পহেলা ফাল্গুন নিয়ে আমার স্মৃতিপট খুব একটা প্রখর না। গেল কয়েক বছর ধরে এই উদযাপনটা ঘটা করে চলমান থাকায় খুব করে মনে থাকে না। স্মৃতিতে ভাস্বর বাবার দেহান্তর, জীবনের কঠিন কিছু সময় পার করা, বাবাকে দেয়া কথার রক্ষা, বাবার স্বপ্নের বা চিন্তার বাস্তবায়ন।
ছোটবেলায় ফাল্গুনমাসের শুরু মানেই বাসার বারান্দা, উঠোন বা রান্নাঘরের পাশে ইজিচেয়ারে বসার সুযোগ। এই ইজিচেয়ারে বসলে নিজেকে একটু বড় মনে হতো। বাবা বসতেন, পত্রিকা পড়তেন, মাঝেমাঝে ঘুমিয়ে পড়তেন। চিন্তাজগতে কতই-না উদ্রেক, কতই-না ভাবনা! চেয়ারে বসে গান শুনতাম বাসার পুরানো ক্যাসেটপ্লেয়ারে, আর আমার ক্যাসেট কেনার জন্য একটাই দোকান Koyrul Boshor Choudhury-র ঝলক অডিও। কানে হেডফোন লাগিয়ে শুনতে হতো মাঝেমাঝে, যদি আশেপাশের মানুষজনের অসুবিধা হয় — বাবার কড়া নির্দেশ।
শীতের কনকনে বৈরী আবহাওয়ার বিদায়বার্তা ফাল্গুনী নরম তুলতুলে বাতাস জানান দিত। বসন্ত যে প্রেমের মাস, তার লক্ষণ ছিল বাতাসে, গাছের নতুন অঙ্কুরোদ্গমে, পাখির কলকাকলিতে। শীতকালে যে-ধরনের খাবার খেতাম, বসন্তে সেই রান্নার পট পরিবর্তন। একটু স্বাস্থ্যকর, কম তেল-মশলার খাবার, নিয়মমাফিক স্নানাহার। যদিও এই নিয়মের ব্যাখ্যা মেজদার কাছে শিখি। কিন্তু আমি নিয়মের বাহিরে না গেলেও সকালবেলা আলুভাজি আর খাটি ঘি ছাড়া ভাত খেতাম না — আমার এই গণেশকান্তি শরীর আর গোপালমুখ চেহারা তার উৎকৃষ্ঠ উদাহরণ। তখন থেকেই টাঙ্গাইলের খাঁটি ঘিয়ের প্রেমে আমার হাবুডুবু খাওয়া।
বিয়ের মাস হিসেবে ফাল্গুন জনপ্রিয়, জাতির কাছে শুভ সময়, অনেকগুলো ভালো বিয়ের লগ্ন থাকায়। আরেকটা নিয়ম ছিল বিয়েবাড়িতে উপস্থিত হওয়া। সকাল বিকেল মিলিয়ে এত বিয়ে থাকত যে, বাড়ির সবাই মিলে যেতে হতো। যদিও বাবার কমবেশি সব বিয়েবাড়িতে যেতে হতো সামাজিক সম্প্রীতির কারণে। আমি দাদাদের সাথে, কাকা বা মা-কাকির সাথে। একটু বড় হতেই একা যাওয়ার সাহস সঞ্চয় হয়ে গেল। এখন এই দেশে অনেক বিয়েবাড়িতে যাই কাজের সুবাদে, নানা রকমের খাবার খাই। কিন্তু দেশি রান্নার সেই ঘ্রাণ, স্বাদ পাই না। পাই না তৃপ্তিভরে খাওয়ার অদম্য ইচ্ছা।
আর বিয়েবাড়ি মানেই অপ্সরাদের মেলা। প্রেমিক মানুষেরা তির নিয়ে শিকারির বেশে থাকত, আর সুন্দরী মেয়েরা তাদের হৃদয় নিয়ে তিরন্দাজের তিরবিদ্ধ হতো। শুরু হলো নতুন প্রেমের গল্প, নতুন করে স্বপ্নবোনা, জীবন শুরুর কল্পনা। একদিকে নতুন দম্পতির নতুন সংসার আর নতুন কয়েক যুগল প্রেমিক-প্রেমিকার প্রেমযাত্রা।
পহেলা ফাল্গুনের শুভেচ্ছা।
বসন্তের সুমিষ্ট বাতাস ছড়িয়ে পড়ুক সবার প্রাণে, আন্দোলিত করুক প্রেমময় মন।
ভালোবাসার জয় হউক!
পহেলা ফাল্গুন চৌদ্দ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
- ভিক্টোরিয়া অ্যামেলিনা ও যুদ্ধদিনের ইউক্রেনীয় কবিতা || জয়দেব কর - February 17, 2025
- মাসুম পারভেজ : কবি, কাব্যগ্রন্থহীন || সরোজ মোস্তফা - February 7, 2025
- ছত্তার পাগলার সন্ধানে আহমেদ স্বপন মাহমুদ ও সরোজ মোস্তফা - January 28, 2025
COMMENTS