ডরিস ডে : সেই সিনেমাগানের রইদঝলোমলো গলা

ডরিস ডে : সেই সিনেমাগানের রইদঝলোমলো গলা

শেয়ার করুন:

আসলেই ডরিসের গলা থেকে রইদ ঝরত। সবসময়। এমনকি বিষাদের লিরিকেও। যদিও উনার গাওয়ার সময় আনন্দ-বিষাদ সবই কী-একটা ম্যাজিকে একাকার হয়ে যেত। রইদের মতো ঝলমলা। ছায়াময়, মায়াময়, শীতের বা হেমন্তের রইদ। শ্রোতাদের কানে এবং মনে ডরিসের গলা আজও রৌদ্রঝলকিত।

ডরিস ডে একইসঙ্গে অ্যাক্ট্রেস এবং সিঙ্গার। অ্যামেরিকান। গত শতকের পঞ্চাশের দশকে ব্যাপক জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী। সিনেমায় প্লেব্যাক করেছেন প্রচুর। উনার স্টুডিয়ো-অ্যালবামের সংখ্যাও, উইকিবিবরণীতে যেয়ে দেখে এলাম, অনেক। তবে আমরা তো আর উনার গান অ্যালবাম ধরে শুনি নাই। সিনেমায় শুনেছি। কিন্তু যখন উনার সিনেমাগুলো দেখেছি, পুরাতনী ইংলিশ সিনেমা সবই, ফিফটিজের বা আর্লি সিক্সটিজের, তখন উনারে নামে-মানুষে চিনতাম না। চিনেছি অনেক পরে, এই সেদিনই বলতে গেলে, ইউটিউবযুগে এসে।

‘ক্যেই স্যেরা, স্যেরা’ নামে একটা গানের সুবাদেই উনার লগে চিন-পহেচান হয়। গানটা কানে এবং মনে থেকে গেছিল বহুকাল। ২০১২ বা ’১৩-র দিকে এসে এই গানের স্পেলিং দিয়া গ্যুগল্ করে ডে-র নামপরিচয় পাই এবং বিলম্ব না-করেই কিছু মজার মজার গান শুনে ফেলি ইউটিউবে। সেইগুলি থেকে গোটাকতক গান বাংলায় লিখে সেইসময় ফেসবুকনোটের ওপ্শনে স্টোর করে রেখেছিলাম। ২০১৯-এর মে মাসের মাঝামাঝি উনার প্রয়াণসংবাদ পেয়ে সেই নোটসম্ভার থেকে এই তিনটে পেয়েছি খুঁজে, একটু গোছগাছ করে সেগুলো সংরক্ষণ করতে লেগেছি।

কিন্তু মনে রাখা দরকার যে ডে গান লিখতেন না বা সুর করতেন না। স্যংরাইটার বা কম্পোজার ছিলেন না কখনো। উনি ছিলেন আগাগোড়াই সিঙ্গার। প্লেব্যাক দিয়ে ব্যাপক শ্রোতাপ্রিয় হয়েছিলেন। উনার অ্যালবামের কাটতিও ছিল মারমার-কাটকাট। সব বয়সী শ্রোতাদের কাছে ডে পছন্দনীয় হতে পেরেছিলেন উনার সানশাইনি টিম্বার এবং রেন্ডিশনের জন্য। উনার হাসিটাও রিমার্কেবল। অভিনয়ে ডে-র হাসি জিনে নিয়েছিল তখনকার দর্শকদের হৃদয়।

আগের দিনের বিটিভিতে ম্যুভি অফ দ্য উইকের সুবাদে ডে-র গলা আমাদের অভিজ্ঞতায় এসেছিল। যদিও তখন-তখনই উনার লগে চেনাজানা হয় নাই, কিছুক্ষণ আগে সেইটা উল্লেখও করেছি। রিসেন্টলি ইন্তেকালের খবর পেয়ে উনার খোঁজখবর নিতে যায়া জানলাম যে ডে জন্মেছিলেন উনিশশো বাইশ খ্রিস্টাব্দে, মিউজিকশিক্ষক বাপের ঘরে, গেলেন দুইহাজার উনিশে। একদিক থেকে বলতে গেলে দরাজ হায়াত পেয়েছেন। তিনবছর-কম-একসেঞ্চুরি। নিউজে দেখলাম যে শেষের দিকে উনি নিঃসঙ্গ সত্ত্বেও সুখীই ছিলেন। উনার চেহারা দেখলেই বোঝা যাইত সুখ উনার সহজাত।

অন্যান্য তথ্য ও খবরাখবর গ্যুগল্ করলেই জানা যাবে যেহেতু, ভূমিকা ভারী করি না তাইলে। এখানে ডে-র গাওয়া গানত্রয় নিচে রেখে দিচ্ছি। সিঙ্গার ডরিস ডে। কে এইগুলার স্যংরাইটার এবং কম্পোজার কে বা কারা তা আর উল্লেখ করলাম না এইখানে। ডে-র নাম লিখে এবং গানশীর্ষপঙক্তি ইংলিশে লিখে সার্চ দিলেই বেরিয়ে আসবে সমস্ত তথ্য ও সম্পূর্ণ লিরিক। শুনে নেয়া যাবে ইউটিউবেও। মূল গানগুলো খোঁজাখুঁজির সুবিধার কথা ভেবে এই লিরিকত্রয়ের নামপঙক্তির বাংলা করি নাই। আরেকটা কথা এ-ই যে, এইগুলা লাইন-বাই-লাইন ওয়ার্ড-টু-ওয়ার্ড অবিকল হুবহু বাংলা না।

ডরিস ডে-র গাওয়া : বাংলায় তিনটা গান
ভূমিকা ও বাংলা : জাহেদ আহমদ

মাই বাডি
জিন্দেগি এক কিতাবেরই নাম মন দিয়া আমি পড়ি
কিতাবের কিছু পাতায় কেবলই দুঃখের ছড়াছড়ি
কিতাবখানি লিখেছে যেহেতু মশহুর এক লেখক
তুমি আর আমি কিতাবপাঠক অন্তিম শ্বাস তক

রাইতগুলো বড় লম্বা লাগে তুমি না থাকলে পাশে
এপাশ-ওপাশ তোমারেই ভাবি সন্ধ্যায় প্রাতঃরাশে
তুমিই আমার পুরুষ ওগো মনের মানুষও তুমি
তোমারেই আমি সত্য জানিয়া বারেবারে যাই চুমি

চাইছি তোমার হাতের স্পর্শ তোমার গলার স্বর
বোঝাতে পারি না কামনা আমার ওগো ও প্রাণেশ্বর
তুমিই আমার পুরুষ ওগো মনের মানুষও তুমি
তোমারেই আমি সত্য জানিয়া বারেবারে যাই চুমি

দিনমান আমি তোমারই বিরহে পুড়িয়া আংরা হই
প্রিয়তম তুমি ফিরিবায় তাই আমি পথ চেয়ে রই

ক্যেই স্যেরা, স্যেরা
ছিলাম যখন ছোট্ট খুকিটি
জিগায়েছিলাম আম্মাকে ডেকে :
কেমন হব মা বড় হয়ে আমি —
ভীষণ রূপসী বহু নামীদামী
কিংবা দারুণ ধনী?
আম্মা আমারে এই উত্তরই দিছিলেন সেইদিন :

ভবিষ্যতে তো হাত নাই তোমার
যা হবার হবে, ভেবো না অসার
বর্তমানেরই তুমি উপহার
ভবিষ্যতের পিঠেই রাখো ভবিষ্যতের ভার
হোক-না যা হয়, দাও হতে দাও ভবিষ্যতোৎসার

হলাম যখন অনেক বড় মুখ থুবড়ে গেলাম পড়ে প্রেমে
বারেবারে খালি জিগায়ে গেছি প্রিয়তম পুরুষেরে :
এইভাবে এই হৃদয়দোলায় দুলব তো চিরদিন?
বলো থাকব তো দোঁহে অনন্তদিন রংধনুরঙিন?
দিনের পর দিন
সখা আমারে এই উত্তরই দিয়ে গেছে অমলিন :

ভবিষ্যতে তো হাত নাই তোমার
যা হবার হবে, ভেবো না অসার
বর্তমানেরই তুমি উপহার
ভবিষ্যতের পিঠেই রাখো ভবিষ্যতের ভার
হোক-না যা হয়, দাও হতে দাও ভবিষ্যতোৎসার

এখন আমি নিজেই হয়েছি শিশুদের জননী
জিগায় তারা তাদের মায়েরে একনিঃশ্বাস প্রশ্ন :
বড় হয়ে বলো কেমন হবো মা আমরা?
দেখতেশুনতে দারুণ হবো না ধামড়া?
টাকাপয়সায় টাইকুন হবো? ধনমান গোলাভরা?
বাছাদেরে আমি চিবুক চুমিয়ে বলি :

ভবিষ্যতে তো হাত নাই তোমার
যা হবার হবে, ভেবো না অসার
বর্তমানেরই তুমি উপহার
ভবিষ্যতের পিঠেই রাখো ভবিষ্যতের ভার
হোক-না যা হয়, দাও হতে দাও ভবিষ্যতোৎসার

ল্যভ মি অর লিয়িভ মি
অসহ মদনজ্বালায় আমার জান বাইরায়া যায়
এমনও অনিশ্চয়তার মাঝে প্রাণ করে হায় হায়
এইবার আমি জানিতে ব্যাকুল তোমার মুখের কথা
আমারে তোমার পাশে না চাও তো জানাও অপারগতা

ভালোবাসা নাও ভালোবাসা দাও অথবা যাও ছাড়িয়া
আমারে আমার মতন একলা থাকিবারে দাও বাঁচিয়া
ভালোবাসি শুধু তোমারেই প্রিয় খোদার কসম শোনো
তুমি ছাড়া কারো সঙ্গেই আমি পারব না কক্ষনো

তোমার কাছে তো রাত্রির মানে কেবলই চুমুর প্রহর
অথচ রাত্রি নামলেই আমি সামলাই স্মৃতিঝড়
অনুতাপঘন হৃদয়ে একাকি জীবনটা যাবে কেটে
এরপরও আমি যাব না কারোর দুয়ারপ্রান্তে হেঁটে

কেউ থাকবে না জীবনে আমার কাউরে চাই না আমি
তোমারে না পেলে কাউরে চাই না দ্বিতীয় অন্তর্যামী
চাই শুধু হতে তোমার প্রণয়ে তোমারই বিরহে নীল
তোমারই সঙ্গে দেখে যেতে চাই জীবনের ঝিলিমিল

কিন্তু আমার চাই না কারোর ধার-করা ভালোবাসা
আজকের প্রেম চাই না কালকে হয়ে যাক ভাঙা আশা
ভালোবাসা আমি বুঝেছি কেবল তোমারই হৃদয়ভাষ্য
দরকার নাই দ্বিতীয় দুনিয়া বাঁধভাঙা কলহাস্য

… …

শেয়ার করুন:

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you