লাইফে এই পয়লাপরথম থার্ডক্লাসে বসে সিনেমা দেখলাম। থার্ডক্লাস মানে একেবারে হলের বিশাল পর্দার সামনে বসে, মাথা-ঘাড় বাঁকিয়েচুরিয়ে। ডিসিক্লাস ছাড়া হলমুখো হই নাই এ জিন্দেগিতে। কিন্তু থার্ডক্লাসে বসেও গ্লানি বা নিম্নবর্গের মনে হলো না নিজেকে। কারণ দর্শক উপচে পড়ছে সিনেপ্লেক্সের আরামদায়ক সিটগুলি পরিপূর্ণ করে। টিকিটের আকাল। বাম্পার সেল হচ্ছে শাকিব খানের ‘বরবাদ’ ম্যুভির।
কফি আর পপকর্নের ম ম সুবাস ছড়ানোছিটানো। ঈদের এই তুমুল ভিড়ে ম্যুভি দেখতে আমার খুব ভালো লাগে। কারণ লাইফে তিনটা জিনিস থাকা লাগে, entertainment, entertainment, entertainment. এটা ছিল ডার্টি পিকচার ম্যুভিতে বিদ্যা বালানের ডায়লগ। এই ম্যুভিটাও আমি বার-তিনেক দেখেছি। আমার entertainment হলো ভিড়ভাট্টা দেখা। সুখী মানুষেরা কীভাবে জোড়ায় জোড়ায় আসে বা দল বেঁধে — তাদের পাশে চুপ করে বসে সিটি বাজানো শুনি। উল্লাসে-ফেটে-পড়া দর্শকদের হল্লা শুনি। খেয়াল করি এমন আজগুবি ম্যুভি দেখতে এত দর্শক কেন আসে? তারপর ধীর পায়ে ফিরে আসি বাড়ি (সিনেপ্লেক্স আমার আরশিনগরের পড়শি)।
স্কুলের ক্লাসে এক মেয়েকে প্রকাশ্য চুম্বনের মাঝ দিয়ে শুরু হলো বরবাদি। এবং শিক্ষক হত্যা (serious violence)!
সারা ছবি জুড়েই প্রকাশ্য হত্যা, খুন, জবাই, গুলি, বন্দুক, রিভলবার, সিরিয়াস মারপিট, রক্তারক্তি, মাদক, প্রতিশোধ ইত্যাদি। আইটেম স্যং একটা। স্যংওয়ালি দারুণ রূপবতী। ওর চাইতেও দারুণ রূপবতী নায়িকা ইধিকা পাল। এবং ক্লাইম্যাক্স সাসপেন্সে টইটম্বুর। অল্পস্বল্প রাজনীতি, ব্যাপক প্রেম। প্রেমের জন্য সম্রাট শাহজাহান একটা তাজমহল বানিয়েছেন, শাকিব খান ইধিকার জন্য একশতটা বানাতে পারে। (তা পারাই উচিত, এমন শ্যামাঙ্গিনী সুন্দরীর জন্য। ওই আঁখিজোড়ার জন্য। কারণ ওই আঁখি কিছু রাখিবে না বাকি)।
এবং ছল, ছলাকলা, প্রেমের সমাধি। খুন এবং ফাঁসি। অনুতাপ। ভয়ানক উগ্র প্রেমিক শাকিব খান। ঈর্ষাকাতর। গুন্ডাষণ্ডা প্রকৃতির। প্রেমিক হিসাবে খাঁটি। অস্থির এবং ধীর?
তবে সাইকো লোকজনে ভরা ‘বরবাদ’।
আরেকজন আছেন যীশু সেনগুপ্ত (উনিও গায়েগতরেখোমায় বেশ তুখা), কিন্তু এত ওজন বাড়িয়েছেন যে হলের স্ক্রিন থেকে ছিটকে বাইরে এসে পড়েন প্রায়।
এ-রকম ভায়োলেন্স দেখার পর আমাদের তরুণ সমাজ কোনদিকে যাবে? এ-রকম ড্রাগ নেয়ার দৃশ্য আর কোনো ম্যুভিতে আছে নাকি আমার জানা নাই।
তবে মেগাস্টার শাকিব খান অভিনয়টা উত্তম শিখেছেন। চেহারাসুরতবডি এখনো চলনসই। আচ্ছা এই মেগা হিরোর বয়স এখন কত? নিছক কৌতূহল, আর কিছুই নয়।
এত ডিভাইস থাকার পরও হলে দর্শকদের বাকবাকুম শুনে অবাক হই। আশাবাদীও। এখনো মানুষেরা মানুষের সঙ্গ উপভোগ করে। শুধু যন্ত্র এদের ঘরবন্দী করে রাখতে পারে নাই।
- গৃহের থেকে একটু দূরে, প্রেক্ষাগৃহে || পাপড়ি রহমান - April 6, 2025
- সংকলনের দ্বিতীয় মুদ্রণ ও সম্পাদকের আক্ষেপ - March 21, 2025
- সুরমাসায়র ১২ || পাপড়ি রহমান - July 8, 2020
COMMENTS