এই দেশে সংখ্যায় যে জাতিগোষ্ঠী, সম্প্রদায়, গোত্র কম তারা সবসময় কোণঠাসা। সব সরকারেই কোণঠাসা। কেউ তাদের পাশে নেই, থাকে না। আর হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ মূলত যে-সময় যে-সরকার থাকে তাদের দালাল তারা। একটা কোম্পানি খুলেছে মাত্র। এরা কোনোদিন সংখ্যায় যারা কম তাদের অধিকার রক্ষায় কখনও কিছু করে না। বরং পরিস্থিতি ঠিকঠাক আছে এটা বোঝাতে যা করা লাগে সেটা করতে ব্যস্ত থাকে। এই কোম্পানির এ-ই কাজ।
আমাদের প্রধান তাত্ত্বিক, বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দীন উমর একটি লেখায় লিখেছিলেন যে হিন্দুরা এ-দেশে প্রিভিলেজড। মানে সংখ্যায় তারা কম হলেও ক্ষমতায় তারা একজন সাধারণ মুসলমানের চেয়ে অধিক ক্ষমতা চর্চা করে। তারা রাষ্ট্র কর্তৃক নানা সুবিধা পায়। এই লেখাটি কোথায় পড়েছি মনে নেই। তবে বছর-পাঁচেক আগে লেখা সম্ভবত। তার সেই লেখা পড়ার পর আমি আমার সাধারণ মস্তিষ্ক দিয়ে যা বুঝেছি তা হলো, দেশের বড় বড় কর্পোরেট, প্রশাসনিক জায়গাগুলোতে হিন্দুরা চাকুরিরত এবং তারা সেসব প্রতিষ্ঠানে উচ্চপদস্থ। আর এ-কারণেই তারা দেশের সকল হিন্দুদের যোগ্যতা থাকুক না থাকুক চাকুরি দিয়ে এম্পাওয়ার্ড করছে। এবং যারা এসব উচ্চপদস্থ জায়গায় আছেন তারা তাদের যোগ্যতা দিয়ে সেখানে যাননি, তারা যেন হিন্দু বলেই ক্ষমতাবান, যোগ্য আর নিয়ন্ত্রক। এমনটাই মনে হয়েছিল আমার সেই লেখা পড়ে।
আমাদের এখানে একজন হিন্দু অভিনেতা তার মায়ের সাথে একটি ছবি ফেসবুকে আপ্লোড করেছিলেন, এর ফলে কি হয়েছিল আমরা সবাই জানি। সেই অভিনেতার অপরাধ তিনি যে হিন্দু এটি তার ভক্তকূল জানত না, ফলে আর যায় কোথায়!
আমাদের এক মিডিয়াকর্মী ভাই একদিন আমাকে বলেছিলেন, এখানে কিসের সাম্প্রদায়িকতা? যদি তা-ই হতো তাহলে এ-দেশে হিন্দু অভিনেতারা এতটা সামনের সারিতে আসতে পারতেন না। এটাকেই তিনি একটা উদাহরণ হিসেবে হাজির করেছিলেন।
এসব খুব শিক্ষিত, রুচিশীল মানুষদের ধারণা : এ-দেশে সাম্প্রদায়িকতা নাই। এ-দেশে হিন্দু নিপীড়ন নাই, — আদিবাসীদের নাই করে দেয়া, খুন করে ফেলা, ভূমিচ্যুত করা নাই। এ এক আশ্চর্য প্যারাডাইজ! আমি প্রতিরাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এই প্যারাডাইজের একজন ধন্য নাগরিক হিসেবে নিজের কিসমতকে বাহবা দেই। বাহ রে বাহ!
‘আগে কী সুন্দর বালের দিন কাটাইতাম!’
- টুকটাক সদালাপ ১০ - February 1, 2025
- টুকটাক সদালাপ ৯ - February 1, 2025
- টুকটাক সদালাপ ৮ - January 23, 2025
COMMENTS