ্যাপল-এর আইপড মিউজিক প্লেয়ার এবং আইটিউনস অনলাইন মিউজিক স্টোরের বিশ্বব্যাপী বিমূঢ়-করা সাফল্যের প্রেক্ষিতে কেউ কেউ অ্যাপলরে বলছেন ডিজিটাল রাইটস ম্যানেজমেন্ট (ডিআরএম) ব্যবস্থারে ‘উন্মুক্ত’ কইরা দেয়ার জন্য, যেইটা অ্যাপল ব্যবহার করে তার সংগীতরে চুরির হাত থিকা বাঁচানোর জন্য, যাতে আইটিউনস থিকা কেনা মিউজিক অনান্য কোম্পানি থিকা কেনা ডিজিটাল ডিভাইসগুলাতেও চালানো যায়, এবং অনান্য অনলাইন মিউজিক স্টোর থিকা কেনা সুরক্ষিত সংগীতগুলাও আইপডগুলাতে ব্যবহার করা যায়। আসেন বর্তমান পরিস্থিতিটা পরীক্ষা করি এবং দেখি কীভাবে আমরা এইখানে আসছি, তারপর ভবিষ্যতের জন্য তিনটা সম্ভাব্য বিকল্পের দিকে তাকাই।

শুরুতে, এইটা মনে রাখা দরকারি যে, সব আইপডই সংগীত বাজাইতে পারে যা যে-কোনো ডিআরএম থিকা মুক্ত এবং ‘মুক্ত’ লাইসেন্স ফরম্যাট হিসাবে এনকোডেড; যেমন, এমপিথ্রি এবং এএসি। আইপড ব্যবহারকারীরা অনেক উৎস থিকা সংগীত সংগ্রহ করতে পারে এবং করে, তারা যে-সিডিগুলার মালিক সেইগুলা সহ। সিডিতে থাকা সংগীতরে খুব সহজেই ফ্রিলি-ডাউনলোডেবল আইটিউনস জুকবক্স সফটওয়ারে আমদানি করা সম্ভব যা ম্যাক এবং উইন্ডোজ উভয় পিসিতেই চলে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে এনকোডেড করা হয় মুক্ত এএসি অথবা এমপিথ্রি ফরম্যাটগুলাতে, যে-কোনো রকমের ডিআরএম ছাড়াই। এই সংগীত বাজানো সম্ভব আইপডগুলাতে অথবা যে-কোনো ধরনের মিউজিক প্লেয়ারে যা এইসব মুক্ত ফরম্যাট বাজাইতে পারে।

প্রতিবন্ধকতাটা আসছে যেই সংগীত অ্যাপল বিক্রি করে তার অনলাইন আইটিউনস স্টোর থিকা, সেইটার ব্যাপারে। যেহেতু অ্যাপল নিজে কোনো সংগীতের মালিক না বা নিয়ন্ত্রণ করে না, তারে আবশ্যিকভাবে অন্যদের সংগীত ডিস্ট্রিবিউট করার লাইসেন্স নিতে হয়, প্রাথমিকভাবে ‘বড় চার’ সংগীত কোম্পানি থিকা : ইউনিভার্সাল, সনি বিএমজি, ওয়ার্নার এবং ইএমআই। এই চারটা কোম্পানি বিশ্বের সংগীতের ৭০% ভাগেরও বেশি বিপণনরে নিয়ন্ত্রণ করে। অ্যাপল যখন এই কোম্পানিগুলার কাছে গেল লাইসেন্সের জন্য, ইন্টারনেটে আইনসম্মতভাবে তাদের সংগীত বিপণন করার জন্য, তারা খুবই সাবধানী ছিল এবং চাইলো অ্যাপল যাতে তাদের সংগীতরে বেআইনিভাবে কপি হওয়া থিকা রক্ষা করে। যার সমাধান ছিল একটা ডিআরএম ব্যবস্থা তৈরি করা, যা আইটিউনস স্টোর থিকা কেনা প্রতিটা গানরে খামবন্দি করবে বিশেষ এবং গোপন সফটওয়্যার দিয়া, যা অনুমোদনহীন ডিভাইসগুলাতে ব্যবহার করা যাবে না।

1200px-6G_iPod.svgঅ্যাপল সমোঝোতা করতে পারছিল, একটা যুগান্তকারী ব্যবহারের অধিকার-এর; যা ব্যবহারকারীদের অনুমতি দেয় ডিআরএম প্রটেক্টেড সংগীত সর্বোচ্চ ৫টা কম্পিউটারে এবং সীমাহীন সংখ্যক আইপডে ব্যবহার করার। সংগীত কোম্পানিগুলার কাছ থিকা এই-রকম অধিকার পাওয়ার নজির সেই সময়টাতে ছিল না এবং এমনকি বর্তমানেও অন্যান্য অনেক ডিজিটাল সংগীত সার্ভিসগুলাও এই সুবিধা দিতে পারে না। যা-ই হোক, সংগীত কোম্পানিগুলার সাথে আমাদের চুক্তিগুলার একটা মুখ্য শর্ত হইল যে, যদি আমাদের ডিআরএম ব্যবস্থা ছাড় দেয় এবং তাদের সংগীত বেআইনি ডিভাইসগুলাতে চালানো যায়, তাইলে আমরা খুবই কম সংখ্যক সপ্তাহ পাবো সমস্যাটা ঠিক করার জন্য অথবা তারা তাদের সংগীতের পুরা ক্যাটালগ আইটিউনস স্টোর থিকা সরাইয়া নিতে পারবে।

বেআইনি কপি করা রোধ করার জন্য ডিআরএম ব্যবস্থাগুলার অবশ্যই অনুমোদন দেয়া দরকার শুধুমাত্র অথরাইজড ডিভাইসগুলারে যা সুরক্ষিত সংগীত বাজাইতে দিবে। যদি একটা ডিআরএম সুরক্ষিত গানের কপি ইন্টারনেটে দেয়া হয়, – এইটা যে ডাউনলোড করবে, তার কম্পিউটার বা বহনযোগ্য মিউজিক ডিভাইসে সেইটা চলবে না। এইটা অর্জন করার জন্য একটা ডিআরএম ব্যবস্থা গোপনীয়তাগুলারে ব্যবহার করে। গোপনীয়তাগুলা ছাড়া কনটেন্টরে সুরক্ষার অন্য কোনো তত্ত্ব নাই। অন্য কথায়, একজন যদি আসল সংগীতরে সুরক্ষার জন্য সবচাইতে চাতুর্যপূর্ণ ক্রিপ্টোগ্রাফিক লকগুলাও ব্যবহার করে, তখনো তার ‘লুকানো’ দরকার চাবিগুলারে যা সংগীতরে আনলক করে ব্যবহারকারীর কম্পিউটার অথবা বহনযোগ্য মিউজিক প্লেয়ারে। এখন পর্যন্ত কেউ একটা ডিআরএম ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে পারে নাই যা তার অপারেশনের জন্য এই-রকম গোপনীয়তাগুলার উপর নির্ভর করে না।

সমস্যাটা অবশ্যই এইটা যে, পৃথিবীতে প্রচুর স্মার্ট লোকজন আছে, এদের মধ্যে কারো কারো নিজেদের হাতে প্রচুর সময় আছে, যারা এই-রকমের গোপনীয়তাগুলা আবিষ্কার করতে ভালোবাসে এবং প্রকাশ করতে যাতে করে সবাই ফ্রি (এবং চুরি করা) সংগীত পাইতে পারে। তারা মাঝেমধ্যে এই-রকম করতে সফল হয়, সুতরাং যে-কোনো কোম্পানি ডিআরএম ব্যবহার করে কনটেন্ট রক্ষা করতে চায়, তাদেরকে বারবার সেইটা আপডেট করা লাগে নতুন এবং কঠিনতর সিস্টেম দিয়া যাতে গোপনীয়তাগুলা খুঁজে বাইর করা কঠিন হয়। এইটা একটা ইঁদুর-বিড়াল খেলা। অ্যাপল-এর ডিআরএম সিস্টেমরে বলা হয় ফেয়ারপ্লে (FairPlay)। যদিও ফেয়ারপ্লের ক্ষেত্রে কারচুপির ঘটনা কিছু ঘটছে, আমরা আইটিউনস সফটওয়্যার, আইটিউনস জুকবক্স সফটওয়্যার এবং আইপডগুলার সফটওয়্যার আপডেট করার মাধ্যমে সাফল্যের সাথেই সেইটা মেরামত করতে পারছি। এখন পর্যন্ত, তাদের সংগীত রক্ষা করার যে প্রতিশ্রুতি মিউজিক কোম্পানিগুলাকে আমরা দিছিলাম, সেইটা রাখতে পারছি এবং আমাদের ব্যবহারকারীদেরকে আইনিভাবে সংগীত ডাউনলোড করার ক্ষেত্রে ইন্ডাস্ট্রিতে যে-অধিকার আছে তার সর্বোচ্চটা দিতে পারছি।

এই পটভূমিতে, আসেন এখন ভবিষ্যতের জন্য তিনটা ভিন্ন ভিন্ন বিকল্প যাচাই করি।

প্রথম বিকল্পটা হইল বর্তমান অবস্থাটারেই চালাইয়া যাওয়া, যেইখানে প্রত্যেক উৎপাদনকারী মুক্তভাবে প্রতিযোগিতা করবে তাদের নিজস্ব “টপ টু বটম” মালিকানাধীন (প্রোপাইটারি) ব্যবস্থা নিয়া সংগীত বিক্রি, বাজানো এবং রক্ষা করার জন্য। এইটা খুব প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজার, যেইখানে গুরুত্বপূর্ণ গ্লোবাল কোম্পানিগুলা নতুন সংগীত শোনার যন্ত্র এবং অনলাইন মিউজিক স্টোরগুলার জন্য বড় বিনিয়োগগুলা করতেছে। অ্যাপল, মাইক্রোসফট এবং সনি – সবাই প্রতিযোগিতা করতেছে নিজেদের মালিকানাধীন ব্যবস্থাগুলা নিয়া। মাইক্রোসফটের জুন (Zune) স্টোর থিকা কেনা সংগীত কেবলমাত্র জুন প্লেয়ারেই বাজানো সম্ভব; সনির কানেক্ট (Connect) স্টোর থিকা কেনা সংগীত কেবলমাত্র সনির প্লেয়ারেই বাজানো সম্ভব; এবং অ্যাপলের আইটিউনস স্টোর থিকা কেনা সংগীত কেবলমাত্র আইপডগুলাতে বাজানো সম্ভব। এইটা হইলো ইন্ডাস্ট্রির বর্তমান অবস্থা এবং ক্রমাগত নতুন প্রডাক্ট ও অনেক বৈচিত্র্যময় পছন্দের সুযোগ করে দেয়ায় কনজিউমাররাও ভালো সার্ভিস পাইতেছেন।

কেউ কেউ যুক্তি দিতেছেন যে, একজন ক্রেতা কোনো-একটা মালিকানাধীন মিউজিক স্টোর থিকা একটা সংগীতের শরীর কিনলে সেইটা শুধুমাত্র সেই কোম্পানির মিউজিক প্লেয়ারেই আবদ্ধ হয়া থাকবে। অথবা, যদি তারা একটা নির্দিষ্ট প্লেয়ার কেনে, তারা শুধুমাত্র সেই কোম্পানির মিউজিক স্টোর থিকা সংগীত কেনার জন্য বাধ্য হয়া থাকবে। এইটা কি সত্যি? আসেন আইপডগুলা এবং আইটিউনস স্টোরের ডাটাগুলা দেখি – এরা ইন্ডাস্ট্রির সবচাইতে জনপ্রিয় প্রডাক্ট এবং তাদের সঠিক ডাটা আমাদের কাছে আছে। ২০০৬ সালের শেষ পর্যন্ত, আইটিউনস স্টোর থিকা কনজিউমাররা মোট ৯০ মিলিয়ন আইপড এবং ২ বিলিয়ন গান কিনছে। গড়ে আইটিউনস স্টোর্স থিকা ২২টা গান কেনা হইছে প্রতিটা বিক্রি হওয়া আইপডের জন্য।
Itunes.jpg
আজকের সবচে জনপ্রিয় আইপডে ১০০০ গান থাকে এবং রিসার্চ আমাদেরকে বলে যে, একটা গড় আইপড প্রায় পুরাটাই ভরা থাকে। এইটা বুঝায় যে, ১০০০ গানের মধ্যে মাত্র ২২টা, অথবা একটা গড় আইপডের ৩%-এরও কম সংগীত আইটিউনস স্টোর থিকা কেনা হয় এবং যা ডিআরএম দিয়া সুরক্ষিত। বাদবাকি ৯৭% সংগীত অসুরক্ষিত এবং যে-কোনো প্লেয়ারে বাজানো ওপেন ফরম্যাটগুলা দিয়া বাজানো সম্ভব। এইটা বিশ্বাস করা কঠিন যে, একটা গড় আইপডের মাত্র ৩% সংগীত যথেষ্ট ব্যবহারকারীদেরকে ভবিষ্যতে শুধুমাত্র আইপড কেনানোর জন্য। আর যেহেতু একটা গড় আইপডের ৯৭% সংগীত আইটিউনস স্টোর থিকা কেনা না, পরিষ্কারভাবেই আইপড ব্যবহারকারীরা তাদের সংগীত যোগাড় করার জন্য শুধুমাত্র আইটিউন্সেই রেস্ট্রিক্টেড না।

অ্যাপলের জন্য দ্বিতীয় বিকল্প হইল, বিভিন্ন কোম্পানির প্লেয়ারগুলার এবং মিউজিক স্টোরগুলার মধ্যে সাযুজ্য (ইন্টারঅপারেভিলিটি) অর্জন করার লাইগা বর্তমান এবং ভবিষ্যতের প্রতিযোগীদের সাথে তার ফেয়ারপ্লে (FairPlay) ডিআরএম প্রযুক্তির লাইসেন্স দেয়া। বাইরে থিকা এইটা একটা ভালো ধারণা মনে হইতে পারে, যেহেতু এইটা ক্রেতাদেরকে এখনকার চাইতে ভবিষ্যতে বাড়তি পছন্দের প্রস্তাব দিতে পারে। আর অ্যাপলও তার ফেয়ারপ্লে ডিআরএম-এর জন্য একটা ছোট্ট লাইসেন্সফি নিতে পারে, যেইটাতে তার সুবিধা হবে। যা-ই হোক, যদি আমরা একটু গভীরে তাকাই, সমস্যাগুলা আসতে শুরু করবে। সবচে’ মারাত্মক যে সমস্যা সেইটা হইল, একটা ডিআরএম-এর লাইসেন্স দেয়াটার সাথে অনেক কোম্পানির অনেক লোকের কাছে কিছু গোপনীয়তা উন্মোচন করার ব্যাপারটা জড়িত এবং ইতিহাস আমাদেরকে বলে যে, অনিবাযর্ভাবেই এই গোপনীয়তাগুলা ফাঁস হয়া যাবে। ইন্টারনেট এই ফাঁস হয়া যাওয়ার বিষয়টারে আরো বেশি ক্ষতিকর কইরা তুলছে, যেহেতু একটামাত্র ফাঁস হওয়ার ঘটনা এক মিনিটেরও কম সময়ে সারা দুনিয়াতে ছড়াইয়া পড়তে পারে। এই-রকম ফাঁস-হওয়াগুলা খুব দ্রুত সফটওয়্যার প্রোগ্রাম হিসাবে ইন্টারনেটে ফ্রি পাওয়া যাবে, যেইটা ডিআরএম সুরক্ষারে অক্ষম কইরা তুলবে, যার ফলে আগের সুরক্ষিত সংগীতগুলা আন-অথরাইজড প্লেয়ারগুলাতে বাজানো যাবে।

APPLE JOBS IPODএকই-রকমের গভীর সমস্যা হইল এই-রকম একটা ফাঁসের ফলে যে ক্ষতিটা হবে সেইটা কত দ্রুত রিপেয়ার করা যায়। একটা সাফল্যজনক মেরামতের জন্য দরকার পড়বে মিউজিক স্টোর সফটওয়্যার, জুকবক্স সফটওয়্যার এবং প্লেয়ারগুলার সফটওয়্যারের উন্নতির, নতুন গোপনীয়তা দিয়া, তারপর এই আপডেটেড সফটওয়্যার পাঠানো লাগবে কোটি কোটি (অথবা বিলিয়ন বিলিয়ন) ম্যাক্স, উইন্ডোজ পিসি এবং প্লেয়ারগুলাতে যা ব্যবহারের ভিতর আছে। এই সবগুলা অবশ্যই করতে হবে খুব দ্রুত এবং খুবই কো-অর্ডিনেটেড একটা উপায়ে। এই-রকম একটা যজ্ঞ খুবই কঠিন যখন একটা কোম্পানি সবগুলা খণ্ডরে নিয়ন্ত্রণ করে। এটা প্রায় অসম্ভব যখন অনেকগুলা কোম্পানি ধাঁধার আলাদা খণ্ডগুলা নিয়ন্ত্রণ করে এবং তাদের প্রত্যেকরে অবশ্যই খুব দ্রুত সামঞ্জস্যের ভিতর কাজ করা লাগবে একটা ফাঁস থিকা যে-ক্ষতি হইতে পারে সেইটা মেরামত করার জন্যে।

অ্যাপল সিদ্ধান্তে পৌঁছাইতে পারছে যে, সে যদি তার ফেয়ারপ্লের লাইসেন্স অন্যান্যদেরকে দেয়, সে আর গ্যারান্টি দিতে পারবে না সংগীত সুরক্ষার, যার ভিত্তিতে সে বড় চার মিউজিক কোম্পানি থিকা লাইসেন্স নিছে। হয়তো একই ধরনের সিদ্ধান্ত ভূমিকা রাখছে মাইক্রোসফটের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে, যেইখানে তারা তাদের গুরুত্ব সরাইয়া নিছে অন্যান্যদের জন্য তাদের ডিআরএম-এর একটা ‘মুক্ত’ মডেলের লাইসেন্স থিকা একটা ‘আবদ্ধ’ মডেলে, যা অফার করবে একটা মালিকানাধীন মিউজিক স্টোর, মালিকানাধীন জুকবক্স সফটওয়্যার এবং মালিকানাধীন প্লেয়ার্স।

তৃতীয় বিকল্পটা হইল পুরা ডিআরএমগুলারে বাদ দেয়া। একটা দুনিয়ার কথা চিন্তা করেন যেইখানে ডিআরএমফ্রি সংগীত বিক্রি হইতেছে যা মুক্ত লাইসেন্স করা বিন্যাসগুলা দিয়া এনকোডেড করা। এই-রকম একটা দুনিয়ায়, যে-কোনো প্লেয়ার যে-কোনো স্টোর থিকা কেনা যে-কোনো সংগীত বাজাইতে পারব, এবং যে-কোনো স্টোর সংগীত বিক্রি করতে পারব যা সব প্লেয়ারগুলাতে বাজানো সম্ভব। পরিষ্কারভাবে এইটাই সবচে ভালো বিকল্প গ্রাহকদের জন্য, এবং অ্যাপল এইটারে আলিঙ্গন করবে এক হৃৎকম্পনের মধ্যেই। যদি এই চার মিউজিক কোম্পানি অ্যাপলরে তাদের সংগীতের লাইসেন্স দেয় কন্ডিশন ছাড়া যে এইটা ডিআরএম দিয়া সুরক্ষিত হইতে হবে, আমরা আমাদের আইটিউন্স স্টোর থিকা শুধুমাত্র ডিআরএমফ্রি সংগীতই বিক্রি করব। প্রতিটা আইপড এই-পর্যন্ত যা বানানো হইছে এই ডিআরএমফ্রি সংগীত বাজাইতে পারবে।

বড় চারটা মিউজিক কোম্পানি ডিআরএম ব্যবস্থার সুরক্ষা ছাড়া অ্যাপল এবং অন্যান্যদেরকে তাদের সংগীত বিপণন করার জন্য কেন রাজি হবে? সহজ উত্তরটা হইল, ডিআরএমগুলা কখনো কাজ করে নাই এবং হয়তো কখনোই কাজ করবে না, সংগীতের পাইরেসি থামাইতে। যদিও বড় চারটা কোম্পানি চায় যে অনলাইনে তাদের যে-সংগীত বিক্রি হবে সেইটা ডিআরএম দিয়া সুরক্ষিত হইতে হবে, একই সংগীত কোম্পানিগুলা বিক্রি করতেছে বিলিয়ন বিলিয়ন সিডিতে একবছরে যা অরক্ষিত সংগীত ধারণ করে। এইটাই ঠিক! সিডির জন্য কোনো ডিআরএম ব্যবস্থা বানানো হয় নাই কখনো, তাই সিডিগুলাতে যেইসব সংগীত বিপণন করা হয়, তাদের খুব সহজেই ইন্টারনেটে আপলোড করা সম্ভব, তখন (বেআইনিভাবে) ডাউনলোড করা এবং চালানো সম্ভব যে-কোনো কম্পিউটারে অথবা প্লেয়ারে।

steve-jobs-music-event-itunes২০০৬ সালে সারা দুনিয়ায় অনলাইন স্টোরগুলা থিকা ২ বিলিয়ন ডিআরএমসুরক্ষিত সংগীত বিক্রি হইছে, যেইখানে মিউজিক কোম্পানিগুলা নিজেরা ২০ বিলিয়ন সম্পূর্ণ ডিআরএমফ্রি এবং অরক্ষিত সংগীত বিক্রি করছে, সিডিতে। মিউজিক কোম্পানিগুলা নিজেদের সংগীতের বড় একটা অংশ বিক্রি করে ডিআরএমফ্রি, এবং তাদের এই ব্যবহার পরিবর্তনের কোনো নমুনা তারা দেখায় না, যেহেতু তাদের রেভেনিউর বড় একটা অংশ নির্ভর করে সিডিগুলা বিক্রির উপর যা সিডি প্লেয়ারগুলাতেই বাজাইতে হয় এবং এইটা কোনো ডিআরএম ব্যবস্থারে সমর্থন করে না।

যদি মিউজিক কোম্পানিগুলা তাদের সংগীতের ৯০ভাগের বেশি বিক্রি করে ডিআরএমফ্রি, তাইলে তারা বাদবাকি ঐ ছোট অনুপাতের ডিআরএম ব্যবস্থা দিয়া ব্যাহত সংগীত থিকা কী লাভ করব? এইখানে দৃশ্যমান কিছু নাই। যদি কিছু থাকে, প্রযুক্তিগত দক্ষতা আর প্রয়োজনীয় আনুষাঙ্গিক খরচ দরকার তৈরি করা, চালানো এবং আপডেট করার জন্য একটা ডিআরএম ব্যবস্থা, যা সীমাবদ্ধ করতেছে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা যারা ডিআরএমসুরক্ষিত সংগীত বিক্রি করতেছে। এই আবশ্যিকতাগুলা যদি সরাইয়া দেয়া হয়, মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি হয়তো নতুন কোম্পানিগুলার অন্তঃপ্রবাহের অভিজ্ঞতা নিতে পারবে, যারা নতুন ধরনের স্টোর এবং প্লেয়ার তৈরি করতে বিনিয়োগ করবে। মিউজিক কোম্পানিগুলা এইটারে একমাত্র সদর্থকভাবেই দেখতে পারে।

ডিআরএম ব্যবস্থাগুলা নিয়া উদ্বেগ বেশি জাগছে ইউরোপের দেশগুলাতে। হয়তো যারা বর্তমান অবস্থা নিয়া অসুখী তারা তাদের শক্তিগুলা রিডাইরেক্ট করতে পারেন মিউজিক কোম্পানিগুলারে বোঝানোর জন্য যাতে তারা ডিআরএমফ্রি সংগীত বিক্রি করে। ইউরোপিয়ানদের ক্ষেত্রে, চারটা বড় মিউজিক কোম্পানির আড়াইটা তাদের পিছনের উঠানে অবস্থিত। সবচে’ বড় ইউনিভার্সাল, ১০০% মালিকানা ভিভেন্ডির (Vivendi), একটা ফ্রেঞ্চ কোম্পানি। ইএমাই একটা ব্রিটিশ কোম্পানি এবং সনি বিএমজি-র ৫০% মালিকানা বার্টেল্সমান (Bertelsmann)-এর, একটা জার্মান কোম্পানি। তাদেরকে রাজি করানো তাদের সংগীতের লাইসেন্স অ্যাপল এবং অনান্য ডিআরএমফ্রিরে দেয়াটা একটা সত্যিকারের বিভিন্ন-মাধ্যমে ব্যবহারের সংগীতের বাজার তৈরি করবে। অ্যাপল এইটারে বুক ভরে আলিঙ্গন করবে।

… …

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you