শর্টস্টোরি লিখে নোবেল ল্যরিয়েইট অ্যালিস মানরোর একগুচ্ছ গল্পের বঙ্গানুবাদ নিয়ে একটা আস্ত সংকলন। সম্পাদনা করেছেন পাপড়ি রহমান ও নিয়াজ জামান। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন ধ্রুব এষ। প্রকাশক মাওলা ব্রাদার্স।
ফিকশনের বিপুলা ভুবনে অ্যালিস মানরো স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল এক ছোটগল্পকার। গল্প বলেন সোজাসাপ্টা ভাষায়, লিখনশৈলীটি নির্ভার ও নির্ঝরের মতো স্বতশ্চল, প্যাঁচগোচের কেরদানি ব্যতিরেকে কেমন করে একটা গল্প মনস্তাত্ত্বিক ও মনোদৈহিক ট্রিটমেন্টে আততিঋদ্ধ হয়ে ওঠে, অ্যালিস মানরোর গল্পে এই ব্যাপারটা দেখার মতো।
ক্যানাডিয়ান এই শর্টস্টোরি রাইটার বছর-কয়েক আগে নোবেল অ্যাওয়ার্ড পাবার অব্যবহিত পরে এদেশের পত্রিকাসাময়িকীগুলোতে বেশকিছু গল্প পাঠক পড়তে পেরেছেন। কলেবর বিবেচনায় দীর্ঘতনু গল্প রচনার দিকেই মানরোর ঝোঁক লক্ষ করা যায়। এতদসত্ত্বেও গল্পের ক্লাইম্যাক্স কোথাও ঝুলিয়া যায় বলে মনে হয় না। বাংলাদেশের কাহিনিপ্রিয় পাঠকের প্লেটে একটু গুছিয়ে অ্যালিস মানরো তুলে দিতে পারলে আখেরে বাংলা গল্পভুবনের জন্যই পুষ্টিপ্রদ হবে। যেই হারে বেকার ফেসবুকার গালিগালাজের পাহাড় গড়ে উঠছে, কে জানে গল্পের গরুটা কোন নিরুদ্দেশে উধাও হয়েছে।
এতদিন বিচ্ছিন্নভাবে বেশকিছু মানরোগল্প ইতিউতি প্রকাশিত হলেও এইবার একমলাটে একগোছা মানরোকাহিনি বাংলায় অ্যাভেইল করা গেল। সম্পাদকদ্বয় এইদিক দিয়ে বেশ পরিকল্পিত কাজটাই করেছেন বলতে হবে।
প্ল্যানড সম্পাদনার ছাপ বইটা হাতে নেয়ামাত্রই কারো নজর এড়াবে না। বাংলাদেশে হরদম অনুবাদবই প্রকাশ হচ্ছে সম্বচ্ছরের মেলায়, কিন্তু অরিজিন্যাল অথারের অনুমতি নিয়ে বাংলা বইয়ের লঞ্চিং কালেভদ্রে দেখা যায়। এই বইটা মানরোর পার্মিশন নিয়েই করা হয়েছে মর্মে সম্পাদকসূত্রে জানা যাচ্ছে। এই ব্যাপারটা যে-কোনো অনুবাদবইয়ের প্রোফেশন্যাল এক্সেলেন্সির প্রাথমিক অথচ গুরুত্বপূর্ণ পার্ট। মূল রচয়িতা কর্তৃক অনুমোদন পেয়ে একটা সম্পাদিত সংকলনের বৈধতা আরও পোক্ত হয়ে যায়। ‘অ্যালিস মানরো : নির্বাচিত গল্প’ বইয়ের পরিপক্বতার এইটা অন্যতম প্রমাণ।
পরিপক্বতা আরও কয়েকটি দিক থেকে এখানে লভ্য। মুদ্রণশোভা, পারিপাট্য ও প্রমাদস্বল্প বইবিন্যাস, নিয়োজিত অনুবাদকবৃন্দের দক্ষতা ইত্যাদি বেশকিছু পর্যায়ে বইটাকে রেকোমেন্ড করা যায় উন্নত প্রকাশনার নজির হিশেবে। ১৩ জন অনুবাদকের কাজ বইটিতে গৃহীত হয়েছে। গল্প নেয়া হয়েছে মোটমাট ১০টি।
মাওলা ব্রাদার্স থেকে এই বইটি রিলিজ হয়েছিল ২০১৭ অব্দে। এর গাত্রচর্মে তিনশ পঞ্চাশ টাকা হাদিয়া ধার্য রয়েছে।
প্রতিবেদন / সুবর্ণ বাগচী
… …
- যেভাবে হয়ে ওঠে ‘এসো আমার শহরে’ || শিবু কুমার শীল - March 6, 2025
- Basudeb Dasgupta’s ‘Randhanshala’ The Cooking Place translated by Sourav Roy - March 4, 2025
- ভিক্টোরিয়া অ্যামেলিনা ও যুদ্ধদিনের ইউক্রেনীয় কবিতা || জয়দেব কর - February 17, 2025
COMMENTS