কুঝিকঝিক জ্যোৎস্নায় ভাটিয়ারী || শিবু কুমার শীল

কুঝিকঝিক জ্যোৎস্নায় ভাটিয়ারী || শিবু কুমার শীল

আমার শৈশব জুড়ে থাকা ভাটিয়ারী পাহাড়ি লেকের মন্থর বিকেল আর নানাবর্ণ বুনোফুল। কত কত সন্ধ্যা গরুর খুরের শব্দে হেঁটে হেঁটে অলীক রেললাইনে এসে পৌঁছে গেছি। ধাতব পাতের উপর কান পেতে দূরাগত ট্রেনের আগাম শব্দ শুনেছি। তারপর ঢালু বেয়ে নেমে গেলেই মহামায়ার মন্দির। নরম মাটির আইল ধরে ধরে পা টিপে চলা। এরই মাঝে কোথাও-না-কোথাও শঙ্খধনি, শনিপুজো, আর বাবা ভাণ্ডারির দরাজ গলার সুর। কোন জানালা দিয়ে এসে কানে পৌঁছুত! পাশাপাশি আশ্চর্য ঝিঁঝির কোরাস বেজে যেত অবিরাম কোন মেট্রোনামে, কোন হারমোনিয়ামে মেয়েটা গেয়ে উঠত ‘আমি রজনীগন্ধা ফুলের মতো গন্ধ বিলিয়ে যাই।’ এইসব যাদুসন্ধ্যার কুপি জ্বেলে জ্বেলে কে যেন মাছের কানকোতে দড়ি বেঁধে চলেছে কোথাও। পুকুরপাড়ের শ্মশানঘাটে কি যেন নড়ে উঠে ঝিঁঝির শব্দকে থামিয়ে দেয়। কে, কে আবার এক-কাপড়ে জলে নেমেছে এই ঘোর সন্ধ্যাকালে। তার ভেজা কাপড়, হাতে লাল চুড়ি, পুজোর থালা। এসবের মাঝেই অন্ধকার জলে টিপপুঁটি লাফিয়ে উঠে জলের ভেতর চক্র তৈরি করে। পুকুরপাড়ে ঝুঁকে থাকে নারকেল গাছের সারি। কখনও নিশীথপাখিরা ডানা ঝাপটায়, সবুজগলা হাঁসেরা ডানার ভেতর মাথা আছে গুঁজে। এরই মাঝে কোন গৃহিণী তাকে ডেকে চলে, ‘আ তই তই তই’। সুরেন্দ্রর ঘরে পাঁচটাকায় হুরুম, আর অন্ধকার ঘন হয়ে এলে ছায়ারা কাছাকাছি এসে বসে। সেই শৈশবের পুর্নিমার রাত আজ বুকের ভেতর কু ঝিক ঝিক ট্রেনের মতো বেজে চলেছে।

শিবু কুমার শীল রচনারাশি

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you