বাগদেবীর বন্দনায় ভাটা পড়ে যেতেছে দেখি। দিন-কয়েকের মামলা হলে ব্যাপারটা আমল না-দিলেও চলত, বস্তুত কয়েক বছর ধরে বাগদেবীর ইশারাইঙ্গিত কিংবা তার অপাঙ্গে কটাক্ষ কি বিলোল ভ্রুকুটি কিচ্ছুটি নাই এই গুনেগার বান্দার পানে। কেন, কোন অপরাধে, কার বাড়া ভাতে ছাই ছিটালাম বা ফলন্ত গাছ উপাড়িলাম কার, যে – এমনধারা পানিশমেন্ট আমার, আল্লা মালুম। খোদ বন্দনায় গলদ থাকতে পারে, সেইটা আলাদাভাবেই বিবেচ্য, অবশ্য। হোয়াট! বন্দনা! তদুপরি বাগদেবীর বন্দনা! বাহা রে বাহা! বারো হাত কাঁকুড়ের বত্রিশ হাত বিচি! লেখে তো ওই দিনানুদৈনিক বিবরণ, ফ্ল্যাট ডেস্ক্রিপ্টিভ বানোয়াট যত অনুঘটনা, আর বলে কিনা বাগদেবীর বন্দনা! বলিহারি!
আহা, গুরু, চটে যাও ক্যা? চাড্ডা বিগড়ায় কেন তোমার বেহুদায় এত ঘনঘন? বলতে বেশ ভারিক্কি আর শুনতে বেশ ফানি শোনায় এইধারা ভাববন্ধ, যথা – বাগদেবীর বন্দনা, সাধনা, আরাধনা, সাহিত্য ও শিল্পের চর্চাফর্চা ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু, ওয়েল অ্যাওয়্যার দ্যাট, বোগাস এভৃথিং। সত্যি বলতে কি, লিখতে গেলে খুব বমি পায় ইদানীং, বাগদেবীর বন্দনায় খুব বমির উর্দ্রেক হয় আজকাল। সেরেছে রে! বাগদেবী শুনলে পরে রক্ষা নাই আর। ওদিকে বাগদেবীর বরপুত্রকন্যারা শুনলে তো গর্দান দেবে মটকে এক্কেরে।
যাক, আজ সারাদিন বেশ সহনীয়-সুমন্দ আবহাওয়া ছিল – এইটুকুনই লিখিয়া রাখা যাক। দিনের শরীর ঘিরে ছিল সুন্দরার্দ্র মোমনম্র মেঘমৃদু আলো। ছিল ঝিরিঝিরি জলপাত, সকালের দিকটাতে, আর অন্ধকারের লাবণ্যে ঢলোঢলো দিনখানি। কিন্তু দুপুরের পর মিষ্টি রোদ ফলিয়াছিল। নৌকাবাইচের রোদ। একটা হাতমুঠোফোন কোম্প্যানির আয়োজনে হয়ে গেল নৌকাবাইচ। বাচ্চাদেরকে নিয়ে গিয়েছিলাম সুরমার কাছে। বাড়ির পাশে সুরমা গাঙের আর্শি, সেথায় বাইচের মোচ্ছব বসেছিল। লোকারণ্য।
বাইচের বাদ্য, নৌকার গতি ও জনতার সোল্লাস চিৎকার হল্লাহাট, রক্তে ঝননঝনন বাজায়ে তোলে। দেখলাম বাচ্চাকাচ্চাদের চোখের ভেতর দিয়ে এককালের আমাকে। চেয়ে দেখি নদীতীরে আশ্বিনের বাতাস লাগার পূর্বমুহূর্ত। সমাগত দুর্গা। শারদীয় শুভেচ্ছাসাম্পান। ঋতুশোভন হাওয়ার আগমনচিহ্ন। পুজোসংখ্যাগুলো এসে গেল কি না বাজারে, দেখতে হবে খোঁজ নিয়ে। এইসব বঙ্গভারতীয় পুজোসংখ্যার গপ্পোগুজব, এমনকি সিনেমার সচিত্র গসিপকীর্তন-কেচ্ছাকাহন, আমার ভায়া আজো মচমচে লাগে। শারদীয় পুজোসংখ্যা মানে আমার ফেলে-আসা দিনগুলো ফিরে দেখা। অ্যা রেট্রোস্পেক্টিভ অফ মাই গোল্ডেন ডেইজ। অবশ্য এখন পুজোসংখ্যা আগের মতো শুরু-থেকে-শেষ পড়া হয় না, গাণ্ডেপিণ্ডে গেলা যাকে বলে তা তো হয়ই না, তাকিয়ে দেখার জন্য অথবা স্রেফ অভ্যাসবশেই কিনিয়া আনি বাসায়।
এখন পড়াশোনায় বিশেষ আনন্দ পাই না আর, না-পড়েই রাজাউজির মারতে পারঙ্গম হইতে চেষ্টা চালায়ে যেতেছি, সঙ্গগুণে। কেমন বদখত জটিল হয়ে উঠেছি আসলে। “বয়স হলো আমার, বুড়ো হলেন ডিলান” – বুড়িয়েই যাচ্ছি, ইনডিড, সাততাড়াতাড়ি।
দুর্গা বাপের বাড়ি নাইওর শেষে স্পাউসের ভিটায় ফিরবে, এতলবেতল এমনি আরও কয়েকটা দিন যাবে, এরপরেই-না বাগদেবীর দিন আসবে হংসপদে। দেবী বীণাপাণির হাতে একটা অ্যাক্যুস্টিক গিটার। দিন ফিরবে নিশ্চয় – দিন সুরের ও সংরাগের। সিজনে এবার বাগদেবীজিরে বেশ-আচ্ছামতন পাকড়াও করা যাবে। দ্যাখো।
রচনা : জাহেদ আহমদ । ২০১৪
… …
- যখন অন্ধকার, বাপ্পা মজুমদার - October 23, 2025
- একটা পাখি, হিচককের নয়, লটকনগাছের - October 21, 2025
- মঁসিয়ঁ মু য়্যু - October 18, 2025

COMMENTS