বাংলাদেশের প্রচলিত মূল্যবোধের জায়গায় দাঁড়িয়ে বিচার করলে ট্রাই গ্যাং-র গানটাকে কুৎসিত মনে হবে। টাকার গরমে মাথাগরম বাচ্চা পোলাপান নিজের বেটাগিরি জাহির বা ভোগের সামগ্রী রূপে নারীকে যেভাবে গানে টিজ করে যায় সেটা সইতে পারা কঠিন! so fucking rich-র বাইরে আস্ত সমাজকে ভাগাড় ভাবতে তারা দোটানায় ভোগেনি। সুতরাং মানহানিকর গণ্য করে রুচিবাগিশরা আদালতে মামলা ঠুকতেই পারেন। সেইসঙ্গে খেয়াল করা প্রয়োজন, এইসব কুরুচির মহড়া দেশ জুড়ে সমাজের প্রতিটি অংশে পুরোদমে চলে। শ্রেণিভেদে মাত্রাটা খালি ভিন্ন এই যা! সামাজিক সিঁড়ির চূড়ায় সক্রিয় ভোগবাদী বিকারকে গানটি ডিরেক্ট সামনে এনেছে। হিপহপের বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় একে অপরাধ ভাবা কঠিন।
কোনো আর্টফর্মেই শ্লীল-অশ্লীলের সুনির্দিষ্ট আকৃতি বা মানদণ্ড থাকে না। হিপহপ তার বাইরে নয়। একটা গ্রাফিত্তি, ডিজে বা র্যাপবুলিকে ঠিক কী কারণে শ্লীল, শোভন হতে হবে ইত্যাদি ডিক্রি জারির বাধ্যবাধকতা রাষ্ট্র বা সমাজের থাকলেও শিল্পী সেটা মানতে বাধ্য নয়। সমাজের প্রতি পরতে প্রতিনিয়ত যা ঘটে তার ঘাত-প্রতিঘাত মূলত হিপহপের বিচিত্র আঙ্গিকে মানুষ ফুটিয়ে তোলে। র্যাপ গানের অতিকায় অংশ তেতো সত্যকে সামনে নিয়ে আসার দুর্নিবার ঝোঁক ভিতরে লালন করে থাকে। সত্যটি সচরাচর যে-আঙ্গিকে সামনে হাজির হয় তার যৌক্তিকতা রয়েছে বিধায় একে অশ্লীল, অসুস্থ, অসুন্দর বা নন্দনরহিত বলার সুযোগ থাকে না। অকপট সত্যকথনের দৃঢ়তা সব ছাপিয়ে হৃদয়ে অভিঘাত হানে ও ইতিবাচক রূপে শ্রোতামনে স্থান করে নেয়।
পক্ষান্তরে পৌরুষ বা বেটাগিরি জাহির করতে উতলা কিংবা জাতি, সম্প্রদায়, শিশু ও নারীবিদ্বেষে আবিল হিপহপের নমুনা বিশ্বে প্রচুর পরিমাণে বিরাজ করে। সমাজে এই বিকারগুলো যেহেতু রয়েছে ইচ্ছে করলেই হিপহপের তাকে উপেক্ষা করার সুযোগ থাকে না। শিল্পী এগুলোর বিরুদ্ধে র্যাপের গুলি ছুঁড়তে পারে অথবা লেভেলে নাই-র পথ ধরে বিকারগুলোকে মহীয়ান যদি করতে চায় সেক্ষেত্রে তাকে নিরস্ত করার পথ হিপহপে নেই। তার প্রতি অঙ্গই স্বাধীন। রাস্তার পাশে দেয়ালে অথবা র্যাপ গানের কথায় একটা লোক যা মন চায় বলতে পারে। তার বক্তব্য প্রকাশের ধারা ভালো না খারাপ অথবা শৈল্পিক না স্থূল ইত্যাদি পৃথক বিবেচনার বিষয়। এর সঙ্গে ওই লোকটার নিজেকে ব্যক্ত করার সহবত নেই। স্বভাবের দিকে থেকে হিপহপ তাই চরমপন্থী। বাস্তব জীবনে পরস্পরবিরোধী যত ঘটনা ঘটে তার অকপট ভাষ্য নিজদেহে ধারণ করাই তার কাজ। এখন একে আটকানোর অর্থ হচ্ছে বাস্তবিক জীবনধারায় বিরাজিত সত্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ, যার বিরোধিতা করবে বলে হিপহপের এক-একটা আঙ্গিককে লোকে বেছে নিয়ে থাকে।
তো এই জায়গা থেকে ভাবলে ট্রাই গ্যাং-র গানটা বাঙালি শ্রোতার জন্য অভিশাপ হয়ে আসে। হিপহপের অঙ্গ রূপে একে সহ্য করা কঠিন আবার সেখান থেকে ছাটাই করা সম্ভব নয়। গানটি হিপহপ হয়নি এ-কথা বলা যাচ্ছে না, যেহেতু র্যাপের প্রাথমিক শর্তগুলো তার মধ্যে সক্রিয় বটে। বাংলাদেশে ওপরতলার সমাজে স্থূল আকারে যে-ভোগবাদটা চলে গানের র্যাপবুলিতে তারা সেটা সেন্সর না করেই জায়গা দিয়েছে। নিজের বেটাগিরি জাহির ও নারীকে টিজ করার অনুষঙ্গ গানের কথা ও ভিডিওগ্রাফিতে র্যাপানুগ বটে। এগুলোকে একত্রে যোগ করলে একটা বার্তাও পাওয়া যায় আর বার্তা থাকায় খিস্তি, বিদ্বেষ ও বিকারে ভরপুর গানটাকে র্যাপ-পরিপন্থী বলার সুযোগ সীমিত হয়ে পড়ে। বাংলা র্যাপ গানে চ-বর্গীয় খিস্তি ব্যবহৃত হলেও ইংরেজি বর্ণমালার দ্বিতীয় অক্ষর B ব্যবহার করে খিস্তিটা বোধ করি এর আগে এই পাওয়ার নিয়ে হাজির হয়নি যেটা লেভেলে নাই ঘটাতে পেরেছে।
টাকার গরমে উচ্ছন্নে যাওয়া ওপরতলার জগতে Bitch শব্দটি অকাতরে চলে এবং গানে সেটা উঠে এসেছে। ঠিক যে-রকম টাকার অভাবে হাড়জিরজিরে নিচেরতলায় মাগী বা এ-রকম অগণিত খিস্তি রাতদিন খৈয়ের মতো বাতাসে ভেসে বেড়ায়। মাইনকা চিপায় পতিত মধ্যবিত্ত সমাজেও নানা উপায়ে নারীকে টিজ করতে লাগে এমন শব্দের অভাব নেই। র্যাপ অঙ্গের গানে এগুলো প্রয়োগের (*প্রাসঙ্গিক অথবা অপ্রাসঙ্গিক যেভাবেই ঘটুক।) সীমা-পরিসীমার ব্যাপারে লিখিত বা অলিখিত কোনো শর্ত নেই। রুচিবোধটা এখানে আপেক্ষিক। মার্কিন হিপহপের সূচনালগ্নে দেখা দেওয়া N.W.A-কে লোকে তাদের র্যাপবুলির জন্য আজো স্মরণ করে থাকে। গ্যাংস্টা র্যাপের পরিবেশনায় খ্যাতি-কুখ্যাতি দুটোই তারা কুড়িয়েছে সেই সময়। A bitch is a bitch-র র্যাপবুলিতে মার্কিন দেশের নারীকুল সম্পর্কে নিজের ধারণাটি তারা গুলি করেছিল। বুলির মুখরা অংশটায় নজর বোলানো যাক :—
A bitch is a bitch (bitch)
So if I’m poor or rich (word up)
I talk in the exact same pitch
Now, the title bitch don’t apply to all women
But all women have a little bitch in ’em (yeah)
It’s like a disease that’s plagues their character
Takin’ the women of America (yeah)
And it starts with a letter B
It makes a girl like that think she better than me (bitch)
[A bitch is a bitch; Lyrics and song : N.W.A]
কুক্কুরীসুলভ হ্যাংলা স্বভাব সকল নারীর মধ্যে কমবেশি বিদ্যমান এবং ঘ্যানঘ্যান করে হলেও পুরুষের থেকে নিজেকে উত্তম প্রতিপন্ন করতে মরিয়া হয় তারা; — গানের মোদ্দা কথা এটুকুই। নিজেকে পুরুষের থেকে সুপিরিয়র প্রমাণের এই ফিমেল ডোমিনেশনটা N.W.A-র র্যাপারদের হজম হচ্ছে না। অগত্যা গানে সে-কথা তারা উগড়ে দিয়েছিল। সমাজে কে কার চেয়ে দড় সেটা নিয়ে নারী-পুরুষে কোন্দলের ইতিহাস বহু দিনের পুরোনো। শ্রোতা বা কোনো র্যাপগায়ক এখন N.W.A-র পন্থায় নারীকে Bitch বলে ভাববে অথবা বয়ানটা প্রত্যাখ্যান করবে ইত্যাদি তার ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি ও বিবেচনার ওপর দাঁড়িয়ে আছে। র্যাপগায়ক যদি নারী হয়ে থাকে তাহলে নারীবিদ্বেষী বয়ানের পাল্টি বয়ানে সে যাবে কি যাবে না এই সিদ্ধান্তটি নিজের মতো করে তাকে নিতে হবে।
নারীবিদ্বেষের পাল্টি পুরুষবিদ্বেষও সমাজে বিরল কোনো ঘটনা নয়। পুরুষবিদ্বিষ্ট গায়িকা যদি ওটাকে হাতিয়ার করে র্যাপ গানে পাল্টা বুলি ছোড়ে তাতে সেই বুলির হিপহপ হতে আটকায় না। পুরুষের খাসলতে শুয়োরের লক্ষণ দেখা যায়; — এমনধারা যুক্তিতে গায়িকা পুংজাতিকে Pig বলে গানে সম্বোধন করতেই পারে। দু্ই ঠ্যাংয়ের মাঝখানে ঝুলন্ত অঙ্গটি ছাড়া বেটাছেলের মগজ বলে কিছু নেই; — এমতো ভাবনায় দাঁড়িয়ে পুরুষ জাতিকে Dickhead-এ মহিমান্বিত করে র্যাপগুলি ছোড়ার হক্ তার রয়েছে। র্যাপ বা সামগ্রিক অর্থে হিপহপ এমন এক মাধ্যম যেখানে বিধিনিষেধের সুনির্দিষ্ট সীমারেখা নেই। গায়কের স্বাধীনতাকে পাত্তা দিয়ে র্যাপবুলি শ্রোতার সঙ্গে সংযোগ সারে।
লেভেলে নাই-র র্যাপবুলিতে নারীজাতিকে হেয় করার পন্থাটি অবশ্য N.W.A-র মতো বুদ্ধিদীপ্ত মনে হয়নি। শুনে মনে হবে মুখ দিয়ে নয় বরং Dick দিয়ে তারা গানটা গাইছে! নারীবিদ্বিষ্ট বা মিসোজেনিক হওয়ার কারণে ওটা অশ্লীল নয়, বিদ্বেষকে মাথামোটা পন্থায় উদযাপনের ভড়ং দেখে তাকে অশ্লীল ভাবতে মন চায়। বাংলাদেশের বড়োলোকরা ভোগবাদী বিকারের যে-গুহায় আপাতত ডেরা পেতেছেন সেখানে N.W.A-র ধাঁচে নারীবিদ্বেষকে মহীয়ান বা গ্লোরিফাই করার সুযোগ নেই। ওপরতলার সমাজটি সেই উচ্চতায় এখনো পৌঁছায়নি যেখানে Dick-র পরিবর্তে মগজ ব্যবহার করে র্যাপের গুলতি ছোড়াটা অমোঘ হয়।
সামাজিক স্বাস্থ্য, শোভনতা, সদাচার, নারী-শিশু-দেশ-জাতির প্রতি সম্মানবোধের দোহাই দিয়ে র্যাপবুলির ওপর সেন্সরশিপ আরোপ কঠিন। একজন র্যাপগায়কের কাছে হিপহপ হলো ক্যামেরা। কী ছবি তুলবে সেটা নির্ভর করছে সমাজের কোন স্তরে সে বিচরণ করছে তার ওপর। সামাজিক ঘাত-প্রতিঘাতের ভিতর দিয়ে বেড়ে উঠার ক্ষণে বাস্তবতাটা ক্যামেরায় যেভাবে ধরা দিতে চাইছে র্যাপবুলিতে সেটা অকপটে গুলি করাই তার নিয়তি। রাষ্ট্র-সমাজ-প্রতিষ্ঠানের সমালোচনা যে-কারণে র্যাপগানে ব্যাপক চোখে পড়ে। সামাজিক এইসব অনুঘটক একজন র্যাপশিল্পীকে অনেকভাবে হেনস্থা করে যায় বলে এগুলোকে আঘাত করতে সে কুণ্ঠা বোধ করে না। অন্যদিকে নারী জাতির ব্যাপারে পুরুষ র্যাপারদের অভিজ্ঞতা সচরাচর মিশ্র হয়ে থাকে। নারী একদিকে তার কাছে স্নেহ, মমতা, দায়িত্ববোধ আর অনিঃশেষ ভালোবাসার খনি। অন্যদিকে নিছক দেহমিলন বা প্রতারিত হওয়ার বাইরে কিছু পায়নি এমন নারীকে Bitch ছাড়া অন্য নামে সে ভাবতে পারে না।
সমাজের যে-স্তর থেকে বিশ্বের সিংহভাগ র্যাপার সচরাচর উঠে আসে সেখানে নারী জাতিকে সুনাগরিকের চশমা পরে পরিশিলীত চোখে দেখাটা ভণ্ডামির শামিল। সামাজিক এই স্তরে নারী-পুরুষের সহাবস্থান ও বিরোধের সব ঘটনাই জৈব। গানের বুলিতে জৈব অভিজ্ঞতাটা তারা উগড়ে দেয়। র্যাপে লুকোছাপা বারণ। তাৎক্ষণিক অভিজ্ঞতাকে তাৎক্ষণিক ঝাড়তে পারাই নিয়ম সেখানে; — ভান-ভণিতার জায়গা তাই থাকে না। ভালো-খারাপ, শ্লীল-অশ্লীল, রুচিশীল-রুচিহীন, তিক্ত-মধুর, মানবিক অথবা অমানুষিক…সোজা কথায় সকল অভিজ্ঞতা এবং এ-সম্পর্কিত বোধ জৈব হওয়ার কারণে আলগা বুদ্ধিজীবিতা দিয়ে এই জীবনে ব্যবহৃত ভাষার পরিশীলন সম্ভব নয়। এটা তাকে কৃত্রিম করে তোলে। হিপহপের সকল অঙ্গে যারপরনাই অকপট ভাষণ যদি না থাকে তবে সেগুলো অন্য কিছু হলেও হিপহপ কিছুতেই নয়।
বিষয়টি অবধানের খাতিরে র্যাপগায়ক এমিনেমের অ্যামিটিভিল-এ (Amityville) ব্যবহৃত র্যাপবুলিকে প্রাসঙ্গিক করা যেতে পারে। কৃষ্ণাঙ্গ র্যাপার বিজারকে (Bizarre) সঙ্গে জুড়ে রচিত গানের কথায় অ্যামিটিভিল নামক কাল্পনিক শহরের বিবরণ উঠে আসে। ওই শহরে বসবাসের অভিজ্ঞতা শ্রোতাকে জানানোর ছলে মিশিগান অঙ্গরাজ্যের অতিকায় নগরী ডেট্রোয়টকে গানে প্রাসঙ্গিক করে দুই গায়ক। ডেট্রোয়ট হচ্ছে সেই শহর যার কানাগলি থেকে একদিন র্যাপার এমিনেমের উত্থান ঘটেছিল। এর আগে অবধি শহরের নারকীয় ঘুঁপচিতে তার দিন কেটেছে এবং বলাবাহুল্য জৈবঅভিজ্ঞতাটি সুখকর ছিল না। আধুনিক লোককাহিনির (Modern Urban Folk) রসদ কাজে লাগিয়ে দ্য অ্যামিটিভিল হরর নামে বানানো ছবিতে দর্শক ভূতুড়ে এক প্রাসাদের দেখা পেয়েছিল। সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত ছবিতে নাটের গুরু রোনাল্ড জুনিয়র তার পরিবারের সদস্যদের গুলি করে হত্যা করে। এমিনেম এখন বাস্তবে বিরাজিত ডেট্রোয়ট শহরে অপরাধের স্বর্গরাজ্য বিবেচিত অঞ্চলকে অ্যামিটিভিল আখ্যা দিয়ে গানে প্রাসঙ্গিক করে। ওই অঞ্চল থেকে আগত বাসিন্দাটি কাল্পনিক চরিত্র হলেও তার আবডালে এমিনেমকে টের পেতে শ্রোতার অসুবিধা হয় না। ডেট্রোয়টের দিনগুলোকে ভৌতিক ছাড়া অন্য কিছু ভাবা তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। বন্দুকবাজি ও মারপিটে অনিশ্চিত অঞ্চলে নিজের দুঃসহ দিনরজনিকে র্যাপছন্দে গুলি করে গায়ক।
বাস্তবের অ্যামিটিভিল হচ্ছে এমন এক এলাকা যেখানে লুট না করলে কেউ তোমাকে কিছু দেবে না। পিস্তলবাজির বাইরে বেঁচে থাকার রাস্তাও খুঁজে পাবে না তুমি। সহি সালামতে যদি বাঁচতে চাও তবে পুলিশ গুলি করার আগে তোমায় তাকে গুলি করতে হবে। কেউ নিরাপদ নয় এখানে। নির্দোষ বা নিষ্পাপ নয় কেউ। পরিবারকে আগলে রাখার চাপ পাহাড় ঠেলার শামিল। কেউ যদি সেটা করতে চায় তবে তবে পরিবারকে বেশ্যা হওয়ার রাস্তায় নামানো ছাড়া গতি নেই। অ্যামিটিভিল হচ্ছে অসুস্থতার শিরোমণি। সুস্থ দেহে বাঁচতে হলে আগে নিজেকে অসুস্থ প্রমাণ করতে হয় সেখানে। বলতে হয় সে আসছে Mentally ill from Amityville নামের সুড়ঙ্গ থেকে। গানের মিডল পয়েন্টে পৌঁছে এমিনেম র্যাপগানের ইতিহাসে অন্যতম বিতর্কিত স্তবকটা দ্রুত আওড়ে বসে :—
… I fucked my cousin in his asshole, slit my mother’s throat
Guess who Slim Shady just signed to Interscope?
My little sister’s birthday, she’ll remember me
For a gift I had ten of my boys take her virginity
And bitches know me as a horny-ass freak
Their mother wasn’t raped, I ate her pussy while she was sleep
Pissy-drunk, throwin’ up in the urinal (you fuckin’ homo’!)
That’s what I said at my dad’s funeral
[Amityville, feat. with Bizarre; Lyrics and Song : Eminem]
সর্বনাম পদে নিজেকে লুকিয়ে রাখা এমিনেম আক্ষরিক তার মাকে গলা কেটে হত্যা করেনি। বোনের জন্মদিনের উপহার হিসেবে তাকে ধর্ষণ করতে ছেলেদের পাঠানো, এই ভাবনার বাস্তবিক কোনো ভিত্তিই নেই। বাস্তবের এমিনেম বরং মা ও বোন অন্তপ্রাণ ছিল সবসময়। বোনের গায়ে ফুলের টোকা যেন না পড়ে সেই চেষ্টায় তার খামতি ঘটেনি কখনো। স্তবকের পরবর্তী লাইনগুলোয় যার পরিচয় উঠে আসে সেখানে অতিরঞ্জনটা শ্রোতা সহজেই বুঝতে পারে। And bitches know me as a horny-ass freak থেকে পরবর্তী অংশটা বিজারের লেখা বলে তারা জানিয়ে থাকে। মার্কিন দেশে হিপহপের ইতিহাসে যেসব র্যাপগায়ক Born Criminal অর্থাৎ মায়ের পেট থেকে বেরিয়ে অপরাধে পাকনা হয়ে উঠেছিল বিজারে তাদের একজন। অ্যামিটিভিল গানের এই অংশে নিজের ওই পরিচয়টা জানিয়ে দিতে কসুর করে না সে।
স্তবকের শুরুর চারখানা র্যাপবুলিতে এমিনেম তার স্বভাবসুলভ কমিক স্যাটায়ারে ভর করে যে-বুলি আওড়ায় তার মধ্যে মানুষ হিসেবে সে কতটা নিচে নামতে পারে সেটা জাহির করার ভড়ংটা ধরা পড়েছিল। তার সঙ্গে মিল জুড়তে গিয়ে অথবা নিজেকে এরচেয়েও ভয়ানক প্রমাণে বিজারে এখানে আরেক ধাপ আগে বাড়ে। বীভৎস রসকে হাতিয়ার করে সে, যার মধ্যে হয়তো তার অপরাধী মনের গহিন কোটরে সংগোপন ধর্ষকামটা আচমকা দাঁত বের করে হাসে। হিপহপের দেহে এ-পর্যন্ত যত আঙ্গিক ফুটে উঠেছে তার মধ্যে র্যাপ হচ্ছে সবচেয়ে নির্দয়, শিল্পীর দেহের ভিতর বা বাইরে যা আছে তার সবটা টেনে বের করে তবে ক্ষান্ত হয় সে!
র্যাপস্তবকটা আপাতভাবে হিপহপের পরিপন্থী মনে হলেও আড়ালে শায়িত কার্যকারণ ভেবে নিতে পারলে গায়কের বাকোয়াজি বা শব্দখেলার অতিশয়োক্তির গোমরটা ফাঁস হয়। সর্বনাম পদের আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে রাখা গায়ক দুঃসহ দিনগুলোয় নিজের মা-বোনকে আগলে রাখার মানসিক চাপকে এইবেলা গুলি করছে গানের কথায়। চাপটা সেই সময় অতিকায় দুঃস্বপ্নে রূপ নিয়েছিল আর তাকে সে উগড়ে দিচ্ছে গানে। জঙ্গে টিকে থাকার চাপ সহ্য করার দিনকালে তার ভিতরে বিধ্বংসী এক অশুভ জন্ম নিয়েছিল। ওটাকে দমিয়ে রাখার লড়াইয়ে র্যাপ ছিল একমাত্র হাতিয়ার। র্যাপবুলির মধ্য দিয়ে নিজের লড়াই, প্রতিরোধ ও বিকারকে উগড়ে দিয়ে শিল্পী এমিনেম জন্ম নিচ্ছে এখন।
র্যাপ অকপট সত্যকথন দাবি করে। বাস্তবের দুনিয়ায় র্যাপার তার দেহমনে ভালো-মন্দ যত চাপ সহ্য করেছে সব অকপটে গানের কথায় ঝেড়ে দিতে হয়। শোভন শব্দের লুকোচুরি খেলা কিংবা রহসঘন বাকবিভূতির স্থান এখানে নেই। র্যাপ যে-কারণে কবিতার লক্ষণ বহন করলেও কবিতা নয়। কবিতা প্রতারক। কবি সেখানে নিজের চেহারাকে বিচিত্র উপায়ে গোপন করে থাকে। ভান-ভণিতাভরা পঙক্তিমালায় পাঠকের মনে ধাঁধা লাগিয়ে বাজিমাত করে কবি। র্যাপ কিংবা হিপহপের সামগ্রিক অবয়বে ভণিতাটা করতে মানা। কবিতাকে হত্যা করে তাই র্যাপ জন্ম নিয়ে থাকে। rawlife যদি বিষয় হয় তবে একটা মানুষ সুস্থ নাকি বিকারগ্রস্ত ইত্যাদি পরিমাপের রাস্তা খোলা থাকে না। N.W.A মার্কিন সমাজবাস্তবতায় বসে নিজের বিদ্বেষকে অকপটে গানে গুলি করেছিল আর ট্রাই গ্যাং একই কাজ করেছে বাংলাদেশের ওপরতলার জীবনবাস্তবতায় সচল বিকারে বিচরণ করে।
এই দেশে ওপরতলার rawlife আপাতত যে-ভাষা ও বয়ানের তাঁবে চলে তাকে সরাসরি গানে সংযুক্ত করেছে তারা। উক্ত বিবেচনায় পরিবেশনাটা স্থূলতা দোষে হয়তো দোষী, আবার বাস্তবতার নিরিখে একে এড়িয়ে যাওয়াটা সম্ভব নয়। কেননা সেক্ষেত্রে বড়োলোকের মাথাখারাপ পোলাপানদের আসলি সুরতকে মেকি মনে করার ঝুঁকি থাকত। শৈল্পিক নমুনা হিসেবে গানটি অখাদ্য। বাস্তবতা বিবেচনায় তাকে আবার ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলাটা কাজের কথা নয়। বাংলা র্যাপগানের বিবর্তনের ইতিহাস যেদিন লেখা হবে সেদিন আস্তাকুঁড় থেকে হলেও গানটিকে তুলে আনা লাগতে পারে।
রূঢ়, কর্কশ, স্থূল অথবা ইংরেজি Raw-life (*তা সে সমাজের যে-স্তরে বিরাজ করুক।) বাংলা ভাষার সাহিত্য, চলচ্চিত্র বা সংগীতের শাখা-প্রশাখায় সামান্যই উঠে এসেছে। যতটুকু এসেছে সেটা ওই জীবনধারার এক-একটি স্তরে বিরাজিত শেডগুলো ধরতে পারার অক্ষমতা আর উপযুক্ত ভাষার অভাবে মনে অভিঘাত তৈরি করে না। উল্টো মেকি মনে হয়। বাংলাদেশের ভিতরে আরেকটা বাংলোদেশের জন্মদাতা সমাজকে ঠিক কোন ভাষায় বর্ণিতে পারলে তার তল পাওয়া সম্ভব সেটা এখনো কুহেলিকায় ঢাকা। হিপহপের অঙ্গ র্যাপের বড়ো সুবিধাটি এখানে। এই অঙ্গের গানে বাড়তি অলঙ্কার জোড়া যেহেতু বারণ, মুখের বুলিকে ধরতে পারলে so fucking rich-র ছেলেমেয়েদের Raw-lifeটা খানিক বোধগম্য হয়। কাজেই গানটির কারণে ভাষার গর্ভনাশ হচ্ছে টাইপের ভাবনা বাস্তবানুগ নয়। বরং ব্ল্যাক জ্যাং, দেশি এমসিজ, ট্রাই গ্যাং বা জালালি সেট আপাতত যে-ভাষায় র্যাপটা গাইছে সেখানে অন্যকিছু বসানোর প্রবণতা ভাষার গর্ভনাশ ত্বরিত করে।
…
র্যাপগানে ভাষার সুনির্দিষ্ট পরিসীমা নেই। সব ভাষা সেখানে চলতে পারে যদি সেটা র্যাপারের জীবন-অভিজ্ঞতার সঙ্গে সংযুক্ত বা প্রাসঙ্গিক হয়। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য প্রবাসী সিলেটি র্যাপাররা তার উদাহরণ। এইসব র্যাপার দুটি দেশকে রক্তে বহন করছে। অন্যদিকে দেশের ভিতরে যে-অঞ্চলটা বিরাজ করে তাকে বহন করার সহজাত দায় তাদেরকে দিয়ে সিলেটি শব্দে র্যাপের গুলি ছুড়তে প্রাণিত করে। এই র্যাপারদের পাল্লায় পড়ে সিলেটি ভাষা আঞ্চলিক গণ্ডি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র ভাষামাধ্যম রূপে নিজেকে জাহির করতে চায় ইদানীং। বাংলাদেশের সঙ্গে নাড়ীর যোগ থাকলেও র্যাপের বুলিতে ছিটকানো সিলেটি ভাষা কোথায় জানি তার নিজেকে আলগা করতেই থাকে।
এটা লক্ষণীয়, আমেরিকা বা ব্রিটেন প্রবাসী সিলেটিরা বাংলা মান ভাষার পরিবর্তে ইংরেজি ও সিলেটিকে সঙ্গী করে বড়ো হয়। একজন র্যাপার তাই গান বাঁধতে বসে মান বাংলার আগে সিলেটি ভাষায় গমন করে ও সেখান থেকে প্রয়োজনীয় রসদ তুলে আনে। বাংলা ভাষার দেহে বিরাজ করেও বাংলাকে উপেক্ষার প্রবণতাটি একসময় তীব্র কটাক্ষ ও উপহাসের শিকার হলেও দিনকাল এখন পাল্টেছে। বিশ্বায়নের যুগে কে কোন ভাষায় কী করে বেড়াচ্ছে সেটা বড়ো কথা নয়। সে কী দিচ্ছে বা লোকে তাকে সংযোগ করতে পারছে কি পারছে না ইত্যাদি হলো বিবেচ্য বিষয়। র্যাপের ক্ষেত্রে বলতেই হচ্ছে, ইউটিউবের কল্যাণে সাধারণ শ্রোতাদের কাছে সিলেটি র্যাপ বেশ জনপ্রিয় এবং সেটা কেবল সিলেট অঞ্চলে সীমাবদ্ধ নেই, অন্যান্য অঞ্চলে লাল মিয়া বা বাকি র্যাপারদের ভক্তকুল সংখ্যায় নগণ্য নয়।
যুক্তরাজ্য প্রবাসী র্যাপারদের সিলেটি উচ্চারণের সঙ্গে স্থানীয় সিলেটিদের উচ্চারণে তফাত রয়েছে, যদিও র্যাপের ক্ষেত্রে তফাতটা কোনো প্রতিবন্ধকতা মনে তীব্র করে না। ফকির লাল মিয়া, পল্লব ভাই, সি-লেট, বিডি মঙ্ক, সামী আর ওদিকে ফোক, পপ ও র্যাপের মশলা মিশিয়ে বানানো গায়ক রেডজ-র গানে র্যাপ দিতে অভ্যস্ত অ্যাশবলি বা সিলেটি বিয়ের গীত আইলা রে নয়া দামান-এ র্যাপ জুড়ে বিখ্যাত মোজা … একঝাঁক সিলেটি গায়ক সিলেটি ভাষা ও সংস্কৃতির দেহে অভিবাসী জীবনের অনুষঙ্গ জুড়ে নিয়ে আত্মপরিচয়ের গল্প শ্রোতাকে শোনায়। মতামতটা একান্ত ব্যক্তিগত তবু বলে রাখা প্রয়োজন, সিলেটি র্যাপারদের মধ্যে ফকির লাল মিয়া ছাড়া বাকিদের র্যাপবুলিতে সেই শক্তি অনুপস্থিত যার কারণে র্যাপ একজন গায়কের আত্মপরিচয়ের দলিলে মোড় নিয়ে থাকে। র্যাপগান পরিবেশনায় তারা পটু হলেও ফকির লালের দেশ-সমাজ ও জীবনবীক্ষণের যে-শক্তি তার গানের কথায় ঝিলিক দিয়ে ওঠে, বাকিদের পরিবেশনায় স্বভাবকবিত্বের এই আবেশটা অনুপস্থিত বলা চলে।
র্যাপে তুলনা শোভন নয়, তথাপি সিলেটি শব্দ ধার করে হয়তো বলা উচিত ফকির লাল বাদে অনেকের লিরিক্স শুনে ফাতরামি ছাড়া দ্বিতীয় শব্দ মনে জাগে না। র্যাপের শক্তিই হচ্ছে তার কথায় এবং সমস্যাটি বাংলা র্যাপে মোটের ওপর এখনো প্রকট। ফকির লাল মিয়া, তাবিব মাহমুদ ও জালালি সেট-র গানের কথায় গুলি ছোড়ার শক্তিটা শুরু থেকে এখন অবধি সুসহংত মনে হয়েছে। জালালি সেট বিরচিত লেভেল-13 বাংলা র্যাপে স্মরণীয় কাজ ছিল। অ্যালবামে পরিবেশিত প্রতিটি গান বাংলা জবানের ব্যবহার আর হিপহপের অনুষঙ্গকে স্বীকরণের ক্ষমতায় আন্তর্জাতিক মান ছুঁয়েছে এই দাবি করতেই পারে। জালালির বাচ্চা পোলাপানদের র্যাপগান শ্রবণের গভীরতা ও আত্মস্থ করার শক্তি টের পেতে লেভেল-13-এ সংযুক্ত গানগুলোর কিয়দংশ পাঠ করা সমীচীন মনে করি :—
ফুরাইলে তোর ফুটানি
ফিকিরি চাঙ্গা
চিকনে ডুইবা পানি খায়া চলে ধান্দা
[জালালি; কথা ও গান : জালালি সেট]
…
লে হালুয়া রাইতে চক্ষে হলিউডের কালুয়া
দিনে লাগাই থুইবেন আপনে বলিউডের জালুয়া
বাবা রে বাবা বাবা দেখি সাদাই নাপা নাপা
Tablet খাইয়া বাবা part লয় ইয়াবা, ছিঃ
গানের কথাবার্তি দেখি পুরাপুরি পাঙ্খা (Yeah)
ভাল না লাগলে সোজা আগে পাইড়া যান গা
যাইয়া হৃদয় খানের মত ভালবাসার গান গা (গা)
চ্যাটের বাঙালি digitally পুরাই পাঙ্খা
[পাঙ্খা; কথা ও গান : জালালি সেট]
…
তাওয়া গরম হইলে সাত খুনেও পাপ নাই
গরম গরম ভাত ছিডান কাউয়ার অভাব নাই…
নাদান পোলা তুই করিস না দাদাগিরী
যহন তুই দেখতি Tom & Jerry, তহন তে ছাদে ফালাই ছেড়ি…
লাঠি ভাঙ্গার আগে বাইরাই পিটাই মারি সাপরে
আর গানের ভিতর target করি তর মায়রে বাপ রে
আর MC পাগল মনে মনে রাইত হইলে কাগজ গুনে
পশুপাখির দুঃখ দেখতে চাইলে যাইবেন কাঁটাবনে
দৌড়ের উপ্রে গাবতলি এক মিনিটে মাইল পার
আর এইবার দেখবেন কত ধানে কত চাইল কার
আর বাপের আগে সব কপাল থাপড়াইয়া গাইল পার
কারণ দেশ চালায় যত চোর-চোট্টা-বাটপার
[সূরা টার্গেট; কথা ও গান : জালালি সেট]
…
মানিক চিনে রতন আর কুত্তায় চিনে হাড্ডি
আর এক-এর মাল চিনে যত মালখোর মদতি
আর পরে চালায় জুয়ার ভাট্টি…
আমি মদের দরিয়ার খাগু সর্দার গো তালে
ঠিক জাতে মাতাল
এই এক-এর এক নাম্বার মাল
জালালি গোডাউনের মাল
এর তফাৎ আকাশ পাতাল
লাগায় দেয় চোখের shutter
[এক-এর মাল; কথা ও গান : জালালি সেট]
…
জালালী জলসাতে, ঘাম পুছবেন গামছাতে
কারণ আমগো লেভেল এখন তেরো নম্বর তামশাতে…
জালালি সাফায়েত এর বনবাসের সাধনতে পইড়া যাইবেন ফাঁপরেতে
মুইতা দিবেন কাপড়েতে সিলা সিলা সিল
সিল সিলা পাপাপুয়া, পেটের ভিত্রে চাচাচুয়া, কান্ধের উপ্রে কাকাতুয়া
মুখের ভিত্রে বুকে ধুঁয়া, হ্যাং কইরা ঠ্যাংয়ের উপ্রে ঠ্যাং মাইরা চ্যাঙ্গের উপ্রে…
দিবারাতি জ্বলে বলে, জালালি সাধনা চলে
ভবের বাত্তি লোকচক্ষুর অন্তরালে নিভে জ্বলে
[বনবাসের সাধন; কথা ও গান : জালালি সেট]
…
এই ব্যাটা তুই কেঠা লে? ঠেকা লে পারলে ঠেকা
লগে জিনিসপত্র থাকলে লইয়া দ্যাখা, লইয়া দ্যাখা, হেই
জালালি gang জায়গায় জায়গায় দেখবি লেখা
পোলাপাইন আজাইরা প্যাচাল না পাইরা লে পারলে ঠেকা, ঠেকা…
এই ব্যাটা তুই কেডা? কোন চিপাগলির তুই হ্যাডা?(হ্যাডা)
লে পারলে ঠেকা, ঢাকা থেইকা কব্জা দুনিয়া
শব্দ বাক্যের খেলায় জব্দ প্রত্যেকটা target
পিনিক জিনিস বানায় কাঁপায় জালালি সেট (yeah)…
[পারলে ঠেকা; কতঅ ও গান : জালালি সেট]
প্রতিপক্ষ র্যাপারদের এনকাউন্টার করা উদ্দেশ্য হলেও নগর ঢাকার বখাটে পোলাপানদের ডেলি লাইফের অনুষঙ্গে জালালি সেট-র র্যাপবুলি সচরাচর বোঝাই থাকে। অন্ত্যমিল দিয়ে বোনা ছন্দে কবিতা ও ছড়াগানের ঘনঘন ইন্টারচেইঞ্জটা কানে ঘাই দিয়ে যায়। ঢাকাই শব্দের প্রয়োগ ও তাকে সামাল দেওয়ার সুসংগতি সোজা কথায় জবরদস্ত। জালালির বাইরে তাউড়া সাফা-র আমরণ, হাওমাওকাউ, ভব উরাধুরা গানগুলো এভাবে একদিন নিজের শক্তি জানান দিয়েছিল। ফকিরি ভাবে মাথা মোড়ানো তাউড়ার মুখ দিয়ে বেরিয়ে এসেছিল গুলি :—
হা সালাম নিন, youtube-এ মুততে দিন
Dish-এ কড়কড়া ভাইজা broenfishটা দিন
বাংলা র্যাপ তোর হোগার নিচে তেল জমছে বেশি
লে হাত ঘইষা মাথায় লাগা
বাটাল ধার দে আঠা লাগা…
বাংলা বয়ানের সুরা R উরাধুরায় তাউড়া সাফা
খ্যাতি-টেকা-ভিড়ভাট্টায় থাপড়ায় চাপা
জটা খাড়ায় গেলেই টিক্কি চৌওওওউদ
ভাষা বাংলায় মনের ভাব কয়া দেয় ভব।
[ভব উরাধুরা; কথা : সম্রাট এসআইজি; গান : তাউড়া সাফা]
র্যাপ মানে কেবল লিরিক্সের কেরদানি নয়, ওটার ভিতর থেকে গায়কের জীবন-অনুভব ছিটকে বেরিয়ে আসা প্রয়োজন; — বাংলা র্যাপগানের সৌখিন পায়রাদের লক্ষ করে খিস্তিভরা গুলিটাই ছোড়ে সাফা। বাংলায় রিয়েলিটি পপ ওরফে গ্যাংস্টা র্যাপের আদি গাইয়েদের একজন এই তাউড়া সাফা। একটা সাক্ষাৎ মাস্তানের উত্থান ও পরিণাম সে উঠিয়ে এনেছিল পিস্তলের জীবন নামক গানের র্যাপছন্দে :—
এই জগৎ হাতের মুঠোয়, পৃথিবী পায়ের নিচে
আমার গাড়ি চলে আগে, police আমার পিছে পিছে
আমার magazine ভরা bullet, বন্দুক loaded all-time
বেশি ক্যাচাল পারলে শ্যাষ করমু lifeline…
চাঁদাবাজি, গুণ্ডামি সব করাই দিলো
গাড়ি-বাড়ি কতসব কিছু দিলো
Time মতো হালাইয়া পল্টি মাইরা দিলো
যার power-এই এতদিন চলতাম
ওর power-এই এহন জেলে ঢুইকা গেলাম
জেলে ঢুকার পরেও
পুরা দেশটারে আমি একা কাঁপাই দিলাম
Uptown Lokolz-এর একজন আমি তাউড়া সাফা
গুণ্ডামি কইরা কারাগার ঘুরছি
বাস্তব দেইখা Lokol রাখছি
পিস্তলের জীবন ভায়া আমি পুরা gangster করছি
ডানে-বামে দেখছে গুণ্ডামি জনতা
Gangster ব্যাটা আলোচনায় রাখছি
এই দুনিয়ার মাঝে আমি এক কবি
শব্দ-ছন্দ দিয়া আঁকি জিন্দেগির ছবি
Mic-এর সামনে কঠিন বাস্তবের scene পাট তুইলা ধরি
প্যাটের লেইগা যারা নষ্ট হইছে তাগোর কথা বলি…
[পিস্তলের জীবন; কথা ও গান : তাউড়া সাফা]
তাউড়া সাফার মাস্তানকাহনে আমেরিকার অতিকায় গ্যাংস্টা র্যাপারদের গানে ছলকে ওঠা জীবনজার্নি আশা করা বাতুলতা। তাদের গানে ডু অর ডাই অর্থাৎ মারো নয় মরোর যেসব কাহিনি একে-একে উঠে আসতেই থাকে তার ভিতর দিয়ে র্যাপার নিজের উভয় সংকটে নিপতিত জীবনকে চেনায়। গ্যাংস্টারকে মহিমান্বিত করার উপায় সেখানে নাই। ভড়ং হয়তো করে কিন্তু প্রতিনিয়ত সে জানে মারো নয় তো মরোর এই জীবনে নিজেকে সুরক্ষিত রাখাটা হচ্ছে সবচেয়ে কঠিন চড়াই। বিশ্বাসের দাম এখানে দুআনার বেশি নয়। যার সঙ্গে ওঠবস করছে সে কাল তাকে নিকেশ করবে না তার গ্যারান্টি নেই। বিগি স্মল ওরফে নটোরিয়াস বি.আই.জি হয়তো এভাবেই নিজের থাগস লাইফের কাহিনি ভানতে বসে শ্রোতার রোমকূপে কাঁপন জাগায় :—
Spit your game, talk your shit
Grab your gat, call your clique
Squeeze your clip, hit the right one
Pass that weed, I got to light one
All them niggas, I got to fight one
All them hoes, I got to like one
Our situation is a tight one
What you gonna do: fight or run?
[Notorious Thugs; Lyrics & Song: Notorious B.I.G]
খুনাখুনির কারবারে হাত পাকানো বিগি স্মল সেই উচ্চতায় উপনীত হয়েছে যেখানে তার এই পিস্তলের জীবনকে শো করার কিছু নেই। লোকের কাছে বাহাদুরি দেখানোর ছেলেমানুষী বহু আগে পার হয়ে এসেছে সে। এখন তাকে ঠাণ্ডা মাথায় ভাবতে হচ্ছে খুনাখুনি আর প্রতারণার খেলায় ভাই কিনা ভাইয়ের রক্তপানের খেলায় নেমেছে! সে নিজে এক নিগার আর তার প্রতিপক্ষরাও নিগারই বটে! হিটম্যানের ভূমিকায় তাকে যারা নামিয়েছিল তারা কালো না ধলা, ইতালি না স্প্যানিশ, কলাম্বিয়ান না আইরিশ ড্রাগ মাফিয়া ইত্যাদি প্রশ্ন আপাতত অবান্তর। তার চেয়ে ভয়ানক সত্য হচ্ছে এলাকায় অথবা র্যাপের ময়দানে নিজের পিস্তলবাজি চালিয়ে যেতে হলে তাকে হয় লড়তে হবে নয় ভাগা দিতে হবে। দুটোই সমান কঠিন আর এটাই হচ্ছে একজন গ্যাংস্টারের অন্তিম পরিণাম!
গ্যাংস্টা র্যাপ অবলীলাক্রমে বুঝিয়ে দেয় নিজের সক্ষমতা প্রমাণের এহেন যুদ্ধ বেশিদিন চালানো কঠিন। অতিকায় র্যাপস্টার হওয়া সত্ত্বেও বিগি স্মলকে গুলি খেয়ে মরতে হয়েছিল। একটা সময় আসে যখন র্যাপারকে আরো শক্ত ও বৃহৎ পাটাতনে দাঁড়িয়ে জীবনের গান গাইতে হয়। মরার আগে বিগি স্মল র্যাপের বুলিতে গানগুলো গেয়ে যেতে পেরেছিল। সে আর নেই কিন্তু তার গান জীবিত আর সে নিজে জীবিত সিনেপর্দায়; — তাকে নিয়ে বানানো নটোরিয়াস ছবির কল্যাণে।
নিজেকে ভাঙাগড়ার খেলায় গহিন হওয়া ছাড়া এই ময়দানে পা রাখা অমিত সম্ভাবনাময় র্যাপারকে বিলীন হতে হয় বিস্মৃতির গর্ভে। তাউড়া সাফার জার্নি খানিকটা সে-রকম! জালালির ছেলেপিলেরা গানে বিস্তর ভড়ং করলেও সরাসরি গ্যাংস্টারের জীবনে হাত পাকায়নি। দলের মূল শক্তি এমসি মাগজ পুরান ঢাকার এখনো অটুট সামাজিক বন্ধনের অলিগলিতে বাড়ন্ত যুবা। মাস্তানি বহুত দেখলেও এই কাজে ডিরেক্ট নিজেকে শরিক করেনি কখনো। শাফায়েত স্বচ্ছল মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা নয়া ঢাকার পোলা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাট চুকিয়েছে সদ্য। দলের বাকি সদস্যরা মোটের ওপর বড়ো অপরাধ চক্রে জড়িত নয়। তাদের গানের চাবি নিহিত চারপাশের জীবনধারাকে প্রখর নজরে পর্যবেক্ষণ ও তাকে ধারণ করতে পারার সক্ষমতায়। নয়া ও পুরান ঢাকায় বিরাজমান সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্বকে র্যাপের বুলিতে নতুন ভাষা দিতে তারা সফলকাম হয়েছিল।
সময়ের সঙ্গে নিজের নীড় ও র্যাপ গানের জমিজিরেত দেশে জালালি বা মার্কিনে ফকির লাল মিয়া খানিক বুঝে পেলেও টুপাক বা 50 সেন্টের মতো সকল বাধার পাহাড় ডিঙিয়ে র্যাপের জমিতে তাউড়া সাফা তার খুঁটি শক্ত করে পুঁততে পারেনি। সে এখন জেলের শিকেয় বন্দি। ধারণা করি মাদক তাকে খেয়েছে। গ্যাং কালচারে নিজেকে ডাকাবুকো প্রমাণের নেশাটা খেয়ে থাকতে পারে। একজন র্যাপার নিজের ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায় অপরাধ জগতের যে-স্তরে বিলং করুক, ওসবকে অতিক্রম করে সামাজিক অনুঘটক ও গুটিচালকদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধে জারি থাকা ও নিজেকে সুরক্ষিত রাখার রাস্তা তাকে খুঁজে নিতে হয়। র্যাপ এক গেরিলা যুদ্ধ। গ্যাংস্টা র্যাপে নিজেকে পরিণত করে তোলার আগে তাউড়া সাফা সেই যুদ্ধে হয়তো প্রথম শহিদ।
র্যাপকাহন : বাংলায় হিপহপ / ১ || আহমদ মিনহাজ
বাংলায় হিপহপ ও র্যাপ নিয়া গানপারে অন্যান্য রচনা
বাংলায় রিদম অ্যান্ড পোয়েট্রি নিয়া প্রাথমিকা
বাকরুদ্ধ ভুবনের পলিটিক্যাল অ্যান্থেম : স্কিব খানের ‘সব চুপ’
র্যাপ, রাজা কুমারী, প্রাচ্য ও পশ্চিম
আহমদ মিনহাজ রচনারাশি
- ভোটবুথ, ভূতভোট, বজরঙবলি ও বেবুন - November 26, 2024
- ক্বারী আমীর উদ্দিন সান্নিধ্যে সেদিন || তারেক আমিন - November 20, 2024
- পোয়েট ও তার পার্টনার - October 19, 2024
COMMENTS