আইয়ুব বাচ্চু অবিচুয়ারি || ইমরুল হাসান

আইয়ুব বাচ্চু অবিচুয়ারি || ইমরুল হাসান

অবিচুয়ারি-রাইটার ছিলেন কোনো-এক ক্যারেক্টার, হলিউডের কোনো-এক সিনেমায়, নাম মনে পড়তেছে না এখন। বা Her সিনেমাতেও মেইন ক্যারেক্টার হইতেছেন চিঠিলেখক। তো, নিজেরে ওই জায়গায় রাইখা লেখা যায় কিছু জিনিস। আমি একটা ক্যারেক্টার সিনেমার, যে-কোনো একজন পার্সনরে নিয়া লিখতেছে, যে ফিকশন্যাল না। এইভাবে ফিকশন ফ্যাক্টের উপরে রিভেঞ্জ নেয়। আর ফ্যাক্ট হিসাবে আমি রাইটার যে আছি, যখন কাউরে নিয়া লিখতে যাই, ফিকশন্যাল হইতে থাকেন উনি তখন। …

২.
আমাদের হিস্ট্রিও এখন অনেক বেশি পার্সোন্যাল। আমি দেখছি, আমি করছি, আমি ভাবছি। আমি না থাকলে কোনোকিছুই থাকে না আর। রিসেন্ট হিস্ট্রি-রাইটিংসে থাকে এইরকম। কিন্তু একটা টাইম পার না হইলে বা একটু ডিস্ট্যান্স থিকা না দেখতে পারলে কোনো ঘটনা বা জিনিসরে ক্লিয়ারলি দেখতে পারার কথা না। তো, আমার আইয়ুব বাচ্চু যিনি ছিলেন, তিনি আমার ছিলেন না কোনো-সময়ই। শুনছি উনার গান। অনেক না হইলেও অনেকই হবে মনেহয়। আমাদের টাইমে মফস্বলের মধ্যবিত্তের এমন কোনো স্কুলকলেজে-পড়া মনেহয় নাই যারা আইয়ুব বাচ্চু শোনেন নাই। এই কারণে, উনি তো একটা টাইম (আর মিউজিক ব্যাপারটাও একটা মেমোরি, টাইমের)।

৩.
সোলসেও উনি ছিলেন। সোলসের যেহেতু অনেকেই আছিলেন উনার কন্ট্রিবিউশন ওইভাবে ভিজিবল হইতে পারে নাই। পরে তপন চৌধুরীর ফার্স্ট ক্যাসেটের গায়ে দেখলাম উনার নাম, সুর — আইয়ুব বাচ্চু। কিছুদিন পরে নিজেরও তো সলো একটা অ্যালবাম করলেন, — ‘ময়না’। জমে নাই। LRBর  মানে জানতে গিয়া প্রথম চোখে পড়ছিল উনারা যে টাইমের ভিতরে ঢুইকা যাইতেছেন। পয়লা মনেহয় কইছিলেন, লিটল রিভার ব্যান্ড, পরে কইলেন, লাভ রানস্ ব্লাইন্ড। প্রথমটাই ভাল্লাগছিল। তারপরে সেরা ছিল আনপ্লাগড অ্যালবামটা, ভায়োলিনটায়োলিন দিয়া সুরের যেই কান্দাকাটিটা করলেন। মানে, ওইটা শোনা হইছে টানা কিছুদিন। তারপরেও উনারে আসলে নেয়া যায় নাই। ম্যে বি এই জায়গাটাতেই যে, উনার নিজের তো গ্রাউন্ড নাই! — একটা ঘরানা যেইটারে বলা যায়, বা আছে হয়তো, কিন্তু হারায়া যায় আবার, আইয়ুব বাচ্চু বইলা মনে হওয়ার আগে বা পরেও। কিন্তু আমাদের মিডলক্লাস ইয়াং পাব্লিক উনারে নিতে পারছে। আর পাব্লিক যা খায় সেইটাতে উনি নিজেরে পুরাপুরি সাবমিট করতে না পারলেও, ইগ্নোর করেন নাই। ‘আম্মাজান’ তা নাইলে গাইতে পারতেন বইলা মনে হয় না। আজম খানরেও শেষদিকে এই রোগে ধরছিল, ফোক গান গাইতে চাইতেন। একই জায়গা থিকা যে, উনারা তো পাব্লিকের শিল্পী! পাব্লিকের কথা, ভক্তদের কথা তো ভাবতে হবে উনাদেরকে!

৪.
ব্যাপারটা এই-রকম না যে, একটা ব্যান্ডমিউজিকরে প্রমোট করছেন উনি সারাজীবন ধইরা। যদিও উনি বা উনারা এই-রকম কইরাই ভাবছেন হয়তো। কিন্তু যেইটা করছেন বাংলাদেশের ইয়াং আর্বান পিপলদেরকে কলকাতার ঘুমপাড়ানি স্যুডো-পলিটিক্যাল মিউজিক থিকা একভাবে বাঁচায়া দিতে পারছেন। ওইটা কোনো পলিটিক্যাল কনশাসনেসের জায়গা থিকা যে করছেন, তা না; উনারা যে মিউজিকের মক্কা হিসাবে ওয়েস্টার্ন মিউজিক সাবস্ক্রাইব করছেন, কেবলা ওই থিকাই সইরা গেছে। এখন লিরিক্সে বলেন, টিউনে বলেন যতই প্যানপ্যানানি ইন্সার্ট করেন, সেইটারে কোনোভাবেই রিভাইব করা পসিবল হয় না আর আমাদের বাংলাদেশি মিউজিকের টেস্টে বা টেক্সটে।

৫.
কোনো মিউজিকই (বা আর্টও) পলিটিক্যাল কারণে পয়দা হয় না বা টিইকা থাকে না; কিন্তু টাইমের যেই পলিটিক্স কিছু কিছু মিউজিক সেইটারে ধইরা রাখতে পারে, ওভারকাম করতে পারে। কেমনে এই পারা বা না-পারার ঘটনাগুলি ঘটে, সেইটার কিছু আন্দাজ তো করাই যায়। দুইটা তরিকার কথা মনে হইল। একটা হইল, একটা জেনারেশন প্লিজড হইল খুব, ৭০/৮০ বছর ধইরা বাঁইচা থাইকা সেলিব্রেট করল, তাদের পোলাপাইনরাও মনে রাখল আম্মা-আব্বাদের মেমোরি বা তাদের নাতনি-নাতিরা তাদের নানী-দাদীদের কথা, এইভাবে ফেইড হইতে হইতে হারাইতে থাকল টাইমে বা টিইকা থাকল। … আরেকটা ঘটনা হইল, হোমারটোমার, ভার্জিল-শেইক্সপিয়র-কালিদাসদের কথা ভাবেন, যেই ভাষায় লিখছেন উনারা, সেইগুলিও মারা গেছে; অথচ উনাদের আর্ট থাকতে পারতেছে আর পারবেও মনেহয়। কিন্তু সার্ভাইব করাটা মিউজিক বা আর্টের উদ্দেশ্য না। ম্যে বি এইটা এমন একটা ভয়েডরে ক্যারি করতে থাকে, যেইটা অ্যাক্রস দ্য টাইম ট্রাভেল করতে থাকে আমাদের এক্সিস্টেন্সের সাথে সাথে। এইভাবে, কোনো মিউজিক বা আর্ট যদি কোনো এক্সিস্টেন্সরে তার ভয়েড দিয়া বাঁচায়া রাখতে পারে, সেইটা ওই এক্সিস্টেন্স পর্যন্ত সার্ভাইব করে! তো, আইয়ুব বাচ্চুর মিউজিকের ভয়েড আমাদের এই জেনারেশনের ফিজিক্যাল এক্সিস্ট্যান্স তক থাইকা যাবে, উইদাউট অ্যানি ডাউট।

৬.
অবিচুয়ারি লেখার কোনো ইচ্ছা ছিল না, হয়ও নাই আসলে ওই-রকম। তারপরও লিখতে যেহেতু চাইছি, এইভাবে শেষ করা যাইতে পারে মনেহয় : আইয়ুব বাচ্চুর গান একটা জেনারেশনের অনেক অনেক মেমোরির নাম।

… …

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you