বিউটিফুল সিটি অথবা শহর-ই জিবা || হাসান শাহরিয়ার

বিউটিফুল সিটি অথবা শহর-ই জিবা || হাসান শাহরিয়ার

 

আসগর ফরহাদির ‘Beautiful City’ (Shahr-e ziba, 2004) দেখার পর আরো আত্মবিশ্বাসের সাথে মনে হইলো, শিল্প খুব ভালো কইরা সোসাইটির সম্মিলিত অপকর্মরে অ্যাড্রেস করতে পারে। ফরহাদির এই Beautiful City অপরূপভাবে কর্দমাক্ত। মনে হয়, আইন-আদালত আর ধর্মীয় নীতি-নৈতিকতার নামে রাষ্ট্র মূলত এক ম্যাসকুলিন মাসলম্যান (ধরেন, পেশিবহুল পুরুষ-পান্ডা)। এবং এইটা জনসমর্থিত।

সিনেমার অসাধারণ সেট। Juvenile Detention Center। রেললাইনের পাশে বিশ বছর বয়সী ফিরোজার ভাঙা দালানঘর। নিচে একটা ঝুপড়ি দোকান। দোকান চালায় ফিরোজার তালাক-দেওয়া বুইড়া মেরুদণ্ডহীন বেটারহাফ। ড্রিংক্স, সিগারেটের পাশাপাশি লোকটা ড্রাগস-উইডের ধান্দা করে। ট্রেন আসে যখন তখন। কালো ধোঁয়ার ট্রেন। চারপাশে পাথরের বস্তি। এক স্টপেজ পরে ভিক্টিমের পরিবার, ডাক্তার কাশেমের ঘর। নাবালক মেয়ে খুন হওয়ায় বিধ্বস্ত সে। তার ঘর অন্ধকার। প্রথম বউ মৃত। ঘরে দাসীর মতো দ্বিতীয় বউ। আর একটা প্রতিবন্ধী মেয়ে। বাজার দেখা যায়। অ্যাকোর্ডিয়ন বাজে রেস্টুরেন্টের বাইরে। ইরানি মিষ্টির দোকান। বড় বড় রুটি। ইরানি ফুল, ফল। মসজিদ দেখা যায়। বাইরে ওযুখানা।

পুরা মুভিটা ক্যারি করে কিশোর অপরাধী আকবরের বন্ধু আ’লা। আ’লা যেন রাষ্ট্র, আইন, বিচারব্যবস্থা, সোসাইটি, ধর্ম প্র‍্যাক্টিসের সব শূন্যতারে ভরাট করতে এক অক্লান্ত ছায়া। যার বৈষয়িক বা আসমানি কোনো স্বার্থ নাই। ভালোবাসা, মানবিকতা বা বিবেকবোধ — এইসব শব্দ দিয়া আ’লারে কি ব্যাখ্যা করা যাবে? ফরহাদির Beautiful City-তে আ’লাও রক্ষা পাবে না। শেষ দৃশ্যে ফরহাদি তাই ঝুলাইয়া রাখে অমীমাংসার পাল্লা। কলিং বেল বাজতেছে। বাইরে আ’লা। ভিতরে নিশ্চুপ, ক্লান্ত ফিরোজা। যেন আর কিছুতেই বাস্তবতার বিদ্রুপ নিতে পারবে না সে। দূরে রেললাইনের পাশে Juvenile Detention Center-এর ওই অফিসার, দার্শনিকের মতো অথবা কিছুটা কিংকর্তব্যবিমূঢ়, আ’লার শেষ কথার অপেক্ষায় —

মুভির নাম : Beautiful City পরিচালক : আসগর ফরহাদি রিলিজ : 2004 অভিনয়ে : তারানেহ আলিদুস্তি (ফিরোজা), বাবাক আনসারি (আ’লা), ফারামার্জ গারিবিয়ান (ডাক্তার কাশেম)


হাসান শাহরিয়ার রচনারশি
গানপারে ম্যুভিরিভিয়্যু

Support us with a click. Your click helps our cause. Thank you!

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you