“জীবনটা কাটিয়া গেল অনেকটা উপগ্রহের মতো। যাকে কেন্দ্র করিয়া ঘুরিলাম, না-পাইলাম তার কাছে যাইবার অধিকার, না-পাইলাম দূরে যাইবার অনুমতি।”
উদ্ধৃতিচিহ্নিত উক্তিটি শ্রীকান্ত থেকে চয়িত। উপন্যাসকাহিনিপ্রিয় বাংলাপাঠকদেরে এখনও বুঁদ করে রাখতে পারেন, বেচইন করে তুলতে পারেন বটে বাবু শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, পারেন নাকি?
শ্রীকান্ত উপন্যাস থেকেই ওই উজ্জ্বল উৎকলন। কোন খণ্ড বলতে পারব না, চারের এক হবে, লাইক্লি টু বি প্রথমটা। তা-ও হুবহু উদ্ধার হয়নি বলেই সন্দেহ হচ্ছে এ-মুহূর্তে এখন, ফলে উদ্ধৃতিচিহ্ন ও উদ্ধৃতাংশের যাথার্থ্য নিয়ে জিজ্ঞাসা উত্থাপন অস্বাভাবিক নয়। সেইদিকটা পাশ কাটিয়ে গেলে উক্তিটি প্রায় ও-রকমই — এবং অবশ্যই সেইটা বাংলা আখ্যানসাহিত্যের উত্তমকুমার মহামহিম শরৎ চাটুজ্জের বলে সন্দেহের লেশ নেই। স্মৃতিগৃহীত-হেতু কিছুখানি এদিক-ওদিক হতে পারে অবিকলোক্তির, ভাব যদিও গণ্ডগোলহীন। যাকগে। এখানে প্রসঙ্গটা টানবার উদ্দেশ্য অবশ্য অন্য। যদিও ওইরকম কথা আমিও কী বলতে পারি না! আজ্ঞে হ্যাঁ, তা অবশ্য, অবস্থাবিচারপূর্বক অবিকল বলতেই পারি।
নিশ্চয়, হ্যাঁ, আমার অবস্থাখানাও তথৈবচ। জরিমানা দেওয়া মাইনের মতো। অবশ্য বাইরে থেকে গোপীকান্ত গোসাঁইয়ের রূপ, সর্বদাই রসসিক্ত। লবডঙ্কা ভেতরে। আহা রে! এর সঙ্গে সমঞ্জস আরেকখানা কথাও বলে রাখা সঙ্গত, খানিকটা ওই কথারই প্যারোডিপ্রশ্রয়ে, এবং ঘটনাটি এ-রকম : জীবনটা কাটিয়া গেল জ্বি-হুজুর জ্বি-জাঁহাপনা করে। জীবনটা কাটিয়া যাইছে কেলেকেষ্ট কুতুবদের রক্তচক্ষু হজম করে করে। সমাজকে-সভ্যতাকে, আলতুকে-ফালতুকে, বেকামা কামদেব-অভিনেতাদেরকে সহ্য করে আর আশকারা দিয়ে দিয়ে।
এক্কেরে বেভোঁতাদের ভয় পেয়ে পেয়ে বেয়াই-সালাম বেয়াইন-সালাম করে কেটে গেল এত অসংখ্য শুমারহীন বসন্ত ও বর্ষা আমার! না-পাইলাম ধরিতে তারে, না-পারিলাম ছাড়িতে। নেপোয় এসে এদিকে মেরে দিয়ে যায় পাতিল-কে-পাতিল দই! কী করি, বাতাও ইয়ার, বল্-না দাদা সুবল! কোথা যায়া কার কাছে ফরিয়াদ করি : জীবন রে, জীবন, ছাইড়া যাসনে মোরে...!
কেবল বানর-নাচন নাইচা গেলাম তারে ভুলাইবার নানা কায়দা আঙুলের মুদ্রায় ফুটায়ে, কেবল দশটা-পাঁচটা প্রাণপণ কসরত, বেদরদি জীবিকাভানুমতি সিকেভাগটাও না-মজিল তাতে। সে শুধু ঝগড়ায়-ঝগড়ায়, সে শুধু বাগড়ায়-বাগড়ায়, সে শুধু তুতুতারা তালবাহানায় জুড়িয়ে দিলো ফুরিয়ে দিলো মস্তপানা বাটিভরা চা-গরম সময়! সে শুধু করিয়াই গেল আশায়-আশায় বইসা থাকার বদমাশি গানাবাজানা।
তার আর দোষ কী, মিঞা নাড়ুগোপাল, তোমার কপালের ছাড়া!
লেখা / জাহেদ আহমদ ২০১৩
… …
- কথাকার, কবিতাকার ও ফিলোসোফার - November 26, 2024
- বর্ষীয়ান কবি ও বাংলা সাবান - November 24, 2024
- লঘুগুরু - November 8, 2024
COMMENTS