গত মার্চে, এই খ্রিস্টাব্দ ২০১৮ মার্চে, একাত্তরে পা রাখলেন এল্টন জন। কম হয় নাই বেলা সামারে-উইন্টারে, কাজেও কম নয়। ভারে এবং বহরে এল্টনের কাজ প্রচুর। সোলো স্টুডিয়োঅ্যালবামই প্রায় তিরিশটা, আরও রয়েছে বেশকিছু কোলাবোরেটিভ অ্যালবাম, ছায়াছবিতে এবং অন্যান্য কমিশন ওয়ার্ক হিশেবে এল্টনের কাজ একটাও হেলাফেলার নয়। পিয়্যানো বাজিয়ে এল্টন যত কাজ করেছেন, সবখানেই নিজের স্বাক্ষর রাখতে পেরেছেন। সন উনসত্তর থেকে এল্টন টানা কাজ করে চলেছেন সংগীতের জগতে, এখনও সক্রিয়। সর্বশেষ ২০১৬ সনে বেরিয়েছে অ্যালবাম তার।
সত্তরোর্ধ্ব এই শিল্পীর অভিষেক অ্যালবাম রিলিজ্ হয়েছিল ১৯৬৯ সনে। ‘এম্পটি স্কাই’ ছিল পয়লা অ্যালবামের নাম। সুন্দর সমস্ত শিরোনামে এল্টনের অ্যালবামগুলো বছর বছর বেরোতে থাকে এবং শ্রোতারা ঠাহর করতে পারে যে এই শিল্পী নিয়মিত সংগীতানুশীলনে একটুও ঢিল দিতে নারাজ। খুব কমই শিল্পী মিলবে যাদের পাঁচ দশকের ক্যারিয়ারে চল্লিশেরও বেশি অ্যালবাম, সোলো স্টুডিয়োঅ্যালবামই যেখানে এল্টনের তিরিশের মতো সেখানে অন্য শিল্পীদের সমপরিমাণ সময়ের অধ্যায়ে বেবাককিছু মিলেজুলে কমপ্লিট ডিস্কোগ্র্যাফি কড়ে আঙুলে গুনে ওঠা যায়। অ্যালবামের সংখ্যায় বেশিকিছু নিরূপণ করা যায় না স্বীকার করে নিয়েও বলব সংখ্যা আরেকদিকে অনেককিছুই মিন্ করে। একাধারে একাগ্র থাকা, বিশেষত সংগীতার্থীদের পক্ষে, বেশি-একটা সম্ভব হয় না। ব্যতিক্রমের কথা না তুলি। ডিলান-কোহেন-ডেনভার প্রমুখ সিঙ্গার-স্যংরাইটাররা আছেন যারা ভারে এবং ধারে অ্যালবাম করে গেছেন, অনেক রকব্যান্ডও রয়েছে সিক্সটিসের গোড়া থেকে এ-পর্যন্ত অনেক ইনফ্লুয়েনশিয়্যাল অ্যালবাম করেছে। এল্টন যেন তারপরেও সংগীতনিয়মানুবর্তিতায় লিস্নারদেরে অবাক করেন।
পঞ্চাশ পেরিয়েও প্যপ/রকের অ্যারেনায় সৃজনক্ষম থাকতে পারাটাই, বিশেষত সংগীতে, রীতিমতো একটা ঘটনাই। দীর্ঘ সংগীতপরিক্রমার বাঁক-উপবাঁক পেরিয়ে এতাবধি নিজেকে সচল রাখা গানগাওয়ায় এবং গীতরচনায়, একজন সংগীতজীবীর জন্য অনেক বড় ব্যাপার এইটে। এল্টন জন ২০১৩ সনে অ্যালবাম বার করার মাত্র বছর-দুই বিরতির পরে ২০১৬ সনে আটষট্টি বছরে এসে অ্যালবাম করেন। সর্বশেষ প্রকাশিত অ্যালবামের নাম ‘ওয়ান্ডার্ফ্যুল্ ক্রেইজি নাইট’। সংগীতপিপাসুদের জন্য অভিজ্ঞতা খারাপ হয় নাই। লিজেন্ডের ক্ষেত্রে একটা পর্যায়ে ম্যাজিক নয়, টেক্নিক লক্ষণীয়। জনের মতো শিল্পীরা কাজ করছেন ক্লান্তিহীন, অবাকনেত্রে দেখতে হয় এইটাই। ক্রিটিক্যাল্ অ্যাপ্রিসিয়েশন্ অনেক পরের কথা।
আর এই বয়সেও জন কন্সার্টে-অ্যালবামে সমবয়সী অন্যান্য যে-কোনো সংগীতজীবীর তুলনায় সৃজনশীল অর্থেই সক্রিয়। যদিও বহুপ্রজ নন তিনি, ফি-বছর অ্যালবাম বার করা সত্ত্বেও শোরমাচানো সংগীতকারবারী নন তিনি, মিডিয়াহাইপ এড়িয়েই চলেন ব্রিটিশ এম্পায়ারের সিবিই খেতাব-পাওয়া স্যার এল্টন জন। কিন্তু মঞ্চে এল্টনের পরিবেশনা মানেই মিউজিকের সমুজদারদের উৎকর্ণ উপস্থিতি। সৃজনোদ্যমী এই শিল্পীর গীতরচনা আর সংগীতায়োজন অব্যাহত রয়েছে সেই দীর্ঘকালের সহযোগী লিরিসিস্ট বার্নি ট্যপিনের সঙ্গে। এছাড়াও জনের গীতরচনায় সামবায়িক সহযোগী হিশেবে বেশ দীর্ঘকাল রয়েছেন ড্যাভি জনস্টোন্ এবং নাইজেল্ ওল্সন্।
সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত সংকলনটির নাম ‘ওয়ান্ডার্ফ্যুল্ ক্রেইজি নাইট’; প্রকাশ করছে মার্কারি/ক্যাপিট্যল্ নামের খ্যাতকীর্ত সংগীতপ্রোডিউসিং ও বিপণন কোম্প্যানি, যারা এল্টন জনের ডাউনটেম্পো ২০১৩ অ্যালবাম ‘দি ডাইভিং বোর্ড’ প্রকাশ করেছিল এর আগে।
এইখানে উল্লেখ থাক, এল্টন জন বাংলাদেশেও সংগীতানুরাগীদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছিলেন গত শতকের আশির দশক থেকে বিশেষভাবেই ‘নিকিতা’, ‘স্যাক্রিফাইস্’ ‘গ্যুডবাই নোর্ম্যা জিন্’ প্রভৃতি গানের মধ্য দিয়ে। শেষোক্ত গানটি ট্রিবিউট হিশেবে মেরিলিন মানরো প্রয়াণের পর অন্তেষ্ট্যি-অনুষ্ঠানে গাওয়ার জন্য রচিত হয়েছিল এবং অসাধারণ এই গানটি এল্টনকে খ্যাতির শীর্ষে নিয়া যায়। এই গানটিই প্রিন্সেস্ ডায়ানা প্রয়াণোত্তর লিরিক্সটুকু প্রয়োজনীয় পাল্টে নিয়ে রয়্যাল্ ফিউনেরালে গেয়েছিলেন ‘গ্যুডবাই ইংল্যান্ডস্ রোজ্ … ক্যান্ডল্ ইন্ দ্য উইন্ড’ মুখড়া দিয়ে এবং বিশ্বের কোটি কোটি ডায়ানাফ্যানের অশ্রু-উচ্ছ্বসিত শ্রদ্ধা কুড়িয়েছিলেন।
ফ্যুটবলে এল্টনের প্রীতি বিদিত সর্বজনে। একাধিক ফ্যুটবলক্লাব কিনেছেন তিনি বিভিন্ন সময়ে। দেহবাসনার দিক থেকে সমকামী। ডিক্লেয়ার্ড সমকামী। গ্যে রাইটস্ সুরক্ষায় বিভিন্ন সময়ে এল্টনকে কথা বলতে দেখা গেছে। অ্যাইডস্ প্রতিরোধেও অনেক সামাজিক সমাবেশনের কাজে জড়িত হতে দেখা যায় এল্টন জনকে। এছাড়া তাকে নিয়ে, এবং তিনি নিজে, একাধিক সিনেমা হয়েছে এবং কয়েকটি সিনেমায় তিনি অভিনয়ও করেছেন। ২০১৭ সনে ‘কিংসম্যান দি গোল্ডেন সার্কল’ ম্যুভিফিকশনে এল্টনকে দেখেছি আমরা স্মরণ করব। গ্যুগল্ করে এল্টনের সাতকাহন জানার ব্যবস্থা আছে। একটি সিনেমা আসি-আসি করছে, এল্টনের জীবনভিত্তিক, সেইটার নাম ‘রকেটম্যান’। একাত্তরেও পূর্ণ জীবনরসে সঞ্জীবীত জন।
… …
- ভোটবুথ, ভূতভোট, বজরঙবলি ও বেবুন - November 26, 2024
- ক্বারী আমীর উদ্দিন সান্নিধ্যে সেদিন || তারেক আমিন - November 20, 2024
- পোয়েট ও তার পার্টনার - October 19, 2024
COMMENTS