এদেশে ধর্ম বেছে নেওয়ার অধিকার কারো নেই। আপনি কেবলই মানবশিশু হয়ে জন্ম নিলেও আপনার বোধি বাড়ার সাথে সাথে আপনি জানতে পারবেন আপনি হিন্দু, আপনি মুসলমান। যদিও আপনার বোধ জাগার অনেক আগেই এই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। বাচ্চাদের ঘুমপাড়ানি গানগুলোকে সরিয়ে জায়গা দখল করেছে সহজিয়া সুরে আল্লাহ আল্লাহ, কৃষ্ণ কৃষ্ণ গান। তাতে শিশুর অধিকার নিশ্চিত হয় কি-না জানি না তবে ধর্মের আসন পাকাপোক্ত হয় নিশ্চিত।
জন্মসূত্রে হিন্দু হওয়ার কারনে দুর্গাপূজা অনেকটা অস্তিত্বের অংশ! এই উৎসব আমাদের চেতনে-অচেতনে নানান রঙে, বর্ণে, গন্ধে, স্বাদে ঘিরে রেখেছে। আমাদের অনেকেরই বাৎসরিক ক্যালেন্ডার শুরু হয় দুর্গাপূজা থেকে। তাই তো বছরে দুইবার দুর্গাপূজা, ছয়মাস পরপর, আশ্বিনে আর চৈত্রতে। তিথির হেরফেরে কখনও এক বছরে তিনটি দুর্গাপূজাও হয়। তখন সেটা অপয়া বছর, লোকজ সংস্কৃতিতে তা-ই মানা হয়।
আমাদের ছোটবেলায় মন্ডপগুলোতে এত রং ছিল না, সাদামাটা সাজসজ্জা। কিন্তু রং ছিল মানুষের মনে। শব্দের বাড়াবাড়ি না থাকায় উৎসব-অঙ্গনে পরিচিতজনেরা গল্পগুজবে হৃদ্যতা বাড়িয়ে নিতেন। আজকাল উৎসবে রঙের বাহাদুরি মনকে যত আনন্দ দেয়, তারচে বেশি বিরক্ত হই শব্দের বাড়াবাড়িতে … গান নির্বাচন না হয় অগ্রাহ্য থাক।
প্রকৃতিও এখন আগের মতো নেই। ছোটবেলায় বছরের কোনো-এক সময় সন্ধ্যার দিকে হালকা কুয়াশা দেখলে বুঝতে পারতাম পূজা আসছে। বিশেষ করে পূজার সময়টাতে অনেক কুয়াশা হতো। শিউলি আগে অনেক সহজলভ্য গাছ ছিল। শরতে তার গন্ধ আমাদের কাছে ছিল পূজার সিগ্ন্যাল। নদীর তীরে বসবাসের সুবাদে কাশফুল এখনো দেখতে পাই।
এখন যারা শিশু তারাও নিশ্চয় তাদের মতো করে পূজার সিগ্ন্যাল পায়। বড় হবার সাথে সাথে সেই সিগ্ন্যালটাও হয়তো হারিয়ে যাবে!
মনোজ দাস রচনারাশি
গানপারে দুর্গাপূজা
- যেভাবে হয়ে ওঠে ‘এসো আমার শহরে’ || শিবু কুমার শীল - March 6, 2025
- Basudeb Dasgupta’s ‘Randhanshala’ The Cooking Place translated by Sourav Roy - March 4, 2025
- ভিক্টোরিয়া অ্যামেলিনা ও যুদ্ধদিনের ইউক্রেনীয় কবিতা || জয়দেব কর - February 17, 2025
COMMENTS