বাংলাদেশের গ্রামীণ লোককলা বিষয়ক মুক্তবিদ্যায়তনিক গবেষক মো. সাইদুর, যিনি কিছুকাল হলো প্রয়াত, একটা কাজ করেছিলেন দেশের এখনও-জ্যান্ত লোকমেলাগুলো নিয়ে। এই কাজটা সাময়িকপত্রের বরাতে পয়লা আমাদের গোচরে এসেছে ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে। সেখানে দেড়-হাজারের মতো লোকমেলার বিশাল একটা তালিকা আমরা পাই। জিনিশটা আশ্চর্যের যে এত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও লোকমেলাগুলো অদ্যাবধি টিকে আছে।
তেমনই একটা মেলা হলো ঘোষবিলা বারুণীর মেলা। ঘোষবিলা গাঁয়ের নাম, যেইখানে মেলাটা হয়। এইটা চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা রেলস্টেশন থেকে দশ কিলোমিটার দূরের একটা গ্রাম। কয়েক বছর আগেও সড়কঘাটগুলো ছিল কাঁচা, আজকাল পাকা হয়েছে অবশ্য। কয়েক বছর আগেও খুব-একটা যানবাহন যাতায়াত করত না, আজকাল করে যদিও। তবু ঘোষবিলায় গিয়া গ্রামনৈসর্গ অবলোকনের সুযোগ লভ্য।
ঘোষবিলায় যেতে হলে আপনাকে ভ্যান অথবা রিকশা নিতে হবে আলমডাঙ্গা থেকে। এই রিকশায় বা ভ্যানে চেপে সোজা ঘোষবিলায় গিয়া পৌঁছানো যাবে। এবং পৌঁছালেই ঘোষবিলা মেলা। আরেক নাম ঘোষবিলা বারুণীর মেলা। সাধারণদৃষ্ট বারুণীমেলাগুলোর সঙ্গে এই বারুণীমেলার কিছু পার্থক্য আছে। সেই পার্থক্যগুলোর কিছু উদাহরণ নিচের অনুচ্ছেদে দেখা যাক।
ঘোষবিলায় বারুণীর মেলা বসে বছরে দুইবার। চৈত্রমাসে একবার বারুণীর তিথিতে এবং আষাঢ় মাসে ফের একবার পূর্ণিমা তিথিতে। এই দুই মেলাই ঘোষবিলার মেলা। দুইটাতেই ব্যাপক লোকসমাগম হয়। এই দুই মেলাই নিছক বারুণীর ধর্মীয় পূজাআচ্চার বাইরে একটা সামাজিক সংযোগ-সহাবস্থানের মেলায় পরিণত হয়েছে। এবং গ্রামীণ মেলার সমস্ত পরিচয় শরীরে নিয়ে এই মেলাটা তার যাত্রা আজও অব্যাহত রেখেছে।
মেলা বসে মূলত ঘোষবিলার উত্তরপাশ ঘেঁষে মৃত কুমারনদের দক্ষিণ তীরটায়। এই মেলায় মাটির পুতুল, রঙিন হাঁড়িপাতিল, খেলনাপাতি, তালপাখা, বাতাসা, নানারকম নকশাছাঁচ, কদমা, রসগোল্লা, খৈ ইত্যাদি বিকিকিনি হয়। বিচিত্র মনোহারী জিনিশপত্তরের বেপারিও বসে। সর্বস্তরের সাধারণ জনতার সমাগমই মেলাটাকে বিশেষ দ্রষ্টব্য করে রেখেছে।
লেখা : সুবিনয় ইসলাম
… …
- যেভাবে হয়ে ওঠে ‘এসো আমার শহরে’ || শিবু কুমার শীল - March 6, 2025
- Basudeb Dasgupta’s ‘Randhanshala’ The Cooking Place translated by Sourav Roy - March 4, 2025
- ভিক্টোরিয়া অ্যামেলিনা ও যুদ্ধদিনের ইউক্রেনীয় কবিতা || জয়দেব কর - February 17, 2025
COMMENTS