নির্ভানার সাক্ষাৎকার || শফিউল জয়

নির্ভানার সাক্ষাৎকার || শফিউল জয়

উন্নিশশো নব্বই সালে নির্ভানার ‘ব্লিচ’ অ্যালবাম বের হওয়ার পরে এই সাক্ষাৎকার নেয়া হয়, যদিও প্রকাশিত হয় ১৯৯৯ সালে। নব্বইয়ের লাইনাপে বেইজে ক্রিস্ট নভোসেলিক, ড্রামার চ্যাড শ্যানিং। ডেইভ গ্রহ্ল তখনো নির্ভানায় যোগ দেয় নাই। সদ্য অ্যালবাম বের হওয়ার সময়টাতে নির্ভানার বেশ কয়েকটা গান তখন জনপ্রিয় —  ‘লাভ বাজ’, ‘ফ্লয়েড দ্যা বার্বার’, ‘স্প্যাঙ্ক থ্রু’। এই গানগুলা কলেজ রেডিওহিট হইছিল। সাক্ষাৎকার দেয়ার আগেই ‘নেভারমাইন্ড’ অ্যালবামটার কিছু গান রেকর্ড করা হয়, ফলে বেশ ফুরফুরে মেজাজে ছিল পুরা ব্যান্ড । ‘নেভারমাইন্ড’ অ্যালবাম প্রকাশের আগে হওয়ার কারণে নির্ভানা তখন খুব বেশি-একটা জনপ্রিয়ও না। অন্য ইন্ডি রকাররাও অত পরিচিত না তখন। মেলভিন্স, মাডহানির মতো ব্যান্ডের থেকে পার্ল জ্যাম আর নির্ভানার পথটা এই সময়েই স্বতন্ত্র হওয়া শুরু করে, যদিও কম্পোজিশন প্যাটার্নে, গিটার আর ড্রামে ছাপটা থেকে গেছে। মেলভিন্সের ড্রামার ডেইল ক্রোভার নির্ভানারও ড্রামার হয়ে কাজ করছে বেশ কিছুদিন।

কার্ট কোবেইন খোলামেলাভাবেই অনেককিছু সম্পর্কে বলছে, বোঝা যায় মানসিক অবস্থাও বেশ ভালো ছিল। প্রাণবন্ত এই সাক্ষাৎকারটাতে নির্ভানার মতামত অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন বলে মনে হয়, নিজেদের অবস্থানটাও পরিষ্কার করছে কোনো ধরনের অস্পষ্টতা ছাড়াই। দৈর্ঘ্যে ছোট হলেও সাক্ষাৎকারটা নাইন্টিজে গ্রাঞ্জের ঐতিহাসিক অবস্থানটা আর রেকর্ড লেবেলের গ্যাঞ্জামগুলার জানান দেয়।

____________________________________
সাক্ষাৎকার ১৯৯০ : নির্ভানা (Nirvana)

সাক্ষাৎকারস্থান : ক্যাম্ব্রিজ, ম্যাসাচুসেটস, ইউএসএ ।। সাক্ষাৎকারদিন : ১৮ এপ্রিল, ১৯৯০
ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ : শফিউল জয়
____________________________________

17572103_10210155934827437_859654280_o

প্রশ্ন : ব্যান্ড হিশাবে তোমাদের উদ্দেশ্য কী?
কার্ট কোবেইন : খুব ভালো কিছু করা — সবচেয়ে ভালো যেটা সম্ভব আমাদের পক্ষে। এই ব্যাপারটা সবকিছুর ঊর্ধ্বে। দর্শন, ব্যান্ড-ইমেজ আর লাইভ বাজানো — যা-ই বলো না কেন। সবকিছুর আগে এই শর্ত। গান গান আর গান। আর ব্যান্ড হিশাবে আমরা যা হইতে চাইছিলাম তার অনেকটা কাছাকাছি চলে আসছি।

প্রশ্ন : লিরিক আর স্টেইজ শো করার জন্যে একটা আদর্শ রাখার কি দরকার আছে? একটা আচরণভঙ্গি?
নভোসেলিক : আদর্শ? আমরা তো খুবই ফাত্রা পোলাপান। কার্ট, তুমি বলো। তুমিই তো বেশিরভাগ লিরিক লেখো।

কোবেইন : হ্যাঁ। কিন্তু আমি জানি আসলে সেগুলা কী নিয়ে লিখি। খুবই ঢিলা জিনিশ এগুলা। কী দাড়াইলো সেটা নিয়া ভাবি না। আমরা অবশ্যই ঘাড়ত্যাড়া। কিন্তু কথাগুলা বলার মতো জানাশোনা আমাদের নাই। আমরা যে এলএসডি নেই আর উইড ফাটাই যাতে মাথার ভিতরে আরও জিনিশ মনে রাখতে পারি। আমরা যদি কোনো তর্কে-বিতর্কে যাই কোনো ইশ্যু নিয়ে, অবশ্যই হারবো।

প্রশ্ন : তোমরা কি একসাথেই বড় হইছো?
কোবেইন : ক্রিস আর আমি একই শহরেই ছিলাম, তাই তুমি বলতে পারো ‘বড় হইছি একসাথে’। টিনেইজের শেষভাগ আমরা অ্যাবারডিনে কাটাইছি। সিয়াটল থেকে একশো মাইল দূরে একটা প্রত্যন্ত জায়গা। সিয়াটলকে বিরান জায়গা বলা হইলেও অ্যাবারডিনই আসলে প্রত্যন্ত।

প্রশ্ন : তোমাদের আগের গিটারিস্ট জ্যাসন এভারম্যানের কী খবর?
কোবেইন : ক্রিসের বাপের সাথে ওর একটু ঝামেলা ছিল, বের করে দেয়া ছাড়া উপায় ছিল না। ব্যান্ডটা পুরা হিন্দি সিরিয়ালের মতো হয়া যাইতেছিল। তাই ভাবলাম, ঝামেলাটা গোঁড়া থেকে নিষ্পত্তি করা দরকার।

প্রশ্ন : এই কথা বিশ্বাস করতে বলো?
কোবেইন : তোমার বিশ্বাস না করলেও চলবে, কিন্তু এটাই লিখবা তুমি। ক্রিসের বাপ ছিল যুগোস্লোভিয়ার শক্তসমর্থ একজন মানুষ , যে ক্রিসকে বলছিল কোদাল হিশাবে আমাদের গিটারগুলা বেইচা দেয়া উচিত। ও খুবই মজার মানুষ। আর জ্যাসনের সাথে ন্যুয়র্ক থেকে ড্রাইভ করে বাসায় আসার সময় প্রায় পঞ্চাশ ঘণ্টার মতো ছিলাম একসাথে গাড়িতে, কিন্তু কোনো কথাই হয় নাই তখন। ও ব্যান্ডে থাকার সময় যেই গানগুলা লিখছিলাম সেগুলা আমার ভাল্লাগে নাই। একটু স্লো, ভারিক্কি গ্রাঞ্জ প্রেফার করত ও। এসব নিয়েই জ্যাসন একটা পিছুটানের মতো ছিল। সাউন্ডগার্ডেনে আছে এখন, ভালো আছে। এটা ওর দোষ না, সমস্যাটা হলো আমরা ওর চিন্তাভাবনা বুঝতে পারি নাই আগে।

প্রশ্ন : ট্যুর করতে ভাল্লাগে?
কোবেইন : ট্যুর করার কথা মাথায় আসে নাই আগে, কিন্তু ভালো সময়ই কাটতেছে বলা যায়। একটা মানসিক প্রস্তুতির ব্যাপার আছে। বারো-তেরো ঘণ্টার বড় বড় ট্যুর, অনেকটা এমন যে বুকাররা ম্যাপে ডার্ট ছুইড়া ঠিক করছে কই কই বাজাবো। কিন্তু আমরা ঘুমাই, সাউন্ড চেকেও যাই না যদি ইচ্ছা না করে। এসবই বাইছা নিছি, কারণ রক্যানরোল সম্পর্কে আমাদের ধারণা এমনই। কিন্তু একেবারে যুগান্তকারী কিছু কইরা উড়ায়াপুড়ায়া ছারখার কইরা দিব তাও চিন্তা করি না। আমরা আনন্দ করতে আসছি, গান গাইতে আসছি, বাজাইতেছি। আরেকটু বেশি হইলে ভালো হয়, কারণ প্রতি মাসের ভাড়াটা দিতে পারব ভ্যাজাল ছাড়া। মানুষের ভাল্লাগলেই হইছে। মিলিওন-মিলিওন ডলারের বাজেট কইরা আমাদের প্রমোশনের দরকার নাই। এগুলা তো আমাদের কোটি ডলারের কাগজের পুতুল বানায়া দিবে।

প্রশ্ন : কেউ যদি তোমাদের আইসা বলে আরেকটু বেশি কাজ করলে তোমাদের কোটিপতি বানায়া দিব? তাহলে?
কোবেইন : সবকিছু নিয়েই আমাদের কথা শুনতে হবে। আমাদের নিজের একটা প্রোডিউস্যর নিতাম এবং আমাদের মতো করে রেকর্ড করতাম। বাচ ভিগের মতো। ও ঠিক ছিল। আমার মতে একটা ভালো প্রোডিউস্যর হচ্ছে যে কারো মাথা থেকে একটা আইডিয়া নিয়ে ঝামেলা বা নাক গলানো ছাড়া টেপে বের করে দিতে পারে। প্রমোশনের ব্যাপারটাও একই। তোমার এমন একজনকে দরকার যে তুমি যা বলতে চাও সেই ইমেইজটাই তারা প্রোমোট করবে। বড় কয়েকটা লেবেল থেকে অফার আসছে আমাদের, কিন্তু সাবপপ এদেরকে বলছে চোদায়া মুড়ি খাও। এগুলা নিয়া আমাদের মাথাব্যথা নাই।

প্রশ্ন : গ্রেট ইন্ডি ব্যান্ডগুলারে তো বড় বড় রেকর্ড লেবেল গিলে ফেলতেছে। তাহলে রককে কি নতুনভাবে ডিফাইন করার সময় এসে গেছে?
কোবেইন : আশির মধ্যভাগ থেকেই প্রত্যেকটা ব্যান্ডই একটা অন্যরকম সময়ের ভেতর দিয়ে যাইতেছে। এটাই রক মারা যাওয়ার আলামত। ভবিষ্যৎ ভোতা হইলে অতীতে পইড়া থাইকা লাভ নাই। এটা আর্টের প্রত্যেকটা ফর্মেই হয়। যখন ভবিষ্যৎ দেইখা ভয় পায়, তখনই এরা অতীতের দিকে তাকায়। ওরা এমন একটা জায়গা থেকে কথা বলবে যে দেইখা মনে হয় সবকিছু তো আগেই করা হয়ে গেছে। বাস্তবতা হইল তারা ভালোভাবে ভাবতেই পারতেছে না। বাসি হয়ে গেছে তারা। একটা জিনিশ তখনই মইরা যায় যখন এইটা নিয়ে সবাই আশা ছাইড়া দেয়।

17618942_10210155938107519_1039856644_nপ্রশ্ন : তোমাদের কি এই আশঙ্কা হয় নাই যে অল্টারনেটিভ মিউজিক করার মতো ফ্যান তোমরা কখনোই পাবা না? তোমাদের মিউজিক কেউ শুনবেই না?
কোবেইন : আমি জানিই না কারা আমাদের ফ্যান। বেশিরভাগই তো আমাদের মতনই শাদা চামড়ার মরা লোকজন, যাদের আর্ট ভাল্লাগে। গতানুগতিক থ্র্যাশের মেটালহেড পোলাটার মতো না যে জানেই না কী করতেছে। আমাদের রিসেন্ট কিছু শোতে জকি-পরা কিছু লোকজন দেখলাম আমরা। ওদেরও আমাদের মিউজিক ভাল্লাগতেছে। এটা ভয়ংকর।

প্রশ্ন : তোমার মতে কি রক মারা যাইতেছে?
কোবেইন : আমি জানি না। রক্যানরোলকে আমি অঙ্কের মতো মনে করি। কেউ নতুন কোনো ধারণা না নিয়া আসলে তুমি খুব বেশিদূর আগাইতে পারবা না। আমি বুঝাইতেছি, আমরা ৪/৪ টাইম বিটে আদর্শ রক টেম্পোর সাথে গিটারে কয়েকটা নোট বাজাইতেছি। এছাড়া কী!

প্রশ্ন : তুমি তো ব্যান্ডের ব্র্যান্ড হয়ে-যাওয়া নিয়ে লেখালেখি পড়ো। ক্যামন লাগে তোমার?
কোবেইন : আমি খুব বেশিকিছু পড়ি নাই এইসব নিয়ে, যতটা ভাবা হয়। আমি প্রায়ই দেখি সাউন্ডগার্ডেনকে লেড যেপেলিনের সাথে তুলনা করা হয়, কিন্তু আমার কী তাতে! একটা আর্টিক্যালে আমাদেরকে ‘শিখাহীন লেনার্ড স্কেনার্ড’ বলে তুলনা করা হইছে। যদিও এটা ঠিক না, কিন্তু খুবই মজা-মারতেছে টাইপ।

প্রশ্ন : গান ক্যামন শোনা হয়?
কোবেইন : গ্রাঞ্জ ছাড়া যে-কোনোকিছু।

এমনি বললাম, আমরা ট্যাড শুনি, সাবপপের সবকিছুই ভাল্লাগে। মাডহানি আমার খুব প্রিয় ব্যান্ড। এটা ছাড়া দ্য ফ্লুইড, বিট হ্যাপেনিং, ইয়াং মার্বেল জায়ান্টস, দ্য মেল্ভিন্স, দ্য পিক্সিস, জন ফাহে, লিও কটকি, কিছু ব্লুগ্র্যাস, মধ্য-অ্যাশিয়ার কিছু কিছু। এসবই।

প্রশ্ন : টাকার গুরুত্বটা কতখানি তাহলে?
কোবেইন : ভাড়া দেয়ার কথা আমাদের ভাবতে হয়। তুমি জানো এটা ক্যামন। আমাদের যা আছে সবই ব্যান্ডের পিছনে যায়। আমরা যদি ইন্সট্রুমেন্টগুলা নিয়ে তাফালিং না করতাম, কিছু টাকা হয়তো বাঁচত। আমি মাত্র ১৭০ ডলার ভাড়া দেই। এটা আমার বলা ঠিক না, তাহলে আরও বেশি মানুষ সিয়াটলে আইসা পড়বে। এই গ্রীষ্মে আমরা কোনো কাজ করব না যাতে বাসায় আরও সময় দিতে পারি, কিছু গান লিখতে পারি। ইউরোপে আমাদের শেষ ট্যুরটা ভালো যায় নাই। কিছু কিছু ব্যাপারে নিশ্চয়তা না দিতে পারলে আমরা আর কখনোই ইউরোপে যাব না। সারারাত কাজ করে পুরা সপ্তাহে একদিনও দিনের আলো দেখি নাই এমন সময়ও গেছে। তাছাড়া আমাদের খাবার নিয়েও কষ্ট করতে হইছে। একদিনে এক মিল — এই হিশাবে বাজেট করা হইছিল।

প্রশ্ন : ট্যুরে রাস্তায় থাকার সময় বই পড়া হয়?
কোবেইন : বর্ণনামূলক গদ্য পড়তে আমার খুব বিরক্ত লাগে। ইদানীং চার্লস বুকোওস্কির সব পড়তেছি। আমার গার্লফ্রেন্ড চেষ্টা করতেছে যাতে আমি জিম থম্পসন পড়ি।

নভোসেলিক : আমার বউ আর ওর গার্লফ্রেন্ড খুবই ভালো বন্ধু। বোয়িং-এ একটা ক্যাফেটেরিয়াতে ওরা একসাথে কাজ করে। বেশ ভালো টাকাই পায়।

প্রশ্ন : সিয়াটলে মানুষের বাস বাইড়া যাওয়াতে তুমি কি বিরক্ত?
কোবেইন : তুমি জানো আমি কি চাই? আমি চাই মানুষ হতাশ হোক। এত্ত কাজ এত ব্যস্ততা কীসের! ওদের পা আর মাটিতে নাই, আমি চাই সবার পা মাটিতে ফির আসুক। এত ভোগবাদী হওয়ার তো কোনো দরকার নাই।

নভোসেলিক : ওরা ভাবে —  “ওহ আচ্ছা! আমার গাড়ির টাকা আছে, আমার বাড়ির টাকা আছে। ঘরটাও মনমতো সাজাইছি। একটা ভালো জায়গায় থাকি — তাহলে আমি নিশ্চয়ই ভালো আছি। এটা ছাড়া কিছু পাত্তা দেই না।” … এইসব চিন্তা আবর্জনা। আবর্জনা ছাড়া কিছু না। কেউ যদি একটু হতাশ হয় তাহলে সে আরেকজনের পিঠে ছুরি মাইরা আগায়া যাওয়ার চেষ্টা না কইরা অন্তত বোঝার চেষ্টা করবে সমস্যাটা আসলে কী!

♪  প্রশ্ন : আমি জানতাম তোমাদের একটা আদর্শগত অবস্থান আছে। খালি বলতে একটু দেরি হইল!
কোবেইন : এইসব হাবিজাবি বলা একেবারেই ঠিক না, কিন্তু এগুলা বমির মতো বের হয়ে আসতেছে ভেতর থেকে। লোকজন আমাদের নিহিলিস্ট মনে করবে।

17618889_10210155935307449_997984739_nপ্রশ্ন : রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ানোর সবচেয়ে ভালো ব্যাপারটা কী
কোবেইন : সেকেন্ডহ্যান্ড রেকর্ডস্টোর থেকে রেকর্ড কেনা। ছোটদের হারায়া-যাওয়া গান আর পুরানো ব্লুজ রেকর্ডগুলা। সিডি রিভোল্যুশন নিয়েও খুব আগ্রহ নাই। রেকর্ডে কিছু-একটা আছে আলাদা, বুঝাইতে পারব না। আমি জানি এটা খুব ফালতু শোনাবে, কিন্তু মিউজিক আরও পবিত্র কিছু-একটা। তোমার একটু যত্ন নিতে হবে এইটার। তুমি যদি স্ক্র্যাচ ফ্যালো, নতুন আরেকটা কিনতে হবে। তোমার প্রিয় ব্যান্ডের রেকর্ড কিনে নষ্ট করে ফেললে আরেকটা কিনতেই হবে। আমার কোনো সিডি মেশিন নাই, কিন্তু লোকজন আমাকে সিডি দিতেছে ইদানীং। এগুলা নিয়ে কিছু-একটা করতে হবে। এগুলা ভালো বিক্রি হয়। একেবারে হোপ্লেস।

নভোসেলিক : যেইটা নাই তুমি সেটা নিয়ে কিছুই করতে পারবা না। … (হাসতে হাসতে) …

শ্যানিং : কোনোকিছুই হবে না। ফলে আমি চেষ্টাও করি না। দুনিয়ার কোনো সমস্যা নিয়েই আমি মাথা ঘামাই না। কারণ আমি জানি সমাধান নাই কোনো।

প্রশ্ন : তাহলে তোমাদের চিন্তাভাবনা কি নিয়ে?
শ্যানিং : আনন্দ। সেইটাই করার চেষ্টা করি আমি। একটা সাধারণ মানুষের মতো … যেটা সবাইকে আনন্দ দেয়। অন্যরা কী করার চেষ্টা করতেছে এটা নিয়ে ভাবি না।

কোবেইন : ক্রিস আর আমার ভাবনাও অনেকটা এমন। নিউজ দেখে আমরা চরম বিরক্ত হই। পিসড অফ হয়ে যাই। যেসব লোক আমার উপর তাদের চিন্তাভাবনা চাপায়া দেয়ার চেষ্টা করে, তাদেরকে দেখলেই আতঙ্ক লাগে। কোনো ট্রাকস্টপে গেলে লোকজন আমাকে বলে ‘হিপি’, ‘কুয়্যার’ কিংবা কোনো-না-কোনো একটা স্টেরিওটাইপড সিদ্ধান্তে তাদের আসতেই হবে। এইসব চিন্তাভাবনাকে বদলানোর চেষ্টা করি হয়তো। সবসময় বাসায় থাকতে ভাল্লাগে না। আমি যখন ছোট ছিলাম মনে হইত দুনিয়াটা অনেক বড় মহান জায়গা। তখন বড় হওয়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু সিক্সথ গ্রেডে থাকতেই বুঝে গেলাম — “জীবন মহান কোনোকিছু না, আর আমি যাদেরকে চিনি তারা সবাই একেকটা চুদির ভাই।”

প্রশ্ন : এখন তো তোমাদের মিউজিক আছে অন্তত। তোমাদের নতুন গানগুলা ক্যামন?
কোবেইন : দুই-একটা গান ‘ব্লিচ’ অ্যালবামের গানগুলার মতো। কিছু গান এত মোলায়েম যে এইসব শুনলে আমরা আমাদের অর্ধেক অডিয়েন্স হারাইতেও পারি। মনে হয়। তারা মিউজিকপ্রেমী হইলে অবশ্যই ভালোবাসবে; কারণ মিউজিক যে-ধরনেরই হোক — ভালো এমনিই ভালো। নতুন অ্যালবামে কোহেনের মতো অ্যাকুয়েস্টিক দিয়ে গাওয়া কিছু গান আছে। সাদাসিধা, শান্ত আর ম্যানিয়াক ডিপ্রেশনের গান। ওইগুলা একেবারেই বাণিজ্যিক না। হেভি গানগুলো আগের গানগুলার থেকেও আরও র। এটা একঝাঁক গানের মিশ্রণ। খুব ভালো লাগতেছে গানগুলা করতে পাইরা। রেকর্ড কোম্প্যানির সাথে আমাদের চমৎকার একটা মিটিং হইছে। আশা করতেছি ওরা আরেকটু ভালো প্রোমোশন করবে সাহসের সাথে।

প্রশ্ন : রক্যানরোলের পর কি করার পরিকল্পনা?
কোবেইন : আশা করতেছি যথেষ্ট টাকা হবে বনের মধ্যে একটা বাড়ি কেনার। যদি না-হয়, তাহলে আমাকে রুমের মধ্যে আটকায়া রাখাই ভালো, কারণ যে-কোনোকিছু হওয়ার সম্ভাবনা আছে তাহলে।

… …

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you