গোপালগঞ্জের ওড়াকান্দি বারুণীমেলা

গোপালগঞ্জের ওড়াকান্দি বারুণীমেলা

গোপালগঞ্জ জেলার ওড়াকান্দি নামের জায়গায় বারুণীর স্নান হয় এবং সেই তীর্থস্নান কেন্দ্র করে মেলা বসে। এই তীর্থ-উৎসবটির মোটামুটি দুইশ বছর হতে চলল।

পঞ্জিকার দিনক্ষণগণনায় প্রতিবছর মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশীতে এই স্নানের যোগ ঘটে। এইটা আরেকটু খোলাসা করতে গেলে বলতে হয় মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী হচ্ছে চৈত্রপূর্ণিমার অব্যবহিত আগের ত্রয়োদশী তিথি। এই তিথিতে বারুণীযোগের স্নান উপলক্ষ করে হরিচাঁদ ঠাকুরের লীলাক্ষেত্র গোপালগঞ্জ জেলার ওড়াকান্দি গাঁয়ে সপ্তাহব্যাপী মেলা বসে। এইটাই ওড়াকান্দির বারুণীমেলা হিশেবে মশহুর।

তথ্য খুঁজতে যেয়ে দেখা গেল, ওড়াকান্দিতে বারুণীমেলার শুরুটা হয় ১৮৮০ ইংরেজ অব্দে। মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মের আগে থেকেই উনার জন্মস্থান গোপালগঞ্জের আরেকটা গ্রাম সফলডাঙায় বারুণীস্নান হয়ে আসছিল, ওই স্নানস্থল ঘিরে মেলাও বসত। হরিচাঁদ ঠাকুর হিশেবে সিদ্ধ হবার পরে এই সাধু তার সাঙ্গপাঙ্গ-ভক্তদের নিয়া তার নিজ গ্রামের বারুণীস্নানে অংশগ্রহণ করেন এবং উৎসবে যোগ দেন।

পরে ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে হরিচাঁদ ঠাকুরের ভ্রাতুষ্পুত্র যজ্ঞেশ্বর ঠাকুর সবার আগে এই মেলাটাকে ওড়াকান্দিতে স্থানান্তরের প্রস্তাব আনেন। সেই প্রস্তাব গ্রাহ্যে রেখে মেলা ও সম্পূর্ণ বারুণী-উৎসবটিকে হরিচাঁদ ঠাকুরের পুত্র গুরুচাঁদ ঠাকুর ওড়াকান্দিতে স্থানান্তর করেন। তথ্যমতে ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দ থেকে এইখানেই নিয়মিত প্রতিবছর মানুষের এই বৃহৎযোগের উৎসবটি হয়ে আসছে। এই ইতিহাসতথ্যগুলো মুদ্রিত একটা ফ্যাক্টশিট থেকে নেয়া হয়েছে।

মেলায় একটি মিছিল হয় আগত ভক্তকুলের অংশগ্রহণে। এই মিছিলটি দর্শনীয়। মতুয়া সম্প্রদায়ের ভক্তদের সম্মিলনে এই মিছিলটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যবহ বৈচিত্র্যে ভরা। বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলে এমন মিছিল দেখা যায় না। সামরিক একটা আবহ আছে এই মিছিলটির মধ্যে। নির্যাতিত, নিপীড়িত ও অবহেলিত জনমানুষের, বিশেষভাবেই অবহেলিত মতুয়া সম্প্রদায়ের, সামাজিক উত্থানের লড়াই-সংগ্রামের সঙ্গে এই সামরিক মিছিল একটা আলাদা ব্যঞ্জনা হাজির করে যেন।

লেখা : সুবিনয় ইসলাম

সহায়ক তথ্যসূত্র /
* ধানশালিকের দেশ, বর্ষ ২৫ সংখ্যা ২, এপ্রিল-জুন ১৯৯৭, বাংলা অ্যাকাডেমি, ঢাকা
* আনন্দভুবন, বর্ষ ২ সংখ্যা ২২, এপ্রিল ১৯৯৮, বেক্সিমকো মিডিয়া লিমিটেড, ঢাকা

… … 

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you