সিনেমা নিয়ে ফেসবুকে লিখতে বা কথা বলতে আমার ইদানীং দ্বিধা হয়। ফেসবুক হোমফিডে সিনেমা নিয়ে কোনও লেখাও চোখে পড়ে না অনেকদিন। এই জন্যে দ্বিধা হয় যে, দেশে এমন যুদ্ধংদেহী রাজনৈতিক সামাজিক পরিস্থিতি সেখানে আমি কি করে সিনেমা নিয়ে লিখি কেউ যদি প্রশ্ন করে বসে এই ভয়ে। দিনকে দিন জেঁকে বসেছে এই ভয়। আজ সিনেমার কথা বলতে বসছি এই ভয় কাটাইতে।
‘অ্যা কমপ্লিট আননোন’ সিনেমাটা বব ডিলানের বায়োগ্রাফিক্যাল সিনেমা। শুরুতেই উল্লেখ করে রাখা উচিত; ‘কমপ্লিট আননোন’ নামের আরেকটা সিনেমা আছে, যেটা কিন্তু মোটেও ডিলানবায়োপিক না। এই সিনেমার ট্যাগলাইনের কারিগররা খুবই অ্যাক্লেইমড। যেমন ধরেন, পরিচালক জেমস ম্যানগোল্ডের একটা উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে হইলো ‘ফোর্ড ভার্সেস ফেরারি’। আমি যে-ধারার সিনেমালাভার তার মতো না ঠিক, কিন্তু এই ধরনের মানে বায়োপিকের ডিরেক্টর হিসেবে তিনি গুড।
এই গুডনেসের সাথে তাল মিলাইতে যোগ হইছে চিত্রনাট্যকার জে কক্স। তিনি পরিচিত মূলত সিনেক্রিটিক হিসেবে। মার্কিন সিনেক্রিটিক হিসেবে বেশ নামকরা ও চিত্রনাট্যকার হিসেবে কাজ করছেন মার্টিন স্কর্সিসের সাথে। তাও আবার একটা দুইটা প্রজেক্ট না। নিজে যতগুলো প্রজেক্ট লিখছেন, তার অধিকাংশই স্কর্সিসের সিনেমা। ফলে চিত্রনাট্য খুবই আরামদায়ক।
আরামদায়ক চিত্রনাট্যের মধ্যে বায়োপিক হলেও ডিলানের একজন প্রেমিকার নাম এখানে লুকানো হয়েছে। এটাও করা হয়েছে ডিলানের অনুরোধে। ডিলান চাননি,তার উথালপাথাল প্রেমের সাক্ষি প্রেমিকার জীবনে নতুন কোনো ঝড় উঠুক এই সিনেমার বদৌলতে। ইটস ওকে ফর অ্যা জেন্টেলম্যান স্টাইল। কিন্তু এই রকম একটা ঘটনাই আদতে সিনেমাটাকে বায়োপিকের জায়গা থেকে ফিকশনে নিয়া যায়, গিয়ে থাকে।
পুরো সিনেমাজুড়ে সবচেয়ে আরামদায়ক হলো গান। যেহেতু শিল্পীর বায়োপিক, আর প্রচুর বাস্তব শিল্পীই চরিত্র, ফলে সিনেমায় ব্যক্তির চেয়ে গান আসলে এখানে বড় হয়ে ওঠে। এইখানেও তা-ই হইছে। যেন গানকে কেন্দ্র করেই এগিয়ে যাচ্ছে গল্প। কখনো পিট সিগার, কখনো জোয়ান বায়েজ আর কখনো বব ডিলান।
ববের চরিত্রে টিমুথি শালামে যারে আমি ফরাশি বলেই জানতাম সে দেখি আমেরিকানও। আর হ্যাঁ, তারে আগে দেখেছিলাম ‘কল মি বাই ইউর নেইম’ ও ‘ডিউন’-এ। ডিউনে দেখে তার মেয়েভক্ত বেড়েছিল। কিন্তু টিমুথির অভিনয় দেখার জন্য সেরা ছিল ‘কল মি বাই ইউর নেইম’।
আমেরিকান সিনেমাফিলোসোফি আমার এখন আর ভালো লাগে না। কিন্তু কনজিউমারিজমের দোচনে আমাকে এখন ওইগুলোই বেশি দেখতে হয়। কনজিউমারিজম আদতে কিছু না, মুক্তবাজার অর্থনীতির চাপে পড়ে সিনেমার যে স্বাধীন ধারা এইটা তো আগের চেয়ে আরও বেশি চাপে। ফলে দর্শকের কাছে ঠিকঠাক কানেক্ট করতে পারে না, এই জায়গায় আগায়ে যায় হলিউড ধারার সিনেমা। এই ধারার বিবেচনায়ও বব ডিলানের চরিত্রে টিমুথি বেশ ভালোই করছে। রূপান্তরটা চোখে পড়ে। যখন তারকা হয়ে কান্ট্রিসঙের সাথে মডার্ন ইনস্ট্রুমেন্ট ও পূঁজির সন্নিবেশ ঘটায় কোনোপ্রকার হীনম্মন্যতা ছাড়াই। আদতে ডিলান এইখানে একটা সময় নিজেই আমেরিকান সিনেমার ফিলোসোফির রূপক হয়ে দাঁড়ায়ে যায় কান্ট্রিসঙের দুনিয়াতেও।
অস্কার পুরস্কার যেদিন দিলো, তার আগের দিন দেখছিলাম। তখনই বলছি, অস্কার এইটা পাবে না। আটটা শাখায় মনোনয়ন পাইয়াও যে পুরস্কারটা পায় না সেইটা আদতে স্যাড বিষয়। এইটাই আদতে আমেরিকান সিনেমার ফিলোসোফিক্যাল পলিটিক্স। বাদ বাকি এনজয়েবল সিনেমা।
ইলিয়াস কমল রচনারাশি
সিনেমার চিরকুট প্রবাহ
গানপারে বব ডিলান
- সিনেমার চিরকুট ১৭ - April 19, 2025
- ইয়োসা অবিচুয়ারি || ইলিয়াস কমল - April 18, 2025
- কমপ্লিট আননোন নয় আমেরিকান সিনেমাফিলোসোফি || ইলিয়াস কমল - April 1, 2025
COMMENTS