দেলোয়ার হোসেন মঞ্জু : মরণের অন্তহীন উপমানগুলো || আহমদ মিনহাজ

দেলোয়ার হোসেন মঞ্জু : মরণের অন্তহীন উপমানগুলো || আহমদ মিনহাজ

মৃত্যুচেতনার লেলিহান আগুনে শুদ্ধিলাভের অন্তরপিপাসা পাঠক টের পায় অকালপ্রয়াত দেলোয়ার হোসেন মঞ্জুর কবিতায়। স্বরচিত গদ্যে আশির কবি কিশওয়ার ইবনে দিলওয়ারকে ‘আত্মবিধ্বংসী কবি’-র মহিমায় তিনি পাঠ করেছিলেন। ‘আত্মবিধ্বংসী’ যেসব কবির নাম মঞ্জু সেখানে নিয়েছিলেন তিনি নিজে তাঁদের কাতারভুক্ত একজন। কিশওয়ারের ‘আত্মবিধ্বংসী’ অনুধ্যান ‘আধ্যাত্মিক অপরাধ’ গণ্য হওয়ার কারণে প্রথাগত ভাবনায় অভ্যস্ত সমাজ তাঁকে মনোরোগের শিকার খাপছাড়া মানুষের নিয়তি যাপনে বাধ্য করেছিল। উন্মাদনার ইতিহাসকার মিশেল ফুকো বলেছিলেন যুক্তি কখনো অ-যুক্তির সঙ্গে সংলাপে গমন করতে চায় না! সমাজস্বীকৃত যুক্তিবোধের সঙ্গে অ-যুক্তির দ্বন্দ্বে নাজেহাল কবি কিশওয়ার দিনের অর্ধেক ঘুমিয়ে আর রাতের পুরোটা বিড়ালের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জেগে কাটিয়ে দিতেন। মানুষকে প্রত্যাখ্যান করে পশুর সঙ্গে মিত্রতা তাঁকে নিরাময় না করলেও নিজের অ-যুক্তিবোধকে কবিতায় যৌক্তিক করে তোলার শক্তি দিয়েছিল। দিনে সামাজিক যুক্তিবোধের জনকদের সঙ্গে তাঁর দেখাসাক্ষাৎ হতো আর রাত গভীর হলে দেখা দিতেন নিশিডাকের কাণ্ডারিগণ। মৃত্যু তাঁকে হরণ করার আগে অবধি পৃথক দুটি বাস্তবতার সঙ্গে প্রাণান্ত সংগ্রামে লিপ্ত ছিলেন কিশওয়ার। দ্বৈত বাস্তবতায় বিচরণ তাঁর জীবনে তৃতীয় বাস্তবতার জন্ম দিয়েছিল। এই বাস্তবতাকে কবিতায় অবিনশ্বর করার ভাবনা কবিকে শেষ নিঃশ্বাস অবধি তাড়া করে ফিরেছে। এমন এক জগতে প্রবেশ করার জন্য তিনি ব্যাকুল ছিলেন যেটি মীমাংসিত, যেখানে তাঁর অস্তিত্বের গভীরে ঘুমন্ত অহং ডেমিগড (Demigod) বা নরদেবতার সীমা ছাড়িয়ে ঐশ্বরিক সত্তার মহিমায় নিজেকে স্বরাট ভাবতে পারে।

কিশওয়ারের এই ‘আধ্যাত্মিক অপরাধ’ মঞ্জুর কবিতায় অবশ্য ছাপ ফেলতে পারেনি। নিজের অহংসত্তাকে মৃত্যুর লেলিহান সৌন্দর্যে প্রাসঙ্গিকতা দানের মাধ্যমে কিশওয়ার চর্চিত আধ্যাত্মিক অপরাধকে কবি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। আপাতভাবে এটি ‘মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে…’-র প্রতি কবির অনাস্থা, বিবমিষা ও নৈরাশ্যের প্রতীক মনে হলেও অন্যদিক থেকে কবির এই মৃত্যুপ্রীতি জীবনবেদের অনুগামীই ছিল। বেঁচে থাকার উদগ্র ক্ষুধার অন্তরালে অমোঘ যে-সত্য মানুষ চাপা দিয়ে রাখতে চায় মঞ্জুর মৃত্যুকেন্দ্রিক জীবনবেদ ছিল সেই সত্যের দ্বিধাহীন উন্মোচন! কিশওয়ার তাঁর কবিতায় ঈশ্বরকে ফিরে-ফিরে আঘাত করেছেন এবং সেটি প্রত্যাঘাত হয়ে তাঁর হৃদয় চুরমার করেছে। মঞ্জু পৃথক পথে মোড় নিয়েছিলেন। মৃত্যুকে অতিকায় শিকার রূপে কবিতায় হাজির করেছিলেন তিনি :— ‘সিংহ শিকার না করেও প্রতিটা মানুষ এক একটা শিকারি / মানুষ এক অনবদ্য মৃত্যুশিকারি…’ (দ্রষ্টব্য : ক্যান্সার আক্রান্ত কবিতা)।

কাব্যোক্তির মাঝে নিহিত ব্যাজস্তুতি মানুষকে অনবদ্য মৃত্যুশিকারির মর্যাদা দিলেও কবির মৃত্যুখচিত শিকারকাহিনির সারার্থ সেখানে ভিন্ন ছিল। এই সারার্থ জানিয়ে দেয়,— মানব সহ সৃষ্টির তাবড় অনুষঙ্গ মৃত্যুপ্রবণ হওয়ার ফলে মৃত্যুকে আসলে শিকার করা যায় না! বেঁচে থাকার উদগ্র লালসা ব্যক্তির অহংসত্তাকে জীবনের প্রতি পরতে বিজড়িত রাখে, শিকারে নেমে মানুষ সেই লালসার যবনিকাপাত ঘটায়। মৃত্যু নামক ঈশ্বরের সঙ্গে মঞ্জুর সম্পর্ক এ-কারণে কিশওয়ার ইবনে দিলওয়ারের ন্যায় সাংঘর্ষিক সংলাপে মুখর অথবা আঘাত-প্রত্যাঘাতে বিধ্বংসী রূপ গ্রহণ করেনি। তাঁর কবিতায় যাপিত জীবন পরাবাস্তব ঘোর তৈরি করে আর সেই ঘোরের জগতে সচল কবিচৈতন্যে মৃত্যু অলঙ্ঘনীয় শিখা হয়ে জ্বলে-নেভে। জীবনকে ঘিরে বহতা সংলাপ পূর্ণতা লাভ করে যবে অবচয় ও নিঃসরণে পূর্ণ হওয়ার ক্ষণে মৃত্যু নামের ঈশ্বরকে মানুষ তার অস্তিত্বে টের পায়। আমিত্বের গহিন কন্দরে ঈশ্বরকে সে বিচরণ করতে দেখে এবং তাকে শিকার করতে যেয়ে নিজের অহংসত্তার বিনাশ ঘটায়। মঞ্জুর কাব্য-অভিজ্ঞানে মানুষকে কেন্দ্র করে আবর্তিত সৃষ্টি একমাত্র এভাবেই বাস্তবিক ও বাঙময় হয়ে উঠেছিল :—

কার্বনের ফিতা বেয়ে চাঁদ উঠেছে দেখো
পঞ্চবটী বনে

চারপাশে তীক্ষ্ণ সব তিতিরের গান—

মাছের জিহ্বা বেয়ে
আমাদের কাফনশাদা বিছানায় শীতকাল আসে…
(গুলিবিদ্ধ গান)

চারটি চাকায় করে নিয়ে যাচ্ছি কুমড়োর বাগান
অস্তিত্বের লাশ ঠেলে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছি দূরে
ঠেলাগাড়িতে করে বাংলাদেশ নিয়ে যাচ্ছি…
(লাশ)

পালাতে থাকি
পালাতে থাকি
পালাতে থাকি

শেষ রাতে লুকিয়ে পড়ি মৃত সন্তানের জুতোর ভেতর…
(পরাবিদ্যার পাটীগণিত)

ঘন বজ্রপাতে
আকাশে আকাশে দেখি রাঙা তরবারি, তাহাদের ঝলক
আজ মনে নেই
ঐ রাতে শাদা পাখিটিকে দুইখণ্ড করেছিল
কোন সে গুণিন, ইশারায়…
(গুণিন)

কিশওয়ার জানতেন বেওয়ারিশ লাশের দিকে তাঁর ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হয়ে আছে! অস্তিত্বের গহিন পাতালে ঘুমন্ত আমিকে সুস্থির রাখতে জীবন-মৃত্যুর ক্রীড়নকের সঙ্গে তিনি পাঞ্জা লড়তে চাইতেন। আলো ও অন্ধকারের সংঘর্ষে ভরা তৃণভূমিতে অনিশ্চিত দিন যাপনের গ্লানি ক্রীড়নকের প্রতি তাঁকে একইসঙ্গে উদ্ধত ও নতজানু রেখেছিল। মঞ্জুর অস্তিত্ব জুড়ে ক্রীড়নকের অবস্থিতি পরাবাস্তবিক ঘোর রচনায় নিঃস্ব হয়। তাঁর কবিতার ভুবনে বিরাজিত অনুষঙ্গরা এ-কারণে এত পচনশীল! অক্লান্ত চাষীর মতো মানুষের জীবনযাত্রা সুদীর্ঘ অমাবস্যার দিকে হেলে পড়ার জন্যই ঘটে থাকে। কুয়াশায় অবগুণ্ঠিত দিন, বন্ধু ও বণিকের মিলনসন্ধানী প্রতারণা আর রমণীর নাতিশীতোষ্ণ লাস্যে নিহিত উষ্ণতায় মানুষের যাত্রা হিম বরফে নিজের পরিণাম বুঝে নিতে বাধ্য হয়। মৃত্যুকে ভালোবাসা সম্ভব নয় কিন্তু তাকে ঘৃণা করা অধিক অবান্তর! এ হলো আভরণ, যাকে ছাড়া মানুষ পরিপূর্ণ হতে পারে না! ফলবাগানে লোভাতুর কিশোর ঘুম থেকে জেগে উঠে অচিরে পচে উঠবে বলে।

দেলোয়ার হোসেন মঞ্জুর কবিতায় অমোঘ-হয়ে-ওঠা অবক্ষয়কে স্বঘোষিত ঈশ্বরত্বে বিরাজ করতে উন্মুখ কিশওয়ার জয় করতে চেয়েছিলেন। তাঁর ঈশ্বরজিজ্ঞাসায় মৃত্যু নয় বরং চির-অমরতার নাগাল পাওয়ার খিদে তীব্র ছিল। মঞ্জুর যাত্রা সেখানেও বিপ্রতীক। মৃত্যুর ওপর বিজয়ী হওয়ার বাসনা তাঁকে তাড়িত করেনি, কারণ অস্তিত্বের সারবত্তাকে জেতা যায় না। মৃত্যু হলো একমাত্র অবচয় যার অস্তিত্ব বিনে ব্যক্তি আমিকে ধ্বংসের দ্বিতীয় পথ খোলা নেই। জীবনকে মায়াময় দীর্ঘশ্বাস ভাবার সুখ এছাড়া কপালে জোটে না! সুতরাং মৃত্যুকে জয় করার চেয়ে উদযাপন করা ভালো :—

তারা ফিরে গেছে, জগতের সব ইতর প্রাণীগুলি চিহ্ন রেখে পুরাতন গুহায়। রৌদ্রোজ্জ্বল রাত নিভে যাক তবে। আজ কেবলই ক্ষুদ্র হতে চাই। ছুরিকার মাথা হতে সর্বশেষ লৌহের কণা ঝেড়ে ফেলো তবে। আলোর অতীত, ফুঁ দিলে উড়ে যাই মৃতের উৎসবে…

যাত্রারম্ভে

খণ্ডিত চিলের ছায়া, সামান্য নদী ভেসে ওঠে
আঘাত করেছ অন্তরতম
বেড়ালের মাথার উপরে ঘোলা হয়ে আসে চাঁদ…
(সাপ ও সূর্যমুখী)

মৃত্যুর অন্তহীন উপমানগুলো মঞ্জুর কবিতায় এভাবে দ্বৈত অনুভবের মিশ্রণে তির্যক হয়ে ওঠে। আপাতভাবে অবচয়ের প্রতীক মনে হলেও প্রকৃত অর্থে অসামান্য জীবনবেদের দ্যোতক রূপে মৃত্যু তাঁর কবিতায় হুল ফোটায়। মৃত্যুর সিঁড়ি বেয়ে মরমি বা আধ্যাত্মিক ফানায় লীন হওয়ার তৃষা মঞ্জুকে একদম টানেনি। মানুষের লোকালয়ে রহসঘন অনিশ্চয়তা অথবা মহাবৈশ্বিক অশরীরী রূপে মৃত্যুর প্রবেশ ও প্রস্থান ইত্যাদি বাকপ্রতিমা কবিকে তিলেক প্রভাবিত করে না। তাঁর কবিতায় মৃত্যু এক সচল সত্তা হয়ে পরিপার্শ্বে বিচরণ করে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিখিল নাস্তির ভুবনে মানুষের গমন নিশ্চিত করায়। অবশ্য খেয়াল রাখা প্রয়োজন, মঞ্জুর মৃত্যুসচল ভাষাভঙ্গি নিখিল আস্তির পরিবর্তে নাস্তিগর্ভে জীবনের বিনাশ ও পুনঃপ্রজননকে মহিমা দিয়ে গেলেও পূর্ববর্তী যুগদশকের কবিতায় উপচে-ওঠা নৈরাশ্য যাতনার যূপকাষ্ঠে নিজেকে বলি দেয়নি। আবার চঞ্চল আশরাফের স্ফূর্তিশূন্য নির্ধারণে অস্তিত্বের পরিণাম ঘোষণায়ও সমান নিরুৎসুক ছিল। মৃত্যু হলো সচল টেক্সট। জীবনের গতি বজায় রাখতে মৃত সত্তাকে গতিশীল নাস্তির জগতে সে বারবার নবায়ন করে যায় :— ‘ব্রহ্মাণ্ড ঘুরে ঘুরে / ময়ূর একাকী পোড়ে।’ ‘গোলাকার পাখি’ কবিতার পঙক্তিনিচয় মঞ্জুর ইন্দ্রিয়াবেশ বিভোর মৃত্যু-আরাধনার গতিক বুঝতে সাহায্য করে।

অস্তিত্বের নির্যাস দেহকোষের অবচয় যে-গতিচক্রে ঘটে থাকে সেখানে জীবন ও মৃত্যুকে পরস্পরের সমার্থক মনে হয়। বাস্তবতার অনুষঙ্গরা পরাবাস্তব ঘোরে রূপান্তরিত হওয়ার ক্ষণে ক্ষণভঙ্গুর হয়ে ওঠে। এই পরাবাস্তব আবেশ কবির ব্যক্তি আমিকে অন্যলোকে ভ্রমণ করায়, যেখানে মৃত্যুর স্পর্শ ছাড়া জীবনের নবায়ন সম্ভব নয়। মৃত্যুভয়ের অনুভূতি মঞ্জুর কবিতাপাঠে তাই বিশেষ ঘটে না। নৈরাশ্যের একঘেয়ে ছকে পাঠককে অবসন্ন করে তোলার রসদ তিনি কদাচিৎ ব্যবহার করেন। কবির পঙক্তিমালায় নির্মিত মৃত্যু জীবিত সত্তা রূপে পাঠকের মনোভূমিতে বিচরণ করে! এই মৃত্যু জৈবিক ও মাংসল; উদগ্র কামপিপাসায় সক্রিয় হওয়ার কারণে জীবনের স্থলে নিজেকে স্থানান্তরের নেশায় মানুষ ও পরিপার্শ্বের প্রতি রন্ধ্রে সে ঘুরে বেড়ায়। ‘লাশকাটা ঘর’-এ জীবনানন্দ মাথার ভিতরে ব্যাখ্যাতীত ‘বোধ’-র ঘোর কাটাতে না পেরে বিমূঢ়তায় বিদীর্ণ হয়েছিলেন। কবির এই বিমূঢ়তার মাঝে নিজেকে একা ও বিচ্ছিন্ন ভাবার হাহাকার তীব্র ছিল। মঞ্জুর লাশকাটা ঘর নিঃসঙ্গতা ও বিচ্ছিন্নতার মনোবেদে বিদীর্ণ হয় না, এটি বরং ন্যাক্রোফিলিয়ার (Necrophilia) পিপাসায় কাতর অস্তিত্বের দিকে ব্যক্তি আমির কামবিকারঘন জাগরণকে মনে করিয়ে যায় :—

—তবু তার সঙ্গে ঝগড়া বিনিময় হতে হতে, জীবন ও মৃত্যু বিনিময় হতে হতে
মৃত সুন্দরীর ঘুম ভাঙে
ডোমের দুই চোখে নেচে ওঠে
অনুদ্ধারিত রিপুর মুদ্রা
মানুষের
জানোয়ারের…
(ডোমঘরে একা)

পরাবাস্তব অনুষঙ্গে জড়ানো মঞ্জুর স্বকীয়তা সেইসব পঙক্তিমালায় ঝিলিক দিয়ে ওঠে যেখানে জীবনকে গৌণ করে মৃত্যু স্বয়ং বিষয়ীর মর্যাদা লাভ করে। মৃত্যুকে কেন্দ্র করে আবর্তিত অনুষঙ্গের কর্তাবাচক হয়ে ওঠার ঘটনা বাংলা কবিতায় অধিক ঘটেনি। জীবনের যতেক অনুষঙ্গ মানুষকে বেঁচে থাকার মায়ায় জড়ায় অথবা শিহরিত করে সেইসব অনুষঙ্গের ক্রিয়াবাচক ভূমিকাকে কর্তাবাচকে নবীকরণের কুশলতা তাঁকে স্বকীয় করে তোলে। যেমন, চাঁদকে ঘিরে কবির ফ্যাসিনেশন জীবনদ্যোতক না হয়ে মৃত্যু নামধারী কর্তাবাচক অবচয়ে রূপান্তরিত হওয়ায় পাঠকের অনুভবে নতুন অর্থস্তর সঞ্চারিত হয় :— ‘ব্রিজ ভেঙে যমুনায় পড়ে গেছে চাঁদ—’; ‘দক্ষিণ পরগনায় আমার সঙ্গী হয়েছিল অজস্র ডানাঅলা চাঁদ’; ‘আজ বার্মিংহামের মলিন আকাশে শ্যামবর্ণ চাঁদ দেখা যাচ্ছে’; ‘হাত থেকে পড়ে চাঁদ ভেঙে গেছে—’ ইত্যাদি পঙক্তিমালা কবিতার স্বতঃস্ফূর্ত পরাবাস্তবিক আবেশ তৈরিতে যেমন সহায় হয়, পাঠকের চেতনায় তারা ক্রমশ স্থায়ী হয়ে ওঠে।

‘আত্মবিধ্বংসী’ কাব্যযাত্রার সড়কে শামিল কবিদের সঙ্গে কদম মিলিয়ে হাঁটলেও দেলোয়ার হোসেন মঞ্জুকে আলাদাভাবে চিনে নিতে বেগ পেতে হয় না। অহংবিধ্বংসী মৃত্যুযাত্রায় মহীয়ান কবিতারা দশকি আবর্তে আঁটানোর বিষয় নয়; তবু স্মরণ রাখতেই হচ্ছে, নব্বইয়ের ‘শিশিরে পোড়া’ সাগ্নিক বলে কবি নিজেকে চিহ্নিত করে গিয়েছিলেন! ‘জানা ছিল, আমার নির্দিষ্ট কোনো আকাশ নেই, হাত নেই, পা নেই; কাণ্ডহীন ক্যাকটাস যেন।…তবু ওইখানে জেলা-নোয়াখালীর চাঁদ একা ভিজে যায় শিশিরে-পোড়া আমাদের নব্বই দশক…’ (দ্রষ্টব্য : নমুনা-৫)।

মঞ্জু ভবিষ্যতে কতদিন পঠিত হবেন সেটি এই মুহূর্তে আন্দাজ করা কঠিন, তবে মৃত্যুকে বাংলা কবিতায় নতুন চারিত্র্য দানের কারণে পাঠকের তাঁকে স্মরণ না করে হয়তো উপায় থাকবে না।


নব্বইয়ের কবি, নব্বইয়ের কবিতা
আশির দশকের কবি, আশির দশকের কবিতা
আহমদ মিনহাজ রচনারাশি

COMMENTS

error: